সেরা পুরস্কার।।
জেস ওয়েন্স
অনুবাদঃ পল্লব চট্টোপাধ্যায়
১৯৩৬এর গ্রীষ্মকাল। ওলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছে সেবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে। এবারের আসরে সর্বত্র চর্চার বিষয় ছিল একটাই, অ্যাডলফ হিটলারের শিশুসুলভ 'মাস্টার রেস' সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ তাঁর জাতির লোকেরা বর্ণশ্রেষ্ঠ আর্যবংশোদ্ভুত আর তথাকথিত অনার্যদের থেকে সব কিছুতেই এগিয়ে। তাই খেলার মাঠেও একটা হীন-সংকীর্ণ জাতিভেদ-প্রথার মনোভাব ঘুরে বেড়াচ্ছে সবসময়।
অবশ্য আমার এ নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। ছ'বছর কঠোর অনুশীলন আর অনুশাসনের মধ্যে থেকে আমার ট্রেনিং শেষ হয়েছিল। জাহাজে আসতে আসতে কেবল একটা কথাই চিন্তা করতাম কিভাবে দু-একটা সোনার পদক আনা যায়। আমার বিশেষ দক্ষতা ছিল লং জাম্পে। বছরখানেক আগেই আমি ছাব্বিশ ফুট সাড়ে-আট ইঞ্চি লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলাম। তাই আমার জয় সম্বন্ধে প্রায় প্রত্যেকেই নিঃসন্দেহ ছিল। কিন্তু অবাক করল একটা লম্বামতন ছেলে- ট্রায়ালেই লাফ দিল ছাব্বিশ ফুট। ছেলেটি ছিল জার্মান, নাম লুৎজ্ লঙ। সবাই বলাবলি করছিল যে হিটলার নাকি ওকে এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন, একেবারে ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে দেখাবেন বলে।
আমি ভাবছিলাম যদি লঙ যেতে তাহলে ত আর্য-শ্রেষ্ঠতা সিদ্ধান্তের অনুকূলে আর একটা দৃষ্টান্ত বাড়বে। যতই হোক, আমি একজন নিগ্রো। তাই একটা বিজাতীয় রাগ হল হিটলারের উপর, ভাবলাম Der Fuhrer (অধিনায়ক)কে আর তার সুপার রেসকে একবার দেখিয়ে দিতে চাই কে শ্রেষ্ঠ!
জান ত, সব বড় কোচরাই বলে থাকেন যে অ্যাথলীট রেগে গেলেই ভুল করে। আমার বেলায় বা ব্যতিক্রম হবে কেন? তিনটে কোয়ালিফাইং জাম্পের প্রথমটাতে তাই আমার পা টেক-অফ্-বোর্ড থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি এগিয়ে গেল, অর্থাৎ ডিসকোয়ালিফায়েড! দ্বিতীয়বার অবস্থা হল আরো খারাপ। এরই জন্যে কি আমি তিনহাজার মাইল ছুটে এলাম, নিজেকেই ধিক্কার জানালাম- এইভাবে ট্রায়ালেই মার খেয়ে ফিরে আসা! পিট থেকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আমি ক্ষোভে আত্মধিক্কারে মাটিতে সজোরে একটা লাথি কষালাম। হঠাৎ কাঁধের উপর একটা সহৃদয় হাতের স্পর্শ। চেয়ে দেখি কোমল বন্ধুত্বপূর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সেই লম্বা জার্মান ছেলেটি, লং-জাম্পার লঙ। সে তার উষ্ণ হাত করমর্দনের জন্যে বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।
- Hello Jesse, I am Luz Long- আমার মনে হয়না এর আগে আমাদের আলাপ হয়েছে- কিছুটা জার্মান মোচড় থাকলেও ইংরেজিটা ভালই বলছিল সে।
- আলাপ করে খুব খুশি হলাম, আমি বললাম। তারপর নিজের নার্ভাসনেসটাকে ঢাকবার জন্যে একটু সহজ হবার চেষ্টা করলাম- তারপর, কেমন আছ বল?
- চমৎকার। তুমি?
- মনে হচ্ছে কিছু যেন বলতে চাও!
- কিছু মনে কোরো না, আমার মনে হয় তুমি যেন কোন দুশ্চিন্তায় ভুগছ, মানে কোন কিছু তোমাকে কুরে খাচ্ছে। মানে তোমার ত চোখ বুজে কোয়ালিফাই করার কথা।
- বিশ্বাস কর, সেটা আমিও জানি......ব্যাকুলভাবে কথাটা বলে ফেলে যেন আমি বাঁচলাম।
তারপর বেশ কয়েকমিনিট ধরে আমাদের কথাবার্তা চলল। তাকে বলিনে কিসে আমায় খাচ্ছে, তবে লুৎজ বোধহয় ব্যাপারটা খানিক আন্দাজ করেছিল, অন্ততঃ আমার রাগের কারণটা। আমার ব্যথার কিছুটা অংশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই সে নিল। যদিও সে নাৎসি যুব-আন্দোলনে দীক্ষিত, কিন্তু আর্য-শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে তার বিশ্বাস আমার চেয়ে কম বই বেশি ছিল না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমরা নিজেদের মধ্যেই খুব একচোট হেসে নিলাম। আমার থেকে ইঞ্চিখানেক লম্বা, সুগঠিত দেহ, স্বচ্ছ নীল চোখ, ঘন চুল আর চিত্তাকর্ষক সুন্দর মুখ- ওই মুখের দিকে তাকিয়া আমার উষ্মা একমুহূর্তেই তরল হয়ে গেল, হাসিমুখে পা বাড়ালাম টেক-অফ বোর্ডের দিকে।
- দেখ, লুৎজ্ আমাকে ডেকে বলল, তুমি বোর্ড থেকে খানিকটা পেছনে একটা দাগ টেনে দিয়ে দেখনা চেষ্টা করে। তাহলে নিশ্চয় আর ভুল হবে না। ট্রায়ালে নাহয় ফার্স্ট না-ই হলে!
তার কথার সত্যতা উপলব্ধি করে আমার মন থেকে যেন একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল। দৃঢ়তার সঙ্গেই আমি একটা দাগ দিলাম- সেখান থেকেই লাফালাম। নিম্নসীমা থেকে প্রায় একফুট এগিয়ে থেকে যোগ্যতা অর্জন করলাম।
সে রাত্রে আমি হেঁটে গেলাম ওলিম্পিক গ্রামের রাস্তা ধরে জার্মান শিবিরের দিকে, লুৎজ লঙকে ধন্যবাদ জানাতে। জানতাম আমার ফাইনালে লাফাবার যোগ্যতা লাভের পথে এটা তারই পাওনা ছিল। আমরা কোয়ার্টারে বসে ঘণ্টাদুয়েক ধরে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করলাম। খেলাধূলা, নিজেদের কথা, সাময়িক ঘটনাবলি - এইসব বিভিন্ন বিষয়ের চর্চা চলল। শেষে যখন উঠে দাঁড়ালাম, বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে একটা সত্যিকারের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। লুৎজ তার পরদিন স্টেডিয়ামে গিয়ে আমাকে হারাবার সাধ্যমত চেষ্টা নিশ্চয়ই করবে, কিন্তু এও জানতাম যে আমি জিতলে সবচেয়ে খুশিও সে-ই হবে।
পরদিন স্টেডিয়াম। যথারীতি লুৎজ তার আগেকার রেকর্ড ভেঙে ফেলল। ফলে আমাকে নজর দিতে হল আমার সাধ্যের শীর্ষবিন্দুটিতে। মনে আছে, সেদিন আমার পা যখন উড়ে এসে মাটি স্পর্শ করে, তখন আমার নামের পাশে তৈরি হয়ে গেছে আরও কটি শব্দ- '২৬ ফুট ৫-৫/১৬ ইঞ্চি- ওলিম্পিকেও লঙ জাম্পের রেকর্ড সৃষ্টিকারী'। ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে আমার পাশে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে লুৎজ। অবশ্যই অধিনায়ক হিটলার স্ট্যান্ড থেকে শতাধিক গজ দূর দিয়েই রেগেমেগে চলে গিয়েছিলেন। লুৎজ কিন্তু হ্যান্ডশেক করল আমার সঙ্গে আর তার উষ্ণ আন্তরিক হাসির মধ্যে ভগ্ন-হৃদয় জাতীয় কোনও আভাস ছিল না, এ আমি হলফ করে বলতে পারি।
লুৎজের চব্বিশ ক্যারাটের নিখাদ বন্ধুত্ব সেদিন আমি যেমনটি পেয়েছিলাম, আমার ওলিম্পিকে জেতা সবকটা মেডেল আর কাপ গলিয়েও তার উপর বোধহয় একটা আবরণ চড়ানোও সম্ভব হবে না, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি এও বুঝেছিলাম যে লুৎজ লঙ ছিল আধুনিক ওলিম্পিকের জনক পিয়ের-ডি-কুবার্তিনের স্বপ্নের অলিম্পিক খেলোয়াড় যার আদর্শ বোঝায় এই কথা কটি-
" অলিম্পিক খেলার প্রধান লক্ষ্য অংশগ্রহণ করা, জেতা নয়। জীবনের মূলনীতিই হল লড়াই করে যাওয়া, জয় নাহয় নাই মিলল।"
জেস ওয়েন্স
অনুবাদঃ পল্লব চট্টোপাধ্যায়
১৯৩৬এর গ্রীষ্মকাল। ওলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছে সেবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে। এবারের আসরে সর্বত্র চর্চার বিষয় ছিল একটাই, অ্যাডলফ হিটলারের শিশুসুলভ 'মাস্টার রেস' সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ তাঁর জাতির লোকেরা বর্ণশ্রেষ্ঠ আর্যবংশোদ্ভুত আর তথাকথিত অনার্যদের থেকে সব কিছুতেই এগিয়ে। তাই খেলার মাঠেও একটা হীন-সংকীর্ণ জাতিভেদ-প্রথার মনোভাব ঘুরে বেড়াচ্ছে সবসময়।
অবশ্য আমার এ নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। ছ'বছর কঠোর অনুশীলন আর অনুশাসনের মধ্যে থেকে আমার ট্রেনিং শেষ হয়েছিল। জাহাজে আসতে আসতে কেবল একটা কথাই চিন্তা করতাম কিভাবে দু-একটা সোনার পদক আনা যায়। আমার বিশেষ দক্ষতা ছিল লং জাম্পে। বছরখানেক আগেই আমি ছাব্বিশ ফুট সাড়ে-আট ইঞ্চি লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলাম। তাই আমার জয় সম্বন্ধে প্রায় প্রত্যেকেই নিঃসন্দেহ ছিল। কিন্তু অবাক করল একটা লম্বামতন ছেলে- ট্রায়ালেই লাফ দিল ছাব্বিশ ফুট। ছেলেটি ছিল জার্মান, নাম লুৎজ্ লঙ। সবাই বলাবলি করছিল যে হিটলার নাকি ওকে এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন, একেবারে ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে দেখাবেন বলে।
আমি ভাবছিলাম যদি লঙ যেতে তাহলে ত আর্য-শ্রেষ্ঠতা সিদ্ধান্তের অনুকূলে আর একটা দৃষ্টান্ত বাড়বে। যতই হোক, আমি একজন নিগ্রো। তাই একটা বিজাতীয় রাগ হল হিটলারের উপর, ভাবলাম Der Fuhrer (অধিনায়ক)কে আর তার সুপার রেসকে একবার দেখিয়ে দিতে চাই কে শ্রেষ্ঠ!
জান ত, সব বড় কোচরাই বলে থাকেন যে অ্যাথলীট রেগে গেলেই ভুল করে। আমার বেলায় বা ব্যতিক্রম হবে কেন? তিনটে কোয়ালিফাইং জাম্পের প্রথমটাতে তাই আমার পা টেক-অফ্-বোর্ড থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি এগিয়ে গেল, অর্থাৎ ডিসকোয়ালিফায়েড! দ্বিতীয়বার অবস্থা হল আরো খারাপ। এরই জন্যে কি আমি তিনহাজার মাইল ছুটে এলাম, নিজেকেই ধিক্কার জানালাম- এইভাবে ট্রায়ালেই মার খেয়ে ফিরে আসা! পিট থেকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আমি ক্ষোভে আত্মধিক্কারে মাটিতে সজোরে একটা লাথি কষালাম। হঠাৎ কাঁধের উপর একটা সহৃদয় হাতের স্পর্শ। চেয়ে দেখি কোমল বন্ধুত্বপূর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সেই লম্বা জার্মান ছেলেটি, লং-জাম্পার লঙ। সে তার উষ্ণ হাত করমর্দনের জন্যে বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।
- Hello Jesse, I am Luz Long- আমার মনে হয়না এর আগে আমাদের আলাপ হয়েছে- কিছুটা জার্মান মোচড় থাকলেও ইংরেজিটা ভালই বলছিল সে।
- আলাপ করে খুব খুশি হলাম, আমি বললাম। তারপর নিজের নার্ভাসনেসটাকে ঢাকবার জন্যে একটু সহজ হবার চেষ্টা করলাম- তারপর, কেমন আছ বল?
- চমৎকার। তুমি?
- মনে হচ্ছে কিছু যেন বলতে চাও!
- কিছু মনে কোরো না, আমার মনে হয় তুমি যেন কোন দুশ্চিন্তায় ভুগছ, মানে কোন কিছু তোমাকে কুরে খাচ্ছে। মানে তোমার ত চোখ বুজে কোয়ালিফাই করার কথা।
- বিশ্বাস কর, সেটা আমিও জানি......ব্যাকুলভাবে কথাটা বলে ফেলে যেন আমি বাঁচলাম।
তারপর বেশ কয়েকমিনিট ধরে আমাদের কথাবার্তা চলল। তাকে বলিনে কিসে আমায় খাচ্ছে, তবে লুৎজ বোধহয় ব্যাপারটা খানিক আন্দাজ করেছিল, অন্ততঃ আমার রাগের কারণটা। আমার ব্যথার কিছুটা অংশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই সে নিল। যদিও সে নাৎসি যুব-আন্দোলনে দীক্ষিত, কিন্তু আর্য-শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে তার বিশ্বাস আমার চেয়ে কম বই বেশি ছিল না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমরা নিজেদের মধ্যেই খুব একচোট হেসে নিলাম। আমার থেকে ইঞ্চিখানেক লম্বা, সুগঠিত দেহ, স্বচ্ছ নীল চোখ, ঘন চুল আর চিত্তাকর্ষক সুন্দর মুখ- ওই মুখের দিকে তাকিয়া আমার উষ্মা একমুহূর্তেই তরল হয়ে গেল, হাসিমুখে পা বাড়ালাম টেক-অফ বোর্ডের দিকে।
- দেখ, লুৎজ্ আমাকে ডেকে বলল, তুমি বোর্ড থেকে খানিকটা পেছনে একটা দাগ টেনে দিয়ে দেখনা চেষ্টা করে। তাহলে নিশ্চয় আর ভুল হবে না। ট্রায়ালে নাহয় ফার্স্ট না-ই হলে!
তার কথার সত্যতা উপলব্ধি করে আমার মন থেকে যেন একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল। দৃঢ়তার সঙ্গেই আমি একটা দাগ দিলাম- সেখান থেকেই লাফালাম। নিম্নসীমা থেকে প্রায় একফুট এগিয়ে থেকে যোগ্যতা অর্জন করলাম।
সে রাত্রে আমি হেঁটে গেলাম ওলিম্পিক গ্রামের রাস্তা ধরে জার্মান শিবিরের দিকে, লুৎজ লঙকে ধন্যবাদ জানাতে। জানতাম আমার ফাইনালে লাফাবার যোগ্যতা লাভের পথে এটা তারই পাওনা ছিল। আমরা কোয়ার্টারে বসে ঘণ্টাদুয়েক ধরে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করলাম। খেলাধূলা, নিজেদের কথা, সাময়িক ঘটনাবলি - এইসব বিভিন্ন বিষয়ের চর্চা চলল। শেষে যখন উঠে দাঁড়ালাম, বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে একটা সত্যিকারের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। লুৎজ তার পরদিন স্টেডিয়ামে গিয়ে আমাকে হারাবার সাধ্যমত চেষ্টা নিশ্চয়ই করবে, কিন্তু এও জানতাম যে আমি জিতলে সবচেয়ে খুশিও সে-ই হবে।
পরদিন স্টেডিয়াম। যথারীতি লুৎজ তার আগেকার রেকর্ড ভেঙে ফেলল। ফলে আমাকে নজর দিতে হল আমার সাধ্যের শীর্ষবিন্দুটিতে। মনে আছে, সেদিন আমার পা যখন উড়ে এসে মাটি স্পর্শ করে, তখন আমার নামের পাশে তৈরি হয়ে গেছে আরও কটি শব্দ- '২৬ ফুট ৫-৫/১৬ ইঞ্চি- ওলিম্পিকেও লঙ জাম্পের রেকর্ড সৃষ্টিকারী'। ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে আমার পাশে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে লুৎজ। অবশ্যই অধিনায়ক হিটলার স্ট্যান্ড থেকে শতাধিক গজ দূর দিয়েই রেগেমেগে চলে গিয়েছিলেন। লুৎজ কিন্তু হ্যান্ডশেক করল আমার সঙ্গে আর তার উষ্ণ আন্তরিক হাসির মধ্যে ভগ্ন-হৃদয় জাতীয় কোনও আভাস ছিল না, এ আমি হলফ করে বলতে পারি।
লুৎজের চব্বিশ ক্যারাটের নিখাদ বন্ধুত্ব সেদিন আমি যেমনটি পেয়েছিলাম, আমার ওলিম্পিকে জেতা সবকটা মেডেল আর কাপ গলিয়েও তার উপর বোধহয় একটা আবরণ চড়ানোও সম্ভব হবে না, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি এও বুঝেছিলাম যে লুৎজ লঙ ছিল আধুনিক ওলিম্পিকের জনক পিয়ের-ডি-কুবার্তিনের স্বপ্নের অলিম্পিক খেলোয়াড় যার আদর্শ বোঝায় এই কথা কটি-
" অলিম্পিক খেলার প্রধান লক্ষ্য অংশগ্রহণ করা, জেতা নয়। জীবনের মূলনীতিই হল লড়াই করে যাওয়া, জয় নাহয় নাই মিলল।"