Friday, June 18, 2021

ব্যাঙের ছাতা- ছড়া

 ব্যাঙের ছাতা


কহিল হবু, শোনগো গবু রায়
ব্যাঙেরা কাল ডেকেছে সারা রাত্র,
বুঝিবা তারা ভিজেছে খালি গায়
কালকে তুমি কিনিয়া দেহ ছত্র।
আমরা সবে আরামে ঘরে থাকি
প্রাণীর প্রতি নাহি মোদের দৃষ্টি,
রাত্রি-ভোর ব্যাঙেরা চলে ডাকি
মুষলধারে পড়িছে যবে বৃষ্টি।
রাজ্যে সবে বলিবে মোরে যা-তা,
শীঘ্র তুমি কিনিয়া দাও ছাতা।

মন্ত্রী ভাবে, এই না হলে রাজা?
ভেকের তরে কত না তাঁর চিন্তা
ঘর ডুবেছে, কাঁদছে কত প্রজা
দেখেন কভু? ভাবেন কোন দিন তা
পৌষে যবে ফসল আসে ঘরে
প্রজারা সুখে করিছে গান-বাজনা,
তহুশিলদার পৌঁছে যায় দ্বারে
ঠ্যাঙায়ে তারা আদায় করে খাজনা।
সেসব কথা মাথায় থাকে কার?
ভিজিছে ব্যাঙ কর রে প্রতিকার!

মন্ত্রী ভাবে রাত্রি জেগে জেগে 
রাজার কাজে কিছুই নাহি যুক্তি
বোঝাতে গেলে হঠাৎ যান রেগে
ঝামেলা থেকে কেমনে পাই মুক্তি!
ছাতা নাহয় কিনতে হবে মেলা
ব্যাঙের তরে সংখ্যা যত লাগে
কিন্তু কত? নয় তো ছেলেখেলা!
ব্যাঙ-গণনা করতে হবে আগে।
আদেশ পেয়ে হাজার কর্মচারি
পড়ল লেগে করতে ভেক-সুমারি।

ক'দিন পরে রাজসভাতে এসে
হবুচন্দ্র হেঁকে বলেন সবে, 
ব্যাঙের দল যদি হবুর দেশে
সর্দিজ্বরে মরিতে থাকে তবে।
পণ্ডিতেরে মাইনে কেন দেওয়া?
তাড়ায়ে দিব সবারে ঘাড় ধরে-
বন্ধ হলে ব্যাঙের পোকা খাওয়া
ফসল সব মরবে ক্ষেত জুড়ে।
রাজকোষেতে খাজনা যদি কমে
সবারে বেঁধে ভেট চড়াব যমে।

গবুচন্দ্র ভেকসুমারি শেষে
রাজসভাতে করিল পেশ অদ্য,
সতেরো লাখ ব্যাঙ রয়েছে দেশে,
পোকা-মাকড় খাইয়া বাঁচে সদ্য।
সতেরো লাখ ছাতা কিনিতে হবে,
রাজকোষেতে ফুরায়ে যাবে টাকা
কহেন রাজা, কর বাড়াও তবে
সহিব ক্ষতি এমন নহি বোকা!
মন্ত্রী তুমি হয়েছ কেন তবে?
পারিষদেরা নাড়িল মাথা সবে।

ব্যাঙের ছাতা কিনিতে বাড়ে ট্যাক্সো
এমন কথা শুনেছে কেউ কোথা?
মাথা পিছু যে লাগিবে টাকা এক শো
ভাবিয়া হল সবার মাথাব্যথা।
কাঁদিয়া প্রজা না পায় কেহ কুল,
ঘরে সবার বন্ধ হল রান্না,
পণ্ডিতেরা ছেঁড়ে মাথার চুল,
রাস্তাঘাটে উঠিল রোল কান্নার।
ভাবিনু কিছু, অনেক করি যত্ন
সভার মাঝে কহে তর্করত্ন।

পুকুরপাড়ে চলিল মিলি সবে
ফুটিয়া আছে কত ব্যাঙের ছাতা,
দেখুন গুনে, তার্কিক কন তবে 
প্রতি ব্যাঙের যাবেই ঢেকে মাথা!
একেকখানা ব্যাঙকে যদি ধরো
বসিয়ে দাও প্রতি ছাতার নীচে
নিরর্থক টাকা খরচ করো,
প্রজার কেন কষ্ট বাড়ে মিছে?
মন্ত্রী ভাবে, কাটমানির হিসেব
করেছিলাম, জলে গেল সবই সে! 

কিন্তু কাজ এতই নাকি সোজা?
ধরতে ব্যাঙ প্রায় সতেরো লক্ষ
ডোবায়-বিলে ফেলতে হবে গো জাল
তিন হাজার ধীবর এল দক্ষ!
পুকুর-বিল হইল তোলপাড়,
মরিল কত মাছ আর জলজন্তু
কাদায় কাদা হইল চারিধার
ব্যাঙের দল দেয়না ধরা কিন্তু।
হেন সময় পথিক এল রাজ্যে
বিজ্ঞানী সে, এসেছে কোন কার্যে।

পথিক কহে, মুর্খ হলে রাজা
প্রজার মাথে বুদ্ধি থাকে বাকি?
বাস জলে যার তাহার জলে ভেজা!
গাছের থেকে পক্ষী পড়ে নাকি?  
শুনেছ কেউ মাছেরা জলে ডুবে
মরেছে কভু? তেমনি ব্যাঙ ভিজে? 
প্রজারা কহে, আমাদের কী হবে? 
রাজা এসব বুঝিবেন কি নিজে?
পথিক বলে, সে দায়িত্ব আমার
নেই প্রয়োজন কারোর মাথা ঘামার।

পরদিবসে বন্ধ ঘরে গিয়া
হবু-গবুর সঙ্গে সে বিজ্ঞানী
বকযন্ত্রে রসায়নী বিক্রিয়া   
ব্যাঙের ছাতা দিয়ে দেখান তিনি।
বোঝান সবে, ছত্রাক নয় ছাতা
প্রোটিন নামে খাদ্যসার তাতে,
ব্যাঙের নাহি রক্ষা করে মাথা
বুদ্ধি বাড়ে মাখিয়া খেলে ভাতে।
প্রোটিন খেলে শক্তি হবে আরো
কোন ক্ষতিই হবে না তাতে কারো।

ব্যাঙের ছাতা ব্যাঙের কিছু নয়!
এমনধারা নূতন কথা শুনি
প্রজাকূলের ভাঙিয়া গেল ভয়
অবাক হল সকল জ্ঞানীগুণী।
পরিবেশের রাখিতে ভারসাম্য
বিজ্ঞানী সকলকে দেন শিক্ষা
হোক সে জন শহুরে কিবা গ্রাম্য
পঞ্চভূতে করিতে হবে রক্ষা।
জলেতে করে মণ্ডূকেরা বাস
ডাঙার পরে ছত্রাকেরি চাষ!

প্রজার সুখে রাজার জয়কার
বিনা জুলুমে বাড়িয়া চলে খাজনা
খাদ্য লয়ে মিটিল হাহাকার
রাজ্যে বাজে আনন্দেরি বাজনা।
হবুচন্দ্র সভায় আসি কহে
মন্ত্রীসনে করেছি এক ফন্দি
বিজ্ঞানী এ রাজ্যে যাতে রহে
আজকে তারে করিতে হবে বন্দি
বাজিল কাড়া-নাকাড়া আর সানাই
বিজ্ঞানী আজ হল রাজার জামাই!   



   


No comments:

Post a Comment