Friday, March 26, 2021

 অমৃত-সমান।।


মহাভারতের সব পৃষ্ঠায়
নেই ছড়ানো মোটেই বিষ্ঠা
জেনো অমৃত-কুম্ভ সবটাই
তবু প্রশ্ন প্রচুর থেকে যায়।

মহারানী গান্ধারী পতিপ্রাণ
কেন ঢেকে রাখলেন চোখখান?
হয়ে, অন্ধরাজার যষ্টি
তিনি ভজলেন মাতা ষষ্ঠী?

জতুগৃহটা যে ছিল লাক্ষার
এই কথাটা ছিলনা জানা কার?
তবু নিজেই আগুন লাগিয়ে
ওরা সবকটা গেল পালিয়ে!

ভীম হিড়িম্বে হল যুদ্ধ
ছিল দুজনেই ভারি ক্রুদ্ধ;
তার দাদাটা যখন মরল
কিনা হিড়িম্বা প্রেমে পড়ল!

বিশ্বরূপ দেখালো কেষ্ট
বুঝি জাদুকর ছিল বেস্ট ও
শির আকাশ করল তুচ্ছ
রাজসভা কত ছিল উচ্চ?

কেন রাজভোগ ছেড়ে কেষ্টা
খেল বিদুরের খুদ শেষটায়?
অশ্বত্থামা পায়নি ত দুধ
তাই কেষ্টঠাকুর খান খুদ!

খেয়ে যজ্ঞঘৃতের খাদ্য
হল অগ্নির অগ্নিমান্দ্য
অর্জুন কত পশু মারল
খেয়ে প্রোটিন অসুখ সারল! 

এই হাজার রকম লেখাটি
সব পোয়াতো গণেশ বোকাটি
খেয়ে সিদ্ধি মেশানো মিষ্টি
লিখতেন যা যা অনাসৃষ্টি

তিনি না ভেবেই কিছু সাত-পাঁচ
লিখে চলতেন বাতেঁ সাঁচ সাঁচ!
তবে ইঁদুরটা ছিল শয়তান
সব কেটে দিত করে খানখান!
যবে গণশা ব্যস্ত লিখতে,
তাঁর ইঁদুরটা যেত শিখতে-
জাভা ভিস্যুয়াল আর ওরাক্‌ল,
তাই ঘটে যেত এত মিরাক্‌ল!

Thursday, March 25, 2021

 এইয়ো, মুখ সামলে! 


কবি ফেসবুকানন্দকে ধন্যবাদ, পথ দেখানোর জন্যে। কবিতা মঝে মাঝে সোডার মত গুঁতো দিয়ে ওঠে, অথচ কলমের (বা মাউসের) ডগায় আসতে চায় না, তখন এই কায়দায় মহাকাব্য লিখে ফেলা যায়। যেমন ধর-
এদিন আজি কোন দুধে গো ভরে দিলে ভাঁড়,
আজি প্রাতে গাই-দোয়ানো সফল যে আমার।
লিখি যত কবিতা, বেকার সবি তা-
পাবলিশারের খোঁজে ছিঁড়ে গেল সোল,
অমাবস্যার চাঁদ যেন ব্ল্যাক হোল।
এইভাবে সবে বাখানিল মোর উপস্থিতবুদ্ধি
তাই কবিতার শেষে রেখো খানিকটা মুখশুদ্ধি।
উঃ, কি উল্লাস যে হচ্ছে!
একথা তো সুকুমার বলেছেন বুঝিয়ে,
জবাবটা জেনে নিন মেজদাকে খুঁচিয়ে।
মেজদাকে ধরবেন কিভাবে জানেন না?
গাছে থাকে গেছোদাদা, তার কাছে যান না।
দাদা থাকে তিব্বতে, উড়ে যাব, ডানা কই?
কি করব? আমরা তো গুরু-মারা চেলা নই!

(লিমেরিক)
ও ডাক্তার, কী হল গো আমার ডায়াগ্নোসিস?
ডাক্তার কন, বলি যদি অরোরা বোরিয়ালিস্‌-
বুঝবে কিছু? মাথা নাড়াই,
লাভ কী মিছে করে লড়াই,
মোবাইলেই গুগল আছে, যৎসামান্য ফীস!

হালকাভাবেই বলি, প্রেমের বন্ধন অনেক সময় পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে যদি প্রেমিক বলে- 'রোগের মতন বাঁধিব তোমায় দারুন আলিঙ্গনে'। তখন সেই যন্ত্রণার থেকে ছাড়া পেতে হয়ত প্রেমিকাকেও বলতে হয়- 'ওগো প্রিয় মোর, খোল বাহুডোর, পৃথিবী তোমাকে যে চায়'। কি জানি কেসটা আসলে কি ছিল!
ঠাট্টা নয়, জনশ্রুতি আছে গোস্বামী তুলসীদাস এইরকম ভালবাসতেন স্ত্রীকে। স্ত্রী যেটা করলে লোকে পতিব্রতা বলে প্রশংসা করে, স্বামীদের ক্ষেত্রে একই অবস্থায় জোটে স্ত্রৈণ বলে লাঞ্ছনা। একদিন এমন অবস্থা দাঁড়াল যে স্ত্রী একবেলার জন্যে পিত্রালয় গেছেন, তুলসীদাস থাকতে না পেরে সেই রাত্রেই ছুটে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি। লজ্জিতা, অপদস্থা তুলসী-পত্নী তখন ভর্ত্সনা করে তাঁর পতিকে যা বলেছিলেন, তুলসীদাসের লেখা থেকেই বলছি-
"লাজ না লাগত আপকো, দৌড়ে আয়হু সাথ
ধিক, ধিক, এইসে প্রেম কো, ক্যা কহুঁ ম্যয় নাথ।
অস্থি-চর্মময় দেহ মম, তামেই এয়্সী প্রীতি,
এইসা যো শ্রীরাম মে হো, ন হোতী তো ভবভীতি।"
ঘুরে গেল তুলসীর জীবনের মোড়। সংসার ছেড়ে তিনি রামচরিত নিয়ে পড়লেন, বাকিটা ইতিহাস।

অনেকে বলেন শরৎচন্দ্রের সাহিত্যে মুসলমানদের সেভাবে দেখানো হয়নি। ভুল কথা। তিনটি মুসলিম চরিত্র, মহেশের গফুর মিঞা, পল্লীসমাজের আকবর লেঠেল আর শ্রীকান্তের গহর এরাই যথেষ্ট বাংলার তখনকার মুসলমান জাতির দারিদ্য, নিষ্ঠা ও আত্মসম্মানবোধের পরিচয় দেবার জন্যে। আকবর লেঠেলের সেই মার খেয়েও শত্রুর তারিফ- 'সাবাস ছোটবাবু। মায়ের দুধ খেয়েছিলে বটে। লাঠি ধরলে বটে!' আর সেই বিখ্যাত উক্তি- 'আপনি হুকুম করলে আসামী হইয়্যে জ্যাল যেতে পারি, ফৈরিদি হব কোন কালামুয়ে?'- এই দুটি উক্তিই মুসলমানী চরিত্রের দৃঢ়তা ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট।

বিদ্যাসাগরের 'সততসঞ্চরমানজলধরপটল' কথাটা মনে পড়ল আকাশের ঘনঘটা দেখে, ওটা বেশ ভালভাবে উরুশ্চারন করা যায়। কিন্তু 'প্রোষিতভর্তৃকা' কথাটা অভিধান থেকে তুলে তার জায়গায় 'পোসিতভত্তিকা' করে দিতে হবে, বুঝলে পার্থ......একন আর ব্রাত্য শিক্ষামন্ত্রী নেই যে টিক-টিক করবে, তাপস্পালটাও কোতায় যেন পাইলে গেল!

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় 'গু' এর আধিক্য আছে বটে। উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, গুইয়ানা বা গায়ানা(guyana), নিকারাগুয়া (তার আবার রাজধানী মানাগুয়া), গুয়াতেমালা। ওদের কবির নাম (তিনি শ্রদ্ধেয়, ছোট না করেই বলছি) গুয়েভরা। পেরুর গুয়ানো আর চিঞ্চা দ্বীপপুঞ্জে তো গুয়ানো পাখির গু থেকে উত্পন্ন সার ও গুয়ানো পাখি বহু দেশে রপ্তানি হত এককালে, শেষে দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে পেরু-চিলির যুদ্ধই বেধে গেল স্পেনের সাথে। তাই বলি, 'গু' বলে যেন কেউ হেলাফেলা না করে!


গুয়াহাটি ছাড়ার প্রায় সতের বছর পর গোবর্ধন ফিরছে। পাড়ার পুরনো বুড়ো মুচি কিন্তু তার গোবরাভাইকে ঠিক চিনেছে। 'তোমায় একটা জুতোজোড়া সারতে দিয়ে গেছিলাম, মনে আছে?' গোবরার প্রশ্ন। 'এই দেখো, মনে থাকবে না কেন? এই তো সেদিনের কথা', মুচি বলে, 'তবে গোবরাদাদা, জুতোজোড়াটায় সামান্য একটু কাজ বাকী আছে, ওটা তুমি কাল পাবে।'
শিব্রামের এই গল্পটার কোনও জুড়ি নেই! এর পরের অংশটা আরো মজার। এত টাকা করেছেন, তাই হর্ষবর্ধনের ইচ্ছা গুয়াহাটিতে একটা সর্ব-ধর্ম-সমন্বয়ের তীর্থক্ষেত্র স্থাপনা করা। মুচিভায়াকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে টাকা-পয়সা গুনে দিয়ে গোবরা কলকাতা ফিরে এল। তারপর কাজ শেষ হওয়ার খবর পেয়ে দুই ভাই গিয়ে দেখে, মুচিভাই সেখানে স্থাপন করেছেন সারি সারি পায়খানা - সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ!
এতদিনে মোদীভাই এ কথাটা ভেবেছেন। বাঙালি শিবরাম বহু আগেই ভেবেছিলেন।


শুওরটা কচু চেনে, মা কালী চেনে পাঁঠা-
রতনে রতন চেনে, টাটায় চেনে ঝাঁটা !
টাটা ঢুকলেই শিল্প, শিল্প মানেই চাকরি, তার মানেই কাজ করতে হবে। অতএব বন্ধুগণ, আসুন আমরা পোত্যেকে মিলে টাটাকে বাংলা থেকে চির নিব্বাসন দিই, এখন দিদি বললেও মানছি না।
কোরাস।। মানছি না, মানব না, ইনকিলাব জিন্দাবাদ....ইত্যাদি।


Kiss-এ kiss-এ লাভ নেই আইনের চক্ষে,
নোট ছাড় পুলিশকে, তবে পাবে রক্ষে।
তেলে-জলে মিশ খায় নাকি কোনও দিন তা?
অলি ফুলে কিস্‌ খায়, মন নাচে ধিন্‌-তা।
শোনো সুধীজন শোনো, সব ফুলে মধু নেই-
কিসে-বিষে-মিশে শেষে যাবে টেঁশে, জেনো এই।

Friday, March 5, 2021

প্রেতচক্র রহস্য

 প্রেতচক্র রহস্য।।


'প্ল্যাঞ্চেট নয়, ওর উচ্চারণ হবে 'প্লাঁশেৎ' ' - ইতু বলল। ও টেনিদার গল্পের খুব ভক্ত, নির্ঘাৎ ক্যাবলার রোল প্লে করছে এখন।

'আচ্ছা, মানছি। গল্পটা শুনতে দিবি এখন?' ঋতুদি স্পষ্টই বিরক্ত ছোট বোনের পাকামোতে। 

এসেছি কলেজের বন্ধু দেবুর বিয়ের বউভাতে ওদের বাড়ি রাঁচিতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে ওর ছোড়দি ঋতুদি, ছোট বোন ইতু আর তাদের বন্ধুরা প্ল্যান করছিল ফুলশয্যায় আড়ি পাতার। দেবুর এই ব্যাপারটা একেবারে অপছন্দ। তাই আমি আর আরেক পুরনো বন্ধু রবি মিলে দায়িত্ব নিয়েছি সবাইকে আটকাবার, অথচ বেশ কায়দা করে। কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই লোডশেডিং। জেনারেটার চললেও, সে তো এমার্জেন্সি সার্ভিস দিচ্ছে শুধু। এই টিমটিমে আলোয় আমি শুরু করলাম রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে আমাদের প্রেত-চর্চার গল্প। তারই সূত্র ধরে এল প্ল্যাঞ্চেটের প্রসঙ্গ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি, যেখানে শুরু করেছিলাম তার পর থেকে। 

আমরা সবাই তখন সদ্য কিশোর, ইন্টারমিডিয়েট পড়তে এসেছি ধানবাদ থেকে রাঁচিতে। তখনকার ফার্স্ট ইয়ারের হোস্টেলগুলো ছিল ঘোড়ার আস্তাবলের তুল্য, থ্রি-বেডের রুম একেকটা। জানলা নেই, তবে ওপর কিছুটা খোলা আর লম্বা টানা জাফরি আর গ্রিল দেওয়া বারান্দা। আমাদের রুমগুলো ছিল দোতলায়, নীচের তলায় আদিবাসী ছাত্রদের হোস্টেল। বাথরুম ছিল নিচের তলায়, হোস্টেলের বাইরের দিকে। রাত্রে যেতে হলে বাজে অবস্থা। তার চেয়েও বাজে ছিল মিশনারি কলেজের হোস্টেলের ডিসিপ্লিন। রাত্রি সাড়ে দশটায় মেন সুইচ অফ করে দেওয়া হত, অর্থাৎ ঘুমোও এবার। আরে ঘুমোব কী! হোমটাস্ক আছে না? ক্লাস-টেস্ট আছে না? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফাদার সুরিন সেসব বুঝতেন না, এখন ঘুমোও, ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। ধুর, তাই হয় নাকি আবার! আমরা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়তাম। রাঁচিতে গরমটা কম বলে ফ্যানের জন্যে কষ্ট হত না।

একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি রুমমেট প্রিয়তোষের মশারি দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবলাম লণ্ঠনের থেকে আগুন লেগে গেছে হয়ত। তার ঠিক দু'দিন পরে মাঝরাতে বাথরুম গেছি। ফিরে এসে দেখি আমার সব ক'টা বই খাতা যত্ন করে বিছানায় সাজানো- টেবিলে একটাও নেই! বুঝেছি, ব্যাটা প্রিয় বা শিশিরের কাণ্ড, অথচ ওরা কিনা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরো দু'দিন পরে বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দেখি শিশিরের তোষক-বিছানা ধিকধিক করে জ্বলছে- বন্ধ ঘরে আগুন এল কোত্থেকে! পরদিন রবিবার ছিল।  সকালে আমার স্টিলের ট্রাঙ্কে এক বাটি জল রেখেছিলাম, হঠাৎ আমার চোখের সামনে বাটিটা প্রায় ছ-ইঞ্চি লাফিয়ে নীচে পড়ে গেল, ঘর জলে জলময়। এবার মনে হল ভৌতিক কাণ্ডই বটে।

কথাটা চাউর হতেই কল্যাণ, জহর, প্রদীপ, অশোক সবাই জড়ো হল। অশোক বলল ও নাকি প্ল্যাঞ্চেট করে ভূত নামাতে পারে। আমি বাবার কাছে প্ল্যাঞ্চেটের গল্প শুনেছিলাম আর শরদিন্দুর বরদার গল্পও পড়া ছিল, তবে ব্যাপারটায় কৌতূহল থাকলেও বিশ্বাস তেমন ছিল না, তবু আমরা প্রাণের দায়ে মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব। ঠিক হল পরদিন রাত্রি সাড়ে দশটায় আলো নিভলে অশোক ওর যন্ত্র পাতবে, আর হারুন রশিদ থাকবে রুমের বাইরে ফাদার সুরিন বা ডুংডুং এলে অ্যালার্ট করতে। 

কথামত পরদিন অশোক ওর স্পেশ্যাল টেবল আর প্ল্যাঞ্চেটের বোর্ড নিয়ে এল। ঘরের এককোণে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে বোর্ডে সাদা কাগজ পেতে একটা পেন্সিল দু-আঙুলে হাল্কা করে ধরলাম আমরা চারজনে- আমি, অশোক, কল্যাণ আর প্রিয়তোষ, শিশির আর প্রদীপ বসে আছে ঘরের এক কোণে, বাইরে হারুন। হঠাৎ একটা হাল্কা চন্দনের গন্ধ এল নাকে, সেই সঙ্গে দরজায় মৃদু করাঘাত। 'এসেছে'- অশোক ফিসফিস করে বলল। ও প্রশ্ন শুরু করল আর উত্তরে আমাদের আঙুলে ধরা পেন্সিল খসখস করে চলতে লাগল কাগজে।

'তুমি এসেছ?'- অশোক বলা মাত্র পেন্সিল নড়ে উঠল।
'কী নাম তোমার?'
'গোপাল।'- লেখা হল অস্পষ্ট অক্ষরে।
'কী চাও?'
'তুম সব কী মৌত!'
'কেন? কী ক্ষতি করেছি আমরা তোমার?'
'এই রুমে কেউ থাকবে না তোমরা।'
'কেউ না?'
'শুধু অশোক থাকবে।'
'কেন?'
'ও খুব ভাল ছেলে। ভূত বিশ্বাস করে।'
এটুকু লেখা হতেই কল্যাণের মাথা গরম হয়ে উঠল। 'ব্যাটা ভূত! অশোক একলা ভাল ছেলে! আর আমরা সব খারাপ? এ সব অশোকের আঙুলের কারসাজি। বল!'- বলেই অন্ধকারে অশোকের কলার চেপে ধরল। এই সুযোগে ভূত পালাল আর শিশির আলো বাড়িয়ে দিল। সবাই চেপে ধরায় অশোক স্বীকার করল যে সে কিছুটা মজা করেছে, তবে ওর উপরেও মনে হয় আরো কেউ কারসাজি করছিল, সেটা কে সেও জানে না।

আমরা বাইরে এলাম। দেখি হারুন বারান্দার এককোণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নাড়া দিতেই উঠে বলে- 'এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' কে জানে সেও ব্যাটা ঢপ দিচ্ছে কিনা!

পরদিন ফাদার সুরিন ডাকলেন ওঁর রুমে। বলেন 'কাল তোমাদের রুমে অনেক রাত অব্ধি আলো জ্বলেছে, এনিথিং রং?' 
'না ফাদার, একটা হোমটাস্ক বাকি ছিল, তাই চারজনে মিলে সল্ভ করছিলাম।'
'ইটস অলরাইট। তবে কি জানো? এই হোস্টেলের একটা রুমে অনেক বছর আগে একটা ছেলে ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে সুইসাইড করেছিল। তাই রাত্রে একটু সাবধানে থাকবে।'

আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনমতে ঢোঁক গিলে বললাম, 'ফাদার, ছেলেটার নাম কী ছিল?'
'হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো দ্যাট? আই থিঙ্ক, গোপাল। হ্যাঁ, গোপাল মহাপাত্র। দ্যাট কিউট ওড়িয়া বয়!'

হঠাৎ দপ করে আলো জ্বলে উঠল। 'শেষে তুইও ঢপ দিচ্ছিস'- পেছন থেকে কার গলা পেলাম। দেখি দেবু। কখন উঠে এসেছে ফুলশয্যা থেকে। 'আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের হোস্টেলে থাকিনি কখনও, কিন্তু রুমগুলো তো দেখেছি। ফ্যান কোথায় আছে রে যে গলায় দড়ি দেবে!'

'শালা! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর? ফুলশয্যাটা বিনা আড়ি-পাতায় উদ্ধার করে দিলাম, কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবি!'  

'দাদা, ঢপ হলেই বা ক্ষতি কী? গল্পটা কিন্তু হেব্বি জমেছিল।'- ইতু বলে।

ইতিমধ্যে দেবুর মাসতুতো দাদা বিক্রমদা কখন ঢুকেছে দেখিনি। ও সেই কলেজে আমাদের চার বছরের সিনিয়ার ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- 'গোপালের গল্পটা মিথ্যে নয়। এই ঘটনার পরেই ঘাবড়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল সব কটা ফ্যান খুলে ফেলেন। আংটাগুলো আছে, দেখিসনি?' 

'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?' ঋতুদি যেন অকূলপাথারে। 
'ভূত জিনিষটা এত রহস্যময়, তার গল্পে একটু রহস্য থাকবে না?' আমি গল্প শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।