Friday, November 13, 2020

হ্যালোইন- গল্প

 হ্যালোইন
(গল্প)

গত বছরের ৩১শে অক্টোবর, বিকেল পাঁচটা। বেল শুনে দরজা খুলে দাঁড়াতেই প্রায় মুর্ছা খেলাম। এরা কারা? ভয়ানক-দর্শন পাঁচজন, তবে সাইজে ছোট, চার-সাড়েচার ফুট একেকজন। ওরা আমাকে ভয় পেতে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠতেই মাথায় ঢুকল ব্যাপারটা। মুখোস পরা আর মুখে চোখে রঙকরে ভূত সাজা পাঁচটি বাচ্চা, পাড়ারই, নিশ্চয় দেখেছি নীচের মাঠে বা পার্কে খেলতে। 
- 'আঙ্কল, ভয় পেয়েছে, ভয় পেয়েছে! হ্যালোইন, হ্যালোইন- চকোলেট খাওয়াও', ওরা আমাকে ঘিরে লাফাতে লাগল। ও মা, ওদের মধ্যে একজন আবার দেখি মাথায় একটা কুমড়োর খোল চাপিয়ে এসেছে, নাক-মুখ-চোখের জায়গায় ফুটো করা।

এই হয়েছে এক ঝামেলা। আজকালকার এদেশি বাচ্চারা সরস্বতী পূজো, মকর-সংক্রান্তি, ভূত-চতুর্দশীর কথা মনে রাখে না, কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ডে, ঈস্টার, বক্সিং ডে, থ্যাঙ্কসগিভিং, ফ্রেন্ডশিপ ডে- সবকিছুর হিসেব রাখে। বছর কয়েক হল ইউরোপ-আমেরিকার খ্রীস্টান সমাজের দেখে অল সেন্টস ডের আগের সন্ধেয় প্রেতাত্মাদের মর্তে আসার উৎসব হ্যালোইন নিয়ে মেতেছে এরা। ওদের দেশে হেমন্ত বা fallএর এই সময়টা নাকি ভূতপ্রেতরা মুক্তি পাবার আগে একবার বাসায় ফেরে, ক'টা দিন সর্বত্র ভূতের উপদ্রব হয় বলে সবাই ঘরে আলো সাজায়, ক্যাম্প-ফায়ার করে। আসলে হয়ত এটা ফসল কাটার প্রস্তুতি হিসেবে একটা হার্ভেস্ট ফেস্টিভাল, বা অন্য কিছুও হতে পারে। আমরা তো চিরকালে নকলনবিশ, আমাদের বাচ্চারা তাই ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার কায়দায় কুমড়োর খোলে চোখ-মুখ এঁকে ভূত সাজানো, ঘরে বা ক্লাবে ভৌতিক আলো-আঁধারির পরিবেশ তৈরি- এসবে বেশ রপ্ত হয়ে, ঘর থেকে নিজেরাও ভূত সেজে এসে পাড়ার ছোট-বড়দের ভয় দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয় পেলেই চকলেট খাওয়াও, না থাকলে পয়সা দাও কিনতে। 

- 'ওরে দাঁড়া, দাঁড়া! বাড়িতে কি চকোলেট মজুত থাকে নাকি? আমাদের বাসায় কি ছোটছেলে আছে? ঘন্টাখানেক পরে আসিস, এনে রাখব।' ওরা চলে যেতেই গায়ে জামাটা গলিয়ে পাড়ার দোকান থেকে পাঁচখানা ক্যাডবেরির চকোলেট কিনে নিয়ে এলাম। 

সন্ধের পর আটটা নাগাদ ওরা এল। আমি চকোলেটগুলো এনে দিতেই ওদের একজন বলে উঠল- 'আঙ্কল, পাঁচটা কেন? আমরা তো চারজন!'
- 'কেন ওই ছেলেটা কই, সেই যে পামকিন-হেড সেজেছিল মাথায় কুমড়ো পরে? সবচেয়ে বাচ্চা তো ওটাই ছিল!'
- 'আঙ্কল কী যে বলে না! সারা বিকেল আমরা চারজনেই ঘুরছি।' বলে একটা চকোলেট আমাকে ফেরৎ দিয়ে ওরা হৈচৈ করতে করতে চলে গেল। আমিও ক্যাডবেরিটা নিয়ে আর কী করব ভেবে ফ্রিজে রেখে দিলাম।

মাঝরাতে সেদিন কেন জানিনা খিদে পেয়ে গেল। আসলে আমিও একটা বুড়ো বাচ্চা তো! ফ্রিজে আস্ত একটা চকোলেটের বড় প্যাকেট রাখা আছে, সেটা আর ভুলে থাকতে পারছিলাম না। কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুললাম। একি! চকোলেট তো নেই কোথাও।

শুধু ফ্রিজের হ্যান্ডেলে দেখতে পেলাম স্পষ্ট দুটো ছাপ, চকোলেট মাখানো ছোট ছোট দুটো হাতের। 


No comments:

Post a Comment