Friday, May 1, 2015

বাংলা অণু-গল্প ৪০ ।। এ কি প্রেম নয়!

এ কি প্রেম নয়!
অণু-গল্প


'শোনো, তুমি বরং চাকরিটা ছেড়েই দাও। চুল-দাড়ি গেলে আর শিখদের কি রইল, শুনি?' অনুযোগের সুরে বলল সুরিন্দর। শুনে ঈশ্বর একটু মুচকি হাসল শুধু।
' না, তবু সিরিয়াসলি ভাব একটু। ধর্ম বেচে রুটি খাওয়ার কথা কি আমাদের জাতে কেউ কোনদিন শুনেছে? অন্য কোথাও কিছু পাওয়া যায় না কি?' এবার একটু ঝাঁঝ পাওয়া গেল সুরিন্দরের কথায়।

ঈশ্বরের বাবা উত্তম সিংহ গিল কাজ করতেন ওমানের তেলের খনিতে, ওয়ার্কওভার অপারেশনস বিভাগে। সেদিনও রুটিনমত টিম নিয়ে বেরিয়েছিলেন ওয়েল ইন্সপেকশনএ। সোহারের ৩১২ নম্বর কুপের একটা লিকেজের রিপোর্ট ছিল। উত্তম সেলার পিটের উপর থেকেই গেজে ৩০০০ কিলোপাস্কলের মত প্রেসার দেখতে পাচ্ছেন। 'দেখা যাক, ব্লিড করা যায় কিনা' এই বলে তিনি ব্রিদিং মাস্ক পরতে লাগলেন।
'স্যার আপনি কেন নাবছেন, আমি গিয়ে দেখছি'- সর্বনা বলে ওঠে।
'আরে ছড ইয়ার, পাঞ্চ মিটার থললে হি তো জানা হ্যায়, অভি হো আতা হুঁ।' বলে নেমে পড়লেন উত্তম।
ভালভ খুলে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তো আছেনই, কি হলো স্যারের- সর্বনা আর গুপ্তে হাঁ করে ভাবছে। হঠাত কি ভেবে গুপ্তে বলল, 'ম্যায় জাতা হুঁ, তু ভি আ'.......মাস্ক পরে তৈরী হয়ে নিল তারা।
আজ ঘটনাটার ছয় বছর হয়ে গেল, ভাবছিল ঈশ্বর। সেই সকালে উত্তমের অচেতন দেহটাকে দুজনে মিলে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেছিল, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। প্রচুর পরিমানে হাইড্রোজেন সালফাইড নি:শ্বাসের সাথে রক্তে মিশে মৃত্যু ঘটে তাঁর। লম্বা চুল-দাড়ি থাকায় ব্রিদিং মাস্ক সীল করেনি, এই হলো সেফটি কমিটির রিপোর্ট। ওরা অবশ্য অম্রুতা অর্থাত উত্তমের স্ত্রীকে একটা কেরানির চাকরি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ঈশ্বর তখন স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফল করে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ঢুকে পড়ায়, তিনি পরিবর্তে ছেলের ভবিষ্যতে উপযুক্ত চাকরির কথাটা আদায় করে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। আজ অম্রুতাও ইহলোকে নেই। ক্যানসার ধরা পড়তেই অপরিণত বয়েসেই ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সংসারী দেখে তিনি গেছেন।

ঈশ্বরের সাথে ছেলেবেলা থেকে প্রেম সুরিন্দরের। বিয়ের পর থেকে ওরা কাছছাড়া হয়নি কখনো। এই চাকরিটা সে নিয়েছে কারণ শুধু মাইনে বেশি বলেই নয়, সুরিন্দর সাথে থাকতে পারবে।তাছাড়া মায়ের চিকিত্সায় বেশ কিছু ধারও হয়ে গেছে. যদিও অয়েল-ফিল্ডে কাজ বলে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী তাকে দাড়ি কেটে 'মোনা' হতে রাজি হতে হয়েছে। তারপর আজ গিয়ে চুল-দাড়ি কেটে, মাস খানেকের মধ্যেই যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

পরদিন সকাল থেকেই মন খারাপ সুরিন্দরের। 'আরে বাবা আজই তো যাচ্ছি না। আর তাছাড়া তুমিও ত যাবে সাথে, তাই না', সান্ত্বনা দেয় ঈশ্বর। আজ সকাল সকাল স্নান সেরে নিয়েছে সে। চুল শুকনো, বাঁধার বালাই নেই, ফটাফট তৈরী, এবার ভিসার জন্যে ফটো তুলতে যাবে সে। পাসপোর্টে যদিও একজন শিখ যুবকের ছবি আছে, তবু ভিসা পেতে অসুবিধা হবেনা, ওরা জানিয়েছে। কিন্তু সুরিন্দর একটানা কেঁদেই চলেছে, তাকে বোঝায়, কার সাধ্যি!
কথায় বলে মেয়েদের মনের কথা স্বয়ং ঈশ্বরও বুঝতে পারেন না, আর ইনি তো নামেই ঈশ্বর। ও কি করে জানবে, কাল পর্যন্ত যে সুরিন্দর কাছে না থাকলে তার চুল ধোয়া, শুকোনো, পরিপাটি করে আঁচড়ে দেওয়া, পাগড়ি পাট করতে সাহায্য করা কিছুই হত না, আজ সে কর্মহীনা। সে যে দশ মিনিটে একা একাই তৈরী হয়ে বেরিয়ে গেল, এটা সুরিন্দর মাত্র দু-বছরের বিবাহিত জীবনে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

(একটি পাঞ্জাবি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

No comments:

Post a Comment