।। ইজ্জত ।।
'তুই লিবি আর দু-টান...আরে, উট কে বটে?' ধনঞ্জয় দেখতে পেয়েছে মেয়েটাকে । ক্ষয়াটে গড়নের একটি যুবতী, বয়স ষোল থেকে ছাব্বিশের মধ্যে, এর বেশী বোঝার উপায় নেই । একটা আদ্যিকালের ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে একা বসে কাঁদছে আর শীতে কাঁপছে ঠক্ঠক্ করে । ধনঞ্জয় ও ঝন্টুচরণ অন্য গ্রাম থেকে বরযাত্রী এসেছে নিত্য ঘোষালের মেয়ের বিয়েতে । দলের গুরুজনদের এড়িয়ে বিড়ি ফুঁকতে একটু বাইরের দিকে অন্ধকারে এসে দাঁড়িয়েছে, এমন সময় দেখতে পেয়েছে মেয়েটাকে । তাদের যা জানার কথা নয়, মেয়েটার নাম তক্লি । ঠাক্মা বুড়ীর সাথে থাকত ঐ ভাঙা ঘরে, তা সেই ঘরের একদিকটা চাপা পড়েই বুড়ীটা গেছে গত সপ্তাহে । এখন শীত আর খাবারের থেকেও তার বেশী চিন্তা গাঁয়ের ওই ক্ষুধার্ত নেকড়ের দঙ্গল থেকে নিজেকে বাঁচায় কিভাবে ।
'লে, লে, চাঁঢ়ে চ টান্যে লিয়ে...জাড় লাইগছে' ঝন্টু সরু গলায় চেঁচিয়ে উঠল । বিড়ি-টানা শেষ করে তার শিগ্গির বিয়ের আসরে ফেরার ইচ্ছে, লগ্নের সময় হয়ে আসছে ।
ওরা খেয়াল করেনি ওদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়েছে ঐ গ্রামেরই কটা নেকড়ে, দুর্দান্ত মাঘের শীতকে পরোয়া না করে ।
'কি বে, ভিন্ গাঁয়ে আস্যে রস হয়েঁছে', ঝণ্টুর কলার চেপে ধরল একজন ।
'ক্যানে, কি হয়েঁছে, আমরা বরযাত্রী', ধনঞ্জয় বুঝতে চেষ্টা করল ভুলটা কি এবং কোথায় হল ।
'তবে আর কি, মাথাট কিনে লিয়েছিস্' একজন একটা চড় কষাল ধনার গালে, 'শালা, খালভরা, আমাদের গাঁয়ের বিটিছিলাকে টান্যে লিবি ! ই গাঁয়ের কি কুন ইজ্জত নাই ?'
ইতিমধ্যে গোলমালের খবর পেয়ে বরযাত্রীর দলও এসে পড়েছে । অনেক হৈ-চৈ হাঙ্গামার পরে দু-পক্ষই বুঝতে পেরেছে ভুলটা কার । কিন্তু উঠতি বড়লোক বলেই হোক বা সুন্দরী মেয়েকে ভিন্গাঁয়ে বিয়ে দিচ্ছে বলেই হোক, দেখা গেল নিত্য ঘোষালের শত্রুর অভাব নেই, গোলমালকারীরা কেউ আপসের ধার দিয়ে গেল না । ফলে মাঝরাত্রের কিছু পরে বরপক্ষ বর তুলে নিয়ে চলে গেল ।
খবরটা পাওয়া গেল সেই রাত্রেই ভোরের দিকে । দু-দিনের অভুক্ত হতভাগী তক্লি জ্বরতপ্ত অবহেলিত শরীরটাকে ভাঙা বাসাটাতে ফেলে রেখে রওনা দিয়েছে ওর ঠাক্মার কাছে ।
মুম্বাই, ৫ই জুন, ২০১৪ ।
'তুই লিবি আর দু-টান...আরে, উট কে বটে?' ধনঞ্জয় দেখতে পেয়েছে মেয়েটাকে । ক্ষয়াটে গড়নের একটি যুবতী, বয়স ষোল থেকে ছাব্বিশের মধ্যে, এর বেশী বোঝার উপায় নেই । একটা আদ্যিকালের ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে একা বসে কাঁদছে আর শীতে কাঁপছে ঠক্ঠক্ করে । ধনঞ্জয় ও ঝন্টুচরণ অন্য গ্রাম থেকে বরযাত্রী এসেছে নিত্য ঘোষালের মেয়ের বিয়েতে । দলের গুরুজনদের এড়িয়ে বিড়ি ফুঁকতে একটু বাইরের দিকে অন্ধকারে এসে দাঁড়িয়েছে, এমন সময় দেখতে পেয়েছে মেয়েটাকে । তাদের যা জানার কথা নয়, মেয়েটার নাম তক্লি । ঠাক্মা বুড়ীর সাথে থাকত ঐ ভাঙা ঘরে, তা সেই ঘরের একদিকটা চাপা পড়েই বুড়ীটা গেছে গত সপ্তাহে । এখন শীত আর খাবারের থেকেও তার বেশী চিন্তা গাঁয়ের ওই ক্ষুধার্ত নেকড়ের দঙ্গল থেকে নিজেকে বাঁচায় কিভাবে ।
'লে, লে, চাঁঢ়ে চ টান্যে লিয়ে...জাড় লাইগছে' ঝন্টু সরু গলায় চেঁচিয়ে উঠল । বিড়ি-টানা শেষ করে তার শিগ্গির বিয়ের আসরে ফেরার ইচ্ছে, লগ্নের সময় হয়ে আসছে ।
ওরা খেয়াল করেনি ওদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়েছে ঐ গ্রামেরই কটা নেকড়ে, দুর্দান্ত মাঘের শীতকে পরোয়া না করে ।
'কি বে, ভিন্ গাঁয়ে আস্যে রস হয়েঁছে', ঝণ্টুর কলার চেপে ধরল একজন ।
'ক্যানে, কি হয়েঁছে, আমরা বরযাত্রী', ধনঞ্জয় বুঝতে চেষ্টা করল ভুলটা কি এবং কোথায় হল ।
'তবে আর কি, মাথাট কিনে লিয়েছিস্' একজন একটা চড় কষাল ধনার গালে, 'শালা, খালভরা, আমাদের গাঁয়ের বিটিছিলাকে টান্যে লিবি ! ই গাঁয়ের কি কুন ইজ্জত নাই ?'
ইতিমধ্যে গোলমালের খবর পেয়ে বরযাত্রীর দলও এসে পড়েছে । অনেক হৈ-চৈ হাঙ্গামার পরে দু-পক্ষই বুঝতে পেরেছে ভুলটা কার । কিন্তু উঠতি বড়লোক বলেই হোক বা সুন্দরী মেয়েকে ভিন্গাঁয়ে বিয়ে দিচ্ছে বলেই হোক, দেখা গেল নিত্য ঘোষালের শত্রুর অভাব নেই, গোলমালকারীরা কেউ আপসের ধার দিয়ে গেল না । ফলে মাঝরাত্রের কিছু পরে বরপক্ষ বর তুলে নিয়ে চলে গেল ।
খবরটা পাওয়া গেল সেই রাত্রেই ভোরের দিকে । দু-দিনের অভুক্ত হতভাগী তক্লি জ্বরতপ্ত অবহেলিত শরীরটাকে ভাঙা বাসাটাতে ফেলে রেখে রওনা দিয়েছে ওর ঠাক্মার কাছে ।
মুম্বাই, ৫ই জুন, ২০১৪ ।