মুম্বাইয়ের শারদোৎসব
( অণু-প্রবন্ধ)
( অণু-প্রবন্ধ)
মিলেনিয়ামের গোড়াতে বাংলার শিল্প-শিক্ষাক্ষেত্রের
সংকোচনের ফলে বাঙালি মেধাবী-বুদ্ধিজীবির দল ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাংলার বাইরে, মুম্বাইকেও একেকসময় মনে হয় বৃহত্তর
পশ্চিমবঙ্গের অংশ। পূর্ব আন্ধেরীর যে মহাকালী-গুহা অঞ্চলে পাহাড়-জঙ্গলের মাঝে কেউ
থাকতে চাইত না, তা এখন জমজমাট। সাকি-বিহার, জেভিএলআর, ওয়েস্টার্ণ হাইওয়ে আর আন্ধেরি-কুর্লা রোড
দিয়ে ঘেরা এই অঞ্চলে এত বাঙালী, অথচ পুজো নেই। ফলস্বরূপ ২০০১-এ প্রতিষ্ঠিত হল 'মহাকালী সার্বজনীন দুর্গোৎসব সেবা
সমিতি' বা MSDSS। ততদিনে বৃহত্তর মুম্বাইয়ে ছোটবড়
মিলিয়ে দুর্গাপুজোর সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে আর তার মাঝে এই পুজোও নিজের স্থান করে
নিয়েছে।
আমাদের শারদোৎসব শুরু হয় দেবীপক্ষের সূচনায় শারদপ্রভাতের পুণ্যলগ্নে মঙ্গলশঙ্খধ্বনির সাথে পুজোমণ্ডপে একত্রিত হয়ে রেডিওতে 'মহিষাসুরমর্দিনী' শুনে, সঙ্গে গরম চা-সিঙ্গাড়া-জিলিপি। চতুর্থীর সকালে সত্যনারায়ণ পুজো, সেদিনই দেবীমূর্তি এনে স্থাপন করা হয় পূজামণ্ডপে। পঞ্চমীতে আনন্দমেলা- সদস্যরা কিছু মুখরোচক রান্না করে নিয়ে আসেন, তা বিক্রী হয়- লাভ নয়, নিছক আনন্দলাভের জন্যে। মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পুজো হয় বিধিমত শুদ্ধাচারে, ত্রেতাযুগের রামচন্দ্রের অকালবোধনের রীতি যথাসাধ্য মেনে। জানিনা মানসে নীলপদ্ম এখনও ফোটে কিনা, তবে এখনও ১০৮টি শতদলে সন্ধিপূজা সম্পন্ন হয় এখানে। বিজয়াদশমীতে ঘট বিসর্জন, দধিকর্মা, সিঁদুর খেলা হয় দেখবার মত, তারপর প্রতিমা বিসর্জিত হয় জুহুর সমুদ্রে। ফিরে আসার পর শান্তিজল, বন্ধুদের মধ্যে কোলাকুলি, শেষপাতে থাকে সবার জন্যে মিষ্টি।
প্রবাসের শহরগুলোতে আগে কেউ দেবী-মূর্তি বা তার সাজসজ্জা বা আলোকসজ্জা নিয়ে মাথা ঘামাত না, থীম নামক বস্তুটির কথা ত ছেড়েই দিলাম। সবাই মিলে আড্ডা, খাওয়া, খাওয়ানো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- এই ছিল প্রধান। এখানে আমরা শুদ্ধসত্বাচারে পুজো করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশন থেকে বাংলা বইপত্র এনে স্টল খুলে বসি শুধুমাত্র বাংলাভাষাপ্রেমীদের প্রবাসে মানসিক তৃপ্তিদানের খাতিরে, লাভ-লোকসানের হিসেব না রেখে। এছাড়া বাঙ্গালি-রসনার তৃপ্তির জন্যে স্পনসর্ড ফুড-স্টল, আর থাকে কলকাতা-মুম্বাই থেকে নামী-দামী শিল্পীদের নিয়ে বাংলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া আর কিছু না- প্লেইন লিভিং অ্যান্ড হাই থিংকিং- জীবে প্রেম আর জিভে প্রেম। খাও আর ধনী-দরিদ্র-মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে নির্বিচারে তিনদিন ধরে পেট পুরে মায়ের প্রসাদ খাওয়াও। আমরা মায়ের ভক্ত একটি মানুষ বা মনুষ্যেতর প্রাণীকেও অভুক্ত রাখতে চাইনা পুজোর এই ক’দিন!
রসিকতা নয়, আলোকসজ্জা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে
খরচ করতে চাইলে কোটি টাকাও কম, অথচ মুম্বাইয়ের মত মহানগরের
কেন্দ্রস্থলে আমরা দেখতে পাই প্রতি বছর অন্যুন ৩০% ছাত্রছাত্রী অনুদানবিহীন স্কুলগুলি ছেড়ে কাজের খোঁজে
বেরিয়ে পড়ছে, দরিদ্র বাবা-মা পড়ার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এদিকে আমরা সুখে
আছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুল-কলেজে পড়ছে, ভাল কোচিং বা গাইডেন্স পাচ্ছে।
কিন্তু 'যারে তুমি পিছে রাখ সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে'- সবাইকে একসাথে টেনে নিয়ে না
চললে সত্যি কি এগোন যায়? তাই তো আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার উদ্দেশ্যপূরণের জন্যে এই দুর্গোৎসব
সমিতির শক্ত ভিতের উপর আমরা একদিন শুরু করেছিলাম 'শিক্ষা কি আশা', আশেপাশের আন-এইডেড স্কুলগুলিতে
ড্রপ-আউট রুখতে, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যেন শেষ পর্যন্ত তাদের যোগ্যতানুযায়ী পড়ার
সুযোগ পায় আর বিশেষতঃ কোনও ছাত্রীকে যেন দারিদ্র্য বা অন্য কারণে পড়া না ছাড়তে হয় মাঝপথে, একথা মাথায় রেখে। আমাদের এই
কার্যক্রম ২০০৯-তে শুরু হয়েছিল দুটি বিদ্যালয়ের দশটি ছাত্রকে অনুদান দিয়ে, এখন তার পরিধি প্রায় ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সদস্য ও
সহৃদয় বন্ধুদের একান্ত সহযোগিতায়। এসবের সঙ্গে হয়ত পূজার কোনও সম্বন্ধ নেই, তবে মুম্বাই যে শুধুমাত্র 'বানিয়া'দের শহর নয়, এর একটা হৃদয় আছে জানতে পারি, যখন আমাদের সাহায্য পেয়ে ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক বা স্কুলের হেডমাস্টার এসে
ধন্যবাদ জানিয়ে যায়। প্রত্ত্যুত্তরে তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে বলি মা আনন্দময়ীকে, বিদ্যাদায়িনী সরস্বতীকে। তাঁর পুজো ত তখনই সার্থক হবে
যখন কোনও কাঙালির মেয়ে মুষ্টিভিক্ষার জন্যে ধনীর দুয়ারে এসে আর দাঁড়াবে না। আমাদের শারদোৎসব শুরু হয় দেবীপক্ষের সূচনায় শারদপ্রভাতের পুণ্যলগ্নে মঙ্গলশঙ্খধ্বনির সাথে পুজোমণ্ডপে একত্রিত হয়ে রেডিওতে 'মহিষাসুরমর্দিনী' শুনে, সঙ্গে গরম চা-সিঙ্গাড়া-জিলিপি। চতুর্থীর সকালে সত্যনারায়ণ পুজো, সেদিনই দেবীমূর্তি এনে স্থাপন করা হয় পূজামণ্ডপে। পঞ্চমীতে আনন্দমেলা- সদস্যরা কিছু মুখরোচক রান্না করে নিয়ে আসেন, তা বিক্রী হয়- লাভ নয়, নিছক আনন্দলাভের জন্যে। মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পুজো হয় বিধিমত শুদ্ধাচারে, ত্রেতাযুগের রামচন্দ্রের অকালবোধনের রীতি যথাসাধ্য মেনে। জানিনা মানসে নীলপদ্ম এখনও ফোটে কিনা, তবে এখনও ১০৮টি শতদলে সন্ধিপূজা সম্পন্ন হয় এখানে। বিজয়াদশমীতে ঘট বিসর্জন, দধিকর্মা, সিঁদুর খেলা হয় দেখবার মত, তারপর প্রতিমা বিসর্জিত হয় জুহুর সমুদ্রে। ফিরে আসার পর শান্তিজল, বন্ধুদের মধ্যে কোলাকুলি, শেষপাতে থাকে সবার জন্যে মিষ্টি।
প্রবাসের শহরগুলোতে আগে কেউ দেবী-মূর্তি বা তার সাজসজ্জা বা আলোকসজ্জা নিয়ে মাথা ঘামাত না, থীম নামক বস্তুটির কথা ত ছেড়েই দিলাম। সবাই মিলে আড্ডা, খাওয়া, খাওয়ানো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- এই ছিল প্রধান। এখানে আমরা শুদ্ধসত্বাচারে পুজো করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশন থেকে বাংলা বইপত্র এনে স্টল খুলে বসি শুধুমাত্র বাংলাভাষাপ্রেমীদের প্রবাসে মানসিক তৃপ্তিদানের খাতিরে, লাভ-লোকসানের হিসেব না রেখে। এছাড়া বাঙ্গালি-রসনার তৃপ্তির জন্যে স্পনসর্ড ফুড-স্টল, আর থাকে কলকাতা-মুম্বাই থেকে নামী-দামী শিল্পীদের নিয়ে বাংলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া আর কিছু না- প্লেইন লিভিং অ্যান্ড হাই থিংকিং- জীবে প্রেম আর জিভে প্রেম। খাও আর ধনী-দরিদ্র-মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে নির্বিচারে তিনদিন ধরে পেট পুরে মায়ের প্রসাদ খাওয়াও। আমরা মায়ের ভক্ত একটি মানুষ বা মনুষ্যেতর প্রাণীকেও অভুক্ত রাখতে চাইনা পুজোর এই ক’দিন!
No comments:
Post a Comment