#কিছু_ ভ্রমণ,_সঙ্গে_বিজ্ঞান
পল্লব চট্টোপাধ্যায়
১) গোড়ার কথা।
অবাক লাগছে বুঝি শীর্ষকটি দেখে? আমাদের দেশে এটা অবাক হবার মতোই কথা বটে। আমরা বেড়াতে গেলে কী কী দেখতে যাই সাধারণতঃ? তীর্থস্থান, মন্দির-চার্চ-দরগা, ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক দৃশ্য – যেমন পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, জঙ্গল, জীবজন্তু, প্রাচীন সৌধ, প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি, এরকম কত কিছু। কিন্তু এরকম কে শুনেছে কোথাও যে বৈজ্ঞানিক আশ্চর্য দেখতে লোকে ছুটছে দেশ-বিদেশে? কবে কোথায় মাটি ফুঁড়ে বেরিয়েছে আগ্নেয় পাথর বা মহাকাশ থেকে খসে পড়েছে উল্কাপিণ্ড, পাহাড়ের বুক থেকে চুঁইয়ে আসা খনিজ-ধোয়া জল থেকে গজিয়ে ওঠা অজস্র স্ফটিক (crystal) ছুঁচের মত খাড়া হয়ে আছে। কোথাও মাইলের পর মাইল প্রান্তর দুধের মত সাদা আবার কোথাও বা খোলা মাঠে যখন তখন আগুনের কুণ্ডলি ঝলসে উঠছে – এসবকে কী বলব? ঈশ্বরের লীলা ভেবে শুধু ভক্তিভরে প্রণাম করব? না কি এর বৈজ্ঞানিক রহস্য জানার জন্যে কৌতূহলে ছুটে যাব, খুঁজে বেড়াব বই-পত্র, কারণ জিজ্ঞেস করবে এর-তার-গুগলের কাছে? অবশ্য ঈশ্বরের লীলা ভাবলে দোষের কিছু নেই, কারণ এই মহাবিশ্বে যেখানে যা কিছু ঘটছে তার পিছনে যে শক্তি লুকিয়ে আছে তাকেই যদি ভগবান বলি তাহলে সব সৃষ্টি তাঁরই লীলা, কিন্তু তার যে একটা বিজ্ঞান-সম্মত কারণও আছে তা জানতে পারলে আনন্দটা লাফিয়ে চারগুণ বেড়ে যায় না?
এত বড় ভূমিকাটা কেন দিলাম জানেন? কারণ ভ্রমণ করতে গিয়ে কোনও কিছুর সৌন্দর্য, ইতিহাস বা ধার্মিক মাহাত্ম্য নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত থাকি যে তার পেছনে যে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে সে কথা নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামাই, অন্ততঃ আমাদের দেশের লোকেরা। তাই আমরা কুতুব মিনারের চত্বরের লৌহস্তম্ভ দেখে পেছন-দিক দিয়ে সেটা জড়িয়ে ধরতে যাই - যে পারে সে নাকি খুব ভাগ্যবান। বড় জোর তার প্রাচীনত্ব নিয়ে মাথা ঘামাই, কিন্তু ভাবি না যে স্তম্ভটি কত উন্নতধরণের ইস্পাতে তৈরি, কী সেই টেকনোলজি যে আজ হাজার বছরেও তাতে মরচে ধরেনি। তেমনই হিমাচল প্রদেশের জ্বালামুখী অঞ্চলে দেবীর মন্দিরে যে এক জায়গায় একটানা আগুন জ্বলছে নিজে থেকেই, তার ব্যাখ্যা হিসেবে বোঝান হয় নাকি সতীর জিভ পড়েছিল সেখানে তাই দৈবশক্তিতে আগুন জ্বলছে, জ্বালামুখী পুরাণোক্ত একান্ন পীঠের একটি। কিন্তু একথাও সত্যি যে মাটির নিচে জমা হাইড্রোকার্বন গ্যাস ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে ভূগর্ভ থেকে, তাই জ্বলছে সারাক্ষণ। এরকম অন্ততঃ আরো গোটা দশেক জায়গা আছে পৃথিবীতে, কতগুলো স্থানে মায়ের জিভ পড়তে পারে? তাই বলছি, সর্বত্র ঘুরে বেড়ান, ভালো জিনিস দেখে খুশি হন, তারিফ করুন, কিন্তু জিজ্ঞাসা থামাবেন না।
তাহলে এবার আমরা এই ভারতেরই কয়েকটা বৈজ্ঞানিক ভ্রমণক্ষেত্র ঘুরে আসি, কেমন? আপাততঃ ফেসবুকের হাত ধরেই, পরে সুযোগ পেলে কিন্তু জায়গাগুলো দেখতে ছাড়বেন না।
কোথায় কোথায় যাওয়া যায়? লকডাউনের মাঝে সত্যি বলতে কি কোত্থাও না। বিদেশে তো নয়ই। তবে একটা লিস্ট করি যেখানে ভবিষ্যতে কখনও যেতে পারি, যেখানে গিয়ে আমরা হাতীর দর্শনীয় গজদন্ত দেখে শুধু মুগ্ধ হব না, খাবার বা আসল দাঁতের খবর নেবার কথাটাও একবার ভাবব।
সত্যি সত্যি ভাবব কী? মনে করুন যদি অমরনাথের গুহায় গিয়ে আপনি বলেন যে এই শিবলিঙ্গ বরফের তৈরি বিখ্যাত সব স্ট্যালাগমাইটগুলোর মধ্যে একটি, শিবভক্তদের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পারবেন? তাই সাধু সাবধান। 'রহিমন নিজ মন কী বিথা মন হি রাখো গোয়!'
২)
স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট (Stalactite and Stalagmite)
বরাগুহালু, আরাকুভ্যালী (অন্ধ্রপ্রদেশ)
১নং ছবিটি দেখ। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টনম থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অনন্তগিরি পাহাড়ের আরাকু উপত্যকায় স্থিত বোরা বা বরগুহালুর গুহার ভেতরের একটি দৃশ্য। ৭০৫ ফুট উচ্চতায় স্থিত প্রায় ২০০ মিটার লম্বা এই গুহা ৮০ মিটার গভীর, যার মধ্যে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন আকৃতির ও সাইজের চুনাপাথরে গড়া প্রচুর প্রাকৃতিক ভাস্কর্য। তার মধ্যে কয়েকটা মাটি থেকে উপরে উঠেছে, কিছু ছাত থেকে ঝুলছে, আবার কিছু মোটা স্তম্ভের মত মাটি থেকে গুহার ছাত পর্যন্তও উঠেছে। সাধারণ যাত্রী-দর্শক এসব দেখে হর-গৌরী, কালী, ভূত, হাতীর শুঁড়, ঋষির দাড়ি - কত কিই না কল্পনা করে। এই কল্পনা শুরু হয় গুহার শেষপ্রান্তে থাকা একটি শিবলিঙ্গের আকারের স্তম্ভ থেকে যার উপরে আছে একটি গরুর আকৃতির মূর্তি। তার নিচ দিয়ে নেমে আসা জলস্রোত একটি নদীতে পরিণত হয়, তাই সেই নদীর নাম ‘গোস্থান’। কিন্তু এগুলো আসলে কী বা কীভাবে এর উৎপত্তি সে নিয়ে কে মাথা ঘামায়? এস তাহলে আমরা একটু ভাবি।গাঢ় তরল বা দ্রবণ যখন মাটি বা ছাত থেকে চুঁইয়ে বেরোয়, তার পৃষ্ঠ-টানের (surface tension) ফলে তা খসে পড়ে না আর তার মধ্যে দ্রবীভূত বা তরল অবস্থায় থাকা বস্তু কঠিন হয়ে মূল জায়গা থেকে একটু একটু করে বাড়তে থাকে। যদি এটা মাটি থেকে ওপরে ওঠুরে এসেছিঘ তাকে আমরা বলি স্ট্যালাগমাইট (stalagmite) আর ছাত থেকে ঝুলতে থাকলে তাকে বলা হয় স্ট্যালাকটাইট (stalactite)। মনে রাখার সুবিধের জন্যে জানাই প্রথমটির মাঝে ‘g’ আছে, তার মানে ground থেকে ওঠে। পরেরটার মাঝে ‘c’ আছে অর্থাৎ সেটা ceiling থেকে ঝোলে। এই স্ট্যালাগমাইট আর স্ট্যালাকটাইট বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু থেকে তৈরি হতে পারে, যেমন চুনাপাথর (limestone), লাভা, কাদামাটি, কয়লা এমনকি বরফও। বরফের তৈরি স্ট্যালাগমাইটের সেরা উদাহরণ অমরনাথের তুষার শিবলিঙ্গ - তবে সেখানে গিয়ে এসব না বলাই ভাল, ধর্মভীরু তীর্থযাত্রীরা তাড়া করবে! বরং Stalactite and Stalagmite নামে একটা ভিডিও গেম আছে, সেটা খেলার অভিজ্ঞতা থাকলে বেশ খানিকটা ধারণা জন্মাবে এ নিয়ে।
এইবার ভ্রমণ প্রসঙ্গে আসি। বিশাখাপট্টনম অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী না হলেও বৃহত্তম শহর, একটি বড় বন্দর-শহর, নামী রেল-জংশন, বিমানবন্দর আর হ্যাঁ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ভুবনেশ্বর হয়ে হায়দরাবাদ-তিরুপতি-চেন্নাইয়ের পথে বিশাখাপট্টনম বা ভাইজ্যাগ নেমে একদিন শহর ঘুরে ট্যুরিস্ট বাসে, ট্রেনে বা ট্যাক্সিতে করে অন্য একদিনেই ১১৫ কিলোমিটার দূরের আরাকু-ভ্যালি আর বোরা গুহা দেখে আসা যায় ৮-১০ ঘন্টার মধ্যে। ৩১০০ ফুট উচ্চতার আরাকু উপত্যকার জন্যে বিশেষ ট্রেন আছে কিরন্দেলু প্যাসেঞ্জার যার মধ্যে গ্লাস-টপ এসি কোচ লাগানো হয়েছে একটি। আরাকুর দৃশ্যাবলী, ফলস, আদিবাসী ম্যুজিয়াম দেখে চলে আসুন বোরা গুহা। সিঁড়ি আছে, ভেতরটা নানা রঙের আলোয় সাজানো হলেও টর্চ নিয়ে যাওয়াই ভাল। জনপ্রতি প্রবেশমূল্য ৭০ টাকা, ক্যামেরা আলাদা খরচ। পুরো গুহা ভালভাবে ঘুরে দেখতে দু-তিন ঘণ্টা লাগে।
চুনাপাথরের ফর্মের আরও এমন নিদর্শন আছে মেঘালয়ের মজমাই (Mawsmai) যা পড়ে শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথে, একটু ঘুরে। তবে সেরাটা হল অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলার বেলাম বা বেলুম গুহা। মজমাই আমি ঘুরে এসেছি, তবে বেলুম যাবার সৌভাগ্য হয়নি। এটি ভারতের প্রাচীনতম গুহার একটি, এর জন্ম শুরু হয়েছে প্রায় পনের কোটি বছর আগে থেকে আর ভাঙ্গাগড়া এখনও চলছে, তবে এর আবিষ্কার আর পর্যটন স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে, এখনও খুব বেশি যাত্রীরা জানেন না।
বেলুমে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক গুহা। ৩ কিমি দীর্ঘ এই প্রাকৃতিক গুহার অবস্থান কোলিমিগুন্ডলা অঞ্চলে। তবে পর্যটকরা দেখতে পারেন মাত্র দেড় কিমি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য গুহার মধ্যে ইলেকট্রিক ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। বোরাগুহার মত এখানেও স্টালাকটাইট ও স্টালাগমাইট জমেজমে বিভিন্ন আকৃতির মূর্তি তৈরি হয়েছে। সিংহদ্বারম, মণ্ডপম, কোটিলিঙ্গালু, পাতালগঙ্গা প্রভৃতি নাম রয়েছে গুহাগুলির। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫.৩০পর্যন্ত গুহা পর্যটকদের জন্য খোলা। প্রবেশমূল্য বড়দের ৪০ টাকা আর ছোটদের ৩০ টাকা।
বেলুমের নিকটতম রেলস্টেশন নান্দিয়াল। হাওড়া থেকে সরাসরি নান্দিয়াল যায় ১৮০৪৭ অমরাবতী এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ২৩.৩০ পৌঁছায় পরদিন রাত ১ টা)। ১২৫৭১ প্রশান্ত নিলয়ম এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ৫.৩০ পৌঁছায় পরদিন বিকাল ৫.০৩)। এছাড়া বিশাখাপত্তনম থেকে নান্দিয়াল যায় ১৮৪৬৩ প্রশান্তি এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ৩.০৫ পৌঁছায় পরদিন রাত ১.৩০)। নান্দিয়াল থেকে বেলুম ৭১ কিমি। এ পথে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন। তবে আমার মতে বেলুম যেতে হলে সঙ্গে ভারতের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে খ্যাত গ্যান্ডিকোটা সফর একসাথে করে নেওয়া উচিত, এর সম্বন্ধে পরে বিশদে আসব।
এই সূত্রে জানাই, বরফের শিবলিঙ্গ হিসাবে খ্যাত কাশ্মীরের অমরনাথ গুহাকে ধার্মিক খ্যাতির ঊর্ধ্বে সৌন্দর্যের আর বিজ্ঞানের দিক থেকে দেখা যেতে পারে ভারতের একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে স্নো-স্ট্যালাগমাইট শিবলিঙ্গ হিসেবেও। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫০০০ ফুট আর ১৩০ ফুট উঁচু গুহার ছাত থেকে তার কোন হিমাঙ্কের কম তাপমানের জল চুঁইয়ে ৮ ফুট উঁচু লিঙ্গটিকে গড়ে তোলে। অস্ট্রিয়ান আল্পসের Eisriesenwelt অঞ্চলে আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তুষার-স্ট্যালাগমাইট (৭৫ ফুট), তবে সঙ্গত কারণেই তার কোন ধার্মিক ভিত্তি নেই।

(৩) মনোলিথিক ইনট্রুশন (Monolithic Intrusion)
গিলবার্ট হিল, মুম্বাই
চিত্র-২ মুম্বাইয়ের পশ্চিম আন্ধেরির ভবন কলেজের পাশেই একটি ঘিঞ্জি বস্তির মধ্যে দুর্গম স্থানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি ৬১ মিটার (২০০ ফুট) উচ্চতার স্তম্ভের মত একশিলা কালো বেসাল্ট পাথরে গড়া পাহাড় যার নাম গিলবার্ট হিল। উচ্চতা এমন কিছু বেশি নয়, এর চেয়ে উঁচু পাহাড় ত মুম্বাইয়েই আরও আছে। তাহলে কী এর বিশেষত্ব? সেটা জানতে গেলে আবার কিছুটা বিজ্ঞান বুঝতে হবে, জানতে হবে পৃথিবীর গঠন আর বৈচিত্র্য সম্বন্ধে।
পৃথিবীর জন্ম ৪৫০ কোটি বছর আগে হলেও তার ভেতরটা, যাকে আমরা লিথোস্ফেয়ার বলি, এখনও বেশ কাঁচা মানে তরল ও গ্যাসীয় ধাতু-পাথরে ভরা। মাঝে মাঝে ফাঁক-ফোকর দিয়ে গলিত শিলা বা ম্যাগমা মাটি ফুঁড়ে উপরের স্তরে কিম্বা তাও ভেদ করে মাটির উপরে চলে আসে। এরই নাম অগ্ন্যুৎপাত বা volcanic eruption। ভূমিকম্পের ফলেও এরকম হতে পারে। এইরকম অগ্ন্যুৎপাত ঘটে গলিত পাথর পৃথিবীর ভেতরেই যদি থেকে যায় তাকে বলা হয় intrusion, আর মাটির বাইরে উঠে এলে তার নাম extrusion। Extrusion বাইরে বেরিয়ে সাধারণতঃ টুকরো পাথরপিণ্ড হয়ে বা ভূস্তরের উপর গড়িয়ে গিয়ে জমাট বেঁধে যায়, গিলবার্ট হিলের মত খাড়া দাঁড়ায় না। তাই এই পাহাড় আসলে একটি intrusion, এর গঠনকে বলা হয় ল্যাকোলিথ (Laccolith), পরে চারপাশের মাটি ধুয়ে পুরো পাথরটা বেরিয়ে পড়েছে। ল্যাকোলিথ হল স্তরীভূত শিলার (Sedimentary rock) মধ্যে দিয়ে intrusion ঘটা জমাট লাভার এমন গঠন যার তলদেশ চওড়া, উপরটা গোলাকৃতি বা উত্তল আর সবার নিচে ছড়ানো ম্যাগমার স্তর থাকে। ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের উপর বেরিয়ে যখন স্রোতে বয়ে চলে, তাকে বলা হয় লাভা। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ম্যাগমা আর লাভা গঠিত আকৃতিগুলোর একটা পরিচয় দিলাম চিত্র-৫-এ। এ জাতীয় পাহাড়ের আবিষ্কার প্রথম করেন আমেরিকার ভূতাত্বিক Grove Karl Gilbert, ১৮৭৫-৭৬ সালে। আমেরিকার উটাহ রাজ্যের হেনরি হিলের গঠন সম্বন্ধে তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী এটিও একটি monolithic laccolith intrusion of black basalt rock। এটা তৈরি হয় আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে। মনোলিথিক কথাটার মানে একটি মাত্র পাথর দিয়ে গড়া, যেমন মাইশোরের চামুণ্ডী পাহাড়ের বা তাঞ্জোরের নন্দীমূর্তি, কিংবা ইলোরার কৈলাশ মন্দির, যদিও মানুষ তার উপরে পরে অনেক কারুকাজ করেছে। আমরা আরও জানতে পারি যে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে তৈরি ৬১ মিটার (২০০ ফুট) উঁচু গিলবার্ট হিল বিশ্বে সম্ভবতঃ এ জাতীয় দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড়, প্রথমটি হল আমেরিকার ওয়াইয়োমিং-এর খাড়া ২৬৫ মিটার উঁচু ‘ডেভিলস টাওয়ার’ (Devil's Tower - চিত্র-৭) আর পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়া-স্থিত 'ডেভিলস পোস্টপাইল' (Devils Postpile), ব্যস, এ জাতীয় ব্ল্যাক বাসাল্ট মনোলিথিক ল্যাকোলিথ ইনট্রুশন এ পর্যন্ত বিশ্বে তিনটিই পাওয়া গেছে।
অবশ্য গিলবার্ট ভদ্রলোকটি কে তা নিয়ে ভিন্নমতও আছে। আন্ধেরি অঞ্চলে একজন সেনাপ্রধানের নামও ছিল গিলবার্ট যিনি ১৮৯১ এর আগে এই পাহাড়েরই মাথায় একটি কামান বসিয়েছিলেন আরব সাগর দিয়ে যাওয়া শত্রুদের জাহাজ উড়িয়ে ফেলার জন্যে। তবে জানিনা এর মাথায় কবে তৈরি হয় গামদেবীর মন্দির আর তারপর ১৯৩৯ সালে পাহাড়টি বিক্রি হয়ে যায় একদল ব্যবসায়ীদের কাছে যারা সেটাকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা করে। হ্যাঁ, দক্ষিণ ভাগটা উড়িয়েও ফেলে তারা, আর তাইতে পাহাড়ের বাইরের আবরণ সরে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য ছুঁচলো কালো বাসাল্টের স্তম্ভ, জানা যায় পাহাড়ের আসল ভূতাত্ত্বিক পরিচয়।
এসব জানার পর থেকেই ভূতাত্ত্বিকরা গিলবার্ট হিলকে সংরক্ষণ করার জন্যে আন্দোলন শুরু করেন। তারপর কীভাবে বোম্বের জমি মাফিয়াদের হাত থেকে বাঁচিয়ে বাকি পাহাড়টিকে উদ্ধার করা হয় ও ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এটিকে ফরেস্ট অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী ‘ন্যাশানাল পার্ক’ ঘোষিত করে, সে গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। তারপর এই সেদিন ২০০৭ সালে মুম্বাই ম্যুনিসিপালিটি একে দ্বিতীয় শ্রেণীর হেরিটেজের সম্মান দেয়। আমাদের দেশের ভূতত্ত্ব আর বিজ্ঞান সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আর বাস্তবিক চেতনা কেমন তার কিছুটা কি আন্দাজ মিলল? যারা মুম্বাই বা তার আশেপাশে থাকেন, তাঁরা সময় করে একবার ঘুরে আসতে পারেন, একটা তৃপ্তির অনুভূতি হবে।
(৪)শ্বেত-মরু (White Runn)
উত্তর কচ্ছ, গুজরাট
গুজরাটের উত্তর পশ্চিমে আছে কচ্ছ জেলা, যার উত্তরার্ধে (চিত্র- ৯) বিস্তীর্ণ এলাকার সাথে পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের বেশ খানিকটা অংশ নিয়ে প্রায় ৭৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে আছে জলাভূমি(Swamp বা marshy land), যেখানে শুকনো ঘাস আর আগাছা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই উৎপন্ন হয় না। এরই নাম কচ্ছের বৃহত্তর রাণ (Greater Runn of Kutch)। নভেম্বর থেকে এপ্রিলে সেখানে গেলে দেখা যাবে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। দিগন্তব্যাপী প্রান্তর দুধের মত সাদা হয়ে আছে, যেন রূপো গলিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ। এও এক প্রাকৃতিক আশ্চর্য, যার পেছনেও বেশ খানিকটা বিজ্ঞান আছে। কী সেটা? জানতে গেলে চলুন ঘুরে আসি কচ্ছ থেকে।উত্তর কচ্ছের বান্নি তৃণভূমি অভয়ারণ্যের সংলগ্ন দোরডো গ্রামের উত্তর থেকে কচ্ছের বৃহৎ রাণের শুরু, আমাকে ছবিতে (চিত্র-১০) দেখা যাচ্ছে এই শ্বেত-মরুর দেশে। অন্য জায়গা থেকেও দেখা যায় এই শ্বেত মরু, তবে পাকিস্তানের সীমানা-সংলগ্ন এলাকা বলে যাত্রীদের সর্বত্র যাবার অনুমতি নেই। এই বালি কি সত্যিই সাদা, কিন্তু কেমন করে? সব রহস্য ভাঙল যখন কাছ থেকে দেখলাম, জিনিষটা আর কিছুই নয়, সামুদ্রিক লবণের দানা বা স্ফটিক (চিত্র-১১)। কিন্তু সমুদ্রের থেকে এত দূরে মাইলের পর মাইল জুড়ে এত নুন কে ছড়াল? সে গল্প বলি তবে, শুনবেন কি ধৈর্য ধরে?
কচ্ছের শ্বেত-মরু দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম বছর কয়েক আগে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা রাণ-উৎসবে। ভুজ রেল-স্টেশনে আমাদের নিতে এসেছে উৎসব কমিটির গাড়ি। ভুজ ছাড়িয়ে উত্তর পশ্চিমে ঢুকে পড়েছি বিস্তীর্ণ তৃণাঞ্চল ‘বান্নি’ সংরক্ষিত অরণ্যে। জঙ্গল নামেই, শুধু শুকনো ঘাস আর কাঁটাঝোঁপের ছড়াছড়ি। মাঝে একটা জলাভূমিতে দেখা গেল কিছু পরিযায়ী পাখি, ছুটে পালালো দুটি কৃষ্ণসার হরিণ(black buck) আর নীলগাই। তবে কচ্ছের বিখ্যাত বিরল প্রজাতির বন্য-গাধা বা wild ass (Equus hemionus khur) চোখে পড়ল না, এদের দেখা যায় কচ্ছের পূর্বোত্তরের লিটল রানে, যেখানে হরপ্পা-সভ্যতার অঙ্গ ঢোলাবীরার ধ্বংসাবশেষ আছে। ভারতের অবশিষ্ট চিতার প্রজাতি নাকি এই অঞ্চলেই এখনও সংরক্ষিত রয়েছে, যদিও রাস্তার ধারে তাদের দেখা পাই নি, আশাও করি নি। আরেকটা মারাত্মক খবর শুনলাম যে গ্যাণ্ডা বাবুল (Prosopis juliflora) নামে একধরণের কাঁটাগাছ ১৯৭০-৭৫এর মধ্যে বনদপ্তর দ্বারা লাগানো হয় এখানকার জমিতে লবন-আগ্রাসন রোধ করতে, কিন্তু পরে দেখা যার এই আগাছা দ্রুত বিস্তার লাভ করে ভূমির উর্বরতাই নষ্ট করে biodiversity ও ecosystem কে তছনছ করে দিচ্ছে। ১৯৯০ সালে এই গাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাটার অধিকার দেওয়া হয়। তারা এর থেকে জ্বালানী কয়লা বা তৈরি করে। কিন্তু তাতে দেখা দেয় আরেক বিপদ। কয়লার ধোঁয়ায় মৌমাছিরা পালাতে থাকলে সেখানকার মধু-শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর বাবলা গাছ কাটার নামে কিছু লোভী লোক অন্যান্য গাছও নির্বিচারে কাটতে থাকে। যাক, এসব দুরূহ সমস্যা নিয়ে চিন্তা শেষ হল, আমাদের গাড়ি ৮৪ কিলোমিটার উত্তরে ধোরডো রাণোৎসব গ্রামে এসে পৌঁছল। সন্ধের সময় উৎসব কমিটির বাস নিয়ে এল আমাদের চার কিলোমিটার দূরের রাণ বা শ্বেত-মরু অঞ্চলে।
সমুদ্রের জল লবণাক্ত কেন হয় জানেন ত? বিভিন্ন নদী বা প্রবাহিকার জল নানা অঞ্চল থেকে মাটিতে মিশে থাকা নানা জাতীয় প্রচুর লবণ বয়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনও বড়ো হ্রদ বা সমুদ্রে এনে ফেলে। তাই মোহানার যত কাছাকাছি আসে নদীর জলে নুনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাজস্থান থর মরু অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত এককালীন সরস্বতী আর সিন্ধুনদের কিছু শাখা যেমন লোনী, ঘগ্ঘর-হাক্ড়া, বানস, রুপেন ইত্যাদি নদী উপযুক্ত ঢালু জমি আর যথেষ্ট জলধারার অভাবে এই কচ্ছ অঞ্চলে এসেই তাদের অবশিষ্ট জল ঢেলে দিয়ে মরে যায়। তবু কিন্তু তারা হারায় না। রবীন্দ্রনাথের গান আছে না, ‘যে নদী মরুপথে হারাল ধারা/ জানি হে জানি তাও হয়নি হারা’, সেভাবেই তারা দিগন্তবিস্তৃত এই জলাভূমি তৈরি করে চলে। জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত এই জলধারা এসে রাণে পড়ে আর নভেম্বরের মাঝামাঝি রোদের তাপে তা শুকিয়ে লবণের স্ফটিক সাদা ফুলের মত ফুটে ওঠে থরে থরে। সৃষ্টি হয় শ্বেত মরুর। রাতে চাঁদের আলোয় এর সৌন্দর্য অতুলনীয়, তবে সীমান্ত বলে সন্ধের পর সেখানে যাওয়া অনুমতিসাপেক্ষ।
আর একটা জিনিষ সেখানে সন্ধের পর দেখা যায় মাঝে মাঝে, লোকে তাকে বলে ‘চির-বাত্তি’ বা ভৌতিক আলো (চিত্র- ১২)। হঠাৎ হঠাৎ যেখান-সেখান থেকে আগুনের গোলা শূন্যে লাফিয়ে ওঠে বিনা কারণেই। গ্রামের অশিক্ষিত লোকেদের কাছে তা ভৌতিক উপদ্রব মনে হলেও, আসলে ওটা ওই জলায় তৈরি হওয়া মিথেনের কারসাজি যাকে আমরা সাদা বাংলায় ‘আলেয়া’ বলি।
অন্য একটা মজার ঘটনা বলি। কালা ডুঙ্গর বৃহৎ রাণের দক্ষিণ প্রান্তে একটি পর্বত-শৃঙ্গ, ৪৬২ মিটার উচ্চতায় এটি কচ্ছের সর্বোচ্চ অঞ্চল। এখান থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পাক-সীমান্ত, শ্বেত-রাণের মধ্য দিয়ে রাস্তা চলে গেছে সীমান্ত বরাবর, পাহাড়ের নীচেই দেখা যায় লবন-জলের হ্রদ ও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। দেখা যায় বিখ্যাত ভারত-সেতু (India Bridge) আর শ্বেত-মরুর দিক্চক্রবালে সূর্যের অস্ত যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য। পাহাড়ের উপর শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের হাতে রোপন করা গাছ আছে। আর আছে ভগবান দত্তাত্রেয়র মন্দির, তিনি নাকি ঐ অঞ্চলের ক্ষুধার্ত শেয়ালদেরকে নিজের অঙ্গ কেটে খাইয়েছিলেন, সেই স্মৃতিতে গড়ে ওঠা। এই কালি-ডুঙ্গর পাহাড়ে বাসে ওঠার সময় দেখা গেল আরেক ব্যাপার। যৎসামান্য চড়াই উঠতেও যেন বাসটার কষ্ট হচ্ছে, থেমে থেমে যাচ্ছে। আবার কখনও নিজের থেকেই স্পীড বেড়ে যাচ্ছে। ভৌতিক কাণ্ড! না, বাসের কন্ডাক্টার জানালেন, ওটা চুম্বক পাহাড়, বাসে লোহা-ইস্পাত আছে বলে আকর্ষণের ফলে গতি পায় না সহজে। জানিনা কতটা সত্যি। তবে গ্রীস (বা তুরস্ক, মতান্তরে ভারতের) ম্যাগ্নেশিয়া অঞ্চলের এক পাহাড়ে চুম্বক প্রথম দেখা যায়। আবার রোমান দার্শনিক প্লিনির (Pliny the Elder) মতে ২৬০০ বছর আগে ম্যাগ্নেস নামে এক মেষপালকের লোহার পেরেক লাগানো জুতো ইডা নামের পাহাড়ে চড়ার সময় আটকে গেছিল, তাতেই জানা যায় চুম্বকের অস্তিত্ব। মেষপালক ম্যাগ্নেসের নাম থেকে এই চুম্বকের নাম হল ম্যাগনেট। সত্যি, গল্পকথার শেষ নেই।
(৫) উল্কা-গহ্বর (Meteoritic Crater)
লোনার, বুলঢানা, মহারাষ্ট্র
আজ থেকে ৫২,০০০ বছর আগে এক বিশাল উল্কাপিণ্ড (meteorite), তা অন্ততঃ ৬০ মিটার ব্যাসের আর কুড়ি লক্ষ টন ওজনের ত হবেই, ছুটে এসেছিল বহির্বিশ্বের মহাকাশ থেকে, অন্ততঃ ৯০,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার দুরন্ত গতিতে আছড়ে পড়েছিল মহারাষ্ট্রের বুলঢানা জেলার লোনার গ্রামে। ফল কী হল? উল্কাপিণ্ডটি মাটির উপরের কঠিন বেসাল্ট পাথরের আবরণ ভেদ করে ১৫০ মিটার গভীর আর ১.৮২ কিলোমিটার ব্যাসের এক বিরাট গহ্বর বানিয়ে উধাও হয়ে গেল মাটির গভীরে। সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন প্রচণ্ড তাপে হয়ত পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল সেই উল্কার টুকরো আর ঐ অঞ্চলের মাটি-পাথরের বেশ কিছু অংশ। সেই গহ্বর ভরে উঠল ভূগর্ভের জলে, সাথে মিশল বৃষ্টি আর অন্য চারপাশ থেকে গড়িয়ে নামা জলের ধারা। তৈরি হল এক বিশাল হ্রদ বা লেক। বাটির আকারের এই গর্তটি সম্বন্ধে ভারতবাসী (বিজ্ঞানীরা বাদে) খুব কম জানলেও, এই লেক ও গহ্বর, যা লোনার ক্রেটার (Lonar Crater) নামে বিখ্যাত (চিত্র-১৩) বিশ্বে এ ধরণের তৃতীয় সবচেয়ে বড় হ্রদ। উল্কাপিণ্ডের আঘাতে সৃষ্ট গহ্বর আরো দুটি আছে ভারতে, সে নিয়ে আলোচনা করা যাবে পরে। এ নিয়ে গবেষণা করে চলেছে দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীদের দল, প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন তথ্য।
কী সেই বৈশিষ্ট্য এই ক্রেটারের আর তার অদ্ভুত সবুজ রঙের জলের যাদুতে ছুটে আসে অজস্র পর্যটক, যদিও এ জল পান তো দূর, এ জলে স্নান করাও বিপজ্জনক, এত তীব্র এর ক্ষারকতা, pH প্রায় ১০.৭। রসায়নের ছাত্রমাত্রেরই জানা আছে যে শুদ্ধ জলের pH হয় ৭। তার কম হলে তা হয় অম্লধর্মী আর বেশি হলে ক্ষারক। একই সাথে এই জলে লবণের পরিমাণও খুব বেশি। এই হ্রদেরই এক প্রান্তে কিন্তু সাধারণ জলও আছে, আর তাকে কেন্দ্র করেই নানাজাতীয় বিচিত্র গাছপালা-জীবজন্তু রাজত্ব করছে এই বাটির মত ক্রেটারের গায়ের উপর। আরও আশ্চর্য, এই ধরণের বেসাল্ট ক্রেটার পৃথিবীতে কম থাকলেও (এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১৯১টি) মঙ্গলগ্রহে প্রচুর দেখা যায়, সেখানে বায়ুমণ্ডল না থাকায় উল্কাগুলো পুড়ে শেষ হয়ে যায় না বলেই হয়ত।
একটা মজার কথা জানাই। লোনার ক্রেটার আমারও সম্পূর্ণ অজানা ছিল। ২০০৪-এ অজন্তা-ইলোরা দেখতে ঔরঙ্গাবাদ গেছিলাম, উঠেছিলাম MTDC-র হোটেলে। সেখানকার ম্যানেজারই লোনার সম্বন্ধে আমাদেরকে জানান। ঠিক ক্রেটারের সামনে রাস্তার ধারেই মহারাষ্ট্র ট্যুরিজমের একটা চমৎকার গেস্ট হাউস আছে, অনলাইন বুকিং করা যায়। তাই সময় করে একবার ঘুরে এলেই পারেন। আরও অনেক আশ্চর্যজনক ব্যাপার আছে লোনারে। তার মধ্যে একটা হল উল্কা থেকে ছিটকে পড়া চুম্বকীয় ব্যাসাল্ট পাথর যার আকৃতি দেখে হনুমানের মূর্তি ভেবে মন্দির বানিয়ে পুজো করা হয় (উল্কা-মারুতি মন্দির)। এ ছাড়া আছে উল্কার আঘাতে ভূ-স্তরে ওলট-পালট ঘটে তৈরি হওয়া একটা আর্টিসান ওয়েল (চিত্র-১৫), যা থেকে নিজে থেকেই জল পড়ে, দৈবশক্তি মেনে সেখানেও বেশ কিছু মন্দির তৈরি হয়ে গেছে, অবশ্য কিছু প্রাচীন মন্দির নীচে হ্রদের ধারেও আছে (চিত্র-১৬)। এছাড়া একটা রহস্যজনক বিশেষত্ব যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও বোঝার চেষ্টা করে চলেছেন - সেটা লেকের চারধারের ঢালু অংশে জন্মানো গাছপালা নিয়ে। লেকের চারধারের অংশটা বিভিন্ন বৃত্তীয় পথে ভাগ করে দেখা গেছে সবচেয়ে বাইরের বৃত্তে জন্মায় মূলতঃ খেজুর গাছ। তার ঠিক ভেতরের বৃত্তে শুধু তেঁতুল আর তার ভেতর দিকে বাবুল বা বাবলার গাছ। আর কিছু বলছি না, সেখানে গেলে আরও অনেক কিছুই জানতে পারবেন, সব আগেই জেনে গেলে চলবে?
 |
চিত্র - ১৪ |
পুনশ্চঃ এই অংশটা আগ্রহ না থাকলে বাদ দিতে পারেন, প্রাকৃতিক গহ্বর নিয়ে কিছু আলোচনা করছি।
১) সৌরবিশ্বে অন্ততঃ তিনরকমের মহাজাগতিক ঢেলা বা পিণ্ড দেখা যায়, অন্ততঃ যাদের দ্বারা পৃথিবীর আক্রান্ত হবার বা ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকে। এরা হল গ্রহাণুপুঞ্জ (Asteroid), উল্কাপিণ্ড (Meteorite) আর ধূমকেতু (Comet)। সৌরজগতে (solar system) অন্ততঃ কয়েক হাজার কোটি এরকম ভুষিমাল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই মহাকাশ-পথিকরা গ্রহ নামধারণের পক্ষে খুবই ছোট বা হাল্কা। তারা পৃথিবীতে ঢুকে পড়লে হয়ে যায় উল্কা (meteors) বা উল্কাপিণ্ড (meteorites). এরা কী বস্তু একবার তাহলে দেখা যাক।
গ্রহাণু: এরা কঠিন, ধাতু বা পাথরের তৈরি সৌর গ্রহ বা উপগ্রহের টুকরো। এরা মূলতঃ মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝের আকাশে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
ধূমকেতু: এদের দেহ বরফ, গ্যাস আর ধূলোয় গড়া, জন্ম হয় ৪.৬ কোটি বছর আগে সৌরমণ্ডলের সাথেই। ধূমকেতুগুলোর একটা নির্দিষ্ট গতিপথ আর সময়-চক্র আছে যেমন হ্যালির ধুমকেতু আমাদের আকাশ দিয়ে উড়ে যায় প্রতি ৭৫ বছরে একবার, ১৯১১ আর ১৯৮৬এ এসেছিল, আবার ২০৬১তে দেখা যাবে। ধূমকেতুর আঘাতে পৃথিবীর সাধারণতঃ বড় কোন ক্ষতি হয়না।
উল্কাণু (Meteoroids)- এরা গ্রহাণু বা ধূমকেতু থেকে ভেঙে পড়া বা কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা ঢেলা। এদের আকার ধুলিকণা থেকে শুরু করে কয়েক মাইল ব্যাসের হতে পারে। এরা পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়লে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। তখন তাদের বলে উল্কা। এধরণের ছোট ছোট উল্কা সাধারণতঃ পৃথিবীতে পৌঁছোয় না, রাস্তায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে কিছু টুকরো পৃথিবী বা অন্য গ্রহের বুকে আছড়ে এদিকে-ওদিকে ছিটকে পড়ে, তাদেরকে আমরা বলি উল্কাণু।
২) আমাদের আলোচনা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে পৃথিবীর বুকে তৈরি ক্ষতগুলো (meteoric crater) নিয়ে। এরকম এখনও পর্যন্ত ১৯১ টি পাওয়া গেছে, মানে পড়েছে হয়ত লক্ষ বা কোটি বছর আগে, কিন্তু আমাদের চোখে পড়েছে এই সেদিন। ভারতে এরকম আরো দুটি আছে। সবচেয়ে বড় আর পুরনোটি উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের মধ্যপ্রদেশের শিবপুরি জেলার ধালা গহ্বর, এর ব্যাস প্রায় ১১ কিমি। দ্বিতীয়টি রাজস্থানের বরান জেলার রামগড় গহ্বর, এটি কোটা থেকে প্রায় ১১৪ আর বরান থেকে ৪২ কিমি দূরে। রামগড় ক্রেটারের ব্যাস ২.৮ কিমি আর আঘাতের ফলে এর চারপাশ ২০০ মিটার উত্তল হয়ে গেছে। তবে এই দুই ক্রেটার সম্বন্ধে রাজ্য সরকারের ভূবিদ্যা সংস্থা ছাড়া কেউ তেমন খবর রাখে না, পর্যটন-স্থল গড়ে ওঠা অনেক দূরের কথা। তবু রামগড়ের ইজেক্টা (উত্থিত অংশ, চিত্র - ১৮) আর পার্বতী নদীর তীরে গড়ে ওঠা কিছু প্রাচীন মন্দিরের আকর্ষণে কিছু তীর্থযাত্রী আসে।
৩) পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত উল্কা-গহ্বর-
ক- মেক্সিকোর চিখুলাব (Chicxulub Crater) — এটা এ যাবৎ
আবিষ্কৃত বৃহত্তম, এর গহ্বরের ব্যাস ১৮০ কিলোমিটার। প্রায় বিশ লক্ষ হাফ মেগাটন টি-এন-টির শক্তির সমান কয়েকটি বিস্ফোরণে ৬৫ লক্ষ বছর আগে কেঁপে উঠেছিল পৃথিবী, ঘটিয়েছিল অগ্নিঝড়-ভূমিকম্প-সুনামী একের পর এক। জুরাসিক যুগ তখন। মনে করা হয় ডাইনোসর জাতি সমূলে ধ্বংস পায় এই তাণ্ডবে (চিত্র-১৭)।
খ- জার্মানির বাভারিয়ার রাইস (Ries Crater, Bavaria) - ২৫ কিমি ব্যাসের এই গর্তের মাঝে সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে Nordlingen শহর। দেড় কোটি বছর আগে এক উল্কার দাপটে প্রায় ১০০০ বিলিয়ন টন মাটি-পাথর উঁপড়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে।
গ- কালি, এস্তোনিয়া (Kaali, Estonia)- এখানের গহ্বরটি খুবই নতুন, মাত্র ৭৫০০ বছর আগে উল্কাপিণ্ডটি পড়ে ঘনবসতি অঞ্চল শেষ করে দেয়। তবু পরে এই গহ্বর আর তার ফলে তৈরি হ্রদের চারপাশে গড়ে ওঠে এক প্রাচীন সভ্যতা।
(৬)প্রথম খনিজ তেল আর দেবী জ্বালামুখী
ডিগবয়, আসাম ও কাংড়া, হিমাচল প্রদেশ
মাটির নীচে প্রথম তেল
আজ থেকে প্রায় দেড়শ’ বছর আগেকার কথা। আসাম রেলওয়ে অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানী (AR&T) উত্তর-পূর্ব আসামের ডিব্রুগড় শহর থেকে রেললাইন পাতছে বর্মা মুলুকের প্রান্ত পর্যন্ত, যদিও দুর্গমতার জন্যে তা লিডো পর্যন্ত যাবে। স্লিপারের জন্যে কাঠের মোটা মোটা গুঁড়ি কাটা হচ্ছে, পোষা হাতির দল তা জঙ্গল থেকে পাহাড়ি পথে মাটির উপর দিয়ে টেনে আনছে ডিব্রুগড় ও তিনসুকিয়ার গুদামে। ইয়ার্ডের ইংরেজ মালিক হঠাৎ একদিন হাতির পায়ে তেলতেলে আঠালো গোছের কিছু একটা লেগে থাকতে দেখলেন। সেই একই চিহ্ন পাওয়া গেল কাঠের গুঁড়িগুলোর গায়ে। কী যেন সন্দেহ করে তিনি সাথে সাথেই শাবল-গাঁইতি ও ছেলে-ছোকরাদের দলবল নিয়ে হাতির পায়ের ছাপ অনুসরণ করে গিয়ে পৌঁছলেন পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা একটা জলা জায়গায়। চারদিকে ভেজামাটি আর গাছপালার বুনো গন্ধ। সেখানেই একটা জায়গা বেছে একটি ছোকরাকে স্থানটি খুঁড়তে বললেন সাহেব। ফলও পাওয়া গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। উত্তেজনায় সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন - ‘Dig, boy, dig’। মাটির বুক থেকে বেরিয়ে এল ঘন সবুজ-কালো রঙের তরল পদার্থ, আধুনিক দুনিয়া যার নাম দিয়েছে পেট্রোলিয়াম – ‘কালো সোনা’।
এইভাবেই আবিষ্কৃত হল ভারতের প্রথম খনিজ তেল, দুর্গম উত্তর-পূর্ব ভারতের অখ্যাত গ্রামে, যার নামকরণ হল এক অজ্ঞাতনামা বালকের কাজের স্বীকৃতিতে – ডিগবয়। তার মাত্র সাত বছর আগে ১৮৫৯ সালে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় বিশ্বের প্রথম তেলের কুয়ো খুঁড়ে বিখ্যাত হয়েছেন এডুইন ড্রেক। অবশ্য ভারতের প্রথম তৈলকূপ খুঁড়েছিলেন ম্যাক্কিলপ-স্টুয়ার্ট কোম্পানীর কর্মী গুডএনাফ ১৮৬৭ সালেই আসামের জয়পুর অঞ্চলে, তবে তাঁর প্রচেষ্টা ‘গুড এনাফ’ ছিল না, ফল মিলল ডিগবয়ে এসে। পরে ১৮৮৯ সালে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় কূপ নং ডিগবয়-১; তবে সে অন্য কাহিনি। প্রথম খনিজ তেল প্রাপ্তির স্বীকৃতিতে অয়েল ইণ্ডিয়ার প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের তরফে স্থাপিত হয় ভারতের প্রথম ‘পেট্রোলিয়াম সংগ্রহশালা’, ডিগবয় শহরেই তৈলকূপ ডিগবয়-১ কে মাঝে রেখে (চিত্র ১৯)।
হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকায় আছে জ্বালাদেবীর মন্দির যেখানে দেবীমূর্তির স্থানে আছে একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, একটি জিভের আকারে সেটা একটানা দিনের পর দিন জ্বলেই চলেছে। কথিত আছে যে এটি তথাকথিত সতীর ৫১ পীঠের একটি, শিবের তাণ্ডব-নৃত্যের সময় দেবীর জিভ পড়েছিল এখানে। স্বভাবতঃই প্রচুর ভক্তসমাগম হয়, দেবীর মহিমা-কীর্তনে আর তীর্থযাত্রীদের কোলাহলে জায়গাটি গমগম করে সদাসর্বদা। শোনা যায় সম্রাট আকবর এই শিখা জল ঢেলেও নেভাতে ব্যর্থ হন, তখন তিনি একটি ধাতুনির্মিত ছত্র দান করে যান মন্দিরে, শিখার মাথায় ধরার জন্যে। ভাঙাচোরা ছত্রটি এখনও সেখানে রাখা আছে প্রদর্শনের জন্যে।
১৮৩৫এ কাংড়া-উপত্যকায় প্রথম জিওলজিক্যাল সার্ভে হয় ও তার ফলের উপর ভিত্তি করে ১৯৫৬ সালে ওএনজিসি কাংড়া ভ্যালিতে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস থাকতে পারে ভেবে শুরু করে কূপ খনন। গোটা তিনেক কূপ ড্রিল করেও কিছু পাওয়া যায়নি, অগত্যা ১৯৮৯তে কাজ গুটিয়ে ফেলা হয়। উন্নতমানের মাপজোখের পর ২০০৮এ আবার ড্রিলিংএর পরিকল্পনা হয়, কিন্তু হিন্দু ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগার ভয়ে কাজ শুরু করার অনুমতি পাওয়া যায়নি সরকারি মহল থেকে। এই জ্যোতি বা শিখা সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নতুন কী আর ধারণা করবেন, এ রকম স্থান অজস্র আছে সারা বিশ্বে। নিউইয়ার্কের অর্চার্ড পার্কে (Eternal Flame Falls, Orchard Park, New York) আর আজারবাইজানের বাকুর কাছে আছে আতেশগাহ (The Ateshgah at Surakhani, Baku) এর জ্বলন্ত উদাহরণ, হ্যাঁ, ধর্মস্থান হিসেবে সেগুলোও চিহ্নিত। তবে আতেশগাহ হিন্দু আর পার্শি তীর্থ ছিল এককালে। পাশে খনিজ গ্যাসের কূপ খোঁড়ার পর উৎপাদন শুরু হলে ১৯৬৯ সালে এই আগুনের শিখা একসময় নিভে যায়, এখন পার্শি তীর্থযাত্রীদের ভীড় বাড়ায় একে পুনরায় জ্বালানো হচ্ছে নিকটস্থ খনি থেকে পেট্রোলিয়াম গ্যাস নল দিয়ে পাম্প করে। এই স্থানে বিভিন্ন ভাষার প্রাচীন ফলক আছে, যার মধ্যে একটিতে দেবনাগরী লিপিতে বিক্রমাদিত্যের নামও আছে।




(৭)
রামসেতু বা Adam's Bridge
সেতুবন্ধ রামেশ্বরম, তামিলনাডু।
আজ থেকে তিন-সাড়ে তিন হাজার বছর আগের ঘটনা। সীতার খোঁজে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সৈন্য নিয়ে এসে উপস্থিত ভারতের দক্ষিণে পম্বন দ্বীপে। সামনে বিশাল সমুদ্র পেরোলে লঙ্কাদ্বীপ। রাম ভাবছেন এত বানর সৈন্য নিয়ে কিভাবে সমুদ্র পার হবেন। ইতিমধ্যে রাবণের ছোটভাই দলবদলে রামের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শে রাম সমুদ্রকে অনুরোধ করলেন পথ করে দিতে, সমুদ্র কথায় কান দিলেন না। রাম ভীষণ রেগে 'শুষে নেব' বলে ধনুকে বাণ জুড়লেন। তখন সমুদ্র ভয় পেয়ে এসে পিঠ পেতে দিলেন, বিশ্বকর্মা-পুত্র ইঞ্জিনীয়ার নল ৩০ কিলোমিটার (রামায়ণে আছে শত মানে ১২৩০ কিলোমিটার লম্বা সেতু পাঁচ দিনে বেঁধে ফেলল। ৩০ কিলোমিটার (রামেশ্বরম থেকে ধরলে ৪৮) কিভাবে আড়াই বা চার যোজনের জায়গায় একশ বললেন মহামুনি সে প্রশ্ন অবান্তর।
এবার আসা যাক রামেশ্বরম প্রসঙ্গে। নিকটস্থ বড় শহর ও এয়ারপোর্ট মাদুরাই থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে ভারতকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যোগ করা এই সেতুবন্ধ আর রামেশ্বরম শহর সত্যিই একটা মনোরম পর্যটক স্থল। রাম এখানে হনুমানের হিমালয় থেকে আনা শিবের বিশ্বলিঙ্গমের পুজো করেন, তাই এর মূল রামেশ্বর মন্দির শৈব-বৈষ্ণব দুদলের কাছেই আরাধ্য। বিশাল মন্দিরে ১২১২টা স্তম্ভ আর বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা অলিন্দ বা করিডর। এছাড়া আছে হনুমানের আনা গন্ধমাদন, কোদন্ডরামস্বামী ও বিভীষণ মন্দির যেখানে রাম আর বিভীষণের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। আর আছে আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডাঃ কালামের আবাস যা এখন একটি সংগ্রহালয় আর ভারতীয়দের একটি আধুনিক তীর্থক্ষেত্র। কম্বন দ্বীপে শেষ রেল স্টেশন রামেশ্বরম যেতে পার হতে হয় সমুদ্রের উপর দিয়ে ২.৫ কিমি লম্বা রেল ব্রিজ, পাশ দিয়ে চলেছে সড়ক সেতু। রেল সেতুর বিশেষত্ব এই যে এর উচ্চতা কম হওয়ায় জাহাজ পারাপারের জন্যে এর একটা গেট খোলা থাকে, শুধু রেলগাড়ি এলে সাময়িক ভাবে এর দুই প্রান্ত হাইড্রোলিক শক্তিতে জুড়ে দেওয়া হয়। আরো বিস্ময় হচ্ছে মন্দির থেকে বেলাভূমি ধরে ধনুষ্কোটির ২১ কিমি পথ, ১৯৬৪র ভয়ানক ঝড়ে এর অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তা ভাঙাচোরা, উদ্ধারকার্য চলছে কিন্তু চতুর্দিকে সমুদ্রের দৃশ্য অতুলনীয়।