Wednesday, November 28, 2018

হট-লাইন (অফিসের গল্প- ৭)

আপিসের গল্প
হট-লাইন।।

'তুমি এক কাজ কর, বুঝলে? কোশ্চেনগুলো নিয়ে সোজা ডা: সহায়ের কাছে চলে যাও' টি কে চক্রবর্তী ওরফে দাদা চক্কোত্তি আমাকে পরামর্শ দিলেন।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ডা: সহায় পার্সোন্যালের হেড, তিনি এসবের কী বুঝবেন!
'বুঝবে, বুঝবে। যাও, যা বলছি কর।'
আমি আর কথা বাড়ালাম না। দাদা চক্কোত্তির যেটুকু পরিচয় ইতিমধ্যে পেয়েছি, তাতে আর এসব কথায় এখন অবাক হই না। মনে আছে কদিন আগে বাঁশকান্দি ড্রিলসাইটের রাস্তা ভেঙে গেছে বলে গ্রামের লোকেরা ঝামেলা করছে- সে খবর ওনাকে দিতেই বলে উঠলেন- 'তা আমি কী করব? উকিলকে খবর দাও!'
আমি থ'! উকিল কী করবে এখানে? বরং পুলিশ কিছু করতে পারে। আমি তখন শিলচরের অফিসে নতুন। একে-ওকে জিগ্যেস করে জানা গেল মি: ভোকিল হলেন সিভিল সেক্শনের হেড। পার্শী ভদ্রলোক, বাংলায় তাঁর নামের উচ্চারণ উকিলই হয় বটে! সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা করে আমি গেলাম ভদ্রসায়েবের পরামর্শ নিতে।

ভদ্রসাহেব খুব হেল্পফুল লোক। আমার সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাঙালি অফিসাররা যত অত্যাচার করেন সবই অধস্তন বাঙালিদের ওপর, আর প্রকাশ্যে বাঙালি কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা বা অফিসে বাংলায় কথা- নৈব নৈব চ। তবে ভদ্র ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি অফিসে সর্বদা কিছু জুনিয়ার বাঙালি কর্মীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকতেন আর চোস্ত শান্তিপুরী বাংলায় আড্ডা দিয়ে আসর জমিয়ে রাখতেন। এবারও দেখি একই অবস্থা। ভদ্রস্যারকে ঘিরে বসে পাল-ভাওয়াল-ব্যানার্জী, গল্পের ফোয়ারা চলছে। আমাকে দেখেই উনি হৈ-হৈ করে উঠলেন- 'এই যে চাটুয্যে! দাদা চক্কোত্তির হাত থেকে নিস্তার পেলে তাহলে? পাল আরেকটা চা বলে দাও ত হে!'
'না স্যার, চা খাবনা', আমি কোনমতে বললাম। 'পার্লামেন্টারি কোশ্চেনেয়ার আছে'।
'ফোনটা কে ধরেছিল?' তিনি জানতে চান।
'আমিই। ঝর্ণা ম্যাডাম মেটার্নিটি লীভে।'
'ব্যস, ঠ্যালা সামলাও। দেখি, প্রশ্নপত্রটা, কী জানতে চেয়েছে।'
প্রশ্নগুলো ওঁকে দেখালাম। মিজোরামে কি খনিজ তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে? যদি হ্যাঁ, তবে কটা কূপ খোঁড়া হয়েছে এ পর্যন্ত? প্রগ্নস্টিকেটেড রিসার্ভ (এটার আর বাংলা পারলাম না) কত? কত তেল এযাবৎ বেরিয়েছে? মিজোরামের প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে নাতো?
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোন মিজো সংসদ-সদস্যের কাজ। মিজোরাম যেহেতু আমাদের প্রজেক্টের আওতায় পড়ে আর ওখানকার রেংটে অঞ্চলে আমরা কিছু নিষ্ফল ড্রিলিং করে চলেছি তাই উত্তর আমাদিককেই দিতে হবে।

'হুঁ, দুরূহ প্রশ্ন। এর উত্তর এখানে একজনই দিতে পারে। এটা ডা: রামজী সহায়ের কাছে নিয়ে যাও'।
'সেটাই তো বুঝতে পারছি না স্যার, সহায়ের কাছে কেন? উনি তো এইচ-আরের হেড!'
'তা ঠিক। তবে ওঁর পি-এইচ-ডিটা জিওলজির, তা জান কী? উনি আগে রিজন অফিসে জিওলজির হেড ছিলেন।'
এইবার আমার মাথায় ঢুকল। ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে শুনতে পেলাম ভদ্রস্যারের মন্তব্য- 'এই চ্যাটার্জিটা আর মানুষ হলনা। হেডকোয়ার্টারের হটলাইন কেউ ধরে?' সঙ্গে সঙ্গে সমবেত অট্টহাস্য।      
না, ডা: সহায় আমাকে নিরাশ করেননি। কোলাসিব জেলায় অবস্থিত 'থিংডল' (Thingdawl) আর 'বিলখথলির' (Bilkhawthlir)- মিজোরামের তৈলখনি-অঞ্চলের এই অদ্ভুত নামদুটো জানিনা কিভাবে আজও মনে রেখেছি। সম্ভবত: সহায় সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাবশতই। ফিরে আসার সময় তবু একটা অন্য প্রশ্ন সাহস করে করে ফেললাম- তিনি ভূগর্ভ-বিদ্যায় এত জ্ঞানের অধিকারী হয়েও নন-টেকনিক্যাল লাইনে চলে এলেন কেন?
জবাবে মৃদু হাসলেন ডা: সহায়। 'তুমি ক'বছর এই কোম্পানিতে আছ?'
'আট বছর, স্যার'- আমি বললাম।
'এই আটটা আঠারো হোক, তখন ঠিক বুঝতে পারবে। আমার কাছে দয়া করে এর বেশি কিছু জানতে চেয়ো না।'
একই দিনে দুবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমি ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম।

মুক্তি ও আনন্দ- একটি ছোট গীতি আলেখ্য


মুক্তি ও আনন্দ-  একটি ছোট গীতি আলেখ্য।


মুক্তি আর আনন্দ- এই দুটি মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনায়, কবিতায়-গানে, তাঁর জীবনেও। জীবন থেকে, ভুবন থেকে, ঈশ্বরের সৃষ্ট বিশাল মহাবিশ্ব আর অগন্য জ্যোতিঃপুঞ্জের মাঝখান থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে, সেই আনন্দেরই সাগর থেকে মুক্তির বন্যা ছুটে আসবে, এই পার্থিব জগতের ধুলায় ধুলায়, ঘাসে ঘাসে।
‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’- ব্রহ্মসংগীতটি রচিত হয় ১৮৯৭ সালে, লচ্ছাসার-বিলাওল রাগে নিবদ্ধ তুলসীদাসের ধ্রুপদ ‘দুসহ দোখ-দুখদলনী’ থেকে ভেঙে।

গানঃ ‘বহে নিরন্তর অনন্ত.........ভক্তচিত বাক্যহারা।‘

আনন্দধারা বয়ে চলেছে ভুবনজুড়ে, মুক্তির জন্যে কোন অলক্ষ্য-লোকে ছুটে যেতে হবে? এই বিশ্ব যে বিশ্ববিধাতারই এক অপরূপ সৃষ্টি, এর বাইরে আর কী আছে? তাই আজ ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’- মুক্তি আসুক সুরের আলোয় আলোকিত গানের পথ ধরে, মুক্তি আসুক জীবনের চলার পথে জীবনের বিনিময়ে।

গানঃ ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়......দিই আহুতি মুক্তি আশে।‘
মুক্তি আর আনন্দ- এই দুটি মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনায়, কবিতায়-গানে, তাঁর জীবনেও। জীবন থেকে, ভুবন থেকে, ঈশ্বরের সৃষ্ট বিশাল মহাবিশ্ব আর অগন্য জ্যোতিঃপুঞ্জের মাঝখান থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে, সেই আনন্দেরই সাগর থেকে মুক্তির বন্যা ছুটে আসবে, এই পার্থিব জগতের ধুলায় ধুলায়, ঘাসে ঘাসে।
‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’- ব্রহ্মসংগীতটি রচিত হয় ১৮৯৭ সালে, লচ্ছাসার-বিলাওল রাগে নিবদ্ধ তুলসীদাসের ধ্রুপদ ‘দুসহ দোখ-দুখদলনী’ থেকে ভেঙে।

গানঃ ‘বহে নিরন্তর অনন্ত.........ভক্তচিত বাক্যহারা।‘

আনন্দধারা বয়ে চলেছে ভুবনজুড়ে, মুক্তির জন্যে কোন অলক্ষ্য-লোকে ছুটে যেতে হবে? এই বিশ্ব যে বিশ্ববিধাতারই এক অপরূপ সৃষ্টি, এর বাইরে আর কী আছে? তাই আজ ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’- মুক্তি আসুক সুরের আলোয় আলোকিত গানের পথ ধরে, মুক্তি আসুক জীবনের চলার পথে জীবনের বিনিময়ে।

গানঃ ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়......দিই আহুতি মুক্তি আশে।‘