১)
আমার মায়ের সঙ্গে সর্বদাই ফিরত চারপাঁচটা রুমাল। প্রায় প্রতিটিরই চারটে কোনায় একটা করে গিঁট বাঁধা। কোনও জিনিস হারিয়ে গেলে- সে সাধারণ জিনিস হতে পারে বা জরুরী ডকুমেন্ট ধোপার হিসেবের খাতা বা ঠিকানা ফোন নাম্বার লেখা কোনো ডায়েরি- মাকে বললেই মা কি একটা বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে একটা গিঁট লাগাতেন। হারানো জিনিসটি ফিরে পাবার পর আবার মন্ত্র পড়ে গিঁট খুলতেন। সব সময়ই যে হারানো জিনিস পাওয়া যেতো তা নয় আবার অনেক সময়ই পাবার পরেও গিঁট খুলতে ভুলে যেতেন ফলে গিঁট থেকেই যেত।
মা কিন্তু খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে কালীঘাটের মন্দির হওয়া সত্বেও কোনও দিন মন্দিরে দেবীদর্শনে যাননি। শাঁখা পলা তো কোন দিনই পরেন নি। বাবার একবার অসুখ করায় "ঝামেলা মিটিয়ে রাখি"- বলে হাতের লোহা খুলে ফেলেছিলেন। বাবা,বলতে নেই, তারপরে আরও তিরিশ বছর বেঁচে ছিলেন। কুটকুট করে বলে বিয়ের চার বছর পরেই সিঁদুর পরা ছেড়ে দিয়েছিলেন। যদিও বাড়িতে কোনও পুজো হলে (লক্ষ্মী সরস্বতী সত্যনারায়ণ বা ইতু পুজো) খুব যত্ন করে পুজোর কাজ করতেন।
মা চলে যাবার পর মায়ের আলমারি পরিস্কার করতে গিয়ে অনেক গুলো কোনে কোনে বাঁধা রুমাল পেলুম। কী খুঁজে পাবার জন্য গিঁট বেঁধে ছিলেন মা? তাঁর পাঁচ বছর বয়সে ভগবানের কাছে চলে যাওয়া মা? সাড়ে পাঁচ বছরে মায়ের পিছু পিছু স্বর্গে চলে যাওয়া বাবা? চল্লিশ বছরে চলে যাওয়া বড় আদরের বড় ভালোবাসার 'বড়দা'? নাকি একান্ত প্রিয় আরও দুজন মানুষকে??
কি জানি!!!
76
Bulan Chakraborty
২)
উক্রেইন আর রাশিয়ার যুদ্ধের কথা সবারই জানা, নতুন ক'রে বলার কিছু নেই।
যুদ্ধটা একটু থেমেও এসেছিল।
আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে, কারনটা জানা আছে তোমাদের?
আমি বলছি.......।
চারিদিকে নানা রকম গোলা গুলির আওয়াজে একটা অন্তঃসত্ত্বা মুরগি দিনের পর দিন পালাতে গিয়ে হঠাৎই একটা premature ডিম প্রসব করে ফেললো। সেটাও কোন ব্যপার না, কিন্তু ঝামেলা অন্য যায়গায়। ডিমটা ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক দুই দেশের সীমান্ত রেখায়। রাশিয়া বলে এ ডিম আমার, উক্রেইন বলে এ ডিম আমার।
আবার যুদ্ধ।
আসলে ডিমটা মুরগির।
নিরর্থক যুদ্ধ। 81- VI
Apurva Boral
৩)
ঈশ্বরের ইচ্ছা শক্তি
.........................
প্রথম হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ায় অ্যাপোলো থেকে ফিরে এলো। চিকিৎসা শুরু হল। প্রিয়তমার জিদে অভিভাবকরা অনিচ্ছায় বিয়ে দিল। সুস্থ। সুন্দর সংসার করছে গত তিন বৎসর ধরে।
এতদিনে জানতে পারলাম... প্রতিদিন ভোর বেলায় একঘন্টা প্রাণায়াম, একঘন্টা বাথ টবে (40ডিগ্রী temp.) ডুবে থাকা, খাবার কেবল ফল ও মূল।।
আর ঈশ্বরের উপর ভরসা।
76
Prabir Mukherjee
৪)
আতর
দাম মিটিয়ে বের হবার মুখে দোকানদার আমাকে হাত বাড়াতে বললেন। আমিও হাতটা বাড়ালাম। উনি আমার হাতের তালুতে ঘষে দিলেন খুব ছোট্ট একটা শিশির রোলিং মুখ। বললেন দুই হাতের তালু ঘষে নাকের সামনে এনে ঘ্রাণ নিতে। আমিও তাই করলাম। নাকের সামনে এনে ঘ্রাণ নিতেই মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। …চোখ বন্ধ হয়ে এলো, দূরে কোথায় যেন নুপুরের ছম ছম……
80
Bulan Chakraborty
৫)
বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগঢ় এর মতো আরও বেশ কিছু জায়গায় রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কারন সবারই জানা। বৈদ্যুতিক গাড়ি।
রাঙ্গামাটি জল ট্যাংকি থেকে চ্যাটার্জিস্যার এর ঘর পর্যন্ত রাস্তাটা বেশ ঢালু।
সেদিন আমাদের বন্ধু প্রদীপ মানে আমাদের সেই বাউন্ডুলে ধরনের "পদা" সাইকেলে করে ঢালুতে নেমেই চলেছে, রাস্তা কাটা গর্ত সামনে!!! ধূস......
ওরে পদা ব্রেক লাগা ব্রেক সামনে স্পিড ব্রেকার.......!!!
দেখ কেমন পেরিয়ে এলাম দু দুটো বাধা।.........
এবার ডিস্পেন্সারিটা পেরোলেই ডান দিকে ঘুরে বাঁ দিকে ঘুরলেই সোজা ল্যাংড়া পুল।
ধড়াম........।
একটা চার চাকা গাড়ি ধাক্কা মেরেছে পদার সাইকেলের পেছনের চাকায় আর ছিটকে পড়েছে পদা রাস্তার পাশে। মুহুর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুজনেই অবাক।
রাম সিংজি নুতন একটা বিদ্যুত চালিত গাড়ি কিনেছেন, নম্বর প্লেট টা সবুজ রঙের। চলতে গিয়ে গাড়িটা কোন রকম শব্দ করেনা, তাই পদা বুঝতেই পারেনি যে ওর সাইকেলের পিছনে একটা গাড়ি আসছে। আর রাম সিংজি ও বুঝতে পারেননি যে হঠাৎ ক'রে পদা ডান দিকে ঘুরে যাবে।
পদাতো চটপট উঠে পড়েছে।
রামসিংজি ও গাড়ি থামিয়ে পদা কেমন আছে দেখছেন। পদা তো RML Typer ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়। আর রাম সিংজি সেই ক্লাবের সম্পাদক।
পদার সাইকেলের পেছনের চাকা তো আর গোল নেই একটা ত্রিমাত্রিক বাংলার ৪ এর আকার ধারণ করেছে। ঠেলে ঠেলে ও নিয়ে যাওয়ার মতো নেই। ওদিকে গাড়িটার ডান দিকে বেশ কিছুটা ঘষে যাওয়ার দাগ। ঈস্.... নতুন গাড়ি।
74
Apurva Boral
৬)
বৌ স্নান করতে বাথরুমে ঢুকেছে সেই সুযোগে বউয়ের ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা সরিয়ে ড্রয়ারে রাখলাম।
দু-দিন হয়ে গেছে, বউ ধরতে পারেনি। মনের আনন্দে ড্রয়ার খুললাম, টাকা গায়েব!
76
Bulan Chakraborty
৭)
সরস্বতি পুজো ও আমার কুল খাওয়া।
সরস্বতি পুজোর আগে কুল খেতে নেই। খেলে পরীক্ষায় শূন্য। কিন্তু শামলাপুরের জঙ্গলের কুল গাছগুলোতো জানে না কবে পুজো।
আজ ইস্কুল পালিয়েছি। ইস্কুলের জামা পরে শামলাপুর। হাফ প্যান্টের কোমোরের বোতাম আগেই ছিঁড়েছি, তাই বাঁ হাতটা সর্বদা প্যান্ট ধরে রাখতে ব্যস্ত, নতুবা মাধ্যকর্ষন শক্তি প্যান্টেই প্রয়োগ হয়।
এক লাঠিতে অনেক কুল পড়েছে।
আমি দু পা পুরো ছড়িয়ে ঝালনুন কুল খাচ্ছি, নতুবা আমার প্যান্ট মাধ্যাকর্ষন শক্তিতে সোজা গোড়ালিতে ঠেকবে।
কুল গুলো পেকে কি সুন্দর টক্ ঝাল মিষ্টি।
আহ্.......।
80
Debashis Das Mahapatra
৮)
ডিভোর্স
"আমি যাবোনা.... যাবোনা কিছুতেই, না না আমি কিছুতেই যাবোনা তোমার সাথে.."
বলতে বলতে হাতটা অনিমেষের হাত থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
অনিমেষ নীলিমা কে কোলে তুলে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল, চোখেমুখে জলের ছিটে দিল। মুখটা মুছিয়ে দিল আলতো করে। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। কেন সে অনিন্দিতার কথাটা জানালো নীলিমাকে? কিন্তু না জানিয়েও তো উপায় নেই!
ডিভোর্সটা ওর চাই...
নীলিমার জ্ঞান ফিরেছে, বিছানায় উঠে বসেছে, গলায় ঘৃণা বিদ্বেষ মেশানো কণ্ঠে বললো "যাও তোমায় আমি মুক্তি দিলাম"
বলে টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ডিভোর্স পেপারটায় কাঁপা হাতে সই করে দিল।
দোদোন দেরাদুনের আবাসিক স্কুল থেকে ছুটিতে বাড়ি এসেছে। মালা দেওয়া মাএর ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে।
দু চোখে অশ্রুবন্যা, নির্বাক..।
81- VI
৯)
দেবদর্শন
অনিমেষ ঘড়ি দেখলো, রাত দেড়টা, বাইরে অবিরাম বৃষ্টি, সদর দরজায় কেউ কড়া নেড়ে চলেছে। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল সে দরজার দিকে। শুধোল...কে?
উত্তর এলো "আজ্ঞে একটু দরজাটা খুলুন না, একটু আশ্রয় নি? বাইরে যা দুর্যোগ।
দূর্বাও উঠে এসেছে, হাতের ইশারায় শুধোল, কে?
অনিমেষ দরজা টা খুলে দিল।
দেখলো বাইরে কেউ নেই!
"আরে ভাই কে ডাকছিলেন, কোথায় গেলেন?"
কোনো সাড়া নেই। সে ভয় পেয়ে দরজাটা দুম করে বন্ধ করে দিল, হাত পা কাঁপছে, দরজায় আগল দিতেই পারছেনা..
দূর্বা আতঙ্কে জিজ্ঞেস করছে "কী গো কী হলো? তুমি ওরম করছো কেন?"
নিজেকে সামলে নিয়ে কোনোরকমে বললো "বাইরে কেউ কড়া নেড়ে বললো একটু আশ্রয় দেবার কথা, কিন্তু বাইরে তো কেউ নেই"....
ঘরের ভেতর থেকে কেউ গমগমে শব্দে বলে উঠলো "আমি ভেতরেই আছি"...
বিস্ফরিত চোখে তারা যা দেখল!
অবিশ্বাস্য!!!
জটাজুট ধারী পিঙ্গল বস্ত্র পরিহিত, এক হাতে ত্রিশুল অন্য হাতে ডম্বরু, ত্রিনয়ন অর্ধ নিমিলিত......
ব্যাস আর কিছু মনে নেই।
77
Anjonn Gangopadhyay
১০)
সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে।
বন্ধুদের হোয়াটসএপ গ্রুপে সবাইকে নিয়ম করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। অভ্যেসবসত ১২ই অক্টোবরও সকালে ম্যাসেজ পাঠাই, শুভ জন্মদিন চম্পক।
মাঝরাতে হোয়াটসএপ আসে। দেখি লেখা "থ্যাংক ইউ, ভাল থাকিস"। অচেনা নম্বর, কোন ডিপি নেই। বুকটা কেন জানিনা ধড়াস করে উঠল, প্রত্যুত্তরে লিখি, কে আপনি? ম্যাসেজ ডেলিভার হয়না।
পরদিন নম্বরটায় ফোন করি, ওপার থেকে সাড়া আসে, দিস নম্বর ডাস নট এক্সিস্ট। হঠাৎ কেমন যেন খটকা লাগে, শেষ চারটে সংখ্যা, ০৩০৩৩।
রাতে পুরোনো টেলিফোন ডাইরিটা বার করি, নম্বরটা চম্পকের। ও মারা যাওয়ার মাস দুয়েক পরে ফোনের কনটাক্ট থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম।
83- IV
Anupam Chatterjee
১১)
বম্বিং
--------
স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে একটা ভাড়া বাড়ীতে উঠেছে বিজয় !
হার্লে কনট্র্যক্ট লেবারের কাজে জয়েন করেছে সে ৷
আজ রাতে শুতে শুতে ওদের প্রায় 11টা বেজে গেল , টিভিতে " রুশ-ইউক্রেন " রোমাঞ্চকর ননস্টপ সিনেমা চলছে যে !!
হঠাৎ ধড়াম করে বোমা ফাটার শব্দ !!!
ধড়মড়িয়ে উঠলো বিজয় !
বেচারা বৌটা উঠতে গিয়ে..খাট থেকেই ধড়াম ! মেয়েটাও ঘাবড়ে গিয়ে শুরু করে দিয়েছে... ভ্যাঁএঁএঁএঁ !
তবে কি WW-3 শুরু হয়ে গেল ???
মিসাইল অ্যাটাক ???
লাইট জ্বালালেও প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলোনা বিজয় !
একটু পরে বুঝলো ...
..সাইকেলের ড্যামেজ চাকাটা বার্স্ট করেছে !!!
84- III
১২)
আতঙ্ক
*******
কয়েক মাস খুবই অশান্তির মধ্যে আছে তপন!
পুরোনোটা ছেড়ে নতুন কম্পানী জয়েন করেছে সে!
মায়ের শরীরটাও ঠিক নেই , ডাক্তার সোনোগ্রাফী করতে
বলেছেন , তাছাড়া নিজেরও প্রোস্টেটের সমস্যা, PSA কাউন্ট 6.1 !!
তাই ডাক্তার তাকে বায়োপ্সী করতে বলেছেন!
বায়োপ্সী....!! আতঙ্কে তপনের ওজন 10কেজি কমে গেছে!
আজ বিকেলে দুটো রিপোর্টই পেয়ে যাবে !
প্রচন্ড আতঙ্কের মধ্যে সে প্রথমে নিজের রিপোর্টাই খুললো!
না...কোন ম্যালিগনেন্সী নেই!
মাথার উপর থেকে যেন একটা ভারী বোঝা নেমে
গেল!
এরপর মায়ের USG রিপোর্টে দেখলো পেটে
অ্যাসাইটিস ফ্লুইড জমেছে!!!
79
Apurva Boral
১৩)
চোর
---------
সিন্দ্রির ঐ ছোট্ট এল টাইপ ঘরে অঞ্জলী...শাশুড়ি আর দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে দিব্যি সুখে দুঃখে দিন কাটছিল। স্বামী কাজের সূত্রে প্রায় বাইরে। তিন মাস পর 10দিনের ছুটিতে আসেন.. দেখেন... বিজয়ী হয়ে যান।
অঞ্জলীর শাশুড়ি রাতে ঘুমাতে পারেনা। অঞ্জলীকে মাথা টিপে দিতে বললো। দরজা খোলা পেয়ে চোর মাথা টিপে দিয়ে সব নিয়ে উধাও।
সকালে অঞ্জলী...শাশুড়িকে, শাশুড়ি.... অঞ্জলীকে দোষারোপ করার ফলে স্বামীর প্রাইভেট চাকরিটাও Sag হয়ে গেলো।।
76
১৪)
"সাসপেন্স"
বাসায় কেউ নেই। বৌ, ছেলেমেয়েরা বাপের বাড়ি মৌতর গেছে।একা একা লাগছে। মোবাইল ফোনে একটা ভুতের সিনেমা দেখলাম। এখন আর একা লাগছেনা। মনে হচ্ছে রান্নাঘরে কেউ একজন আছে।
গা ছমছম করে উঠলো। বিছানা থেকে নামতেই....
নাহ্ , বাকিটা সাসপেন্স ই থাক।।
81- VI
১৫)
ভালো লাগা আর রেগে যাওয়া হঠাৎ করে হয়।
আমার কিন্তু ওদের শাশুড়িকে একটুও ভালো লাগেনি।
আমার মতে শাশুড়িরা লুকিয়ে আছে সব বউদের অন্তরে.. নাহলে
৮ বছর প্রেম করে বিয়ের পর থেকে শাশুড়ি তিল তিল করে ওদের দুজনের মাঝে ভাঙ্গন ধরিয়ে এখন বলে....
""তোমরা মিলে মিশে থাকো না কেনো?""
83- IV
১৬)
"জামাই"
সুন্দরী শহরে নিজেদের দুটি বাড়ি রেখেও অপু আজ শ্বশুর বাড়ি থাকে কারণ, স্ত্রী সোনালী একসময়তো নিজের "পাপা কি পরি" ছিলো ।
আর অপু.....?
সেও তো রাজ্য হারা রাজপুত্র...!
অনেকেরই মতে অপু কোনও রজ্যহারা রাজপুত্র তাজপূত্র লয়। বরং অন্ত্মসম্মানবোধহীন, মেরুদণ্ডহীন পুরুষ মাত্র...
তাতে অপুর কিছু যায় আসে না।। গুপ্তধনতো আছে সোনালীর কাছে আর তার স্বাদ নিতে অপু ঘুরছে স্ত্রী সোনালীর পিছে... পিছে, চায় না হাত ছাড়া করতে।।
82- V
১৭)
আশংকা
--------------
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাই আমার শুভেচ্ছা।
ছোটভাই সপরিবারে ইংল্যান্ডে। আশংকায় থাকি ভাতিজা বাংলা শিখবে কি না! সেদিন ফোনে ভাতিজার কণ্ঠে,"" জ্যেঠু পণাম.... অমি হন্দল (হন্দলা ) বলছি বাবা বাথরুমে সিন্যাছে"" ..শুনে আবেগে আপ্লূত!
জয় হোক আমার মাতৃ ভাষা
78
Purnima Chakraborty
১৮)
অবিশ্বাস্য
পলাশ স্টেশনে বসে অপেক্ষায় আছে লোকাল ট্রেনের।বেলুড় যাবে ।এমন সময় তার বন্ধু অমল পিঠ চাপড়ে বলল--" তোকে কতদিন পর দেখলাম বলত? চল একটু গল্প করা যাক্ ।"
পলাশ--"না রে ট্রেনে মিস করব।"
অমল--" পরের ট্রেনে যাস।অনেক দিন পর দেখা হল,
না বলিস না।"
অনেক কথা হলো দুজনের ।পলাশের ফিরতে রাত হল।বাড়ি ফিরতেই জানতে পারলো অমল মারা গেছে কাল দিল্লিতে রোড অ্যাক্সিডেন্টে।"
পলাশ অবাক হল।মনে মনে ভাবল --" একটু আগে যার সাথে সময় কাটালাম সে তবে কে ছিল?"
85- II
১৯)
মাণিক
সাতসকালে বস্তির লোকেদের ঘুম ভাঙ্গলো কুকুরের ঘেউঘেউ চিৎকারে আর শিশুর কান্নায়। সবাই গিয়ে দেখে একটা শিশু কাপড়ে মোড়া, কাঁদছে । শিশুটিকে ঘরে এনে দুধ খাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়ল ।বস্তিতেই আশ্রয় পেল ।তার নাম রাখল মাণিক ।দেখতে দেখতে বড় হল ।অসৎ সঙ্গে মিশে একটি পকেটমার তৈরি হল।একদিন এক পুলিশ অফিসার সিদ্ধার্থ মন্ডলের পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়ল।অফিসার তাকে নিয়ে গেলেন নিজের বাসায়।স্কুলে ভর্তি করলেন । সে বড় হতে লাগল ।আজ সেও একজন পুলিশ অফিসার মাণিক মন্ডল।তার জীবনটাই পাল্টে গেল।
84- III
Tapas Chakraborty
২০)
ধার
আজ সুব্রতর ফোনটা পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। ও প্রমোশন পেয়ে কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে। ২০২০ তে করোনা কালে ওর চাকরিটা চলে যায়। প্রায় ৯ টা মাস বসে থাকতে হয়। অনেকগুলো দিনই প্রায় না খেয়ে কাটাতে হয়। খুব ভেঙে পড়ে ও। হঠাৎ একদিন আমার সাথে দেখা হয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে আসি ওকে। খাবার খেতে খেতে অনেক গল্প হয়। তারপর ওকে আর একলা ছাড়িনি। ইউটিউব এ অনেক মোটিভেশনাল ভিডিও দেখাতে থাকি ওকে। ওর প্রোডাক্ট লাইন এর ও অনেক ভিডিও দেখতে থাকে। মনের জোর অনেক টাই ফিরে পায়। আস্তে আস্তে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া শুরু করে। প্রথমে একটা ছোটো কোম্পানি তে তার পর আস্তে আস্তে বড় কোম্পানিতে চান্স পায়। ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি তে প্রমোশন পেয়ে কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যায়। কারুর অসময় এ টাকা পয়সা নয় একটু মনের জোর যদি ধার দেওয়া যায় তাহলেও কারুর জীবন বদলে দেওয়া যেতে পারে।
81- VI
Abhijit Sen
২১)
সুপর্না ভিনিৎসিয়া(ইউক্রেন) মেডিক্যালে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা বোকারো ইস্পাতের কোক ওভেনে কর্মী। ছোট থেকে জিপ্রোকক্স (ইউক্রেন)নাম শুনেছে জ্ঞান বিজ্ঞানের দেশ। একমাস আগেও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধটা হাসি ঠাট্টার বিষয় ছিল। হঠাৎ এক রাতে বোমার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। পরদিনই হুলুস্থুল কান্ড। ইউক্রেন ছেড়ে দেশে ফিরতে হবে। পরদিনই ব্যাগপত্র নিয়ে জনাপঞ্চাশ ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রী বেরিয়ে পড়ল ভারতের উদ্দেশ্যে। কলেজের বাস ছেড়ে দিল রোমানিয়া বর্ডারে। আরো ১০ কিলোমিটার হেঁটে পার হতে হবে বর্ডার। কাঁধে বোঁচকা নিয়ে এগিয়ে গেল তারা। সঙ্গে বিস্কুট আর জল। হঠাৎ পথিমধ্যে ঘিরে ধরলো রুশ সেনা। মেয়েদের ছেড়ে দিল। কিন্তু ছেলেদের আটকে দিল। ছেলেরা হৈচৈ করতেই রাইফেলের বাট দিয়ে সজোরে মারধর শুরু। যথেষ্ট চোটপেয়ে ছেলেরা হাতে পায়ে ধরে আই কার্ড দেখিয়ে ছাড়া পেল। কিছু ইউক্রেন বাসী তারা চুপিচুপি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিল, ধরা পড়ে গেল। রুশ সেনা সবার চোখের সামনে তাদের দড়িতে বেঁধে মাটিতে শুইয়ে তাদের ওপর মিলিটারি ট্রাক চালিয়ে দিল। রক্তগঙ্গা বয়ে গেল। চোখের সামনে এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হল সুপর্না ও সহপাঠীরা। পরে কোনরকমে দেশে মা-বাবার কাছে ফিরে আজও তার ঘুম আসেনা! সভ্য দেশের মানুষ এত নৃশংস হয়!!!
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
81- VI
Kajal Chatterjee
২২)
হাতের লেখা
লেখিকা-কাজল চ্যাটার্জী
মীনা আর শ্যামলী নবম শ্রেণীর ছাত্রী ।বাংলার ক্লাস টেস্ট এ যতই ভাল লিখুক শ্যামলী মীনার চেয়ে কম নম্বর পায় , কারণ টা বুঝতে পারে না ।একদিন বলে - আমি মীনার চেয়ে খারাপ লিখি না,তবে কম নম্বর পাই কেন?
দিদিমণি ছাত্রীর মুখপানে চেয়ে বললেন- ওর হাতের লেখা ভাল তাই বেশী নম্বর পায় ।
শ্যামলী হাতের লেখা নিয়ে যত্নশীল হয়ে পড়ল। কিছুদিন পর শ্যামলীর হাতের লেখা দেখে দিদিমণি অবাক হযে বললেন- আমার বিশ্বাস,তুমি স্কুল ফাইনাল এ খুব ভাল ভাবে উত্তীর্ণ হবে ।
79
Sabari Chatterjee
২৩)
ভাইঝির বিয়েতে পৌঁছে রিকশা থেকে নামতেই শাড়ির অনেকটা ছিঁড়ে গেল বুঝলেন সবিতা। বিয়ের সময়কার শাড়ি। বাবার অবস্থা ভালো ছিলো না। অতি জ্যালজেলে বেনারসী। স্বামীর অবস্থাও ভালো ছিলো না। ছেলেমেয়ে ছোট থাকতে থাকতেই মারা গেলেন। অনেকগুলো টিউশন করে হিসেব করে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়েকে মানুষ করে তুললেন। আজ তারা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। প্রয়োজন মত সব কিছুরই ব্যবস্থা করে। কিন্তু খুব দামী শাড়ির কথা ওঁর মনে হয়নি। ওদেরও খেয়াল হয়নি।
শাড়ীটা কোনক্রমে জড়িয়ে বিয়েবাড়ি পৌঁছলেন। দাদার বিরাট ব্যবসা। কিন্তু সবিতার সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখেন নি। সবিতাও চেষ্টা করে নি।
বিয়ে বাড়ি ভর্তি চেনা শোনা আত্মীয়। কিন্তু কয়েকজন ছাড়া কেউই খুব একটা এগিয়ে এলো না। গরীব আত্মীয়কে সবাই এড়িয়ে চলে। এমনকি যারা চা কফি স্টার্টার দিচ্ছিল তারাও দু'একবার মাত্র ওঁকে অফার করল। ওরা জানে কাকে পাত্তা দিতে হয় না। একাই বসে আছেন। বিয়ে হচ্ছে। যখন সিঁদুর দানের সময় হল তখন ব্যাগ থেকে একটা হীরের আংটি বের করে বরের হাতে দিয়ে বললেন "আমার মামার বাড়ি ছিলো জমিদার বংশ। আমার মা'র বড় ইচ্ছে ছিলো এই আংটি দিয়ে যেন তাঁর নাতনি কে সিঁদুর পরানো হয়।" বলে বরের হাতে আংটি টা দিলেন।
বরের হাতে পঞ্চাশ লাখ টাকার হীরের আংটি ঝিকমিক করতে লাগলো।
81 - VI
Anupam Chatterjee
২৪)
স্ট্যান্ড !!
কেউ খুব জোরে চিৎকার করে উঠলো রাস্তার পাস থেকে !
কিন্তু সদ্য কেনা নতুন স্পোর্টস বাইকটা এতটাই স্পীডে চালাচ্ছিলো রাহুল যে ঐ কথাটা তার কানেই গেলনা !
কিছুটা দুরে আরও একজন সাবধান করলো "স্ট্যান্ড উঠা লিজিয়ে " !
এবারেও কথাটা কান অবদি পৌছলোনা রাহুলের !
রাহুলের নজর স্পীডোমিটারে ! স্পীড 70 Kmh !
সামনের মোড়ে বাঁদিকে ঘুরতে হবে ,
তাই রাহুল একটু গতি কমিয়ে বাঁদিকে হ্যান্ডেলটা ঘোরালো !
ব্যাস !!
রাস্তায় প্রচন্ড ভাবে নেমে থাকা সাইড স্যান্ডটা ধাক্কা খেল... !
এর পরের দৃশ্যটা অনুমান করার দায়িত্বটা ছেড়ে দিচ্ছি পাঠকের ওপরে !!
83- IV
Purnima Chakraborty
২৫)
সরস্বতী পূজো ।
পূর্ণিমা চক্রবর্তী
প্রচলিত আছে সরস্বতী পূজোর দিন পড়তে নেই,সব বইখাতা ঠাকুরের কাছে রাখতে হয়।আমার পরশু অঙ্ক পরীক্ষা, ম্যাট্রিক ফাইনাল, না পড়লে পরীক্ষা দেব কিকরে? রাতে বই খুলে বসলাম ,সেই দেখে বোন বলল--"মা সরস্বতী রাগ করবেন, তুই নির্ঘাত ফেল করবি।" মনে মনে ভয় পেলাম, কিন্তু বসে যখন পড়েছি তখন যা হবার হবে ।
সে সময় নিউজ পেপার এ রেজাল্ট বেরোতো ।দেখলাম ফার্স্ট ডিভিশন এ পাশ করেছি।আমার বোন বলল--" এবার থেকে সেদিন আমি ও পড়ব।"
87-I
প্রথম- Purnima Chakraborty সরস্বতী পুজো ৮৭/১০০
দ্বিতীয়- Purnima Chakraborty অবিশ্বাস্য ৮৫/১০০
তৃতীয়- Anupam Chatterjee বম্বিং ৮৪/১০০
Purnima Chakraborty মাণিক
চতুর্থ- Anjonn Gangopadhyay সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে ৮৩/১০০
Apurva Boral ভাল লাগা
Anupam Chatterjee স্ট্যান্ড
পঞ্চম- Apurva Boral জামাই ৮২/১০০
Bulan Chakraborty নিরর্থক যুদ্ধ।
বিশেষ-
Debashis Das Mahapatra ডিভোর্স ৮১/১০০
Apurva Boral সাসপেন্স
Tapas Chakraborty ধার
Abhijit Sen যুদ্ধের গল্প
Sabari Chatterjee হীরের আংটি