অফিসের গল্প (৮)
দাদা।
'উঃ, লম্বা লাইন ছিল টেলারের কাউন্টারে'- সিনহাদা বন্ধ ভিজে ছাতাটা অফিসের কোনায় খুলে শুকোতে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন। 'হাজার টাকা তুলতে হাজারটা ঝামেলা' বলে আরেকবার নোটের বান্ডিলটা পকেট থেকে বের করে দেখে আবার ঢুকিয়ে রাখলেন। আমি একবার তাকিয়ে দেখে আবার হাতের ফাইলে মনোনিবেশ করলাম।
আশির দশকের গল্প। এটিএম কথাটা শোনা গেলেও বস্তুটি ভারতীয়রা তখনও চোখে দেখেনি। ব্যাঙ্ক কর্মচারিরা তখন যথেষ্ট চাপে থাকতেন আর মাঝে মাঝে রোয়াবও দেখাতেন বেশ। 'আরে!' হঠাৎ সিন্হাদা বলে উঠলেন, 'মনে হল একশ'র বান্ডিল ঢোকালাম পকেটে। কী সর্বনাশ!'
'কী হল, দাদা', আমি শুধোলাম।
'এই, তোমার ছাতা আছে? যাবে আমার সাথে একবার ব্যাঙ্কে? দেরি করলে আবার ট্রান্স্যাকশান আওয়ার বন্ধ হয়ে যাবে।'
'কেন, গোলমাল হয়েছে কিছু?'
'গোলমাল বলে গোলমাল! দশের বদলে একশ'র নোটের বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েছে মেয়েটা ভুল করে। বেচারা মারা পড়বে একেবারে।' অগত্যা ছাতা হাতে আমরা দুজন আবার ব্যাঙ্কের কাউন্টারে।
সিন্হাদা মাস দুই হল কলকাতা অফিস থেকে বদলি হয়ে এসেছেন বোম্বে অফিসে। মধ্যবয়সী মানুষ, ছেলেমেয়েরা কলকাতায় পড়াশুনা করে বলে আমাদের মেসবাড়ি আলো করে একাই থাকেন আর অবসর সময়ে ব্রিজ খেলেন আমাদের সাথে। হিন্দি এমনিতেই কম বোঝেন, মুম্বাইয়া হিন্দি তো আরো ভয়ংকর।
মেয়েটা প্রথমে কিছুই বোঝেনি ব্যাপারটা। সে তো শোনেই না কিছু- 'আপনি আগে নোট গুণে নেননি কেন, এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ হ্যাঁ, যান ম্যানেজারের কাছে, কোই পরোয়া নেহি!'
'আরে হাম বোলতা কম, তোম শুনতা বেশি।' দমদম-মার্কা অননুকরণীয় হিন্দিতে সিন্হাদা বোঝাতে গেলেন। 'তেমনি মাংতা কম, দেতা বেশি! এইঠো এক হাজার হ্যায় না দশ হাজার? তোমকো তিনমাসকা মাইনে কাটা জায়েগা ম্যানেজার কো বোলেগা তো!'
এইবার দাদার ওই ভাঙা হিন্দি বক্তব্য মরাঠি মেয়েটার মাথায় ঢুকল। না, ও কোন ধন্যবাদ দেয়নি পরিবর্তে। বরং কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এসে সিন্হাদার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিল।
kabitaashram@gmail.com, Amit Saha Editor www.kabitaashram.com