।। নবকুমার ।।
আমি তখন স্কুলের উচ্চতম ক্লাসে, একটা চাপা অহংবোধ কেন জানিনা মনে মনে কাজ করত । এক বর্ষার দিনে কিভাবে যেন স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাওয়ায় আমি আর আমার মৈথিলি বন্ধু প্রমোদ মিশ্র পায়ে হেঁটে ও ভিজে বাড়ী ফিরছি । এমন সময় দেখি একটি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা ছাত্র একটি পাথরের উপর একা বসে একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে । ওদের ক্লাস তো দু-ঘণ্টা আগেই শেষ হয়ে গেছে । আমি তাকে নাম-ঠিকানা জিগ্যেস করায় সে কিছুই বলতে পারেনা । শেষে প্রমোদ বুদ্ধি করে শুধোয়, তোদের বাড়ীর সামনে কি আছে, মাঠ, না স্কুল না বাড়ী । কারখানা আছে- ও বলে, ধোঁয়া বেরোয় ।
- আর কি আছে ?
- অনেক গরু ।...
- খাটাল ?
- হ্যাঁ । বলে সে আবার কাঁদতে লাগল ।
ফ্যাক্টরির সামনের মজদুর কলোনীর মনে হচ্ছে, প্রমোদ বলল, চ, একে বাড়ী পৌঁছে দি ।
- কিন্তু আমাদের বাড়ীর রাস্তায় নয় যে, তাছাড়া বৃষ্টি হচ্ছে-
- আরে হায়ার ক্লাসের ছাত্র হয়ে এটুকু করতে পারব না আমরা ! তাছাড়া আজকে ছিঁকন পণ্ডিত কি পড়াল- 'পরোপকারায় সতাং বিভূতয়ঃ', নয় কি ?
- হুঁ, আমি সংক্ষেপে সায় দিলাম । যেটা বলতে পারলাম না সেটা এই যে আমরা ত সাধু-সন্ত নই রে বাবা, আমাদের কি দায় পড়েছে পরোপকারের !
- ঠিক আছে, আমি বাচ্চাটিকে বললাম, চ আমাদের সাথে । বাড়ি চিনতে পারবি ত?
- হ্যাঁ । ছেলেটি কান্না থামিয়ে বলল ।
যথাস্থানে ছেলেটিকে জমা দেওয়ার সময় কিন্তু আমাদের সেই হিরো-ভাবটা আর থাকেনি । ছেলেধরা সন্দেহে বস্তিবাসিরা তাড়া করায় প্রাণ নিয়ে ছুটে পালাই দুজনে ।
পরোপকার করার ভাল পুরস্কার জুটল রে আজ- বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে আমি যখন এগুলো প্রমোদকে শোনাচ্ছি, আমাকে অবাক করে দিয়ে সে যে কথাগুলি বলল তার সোজা মানে হচ্ছে -'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন ?'
- এই তুই বঙ্কিমের 'কপালকুণ্ডলা' পড়েছিস নাকি ?
- 'কপালকুণ্ডলা'- উও কোন সি চিড়িয়া কা নাম হ্যায় ?
বোঝা গেল এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের যুগেও নবকুমাররা সর্বত্রই আছেন, নব নব রূপে, নব নব নামে ।
আমি তখন স্কুলের উচ্চতম ক্লাসে, একটা চাপা অহংবোধ কেন জানিনা মনে মনে কাজ করত । এক বর্ষার দিনে কিভাবে যেন স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাওয়ায় আমি আর আমার মৈথিলি বন্ধু প্রমোদ মিশ্র পায়ে হেঁটে ও ভিজে বাড়ী ফিরছি । এমন সময় দেখি একটি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা ছাত্র একটি পাথরের উপর একা বসে একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে । ওদের ক্লাস তো দু-ঘণ্টা আগেই শেষ হয়ে গেছে । আমি তাকে নাম-ঠিকানা জিগ্যেস করায় সে কিছুই বলতে পারেনা । শেষে প্রমোদ বুদ্ধি করে শুধোয়, তোদের বাড়ীর সামনে কি আছে, মাঠ, না স্কুল না বাড়ী । কারখানা আছে- ও বলে, ধোঁয়া বেরোয় ।
- আর কি আছে ?
- অনেক গরু ।...
- খাটাল ?
- হ্যাঁ । বলে সে আবার কাঁদতে লাগল ।
ফ্যাক্টরির সামনের মজদুর কলোনীর মনে হচ্ছে, প্রমোদ বলল, চ, একে বাড়ী পৌঁছে দি ।
- কিন্তু আমাদের বাড়ীর রাস্তায় নয় যে, তাছাড়া বৃষ্টি হচ্ছে-
- আরে হায়ার ক্লাসের ছাত্র হয়ে এটুকু করতে পারব না আমরা ! তাছাড়া আজকে ছিঁকন পণ্ডিত কি পড়াল- 'পরোপকারায় সতাং বিভূতয়ঃ', নয় কি ?
- হুঁ, আমি সংক্ষেপে সায় দিলাম । যেটা বলতে পারলাম না সেটা এই যে আমরা ত সাধু-সন্ত নই রে বাবা, আমাদের কি দায় পড়েছে পরোপকারের !
- ঠিক আছে, আমি বাচ্চাটিকে বললাম, চ আমাদের সাথে । বাড়ি চিনতে পারবি ত?
- হ্যাঁ । ছেলেটি কান্না থামিয়ে বলল ।
যথাস্থানে ছেলেটিকে জমা দেওয়ার সময় কিন্তু আমাদের সেই হিরো-ভাবটা আর থাকেনি । ছেলেধরা সন্দেহে বস্তিবাসিরা তাড়া করায় প্রাণ নিয়ে ছুটে পালাই দুজনে ।
পরোপকার করার ভাল পুরস্কার জুটল রে আজ- বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে আমি যখন এগুলো প্রমোদকে শোনাচ্ছি, আমাকে অবাক করে দিয়ে সে যে কথাগুলি বলল তার সোজা মানে হচ্ছে -'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন ?'
- এই তুই বঙ্কিমের 'কপালকুণ্ডলা' পড়েছিস নাকি ?
- 'কপালকুণ্ডলা'- উও কোন সি চিড়িয়া কা নাম হ্যায় ?
বোঝা গেল এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের যুগেও নবকুমাররা সর্বত্রই আছেন, নব নব রূপে, নব নব নামে ।
No comments:
Post a Comment