Tuesday, December 29, 2020

সিমপ্লি ম্যাড- গল্প

সিম্পলি ম্যাড।


এখনও পাগল হইনি বলেই বিশ্বাস করি, কিন্তু প্রায় হতে চলেছিলাম। কিভাবে? তাহলে সেই গল্পই বলি।

অনেক কাল আগের ঘটনা। তখন আমাদের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হত ডিসেম্বর মাসে আর তার পরেই দিন পনেরর নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। পড়াশুনো নেই, গরমের দাপট নেই, যতখুশি ছোটাছুটি আর খেলাধূলা। শুধু সন্ধে হতেই বাড়ি ফিরতে হত, তারপর আবার খেলো, মানে ঘরে বসে ক্যারাম, চাইনিজ চেকার আর বড়দাদারা বাগানের লনে যেখানে আলো জ্বালিয়ে আর নেট টাঙিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলে সেখানে ঘুরঘুর করা, যদি কোন ফাঁকে একটু খেলার মাঝে ঢুকে পড়া যায়! 

কিন্তু সব কিছুই একসময় একঘেয়ে হয়ে যায়। পেয়ারাগাছে চাপা, ঢিল ছুঁড়ে কুল পাড়া, দিনভর গোবরডান্ডা আর গুলিডান্ডা খেলা, এমনকি ক্রিকেটও আর ভাল্লাগে না। নতুন কোন উত্তেজনার খোরাক চাই। ভাবতে ভাবতে চারজন অসমবয়সী বন্ধু, মানে আমি নাইনে পড়ি, শিং ভেঙে যাদের দলে ঢুকেছি সেই সুনীল সেভেনে, তোতন সিক্সে আর বালখিল্য হলেও শয়তানিতে আমাদের সবার গুরু আট বছরের খোকনা। সবার হাতে একটা করে সদ্য-বানানো গুলতি, জলার ধারে বেশ কিছু বক বসে আছে, শিকার করা যাবে। 

তখন অত পরিযায়ী পাখি-টাখি বুঝতাম না, তাছাড়া ওরা বক না বালিহাঁস ছিল তাও জানতাম না। আমরা তিনজনে যখন কাদায় পা ডুবিয়ে হাঁস-ফাঁস করছি, খোকনা সত্যিকারের দুটো হাঁস না বক জানিনা কী, গুলতি ছুঁড়েই শিকার করে ফেলল। উরিব্বাস, কী আনন্দ! পাখিদুটোকে হাতে ঝুলিয়ে বিজয়ী-বীরের মত ফিরছি, আজ পিকনিক হবে আমাদের বাগানের পেছনে।

ভীড় জমে গেল রীতিমত। আমরা তিন ভাইবোন, তোতন একা, সুনীলরা দুই ভাই আর খোকনারা তিন ভাই আর এক বোন- সবাই জুটে গেল। খোকনার মেয়ে-সদস্য নিতে একটু আপত্তি ছিল, কিন্তু ওর দিদি  থাকলে রান্নার সুবিধে হবে বলে আর ঝামেলা করল না। আমিও আমাদের চাকর বিভূতিকে ডেকে নিলাম, তাহলে আর মাংস-কাটাকুটি, উনুন জ্বালানো- এসব করতে সমস্যা হবেনা। ঠিক হল চাল, মশলা, আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কা, রসুন, আদা- সবাই শেয়ার করবে, কয়লা আর মশলাপাতি আমাদের বাড়ির। খোকনা বলল ওর পাখি, তাই আর কিছু বাড়িতে চাইতে পারবে না। তবে ওদের বাগানে লুড়কি বেগুন আর টমাটো ফলেছে, তার কয়েকটা তুলে নিয়ে এল, ভাজা আর চাটনি হবে। আমাদের ওপরতলায় রুমু-ঝুমু দুটি বোন থাকে, তারাও লোভে লোভে এসেছিল নীচে। আমাদের আপত্তি ছিল না, তবে তাদের মা, মানে মিষ্টিকাকি কলকাতার কনভেন্টে পড়া সফিস্টিকেটেড মহিলা, তিনি নাক বেঁকিয়ে অদ্ভুত কায়দায় বললেন- 'রুমু-ঝুমু, তোমরা কি জানো, বকের মাংস খেলে কী হয়?' বলা বাহুল্য, এসব কথা রুমু-ঝুমুদের স্কুলের কোর্সে নেই, তাই ওরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।
- 'না, অন্য কিছু হয় না, সিম্পলি ম্যাড হয়ে যায়। আমাদের ল্যান্সডাউনের পাড়ায় একটা ম্যাডম্যান ছিল, সে নাকি কখন......'
- 'পাগলা ষাঁড় বলুন, কাকিমা, ম্যাড-অক্স।' উনি আবার কাকিমা বললে চটে যেতেন, আন্টি বলতে হতো, আর তাই আমরা আরো বেশি করে কাকিমা বলতাম, 'রুমু বলছিল ওদের মামাবাড়ি নাকি ম্যাডক্স স্কোয়ারের কাছে।' আমি এটুকু বলতেই কথার খেই হারিয়ে সফিস্টি... ইয়ে মানে মিষ্টিকাকি আমার দিকে কটমট করে একবার তাকিয়েই কেন জানিনা দুই মেয়েকে বগলদাবা করে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলেন। 

তারপর যা পিকনিক হল না! তখনকার দিনে ছেলেরা শখের রান্না একটু-আধটু করলেও, গেরস্থ বাড়ির একটু বড় মেয়েরা রান্নাবান্না গেরস্থালিতে ওস্তাদ হতো। কাক হোক আর বক, আচ্ছা করে ঝালমশলা দিয়ে খোকনার বেবিদি আর আমার বোন মিলে যা দুর্দান্ত একখানা রান্না নামালো, খোলা জায়গায় গাছপালার ফাঁক-ফোকর দিয়ে তার গন্ধে চারপাশের বাড়ির জানলা খুলে সবাই উঁকিঝুকি মারতে লাগল। বিভূতি কলাপাতার অভাবে মানকচুর পাতা কেটে ধুয়ে আনল বেশ কিছু। 'হ্যাঁরে, গলা কুটকুট করবে না তো?' - আমি ভয়ে ভয়ে শুধোলাম। বিভূতি চাকর হলেও আমাদিগকে পাত্তা দিত না একদম, বলে- 'কী আর হবে তাহলে, তোমার খাবারটাও আমিই খেয়ে নেব অল্প কষ্ট করে!'

পরিষ্কার ঘাসের লনে আমরা খেতে বসেছি। ভাত, বাগানের বেগুন-ভাজা, আলুভাতে, চাটনি  আর বালিহাঁসের রগরগে ঝাল ঝোল গরম গরম- হ্যাঁ, একফাঁকে খোকনার বাবা এসে দেখে ও দুটোকে বালিহাঁস বলেই সার্টিফাই করে গেছেন। এমন সময় দেখি মিষ্টিকাকি উপর থেকে লজ্জা-লজ্জা মুখ করে এসে দাঁড়িয়েছে, একাই। বললেন, 'না রে, যা গন্ধ পাচ্ছি ওপর থেকে, ভাবলাম একটু মাংস টেস্ট করেই যাই। রুমু-ঝুমুকে আর আনলাম না। আমার আর কী, এই বয়সে নাহয় ম্যাড হলামই।'

রুমু-ঝুমুর অশেষ সৌভাগ্যই বলতে হবে, ওদের মা-ও সে যাত্রা ম্যাড হতে হতে বেঁচে যায়।   

Wednesday, December 16, 2020

আমাদের প্রয়াগ ভ্রমণ

 

আমাদের প্রয়াগ ভ্রমণ।



(১)
সেটা ১৯৮১ সা্লের ডিসেম্বর। ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের পরীক্ষা দিয়েই আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে দিল্লি গেছিলাম একটা ইন্টারভিউ দিতে। ইন্টারভিউ ছিল নেহেরু প্লেসে। ভাবলাম রাত্রে হোটেলের খরচা না করে আজই ট্রেন ধরে কেটে পড়লে কেমন হয়? তখন ছাত্র আমরা, বাবার পয়সা আর কত ধ্বংস করব? অন্য কেউ রাজি না হলেও, আমরা পাঁচ জন, মানে আমি, সমীর মুখার্জি, রবিশংকর ব্যানার্জি, অশোক ঝা আর ঈশ্বরচন্দ্র ঝা, সবাই মিলে চেপে বসলাম এলাহাবাদগামী একটা ট্রেনে, কোচ কন্ডাক্টারকে ম্যানেজ করে পাঁচখানা বার্থও পেয়ে গেলাম, হোটেল-ভাড়ার তুলনায় প্রায় জলের দরে।
ট্রেন এলাহাবাদ জংশনে পৌঁছোল সকাল দশটায়। শহরের নাম আজ আর এলাহাবাদ নয়, প্রয়াগরাজ তা সবাই জানে। এই প্রয়াগ কিন্তু হচ্ছে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম অঞ্চলটির নাম, যেখানে প্রতি বারো বছরে একবার করে পূর্ণকুম্ভমেলা হয়। বাকি প্রতি তিন বছর অন্তর হয় হরিদ্বার, উজ্জয়িনী আর নাশিকে। কুম্ভমেলার কী গুরুত্ব তা নিয়ে কোনদিনই মাথা ঘামাইনি, তবে হিন্দি সিনেমা-টিনেমা দেখে এটা নিশ্চিত জানতাম যে যমজ ভাইদের কখনও কুম্ভমেলা দেখতে যেতে নেই, একজন নির্ঘাৎ হারিয়ে যাবে! আমরা মেলার সময় যাইনি, আর যমজ ভাইও ছিল না, তাই তার আর বিবরণ দেব না। তবে কলকাতার ট্রেন আসতে তখনও ছ'ঘন্টা আছে, সেই বিকেল পাঁচটা, সময় কাটাতে হবে না? কোথায় কাটাব, ওয়েটিং রুমে? আমি আবৃত্তি শুরু করে দিলাম-
"ছ'ঘণ্টাকাল থাকতে হবে যাত্রীশালায়,
মনে ভাবলেম, এ এক বিষম বালাই।
বিনু বললে, কেন, এইতো বেশ?
তার মনে আজ নেইকো খুশির শেষ।
পথের বাঁশি পায়ে পায়ে তারে আজি করেছে চঞ্চলা-
আনন্দেতে এক হল তার পৌঁছোন আর চলা।"
এবার ধমক খেলাম বেরসিক রবিশংকরের কাছে। নেমসেক হলেও ও রবি ঠাকুরকে দুচোক্ষে দেখতে পারে না। বলল- 'বসে বসে কবিতা না আউড়ে শহরটা একটু বেড়িয়ে নিলেই তো হয়। অশোক, ঈশ্বর, তুমলোগ এলাহাবাদ দেখা?'
দেখা গেল আনন্দ ভবন আর দু'একটা দর্শনীয় জায়গা ঘোরা থাকলেও সঙ্গম কেউই দেখেনি। তাই একযোগে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা মালপত্র ক্লোকরুমে জমা করে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এলাম। সকাল থেকে চা ছাড়া কিছু পেটে পড়েনি, বাইরে রাস্তায় এসে সারি সারি হোটেল দেখে
তাই হঠাৎ খুব খিদে পেয়ে গেল। 'অব ব্রেকফাস্ট কা টাইম কাহাঁ হ্যায়? চলো লাঞ্চ করতে হ্যাঁয়'- ঈশ্বর বলে। অগত্যা একটা মাঝারি দেখে রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়লাম আমরা সকলে।
অশোক আর রবি মাছ-ভাতের অর্ডার দিয়েছে, বাকি সবাই চিকেন-রাইস। কিন্তু আমাদের মুর্গীর ঝোলে মাছের গন্ধ কেন? 'এই তোদের মাছের ঝোলে মুর্গীর গন্ধ আছে?' আমি শুধোলাম রবিকে। ঠিক তা ছিল না, মাছের ঝোলেও মাছেরই গন্ধ। চিৎকার চেঁচামেচি করে জানা গেল- যে ঝোলে মাছ ফোটানো হয়েছে মুর্গীর ঝোল শেষ হয়ে যাওয়াতে সেই উদ্বৃ‌ত্ত মাছের ঝোলই ঢেলে দেওয়া হয়েছে চিকেনে। স্টেশন বাজারের হোটেল আর কত পারফেক্ট হবে? শেষমেশ সবাই মাছ-ভাতই খেলাম। আমরা তিনজন বাঙালি, আর বাকি দুজন মৈথিলি- দ্বারভাঙ্গা মানে দ্বার-বঙ্গের বাসিন্দা অর্থে হাফ-বাঙালি, মাছে অরুচি নেই।
এরপর একটা টাঙ্গা ভাড়া করে সবাই মিলে আসা-যাওয়ার কড়ারে প্রয়াগ রওনা হয়ে গেলাম। তখন বেলা সাড়ে এগারোটা, সমীর বলল, 'বারোটা বাজতে দেরি নেই আর'। কথাটা যে অন্যদিক দিয়ে সত্যি হতে পারে, কে জানত সেটা!

টাঙ্গার কোচোয়ান ছিল আমুদে গপ্পবাজ লোক। এতগুলো নতুন মানুষ পেয়ে ও জ্ঞান দিতে শুরু করেছে। 'বোলিয়ে তো সাহেবলোগ, প্রয়াগ তীর্থ ইতনা ফেমাস কিউঁ হ্যায়?'
- 'তেরে মন কী গঙ্গা ঔর মেরে মন কী যমুনা কা
বোল রাধা বোল সঙ্গম হোগা কি নেহি!' অশোক গেয়ে ওঠে মজা করে। 'গঙ্গা-যমুনা কা সঙ্গম হ্যায় ওহাঁ।'
- 'আরে সাহেব, সিরফ গঙ্গা-যমুনা নাহি, একঠো সরসতী ভি থা কিসি টেম, উ আজকাল জমিন মা ঘুসল গয়িল। বহুত পুণ্যস্থান হ্যায়, সারি কথা তো সুনিয়ে।'
এই বলে টাঙ্গাওলা দিলাওয়র হুসেন ভাই পৌরাণিক আর লোককথা মিলিয়ে মিশিয়ে যে কাহিনী শোনাল, তা বহুশ্রুত, তবু সংক্ষেপে বলছি। আসলে যদ্দিন টি-আর-পি থাকে সিরিয়াল টেনে যেতে হয় কিনা, এ সব টিভিওয়ালারাই শিখিয়েছে, নতুন আর কি!
এ গল্পও নতুন নয়। শোনা কথা আবার নতুন করে বলা। দুর্বাসার শাপে লক্ষ্মীছাড়া হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। লক্ষ্মীদেবী স্বর্গচ্যুত হয়ে বসে রইলেন সমুদ্রের নীচে গিয়ে। দেবলোকে হাহাকার, ব্রহ্মার পরামর্শে নারায়ণের তপস্যায় বসলেন ইন্দ্র। প্রীত হলেন নারায়ণ। সিন্ধু কন্যা রূপে লক্ষ্মী দেবীকে জন্মগ্রহণ করতে আদেশ দিলেন তিনি। তারপর দেবতাদের নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে বললেন দেবতাদেরকে। মন্দার পর্বত হল মন্থন-দণ্ড, নাগরাজ বাসুকীকে বানানো হল দড়ি। আর এ বিশাল কাজ শুধু দেবতাদের পক্ষে করা কিছুতেই সম্ভব নয় বলে সঙ্গে অসুরদেরও নিতে বললেন। কথা হল, মন্থনে যা কিছু সম্পদ উঠবে তা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন দেবতা ও অসুরেরা।
সমুদ্র মন্থন শুরু হল। উঠে এলেন বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষ্মী, উচ্চৈঃশ্রবা নামে ঘোড়া আর ঐরাবত নামে হাতি। তারপর দেব-বৈদ্য ধন্বন্তরি উঠে এলেন অমৃতে ভরা কুম্ভ হাতে নিয়ে। দেবতাদের পরমধন অমৃতকুম্ভ যাতে দেবতাদের হাতছাড়া হয়ে অসুরদের হাতে না পড়ে, দেবরাজ ইন্দ্র তাই কুম্ভ নিয়ে পালাতে বললেন পুত্র জয়ন্তকে। পিতার আদেশ পাওয়া মাত্র অমৃতকুম্ভ নিয়ে ছুটতে লাগলেন জয়ন্ত, সমুদ্র মন্থনের সার বস্তুই যে অমৃত, যা পান করলে অমরত্ব লাভ করা যায়।
এদিকে অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য ব্যাপারটা লক্ষ করে অসুরদের আদেশ দিলেন জয়ন্তকে ধরতে। আগে আগে জয়ন্ত ছুটছেন অমৃত কুম্ভ নিয়ে- পিছনে ছুটছে অসুররা। এইভাবে সমানে তিনদিন ছোটার পর জয়ন্ত একটু বিশ্রাম নিতে বসলেন গোদাবরী-তীরের নাশিকে। আরো তিনদিন পরে পরে একবার করে বসতে হল রেবাতীরের উজ্জয়িনীতে, গঙ্গাতীরের হরদ্বারে (আপনারা জেনে রাখুন বাবুসায়েব, বাঙালিরা ভুল করে হরিদ্বার বলে, কথাটা কিন্তু হরদ্বার) আর এই ত্রিবেণীসঙ্গম প্রয়াগে- বারো দিন ধরে ছোটাছুটি করে ফিরে আসতে হয় সেই সাগর-তীরে অমৃত বিলি করতে। এই চারটে স্থানই হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ, প্রতি তিন বছরে একবার করে মহাস্নানযোগ আসে একেকটা জায়গায়, যাকে কুম্ভমেলা বলে আর বারো বছরে প্রয়াগে পূর্ণকুম্ভ রিপিট হয়।
- 'কিন্তু তিন তিন বছরে কেন? ও তো তিন-তিন দিন মে হোনা চাহিয়ে।' আর পূর্ণকুম্ভই বা কী জিনিষ?- আমাদের জিজ্ঞাসা।
- 'হাম মুরখ আদমি হুঁ বাবুসাব, লেকিন ইয়ে শুনা হুঁ কি দেওতা কা এক দিন হামারা এক সাল কে বরাবর হোতা হ্যায়।' সে জন্যে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর চার জায়গায় কুম্ভমেলা হয়, গড়ে একটা পূর্ণ কুম্ভ হয় বারো বছর পরে আর ছ'বছরে অর্ধকুম্ভ। হরিদ্বার আর প্রয়াগে পূর্ণ অমৃত কুম্ভ হয় কুম্ভ নামানোর সময় এই দু-জায়গায় কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল বলে। প্রতি ১৪৪ বছরে নাকি একবার মহাকুম্ভ হয়, জানিনা এর পর কোন সালে হবে সেটা।
- 'লেকিন চৌকন্না রহিয়ে সাবজী, পাণ্ডালোগ বহুত পরেশান করতে হ্যাঁয়'- সচেতন করে দিল টাঙ্গাওলা-ভাই। জানা গেল, আগে ওদের উপদ্রব এমনই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছিল, ওরা নাকি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে কুম্ভমেলার অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি, অহিন্দু ঘরের বউ বলে। তবে তিনিও কম যান না। মেলা-অনুষ্ঠান সমেত পুরো চক্রটাকে জাতীয় আইনের আওতায় এনে ফেলে ওদের জব্দ করেছেন। এখন তো পুরী, বেনারস, দেওঘর, মথুরা সর্বত্র সরকারি আইনের শৃঙ্খলা, তবু যেহেতু এদেশে আইনের রক্ষকরাও ভক্ষকদের দলে, তাই পাণ্ডা আর তার সাগরেদরা এখনও সুযোগ পেলেই ভালই ঠকাতে থাকে নিরীহ তীর্থযাত্রীদের। পরে জেনেছিলাম ভারত সেবাশ্রম সংঘের মত প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে এলে তেমন সমস্যা হয়না।
গল্পে গল্পে খেয়াল করিনি কখন হনুমানমন্দির ছাড়িয়ে সঙ্গমতীর্থের ঘাটের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের টাঙ্গা।

টাঙা থেকে নেমে যমুনার তীরে এসে দাঁড়াতেই পাণ্ডারা এসে ছেঁকে ধরল। 'আইয়ে বাবুলোগ সঙ্গম কা দর্শন কীজিয়ে...... গঙ্গা মাইয়া কী পূজা চঢ়াইয়ে......পিতৃপুরুষ শ্রাদ্ধ-তর্পণ কীজিয়ে......আইয়ে সাব, নাও রেডি হ্যায়......।
এরই মাঝে ভীড় ঠেলে-ঠুলে জনাচারেক নাপিত এসে জুটেছে। 'বৈঠিয়ে বাবুজি, মুণ্ডন কর দেতে হ্যাঁয়'। আরে মুণ্ডন করব কেন খামখা, পিতৃশ্রাদ্ধই বা কিসের, বাপ-মা বেঁচে আছে আমাদের! তাই শুনে তর্পণ-ওয়ালা পাণ্ডারা পিছিয়ে গেলেও নাপিতরা ছাড়ে না। 'বাবুজি, ফির ভি মুণ্ডন তো করা হি লীজিয়ে। তেল-সিন্দুর-শ্যাম্পু কা খরচা বচেগা, কাংঘি ভি খরিদনা নেহি পড়েগা। কিতনা টেম ভি বচেগা সোচিয়ে!' সমীর আর অশোক দুজনেই লম্বা-চওড়া স্বাস্থ্যবান ছেলে, ওরা জামার আস্তিন গুটিয়ে তেড়ে যেতেই সবাই হাওয়া।
নাপিতরা কেটে পড়লেও নৌকো-পার্টি তখনও দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়। একজন এগিয়ে এসে বলল, বাবুজি, আপনারা এখন সঙ্গমের কাছে যমুনার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখুন জলটা গাঢ় নীল, কালো বলা চলে। বাঁদিকে ওই দূরে তাকিয়ে দেখুন, ওই দেখানে লাইন করে খুঁটি পোঁতা আছে, ওখানে যমুনা গিয়ে গঙ্গা-মাইয়াতে মিশছে। গঙ্গাজল সাদা, একটু ঘোলাটে। মাইয়া কী কৃপাসে সঙ্গম এক লাইন সে সাফ পাতা চলতা হ্যায়। চলুন ওখানে নিয়ে যাব, পাটাতন নামিয়ে স্নানের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে।
এতদূর এসে কিছু না দেখে ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না। ঈশ্বর দরদস্তুর শুরু করে দিল। 'সির্ফ সাড়ে সাতশো রুপিয়া দীজিয়ে', ওরা বলল। পাগল! আমরা স্টুডেন্ট, অত পয়সা নেই, তিরিশ টাকা দিতে পারি। শেষ পর্যন্ত চল্লিশ টাকায় রফা হল। মনে হয় সেটাও একটু বেশি হয়ে গেল, যাকগে, পাঁচ জনে তো শেয়ার হয়ে যাবে। আমাদের কাছে পয়সা বলতে ধানবাদ থেকে দিল্লির ফার্স্ট-ক্লাসের ভাড়া ধরিয়ে দিয়েছিল ওরা। আমরা তো গেছি স্লীপারে, ইন্টারভ্যুতে কী ফলাফল হবে জানিনা, ওই ডিফারেন্সটুকুই আমাদের লাভ। অগত্যা পাঁচজন মিলে নৌকোতে চড়ে বসলাম।
'কি হে, তোমাদের নৌকো এত ভেজা কেন, বসব কোথায়?' আমি বলি।
'বাবুজি, নাও থেকে আমরা সঙ্গমে গঙ্গাস্নান করাই, তাই এগুলো ভেজা। আপনারাও তিন-নদীর জলে স্নান করে নিন। এই পবিত্র সঙ্গমে স্নান করলে জীবনভরের পুণ্য হয়। নৌকো থেকে পাটাতন নামিয়ে দেব, ওই খুঁটিগুলো ধরে ডুব দিয়ে নেবেন। বোলিয়ে ভাইয়া, সির্ফ পচাশ রুপিয়া হর আদমি কে লিয়ে। আচ্ছা আপলোগ চালিশ হি দীজিয়ে।'
পাগল না পেট খারাপ! বিকেল পাঁচটায় ট্রেন ধরতে হবে, একটা বেজে গেছে, এখন জামা-কাপড় ভেজাই আর কী! বলা-বাহুল্য আমরা কেউই রাজি হলাম না। মাঝি আর তার অ্যাসিস্টেন্ট দুজনেই বেশ মনঃক্ষুণ্ন হল, কিন্তু আমরা কেউ দরাদরিতেও গেলাম না। কিন্তু বিপদ এল অন্যদিক থেকে।     

গঙ্গা এখানে উত্তর থেকে দক্ষিণে বইছে, যমুনা পূব থেকে পশ্চিমে। আমরা আছি গঙ্গার পশ্চিম আর যমুনার উত্তরের মাঝের জায়গায়। 'গঙ্গার পশ্চিম কূল, বারাণসী সমতুল'- বলা হয়ে থাকে, তবে বেনারসে গঙ্গা আবার উত্তরবাহিনী। কাশী বা বারাণসীতে গঙ্গা দেখতেই যায় বটে সবাই, কিন্তু বারাণসী নামটা এসেছে বরুণা আর অসী নদীর থেকে। একসময় অসী হয়ত বেশ চওড়া স্রোতস্বিনী নদীই ছিল, আজ তার অবস্থা একটা নালার মত। বরুণা কাশীর উত্তরে আর অসী দক্ষিণে গঙ্গায় এসে মেশে। গঙ্গামাহাত্ম্যের কাছে ম্লান আজ এদের নাম, হয়ত শুধু বইয়ের পাতাতেই দেখি- 'বহে মাঘমাসে শীতের বাতাস, স্বচ্ছসলিলা বরুণা' (সামান্য ক্ষতি)। অসী আর গঙ্গার সঙ্গমের কাছে অসীঘাট আর তুলসী-ঘাট, যেখানে বসে তিনি রামচরিতমানস লেখেন, দেহও রাখেন-
"সম্বত সোলহশো আসসি, অসী গঙ্গা কে তীর।
সাওন শুক্লা সপ্তমী, তুলসী ত্যজয়ো শরীর।।"
 তবে গঙ্গার পশ্চিমকূল বলে নয়,
 প্রয়াগ-মাহাত্ম্য নিজগুণেই বারানসীর চেয়ে কম কী!
যাক, নৌকো এদিকে পৌঁছে গেছে সঙ্গমস্থলে। এতক্ষণ যমুনা বেশ চওড়া ছিল, কিন্তু গঙ্গা এত শীর্ণ কেন? 'কিঁউ নহি হোগা, গঙ্গাজী নে ইতনি মিট্টি লাঈ, সঙ্গমস্থল পর জলোঢ় দ্বীপ বন গয়া জো!' তাই তো। একটা বিশাল দ্বীপ ঠিক সঙ্গমের মাঝামাঝি। কিন্তু জলোঢ় জিনিষটা কী? জানা গেল তার অর্থ - জল দ্বারা ঢোয়ী মিট্টি। বুঝলাম, এটা alluvial island বা পাললিক দ্বীপ। দ্বীপজুড়ে সাধুসন্তদের অজস্র তাঁবু পড়ে নাকি কুম্ভমেলায়। দেখি যমুনার ঘন নীল জল যেখানে শেষ হয়েছে, গিয়ে মিশেছে গঙ্গায় সাদা ঘোলাটে জলের স্পষ্ট একটা রেখা দেখা যাচ্ছে, বুঝিয়ে দিচ্ছে দুই নদীর পার্থক্য। তারপর যমুনা আর নেই, আর সরস্বতী? সে নাকি ভূগর্ভ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিশছে দুই নদীতে। কিন্তু জলের রঙের এই তারতম্য কেন? ঈশ্বর ঝায়ের অনেক জ্ঞান, বলল, এদেরকে শুধোস না, ব্যাটারা ঈশ্বরের লীলা-টিলা বলে বুঝিয়ে দেবে। আসলে এখানে যমুনা প্রায় চল্লিশ ফুট গভীর বলে ঘননীল আর গঙ্গা পলিমাটির কারণে আর মাত্র চারফুট গভীর বলে এরকম ঘোলাটে। ঠিক সঙ্গমে সবাই স্নান করতে চায় বলে নৌকো বাঁধার সারিসারি খুঁটি পোঁতা ছিল। এখন শুনলাম চেন-টেনের ব্যবস্থা করেছে, আমরা তেমন কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না।      
নৌকোর দুই মাঝি আর ছোকরা খালাসি দেখলাম বেশ চৌখস, ভাল হিন্দিও বলে, ভোজপুরি ঘেঁসা নয়। হঠাৎ একজন আমাদের জাত জিজ্ঞেস করল। পাঁচজনই ব্রাহ্মণ শুনে খুব খুশি ওরা, কেন ঠিক বুঝলাম না। তখন আমরা চল্লিশ ফুট গভীরতার যমুনায় ভাসছি। ছেলেটা বলে, 'বাবুজি আপলোগ ব্রাহ্মণ হ্যাঁয়, গঙ্গামাতা কো পূজা তো চঢ়াকে হি জাইয়ে।' মানে? কোথায় মন্দির, কোথায় পূজারি, এই মাঝ-নদীতে কিভাবে পুজো করব? হ্যাঁ, আরেকটা নৌকো চলেছে বটে আমাদের সাথে সাথে প্রায়, কিন্তু তাতে কী?
That was the key! বুঝলাম, আর ভালভাবেই বুঝলাম। সঙ্গম দেখে দিলখুশ, মনের আনন্দে গুনগুন করছি-
"মিলবে না কি মোর বেদনা তার বেদনাতে-
গঙ্গাধারা মিশবে নাকি কালো যমুনাতে গো......"
হঠাৎ ঘটাং-ঘট। কেঁপে উঠল আমাদের নৌকো। চমকে পেছন ফিরে তাকালাম সকলে।    

একটা অন্য নৌকো এসে ঠেকেছে আমাদের নৌকোর গায়ে। ঝপ-ঝপ করে তার থেকে লাফিয়ে আমাদের নৌকোয় এসে নামল ষণ্ডাগোছের তিনজন মানুষ, গায়ে নামাবলী, মাথায় বিশাল টিকি। 'গঙ্গা-যমনা-সরসতী মাইয়াকো কিরপা করকে পূজা চড়াইয়ে, বিলকুল কম খর্চে মে'- দাবী তাদের। বলছে বটে কৃপা করে, সেই মুন্নাভাইয়ের 'বিনম্রতা সে'র মত করে, কিন্তু গলার টোনে আর ভাবভঙ্গীতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ওদের প্রত্যাখ্যান করলে মাঝনদীতে নৌকাডুবি হয়ে পাঁচটি প্রাণ যাওয়াও বিচিত্র নয় তেমন। তবু সমীর বলে- 'উসব নহি হোগা, হামলোগ স্টুডেন্ট হ্যাঁয়, ফালতু প্যায়সা নেহি কিসিকে পাস।'
ওরা যেন অন্তর্যামী। জানে যে একেবারে নিঃস্ব নই আমরা। তাই একটু কায়দা করে বলে, দেখুন, এখানে তো বারবার আসবেন না। তাছাড়া আপনারা পাঁচজনেই ব্রাহ্মণ (কিকরে বুঝল কে জানে, নিশ্চয় আমাদের মাঝি কিছু ইশারা করেছিল), ঘরে ফিরে গেলে মা-বাপকে কী বলবেন? কমসে কম পাও সের লাড্ডু আউর এক-এক নারিয়েল তো চঢ়াকে যাইয়ে!
আমার ইচ্ছে ছিল না, রবিরও। কিন্তু অশোক আর সমীর কী ভেবে রাজি হয়ে গেল, আর তাই দেখে ঈশ্বরও। অগত্যা আমি আর রবিও হ্যাঁ বলে দিলাম, একযাত্রায় পৃথক ফল হয় কেন! ভাবলাম নারকেল বড়জোর একটাকা আর একপোয়া লাড্ডু পাঁচটাকা, আর কত হবে? গোটা দশেক খরচ করে যদি কিছুটা পুণ্য পাওয়া যায়, ক্ষতি কী?
হ্যাঁ বলতেই মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে বসিয়ে দিল আমাদের পাঁচজনকে, তারপরে হাতে কিছু ফুল-বেলপাতা আর একটা করে ভিজে নারকেল ধরিয়ে দিল। নারকেলগুলো ভিজে কেন? 'উ ছই কে নীচে রখে থে না, ভিঁগ গয়া'- জবাব এল। পাঁচখানা করে বোঁদের লাড্ডু পাতার ঠোঙায় করে রাখা হল। ওদের মধ্যে যে একটু ভদ্রগোছের, মনে হল তিনিই আসল পুরোহিত, বাকি দুজন গুণ্ডা বা পাণ্ডা- বিড়বিড় করে শঙ্করাচার্যের লেখা গঙ্গাস্তোত্র আউড়াতে শুরু করলেন-
"
দেবি! সুরেশ্বরি! ভগবতি! গংগে ত্রিভুবনতারিণি তরলতরংগে | শংকরমৌলিবিহারিণি বিমলে মম মতিরাস্তাং তব পদকমলে ‖"       
এটুকু শুধু বোঝা গেল, তারপরের কথাগুলো যা শুনলাম- "হুঁ হুঁ হুম 
হুঁ হুঁ হুম হুঁ হুঁ হুম হুম হুম......" ইত্যাদি, মানে আর কিছু ওর মনে নেই, দরকারই বা কিসের! নাম-ধাম-গোত্র বলে পুজো দেওয়া হল। এরপর বলা হল নারকেলগুলো সঙ্গমের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। ও বাবা! যেই না ছুঁড়ে ফেলা, সামনের খুঁটিগুলোতে নোঙর-করা একটা নৌকো থেকে দুটো নুলিয়া-টাইপের বাচ্চা লাফিয়ে পড়ল জলে আর মুহূর্তে সাঁতার কেটে পাঁচখানা নারকেলই তুলে এনে পাণ্ডাদের নৌকোয় রেখে এল। এতক্ষণে ভেজা নারকেলের রহস্য উদ্ধার হল।

সব শেষে টাকা দেওয়ার পালা। হিসেব করে সে ব্যাটা বলে কিনা তিনশো পঁচানব্বই টাকা! কিভাবে? 'পাঁচ গুনা আট- চালিশ নারিয়েল কা, পচাস করকে পাও সের লাড্ডু পাঁচ-লোগ কে ঢাই শো, পাঁচ গুণে ইক্বিশ একশো পাঁচ রুপিয়া পূজা কে লিয়ে। পরনামি ভি থোড়া দে দিজিয়ে অলগ সে।' 

মহা তর্ক লেগে গেল। বাজারে বিশ টাকা কিলো লাড্ডু, নারকেল দু-টাকা, তাও ফেরৎ পেয়ে গেছো। বহু ঝগড়া-ঝাঁটি, ভীতি-প্রদর্শন সবকিছুর পর রফা হল একশো এক টাকায়, নিয়ে বিদায় হল ওরা। হ্যাঁ, একটা করে নাড়ু রেখে চারটে করে প্রসাদ আর কিছু ফুল ফেরত দিয়েছিল। তারপর স্টেশনে ফিরে আসতে কোন ঝামেলা হয় নি। ফেরার সময় সঙ্গমের হনুমান মন্দিরের শায়িত হনুমানজির একনজর দর্শন করে নিয়েছিলাম, তিনি আর কোন বাগড়া দেন নি। তবে টাঙ্গায় ওঠার পর দিলাওয়র ভাই সব শুনে বলল- 'আপলোগকো সংকটমোচন শ্রীহনুমানজি কা দর্শন পহলে কর লেনা চাহিয়ে থা, ফির সঙ্গম-দরশন মেঁ কোই সংকট নহি আতা।

'আমাদের সফরের সেরা অভিজ্ঞতা কী হল বলত?' স্টেশনে ফিরে রবিশংকর বলল। 'টাঙ্গাওয়ালা দিলাওয়র হুসেনের হিন্দু-শাস্ত্রের জ্ঞান।'
বাকি সবাই একযোগে ঘাড় নাড়লাম। অশোক বলল- 'এহি হ্যায় ইন্ডিয়া!'