Sunday, May 31, 2020

কিছু ভ্রমণ, সঙ্গে বিজ্ঞান- ভ্রমণ-বিজ্ঞান প্রবন্ধ।

#কিছু_ ভ্রমণ,_সঙ্গে_বিজ্ঞান
পল্লব চট্টোপাধ্যায়
১) গোড়ার কথা।
অবাক লাগছে বুঝি শীর্ষকটি দেখে? আমাদের দেশে এটা অবাক হবার মতোই কথা বটে। আমরা বেড়াতে গেলে কী কী দেখতে যাই সাধারণতঃ? তীর্থস্থান, মন্দির-চার্চ-দরগা, ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক দৃশ্য – যেমন পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, জঙ্গল, জীবজন্তু, প্রাচীন সৌধ, প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি, এরকম কত কিছু। কিন্তু এরকম কে শুনেছে কোথাও যে বৈজ্ঞানিক আশ্চর্য দেখতে লোকে ছুটছে দেশ-বিদেশে? কবে কোথায় মাটি ফুঁড়ে বেরিয়েছে আগ্নেয় পাথর বা মহাকাশ থেকে খসে পড়েছে উল্কাপিণ্ড, পাহাড়ের বুক থেকে চুঁইয়ে আসা খনিজ-ধোয়া জল থেকে গজিয়ে ওঠা অজস্র স্ফটিক (crystal) ছুঁচের মত খাড়া হয়ে আছে। কোথাও মাইলের পর মাইল প্রান্তর দুধের মত সাদা আবার কোথাও বা খোলা মাঠে যখন তখন আগুনের কুণ্ডলি ঝলসে উঠছে – এসবকে কী বলব? ঈশ্বরের লীলা ভেবে শুধু ভক্তিভরে প্রণাম করব? না কি এর বৈজ্ঞানিক রহস্য জানার জন্যে কৌতূহলে ছুটে যাব, খুঁজে বেড়াব বই-পত্র, কারণ জিজ্ঞেস করবে এর-তার-গুগলের কাছে? অবশ্য ঈশ্বরের লীলা ভাবলে দোষের কিছু নেই, কারণ এই মহাবিশ্বে যেখানে যা কিছু ঘটছে তার পিছনে যে শক্তি লুকিয়ে আছে তাকেই যদি ভগবান বলি তাহলে সব সৃষ্টি তাঁরই লীলা, কিন্তু তার যে একটা বিজ্ঞান-সম্মত কারণও আছে তা জানতে পারলে আনন্দটা লাফিয়ে চারগুণ বেড়ে যায় না?
এত বড় ভূমিকাটা কেন দিলাম জানেন? কারণ ভ্রমণ করতে গিয়ে কোনও কিছুর সৌন্দর্য, ইতিহাস বা ধার্মিক মাহাত্ম্য নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত থাকি যে তার পেছনে যে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে সে কথা নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামাই, অন্ততঃ আমাদের দেশের লোকেরা। তাই আমরা কুতুব মিনারের চত্বরের লৌহস্তম্ভ দেখে পেছন-দিক দিয়ে সেটা জড়িয়ে ধরতে যাই - যে পারে সে নাকি খুব ভাগ্যবান। বড় জোর তার প্রাচীনত্ব নিয়ে মাথা ঘামাই, কিন্তু ভাবি না যে স্তম্ভটি কত উন্নতধরণের ইস্পাতে তৈরি, কী সেই টেকনোলজি যে আজ হাজার বছরেও তাতে মরচে ধরেনি। তেমনই হিমাচল প্রদেশের জ্বালামুখী অঞ্চলে দেবীর মন্দিরে যে এক জায়গায় একটানা আগুন জ্বলছে নিজে থেকেই, তার ব্যাখ্যা হিসেবে বোঝান হয় নাকি সতীর জিভ পড়েছিল সেখানে তাই দৈবশক্তিতে আগুন জ্বলছে, জ্বালামুখী পুরাণোক্ত একান্ন পীঠের একটি। কিন্তু একথাও সত্যি যে মাটির নিচে জমা হাইড্রোকার্বন গ্যাস ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে ভূগর্ভ থেকে, তাই জ্বলছে সারাক্ষণ। এরকম অন্ততঃ আরো গোটা দশেক জায়গা আছে পৃথিবীতে, কতগুলো স্থানে মায়ের জিভ পড়তে পারে? তাই বলছি, সর্বত্র ঘুরে বেড়ান, ভালো জিনিস দেখে খুশি হন, তারিফ করুন, কিন্তু জিজ্ঞাসা থামাবেন না।
তাহলে এবার আমরা এই ভারতেরই কয়েকটা বৈজ্ঞানিক ভ্রমণক্ষেত্র ঘুরে আসি, কেমন? আপাততঃ ফেসবুকের হাত ধরেই, পরে সুযোগ পেলে কিন্তু জায়গাগুলো দেখতে ছাড়বেন না।
কোথায় কোথায় যাওয়া যায়? লকডাউনের মাঝে সত্যি বলতে কি কোত্থাও না। বিদেশে তো নয়ই। তবে একটা লিস্ট করি যেখানে ভবিষ্যতে কখনও যেতে পারি, যেখানে গিয়ে আমরা হাতীর দর্শনীয় গজদন্ত দেখে শুধু মুগ্ধ হব না, খাবার বা আসল দাঁতের খবর নেবার কথাটাও একবার ভাবব।
সত্যি সত্যি ভাবব কী? মনে করুন যদি অমরনাথের গুহায় গিয়ে আপনি বলেন যে এই শিবলিঙ্গ বরফের তৈরি বিখ্যাত সব স্ট্যালাগমাইটগুলোর মধ্যে একটি, শিবভক্তদের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পারবেন? তাই সাধু সাবধান। 'রহিমন নিজ মন কী বিথা মন হি রাখো গোয়!'

২)
স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট (
Stalactite and Stalagmite)
বরাগুহালু, আরাকুভ্যালী (অন্ধ্রপ্রদেশ)

১নং ছবিটি দেখ। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টনম থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অনন্তগিরি পাহাড়ের আরাকু উপত্যকায় স্থিত বোরা বা বরগুহালুর গুহার ভেতরের একটি দৃশ্য। ৭০৫ ফুট উচ্চতায় স্থিত প্রায় ২০০ মিটার লম্বা এই গুহা ৮০ মিটার গভীর, যার মধ্যে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন আকৃতির ও সাইজের চুনাপাথরে গড়া প্রচুর প্রাকৃতিক ভাস্কর্য। তার মধ্যে কয়েকটা মাটি থেকে উপরে উঠেছে, কিছু ছাত থেকে ঝুলছে, আবার কিছু মোটা স্তম্ভের মত মাটি থেকে গুহার ছাত পর্যন্তও উঠেছে। সাধারণ যাত্রী-দর্শক এসব দেখে হর-গৌরী, কালী, ভূত, হাতীর শুঁড়, ঋষির দাড়ি - কত কিই না কল্পনা করে। এই কল্পনা শুরু হয় গুহার শেষপ্রান্তে থাকা একটি শিবলিঙ্গের আকারের স্তম্ভ থেকে যার উপরে আছে একটি গরুর আকৃতির মূর্তি। তার নিচ দিয়ে নেমে আসা জলস্রোত একটি নদীতে পরিণত হয়, তাই সেই নদীর নাম ‘গোস্থান’। কিন্তু এগুলো আসলে কী বা কীভাবে এর উৎপত্তি সে নিয়ে কে মাথা ঘামায়? এস তাহলে আমরা একটু ভাবি।গাঢ় তরল বা দ্রবণ যখন মাটি বা ছাত থেকে চুঁইয়ে বেরোয়, তার পৃষ্ঠ-টানের (surface tension) ফলে তা খসে পড়ে না আর তার মধ্যে দ্রবীভূত বা তরল অবস্থায় থাকা বস্তু কঠিন হয়ে মূল জায়গা থেকে একটু একটু করে বাড়তে থাকে। যদি এটা মাটি থেকে ওপরে ওঠুরে এসেছিঘ তাকে আমরা বলি স্ট্যালাগমাইট (stalagmite) আর ছাত থেকে ঝুলতে থাকলে তাকে বলা হয় স্ট্যালাকটাইট (stalactite)। মনে রাখার সুবিধের জন্যে জানাই প্রথমটির মাঝে ‘g’ আছে, তার মানে ground থেকে ওঠে। পরেরটার মাঝে ‘c’ আছে অর্থাৎ সেটা ceiling থেকে ঝোলে। এই স্ট্যালাগমাইট আর স্ট্যালাকটাইট বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু থেকে তৈরি হতে পারে, যেমন চুনাপাথর (limestone), লাভা, কাদামাটি, কয়লা এমনকি বরফও। বরফের তৈরি স্ট্যালাগমাইটের সেরা উদাহরণ অমরনাথের তুষার শিবলিঙ্গ - তবে সেখানে গিয়ে এসব না বলাই ভাল, ধর্মভীরু তীর্থযাত্রীরা তাড়া করবে! বরং Stalactite and Stalagmite নামে একটা ভিডিও গেম আছে, সেটা খেলার অভিজ্ঞতা থাকলে বেশ খানিকটা ধারণা জন্মাবে এ নিয়ে।

এইবার ভ্রমণ প্রসঙ্গে আসি। বিশাখাপট্টনম অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী না হলেও বৃহত্তম শহর, একটি বড় বন্দর-শহর, নামী রেল-জংশন, বিমানবন্দর আর হ্যাঁ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ভুবনেশ্বর হয়ে হায়দরাবাদ-তিরুপতি-চেন্নাইয়ের পথে বিশাখাপট্টনম বা ভাইজ্যাগ নেমে একদিন শহর ঘুরে ট্যুরিস্ট বাসে, ট্রেনে বা ট্যাক্সিতে করে অন্য একদিনেই ১১৫ কিলোমিটার দূরের আরাকু-ভ্যালি আর বোরা গুহা দেখে আসা যায় ৮-১০ ঘন্টার মধ্যে। ৩১০০ ফুট উচ্চতার আরাকু উপত্যকার জন্যে বিশেষ ট্রেন আছে কিরন্দেলু প্যাসেঞ্জার যার মধ্যে গ্লাস-টপ এসি কোচ লাগানো হয়েছে একটি। আরাকুর দৃশ্যাবলী, ফলস, আদিবাসী ম্যুজিয়াম দেখে চলে আসুন বোরা গুহা। সিঁড়ি আছে, ভেতরটা নানা রঙের আলোয় সাজানো হলেও টর্চ নিয়ে যাওয়াই ভাল। জনপ্রতি প্রবেশমূল্য ৭০ টাকা, ক্যামেরা আলাদা খরচ। পুরো গুহা ভালভাবে ঘুরে দেখতে দু-তিন ঘণ্টা লাগে।
চুনাপাথরের ফর্মের আরও এমন নিদর্শন আছে মেঘালয়ের মজমাই (Mawsmai) যা পড়ে শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথে, একটু ঘুরে। তবে সেরাটা হল অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলার বেলাম বা বেলুম গুহা। মজমাই আমি ঘুরে এসেছি, তবে বেলুম যাবার সৌভাগ্য হয়নি। এটি ভারতের প্রাচীনতম গুহার একটি, এর জন্ম শুরু হয়েছে প্রায় পনের কোটি বছর আগে থেকে আর ভাঙ্গাগড়া এখনও চলছে, তবে এর আবিষ্কার আর পর্যটন স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে, এখনও খুব বেশি যাত্রীরা জানেন না।
বেলুমে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক গুহা। ৩ কিমি দীর্ঘ এই প্রাকৃতিক গুহার অবস্থান কোলিমিগুন্ডলা অঞ্চলে। তবে পর্যটকরা দেখতে পারেন মাত্র দেড় কিমি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য গুহার মধ্যে ইলেকট্রিক ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। বোরাগুহার মত এখানেও স্টালাকটাইট ও স্টালাগমাইট জমেজমে বিভিন্ন আকৃতির মূর্তি তৈরি হয়েছে। সিংহদ্বারম, মণ্ডপম, কোটিলিঙ্গালু, পাতালগঙ্গা প্রভৃতি নাম রয়েছে গুহাগুলির। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫.৩০পর্যন্ত গুহা পর্যটকদের জন্য খোলা। প্রবেশমূল্য বড়দের ৪০ টাকা আর ছোটদের ৩০ টাকা।
বেলুমের নিকটতম রেলস্টেশন নান্দিয়াল। হাওড়া থেকে সরাসরি নান্দিয়াল যায় ১৮০৪৭ অমরাবতী এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ২৩.৩০ পৌঁছায় পরদিন রাত ১ টা)। ১২৫৭১ প্রশান্ত নিলয়ম এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ৫.৩০ পৌঁছায় পরদিন বিকাল ৫.০৩)। এছাড়া বিশাখাপত্তনম থেকে নান্দিয়াল যায় ১৮৪৬৩ প্রশান্তি এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ৩.০৫ পৌঁছায় পরদিন রাত ১.৩০)। নান্দিয়াল থেকে বেলুম ৭১ কিমি। এ পথে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন। তবে আমার মতে বেলুম যেতে হলে সঙ্গে ভারতের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে খ্যাত গ্যান্ডিকোটা সফর একসাথে করে নেওয়া উচিত, এর সম্বন্ধে পরে বিশদে আসব।
এই সূত্রে জানাই, বরফের শিবলিঙ্গ হিসাবে খ্যাত কাশ্মীরের অমরনাথ গুহাকে ধার্মিক খ্যাতির ঊর্ধ্বে সৌন্দর্যের আর বিজ্ঞানের দিক থেকে দেখা যেতে পারে ভারতের একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে স্নো-স্ট্যালাগমাইট শিবলিঙ্গ হিসেবেও। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫০০০ ফুট আর ১৩০ ফুট উঁচু গুহার ছাত থেকে তার কোন হিমাঙ্কের কম তাপমানের জল চুঁইয়ে ৮ ফুট উঁচু লিঙ্গটিকে গড়ে তোলে। অস্ট্রিয়ান আল্পসের Eisriesenwelt অঞ্চলে আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তুষার-স্ট্যালাগমাইট (৭৫ ফুট), তবে সঙ্গত কারণেই তার কোন ধার্মিক ভিত্তি নেই।







(৩) মনোলিথিক ইনট্রুশন (Monolithic Intrusion)
গিলবার্ট হিল, মুম্বাই


চিত্র-২ মুম্বাইয়ের পশ্চিম আন্ধেরির ভবন কলেজের পাশেই একটি ঘিঞ্জি বস্তির মধ্যে দুর্গম স্থানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি ৬১ মিটার (২০০ ফুট) উচ্চতার স্তম্ভের মত একশিলা কালো বেসাল্ট পাথরে গড়া পাহাড় যার নাম গিলবার্ট হিল। উচ্চতা এমন কিছু বেশি নয়, এর চেয়ে উঁচু পাহাড় ত মুম্বাইয়েই আরও আছে। তাহলে কী এর বিশেষত্ব? সেটা জানতে গেলে আবার কিছুটা বিজ্ঞান বুঝতে হবে, জানতে হবে পৃথিবীর গঠন আর বৈচিত্র্য সম্বন্ধে।

পৃথিবীর জন্ম ৪৫০ কোটি বছর আগে হলেও তার ভেতরটা, যাকে আমরা লিথোস্ফেয়ার বলি, এখনও বেশ কাঁচা মানে তরল ও গ্যাসীয় ধাতু-পাথরে ভরা। মাঝে মাঝে ফাঁক-ফোকর দিয়ে গলিত শিলা বা ম্যাগমা মাটি ফুঁড়ে উপরের স্তরে কিম্বা তাও ভেদ করে মাটির উপরে চলে আসে। এরই নাম অগ্ন্যুৎপাত বা volcanic eruption। ভূমিকম্পের ফলেও এরকম হতে পারে। এইরকম অগ্ন্যুৎপাত ঘটে গলিত পাথর পৃথিবীর ভেতরেই যদি থেকে যায় তাকে বলা হয় intrusion, আর মাটির বাইরে উঠে এলে তার নাম extrusion Extrusion বাইরে বেরিয়ে সাধারণতঃ টুকরো পাথরপিণ্ড হয়ে বা ভূস্তরের উপর গড়িয়ে গিয়ে জমাট বেঁধে যায়, গিলবার্ট হিলের মত খাড়া দাঁড়ায় না। তাই এই পাহাড় আসলে একটি intrusion, এর গঠনকে বলা হয় ল্যাকোলিথ (Laccolith), পরে চারপাশের মাটি ধুয়ে পুরো পাথরটা বেরিয়ে পড়েছে। ল্যাকোলিথ হল স্তরীভূত শিলার (Sedimentary rock) মধ্যে দিয়ে intrusion ঘটা জমাট লাভার এমন গঠন যার তলদেশ চওড়া, উপরটা গোলাকৃতি বা উত্তল আর সবার নিচে ছড়ানো ম্যাগমার স্তর থাকে। ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের উপর বেরিয়ে যখন স্রোতে বয়ে চলে, তাকে বলা হয় লাভা। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ম্যাগমা আর লাভা গঠিত আকৃতিগুলোর একটা পরিচয় দিলাম চিত্র-৫-এ। এ জাতীয় পাহাড়ের আবিষ্কার প্রথম করেন আমেরিকার ভূতাত্বিক Grove Karl Gilbert, ১৮৭৫-৭৬ সালে। আমেরিকার উটাহ রাজ্যের হেনরি হিলের গঠন সম্বন্ধে তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী এটিও একটি monolithic laccolith intrusion of black basalt rock এটা তৈরি হয় আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে। মনোলিথিক কথাটার মানে একটি মাত্র পাথর দিয়ে গড়া, যেমন মাইশোরের চামুণ্ডী পাহাড়ের বা তাঞ্জোরের নন্দীমূর্তি, কিংবা ইলোরার কৈলাশ মন্দির, যদিও মানুষ তার উপরে পরে অনেক কারুকাজ করেছে। আমরা আরও জানতে পারি যে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে তৈরি ৬১ মিটার (২০০ ফুট) উঁচু গিলবার্ট হিল বিশ্বে সম্ভবতঃ এ জাতীয় দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড়, প্রথমটি হল আমেরিকার ওয়াইয়োমিং-এর খাড়া ২৬৫ মিটার উঁচু ‘ডেভিলস টাওয়ার’ (Devil's Tower - চিত্র-৭) আর পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়া-স্থিত 'ডেভিলস পোস্টপাইল' (Devils Postpile), ব্যস, এ জাতীয় ব্ল্যাক বাসাল্ট মনোলিথিক ল্যাকোলিথ ইনট্রুশন এ পর্যন্ত বিশ্বে তিনটিই পাওয়া গেছে

অবশ্য গিলবার্ট ভদ্রলোকটি কে তা নিয়ে ভিন্নমতও আছে আন্ধেরি অঞ্চলে একজন সেনাপ্রধানের নামও ছিল গিলবার্ট যিনি ১৮৯১ এর আগে এই পাহাড়েরই মাথায় একটি কামান বসিয়েছিলেন আরব সাগর দিয়ে যাওয়া শত্রুদের জাহাজ উড়িয়ে ফেলার জন্যে। তবে জানিনা এর মাথায় কবে তৈরি হয় গামদেবীর মন্দির আর তারপর ১৯৩৯ সালে পাহাড়টি বিক্রি হয়ে যায় একদল ব্যবসায়ীদের কাছে যারা সেটাকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা করে। হ্যাঁ, দক্ষিণ ভাগটা উড়িয়েও ফেলে তারা, আর তাইতে পাহাড়ের বাইরের আবরণ সরে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য ছুঁচলো কালো বাসাল্টের স্তম্ভ, জানা যায় পাহাড়ের আসল ভূতাত্ত্বিক পরিচয়।

এসব জানার পর থেকেই ভূতাত্ত্বিকরা গিলবার্ট হিলকে সংরক্ষণ করার জন্যে আন্দোলন শুরু করেন। তারপর কীভাবে বোম্বের জমি মাফিয়াদের হাত থেকে বাঁচিয়ে বাকি পাহাড়টিকে উদ্ধার করা হয় ও ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এটিকে ফরেস্ট অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী ‘ন্যাশানাল পার্ক’ ঘোষিত করে, সে গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। তারপর এই সেদিন ২০০৭ সালে মুম্বাই ম্যুনিসিপালিটি একে দ্বিতীয় শ্রেণীর হেরিটেজের সম্মান দেয়। আমাদের দেশের ভূতত্ত্ব আর বিজ্ঞান সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আর বাস্তবিক চেতনা কেমন তার কিছুটা কি আন্দাজ মিলল? যারা মুম্বাই বা তার আশেপাশে থাকেন, তাঁরা সময় করে একবার ঘুরে আসতে পারেন, একটা তৃপ্তির অনুভূতি হবে।




Andheri: A lift for Gilbert Hill





(৪)শ্বেত-মরু (White Runn) উত্তর কচ্ছ, গুজরাট

গুজরাটের উত্তর পশ্চিমে আছে কচ্ছ জেলা, যার উত্তরার্ধে (চিত্র- ৯) বিস্তীর্ণ এলাকার সাথে পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের বেশ খানিকটা অংশ নিয়ে প্রায় ৭৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে আছে জলাভূমি(Swamp বা marshy land), যেখানে শুকনো ঘাস আর আগাছা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই উৎপন্ন হয় না। এরই নাম কচ্ছের বৃহত্তর রাণ (Greater Runn of Kutch)। নভেম্বর থেকে এপ্রিলে সেখানে গেলে দেখা যাবে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। দিগন্তব্যাপী প্রান্তর দুধের মত সাদা হয়ে আছে, যেন রূপো গলিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ। এও এক প্রাকৃতিক আশ্চর্য, যার পেছনেও বেশ খানিকটা বিজ্ঞান আছে। কী সেটা? জানতে গেলে চলুন ঘুরে আসি কচ্ছ থেকে।উত্তর কচ্ছের বান্নি তৃণভূমি অভয়ারণ্যের সংলগ্ন দোরডো গ্রামের উত্তর থেকে কচ্ছের বৃহৎ রাণের শুরু, আমাকে ছবিতে (চিত্র-১০) দেখা যাচ্ছে এই শ্বেত-মরুর দেশে। অন্য জায়গা থেকেও দেখা যায় এই শ্বেত মরু, তবে পাকিস্তানের সীমানা-সংলগ্ন এলাকা বলে যাত্রীদের সর্বত্র যাবার অনুমতি নেই। এই বালি কি সত্যিই সাদা, কিন্তু কেমন করে? সব রহস্য ভাঙল যখন কাছ থেকে দেখলাম, জিনিষটা আর কিছুই নয়, সামুদ্রিক লবণের দানা বা স্ফটিক (চিত্র-১১)। কিন্তু সমুদ্রের থেকে এত দূরে মাইলের পর মাইল জুড়ে এত নুন কে ছড়াল? সে গল্প বলি তবে, শুনবেন কি ধৈর্য ধরে?
কচ্ছের শ্বেত-মরু দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম বছর কয়েক আগে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা রাণ-উৎসবে। ভুজ রেল-স্টেশনে আমাদের নিতে এসেছে উৎসব কমিটির গাড়ি। ভুজ ছাড়িয়ে উত্তর পশ্চিমে ঢুকে পড়েছি বিস্তীর্ণ তৃণাঞ্চল ‘বান্নি’ সংরক্ষিত অরণ্যে। জঙ্গল নামেই, শুধু শুকনো ঘাস আর কাঁটাঝোঁপের ছড়াছড়ি। মাঝে একটা জলাভূমিতে দেখা গেল কিছু পরিযায়ী পাখি, ছুটে পালালো দুটি কৃষ্ণসার হরিণ(black buck) আর নীলগাই। তবে কচ্ছের বিখ্যাত বিরল প্রজাতির বন্য-গাধা বা wild ass (Equus hemionus khur) চোখে পড়ল না, এদের দেখা যায় কচ্ছের পূর্বোত্তরের লিটল রানে, যেখানে হরপ্পা-সভ্যতার অঙ্গ ঢোলাবীরার ধ্বংসাবশেষ আছে। ভারতের অবশিষ্ট চিতার প্রজাতি নাকি এই অঞ্চলেই এখনও সংরক্ষিত রয়েছে, যদিও রাস্তার ধারে তাদের দেখা পাই নি, আশাও করি নি। আরেকটা মারাত্মক খবর শুনলাম যে গ্যাণ্ডা বাবুল (Prosopis juliflora) নামে একধরণের কাঁটাগাছ ১৯৭০-৭৫এর মধ্যে বনদপ্তর দ্বারা লাগানো হয় এখানকার জমিতে লবন-আগ্রাসন রোধ করতে, কিন্তু পরে দেখা যার এই আগাছা দ্রুত বিস্তার লাভ করে ভূমির উর্বরতাই নষ্ট করে biodiversity ও ecosystem কে তছনছ করে দিচ্ছে। ১৯৯০ সালে এই গাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাটার অধিকার দেওয়া হয়। তারা এর থেকে জ্বালানী কয়লা বা তৈরি করে। কিন্তু তাতে দেখা দেয় আরেক বিপদ। কয়লার ধোঁয়ায় মৌমাছিরা পালাতে থাকলে সেখানকার মধু-শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর বাবলা গাছ কাটার নামে কিছু লোভী লোক অন্যান্য গাছও নির্বিচারে কাটতে থাকে। যাক, এসব দুরূহ সমস্যা নিয়ে চিন্তা শেষ হল, আমাদের গাড়ি ৮৪ কিলোমিটার উত্তরে ধোরডো রাণোৎসব গ্রামে এসে পৌঁছল। সন্ধের সময় উৎসব কমিটির বাস নিয়ে এল আমাদের চার কিলোমিটার দূরের রাণ বা শ্বেত-মরু অঞ্চলে।
সমুদ্রের জল লবণাক্ত কেন হয় জানেন ত? বিভিন্ন নদী বা প্রবাহিকার জল নানা অঞ্চল থেকে মাটিতে মিশে থাকা নানা জাতীয় প্রচুর লবণ বয়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনও বড়ো হ্রদ বা সমুদ্রে এনে ফেলে। তাই মোহানার যত কাছাকাছি আসে নদীর জলে নুনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাজস্থান থর মরু অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত এককালীন সরস্বতী আর সিন্ধুনদের কিছু শাখা যেমন লোনী, ঘগ্‌ঘর-হাক্‌ড়া, বানস, রুপেন ইত্যাদি নদী উপযুক্ত ঢালু জমি আর যথেষ্ট জলধারার অভাবে এই কচ্ছ অঞ্চলে এসেই তাদের অবশিষ্ট জল ঢেলে দিয়ে মরে যায়। তবু কিন্তু তারা হারায় না। রবীন্দ্রনাথের গান আছে না, ‘যে নদী মরুপথে হারাল ধারা/ জানি হে জানি তাও হয়নি হারা’, সেভাবেই তারা দিগন্তবিস্তৃত এই জলাভূমি তৈরি করে চলে। জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত এই জলধারা এসে রাণে পড়ে আর নভেম্বরের মাঝামাঝি রোদের তাপে তা শুকিয়ে লবণের স্ফটিক সাদা ফুলের মত ফুটে ওঠে থরে থরে। সৃষ্টি হয় শ্বেত মরুর। রাতে চাঁদের আলোয় এর সৌন্দর্য অতুলনীয়, তবে সীমান্ত বলে সন্ধের পর সেখানে যাওয়া অনুমতিসাপেক্ষ।
আর একটা জিনিষ সেখানে সন্ধের পর দেখা যায় মাঝে মাঝে, লোকে তাকে বলে ‘চির-বাত্তি’ বা ভৌতিক আলো (চিত্র- ১২)। হঠাৎ হঠাৎ যেখান-সেখান থেকে আগুনের গোলা শূন্যে লাফিয়ে ওঠে বিনা কারণেই। গ্রামের অশিক্ষিত লোকেদের কাছে তা ভৌতিক উপদ্রব মনে হলেও, আসলে ওটা ওই জলায় তৈরি হওয়া মিথেনের কারসাজি যাকে আমরা সাদা বাংলায় ‘আলেয়া’ বলি।
অন্য একটা মজার ঘটনা বলি। কালা ডুঙ্গর বৃহৎ রাণের দক্ষিণ প্রান্তে একটি পর্বত-শৃঙ্গ, ৪৬২ মিটার উচ্চতায় এটি কচ্ছের সর্বোচ্চ অঞ্চল। এখান থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পাক-সীমান্ত, শ্বেত-রাণের মধ্য দিয়ে রাস্তা চলে গেছে সীমান্ত বরাবর, পাহাড়ের নীচেই দেখা যায় লবন-জলের হ্রদ ও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। দেখা যায় বিখ্যাত ভারত-সেতু (India Bridge) আর শ্বেত-মরুর দিক্‌চক্রবালে সূর্যের অস্ত যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য। পাহাড়ের উপর শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের হাতে রোপন করা গাছ আছে। আর আছে ভগবান দত্তাত্রেয়র মন্দির, তিনি নাকি ঐ অঞ্চলের ক্ষুধার্ত শেয়ালদেরকে নিজের অঙ্গ কেটে খাইয়েছিলেন, সেই স্মৃতিতে গড়ে ওঠা। এই কালি-ডুঙ্গর পাহাড়ে বাসে ওঠার সময় দেখা গেল আরেক ব্যাপার। যৎসামান্য চড়াই উঠতেও যেন বাসটার কষ্ট হচ্ছে, থেমে থেমে যাচ্ছে। আবার কখনও নিজের থেকেই স্পীড বেড়ে যাচ্ছে। ভৌতিক কাণ্ড! না, বাসের কন্ডাক্টার জানালেন, ওটা চুম্বক পাহাড়, বাসে লোহা-ইস্পাত আছে বলে আকর্ষণের ফলে গতি পায় না সহজে। জানিনা কতটা সত্যি। তবে গ্রীস (বা তুরস্ক, মতান্তরে ভারতের) ম্যাগ্নেশিয়া অঞ্চলের এক পাহাড়ে চুম্বক প্রথম দেখা যায়। আবার রোমান দার্শনিক প্লিনির (Pliny the Elder) মতে ২৬০০ বছর আগে ম্যাগ্নেস নামে এক মেষপালকের লোহার পেরেক লাগানো জুতো ইডা নামের পাহাড়ে চড়ার সময় আটকে গেছিল, তাতেই জানা যায় চুম্বকের অস্তিত্ব। মেষপালক ম্যাগ্নেসের নাম থেকে এই চুম্বকের নাম হল ম্যাগনেট। সত্যি, গল্পকথার শেষ নেই।



(৫) উল্কা-গহ্বর (Meteoritic Crater)
লোনার, বুলঢানা, মহারাষ্ট্র


আজ থেকে ৫২,০০০ বছর আগে এক বিশাল উল্কাপিণ্ড (meteorite), তা অন্ততঃ ৬০ মিটার ব্যাসের  আর কুড়ি লক্ষ টন ওজনের ত হবেই, ছুটে এসেছিল বহির্বিশ্বের মহাকাশ থেকে, অন্ততঃ ৯০,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার দুরন্ত গতিতে আছড়ে পড়েছিল মহারাষ্ট্রের বুলঢানা জেলার লোনার গ্রামে। ফল কী হল? উল্কাপিণ্ডটি মাটির উপরের কঠিন বেসাল্ট পাথরের আবরণ ভেদ করে ১৫০ মিটার গভীর আর ১.৮২ কিলোমিটার ব্যাসের এক বিরাট গহ্বর বানিয়ে উধাও হয়ে গেল মাটির গভীরে। সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন প্রচণ্ড তাপে হয়ত পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল সেই উল্কার টুকরো আর ঐ অঞ্চলের মাটি-পাথরের বেশ কিছু অংশ। সেই গহ্বর ভরে উঠল ভূগর্ভের জলে, সাথে মিশল বৃষ্টি আর অন্য চারপাশ থেকে গড়িয়ে নামা জলের ধারা। তৈরি হল এক বিশাল হ্রদ বা লেক। বাটির আকারের এই গর্তটি সম্বন্ধে ভারতবাসী (বিজ্ঞানীরা বাদে) খুব কম জানলেও, এই লেক ও গহ্বর, যা লোনার ক্রেটার (Lonar Crater) নামে বিখ্যাত (চিত্র-১৩) বিশ্বে এ ধরণের তৃতীয় সবচেয়ে বড় হ্রদ। উল্কাপিণ্ডের আঘাতে সৃষ্ট গহ্বর আরো দুটি আছে ভারতে, সে নিয়ে আলোচনা করা যাবে পরে। এ নিয়ে গবেষণা করে চলেছে দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীদের দল, প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন তথ্য।
কী সেই বৈশিষ্ট্য এই ক্রেটারের আর তার অদ্ভুত সবুজ রঙের জলের যাদুতে ছুটে আসে অজস্র পর্যটক, যদিও এ জল পান তো দূর, এ জলে স্নান করাও বিপজ্জনক, এত তীব্র এর ক্ষারকতা, pH প্রায় ১০.৭। রসায়নের ছাত্রমাত্রেরই জানা আছে যে শুদ্ধ জলের pH হয় ৭। তার কম হলে তা হয় অম্লধর্মী আর বেশি হলে ক্ষারক। একই সাথে এই জলে লবণের পরিমাণও খুব বেশি। এই হ্রদেরই এক প্রান্তে কিন্তু সাধারণ জলও আছে, আর তাকে কেন্দ্র করেই নানাজাতীয় বিচিত্র গাছপালা-জীবজন্তু রাজত্ব করছে এই বাটির মত ক্রেটারের গায়ের উপর। আরও আশ্চর্য, এই ধরণের বেসাল্ট ক্রেটার পৃথিবীতে কম থাকলেও (এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১৯১টি) মঙ্গলগ্রহে প্রচুর দেখা যায়, সেখানে বায়ুমণ্ডল না থাকায় উল্কাগুলো পুড়ে শেষ হয়ে যায় না বলেই হয়ত।
কটা মজার কথা জানাই। লোনার ক্রেটার আমারও সম্পূর্ণ অজানা ছিল। ২০০৪-এ অজন্তা-ইলোরা দেখতে ঔরঙ্গাবাদ গেছিলাম, উঠেছিলাম MTDC-র হোটেলে। সেখানকার ম্যানেজারই লোনার সম্বন্ধে আমাদেরকে জানান। ঠিক ক্রেটারের সামনে রাস্তার ধারেই মহারাষ্ট্র ট্যুরিজমের একটা চমৎকার গেস্ট হাউস আছে, অনলাইন বুকিং করা যায়। তাই সময় করে একবার ঘুরে এলেই পারেন। আরও অনেক আশ্চর্যজনক ব্যাপার আছে লোনারে। তার মধ্যে একটা হল উল্কা থেকে ছিটকে পড়া চুম্বকীয় ব্যাসাল্ট পাথর যার আকৃতি দেখে হনুমানের মূর্তি ভেবে মন্দির বানিয়ে পুজো করা হয় (উল্কা-মারুতি মন্দির)। এ ছাড়া আছে উল্কার আঘাতে ভূ-স্তরে ওলট-পালট ঘটে তৈরি হওয়া একটা আর্টিসান ওয়েল (চিত্র-১৫), যা থেকে নিজে থেকেই জল পড়ে, দৈবশক্তি মেনে সেখানেও বেশ কিছু মন্দির তৈরি হয়ে গেছে, অবশ্য কিছু প্রাচীন মন্দির নীচে হ্রদের ধারেও আছে (চিত্র-১৬)। এছাড়া একটা রহস্যজনক বিশেষত্ব যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও বোঝার চেষ্টা করে চলেছেন - সেটা লেকের চারধারের ঢালু অংশে জন্মানো গাছপালা নিয়ে। লেকের চারধারের অংশটা বিভিন্ন বৃত্তীয় পথে ভাগ করে দেখা গেছে সবচেয়ে বাইরের বৃত্তে জন্মায় মূলতঃ খেজুর গাছ। তার ঠিক ভেতরের বৃত্তে শুধু তেঁতুল আর তার ভেতর দিকে বাবুল বা বাবলার গাছ। আর কিছু বলছি না, সেখানে গেলে আরও অনেক কিছুই জানতে পারবেন, সব আগেই জেনে গেলে চলবে?

চিত্র - ১৪
পুনশ্চঃ এই অংশটা আগ্রহ না থাকলে বাদ দিতে পারেন, প্রাকৃতিক গহ্বর নিয়ে কিছু আলোচনা করছি।
১) সৌরবিশ্বে অন্ততঃ তিনরকমের মহাজাগতিক ঢেলা বা পিণ্ড দেখা যায়, অন্ততঃ যাদের দ্বারা পৃথিবীর আক্রান্ত হবার বা ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকে। এরা হল গ্রহাণুপুঞ্জ (Asteroid), উল্কাপিণ্ড (Meteorite) আর ধূমকেতু (Comet)। সৌরজগতে (solar system) অন্ততঃ কয়েক হাজার কোটি এরকম ভুষিমাল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই মহাকাশ-পথিকরা গ্রহ নামধারণের পক্ষে খুবই ছোট বা হাল্কা। তারা পৃথিবীতে ঢুকে পড়লে হয়ে যায় উল্কা (meteors) বা উল্কাপিণ্ড (meteorites). এরা কী বস্তু একবার তাহলে দেখা যাক।
গ্রহাণু: এরা কঠিন, ধাতু বা পাথরের তৈরি সৌর গ্রহ বা উপগ্রহের টুকরো। এরা মূলতঃ মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝের আকাশে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
ধূমকেতু: এদের দেহ বরফ, গ্যাস আর ধূলোয় গড়া, জন্ম হয় ৪.৬ কোটি বছর আগে সৌরমণ্ডলের সাথেই। ধূমকেতুগুলোর একটা নির্দিষ্ট গতিপথ আর সময়-চক্র আছে যেমন হ্যালির ধুমকেতু আমাদের আকাশ দিয়ে উড়ে যায় প্রতি ৭৫ বছরে একবার, ১৯১১ আর ১৯৮৬এ এসেছিল, আবার ২০৬১তে দেখা যাবে। ধূমকেতুর আঘাতে পৃথিবীর সাধারণতঃ বড় কোন ক্ষতি হয়না।
উল্কাণু (Meteoroids)- এরা গ্রহাণু বা ধূমকেতু থেকে ভেঙে পড়া বা কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা ঢেলা। এদের আকার ধুলিকণা থেকে শুরু করে কয়েক মাইল ব্যাসের হতে পারে। এরা পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়লে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। তখন তাদের বলে উল্কা। এধরণের ছোট ছোট উল্কা সাধারণতঃ পৃথিবীতে পৌঁছোয় না, রাস্তায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে কিছু টুকরো পৃথিবী বা অন্য গ্রহের বুকে আছড়ে এদিকে-ওদিকে ছিটকে পড়ে, তাদেরকে আমরা বলি উল্কাণু।
২) আমাদের আলোচনা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে পৃথিবীর বুকে তৈরি ক্ষতগুলো (meteoric crater) নিয়ে। এরকম এখনও পর্যন্ত ১৯১ টি পাওয়া গেছে, মানে পড়েছে হয়ত লক্ষ বা কোটি বছর আগে, কিন্তু আমাদের চোখে পড়েছে এই সেদিন। ভারতে এরকম আরো দুটি আছে। সবচেয়ে বড় আর পুরনোটি উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের মধ্যপ্রদেশের শিবপুরি জেলার ধালা গহ্বর, এর ব্যাস প্রায় ১১ কিমি। দ্বিতীয়টি রাজস্থানের বরান জেলার রামগড় গহ্বর, এটি কোটা থেকে প্রায় ১১৪ আর বরান থেকে ৪২ কিমি দূরে। রামগড় ক্রেটারের ব্যাস ২.৮ কিমি আর আঘাতের ফলে এর চারপাশ ২০০ মিটার উত্তল হয়ে গেছে। তবে এই দুই ক্রেটার সম্বন্ধে রাজ্য সরকারের ভূবিদ্যা সংস্থা ছাড়া কেউ তেমন খবর রাখে না, পর্যটন-স্থল গড়ে ওঠা অনেক দূরের কথা। তবু রামগড়ের ইজেক্টা (উত্থিত অংশ, চিত্র - ১৮) আর পার্বতী নদীর তীরে গড়ে ওঠা কিছু প্রাচীন মন্দিরের আকর্ষণে কিছু তীর্থযাত্রী আসে।
৩) পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত উল্কা-গহ্বর-
ক- মেক্সিকোর চিখুলাব (Chicxulub Crater) — এটা এ যাবৎ
আবিষ্কৃত বৃহত্তম, এর গহ্বরের ব্যাস ১৮০ কিলোমিটার। প্রায় বিশ লক্ষ হাফ মেগাটন টি-এন-টির শক্তির সমান কয়েকটি বিস্ফোরণে ৬৫ লক্ষ বছর আগে কেঁপে উঠেছিল পৃথিবী, ঘটিয়েছিল অগ্নিঝড়-ভূমিকম্প-সুনামী একের পর এক। জুরাসিক যুগ তখন। মনে করা হয় ডাইনোসর জাতি সমূলে ধ্বংস পায় এই তাণ্ডবে (চিত্র-১৭)।
খ- জার্মানির বাভারিয়ার রাইস (Ries Crater, Bavaria) - ২৫ কিমি ব্যাসের এই গর্তের মাঝে সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে Nordlingen শহর। দেড় কোটি বছর আগে এক উল্কার দাপটে প্রায় ১০০০ বিলিয়ন টন মাটি-পাথর উঁপড়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে।
গ- কালি, এস্তোনিয়া (Kaali, Estonia)- এখানের গহ্বরটি খুবই নতুন, মাত্র ৭৫০০ বছর আগে উল্কাপিণ্ডটি পড়ে ঘনবসতি অঞ্চল শেষ করে দেয়। তবু পরে এই গহ্বর আর তার ফলে তৈরি হ্রদের চারপাশে গড়ে ওঠে এক প্রাচীন সভ্যতা।

(৬)প্রথম খনিজ তেল আর দেবী জ্বালামুখী ডিগবয়, আসাম ও কাংড়া, হিমাচল প্রদেশ

মাটির নীচে প্রথম তেল

আজ থেকে প্রায় দেড়শ’ বছর আগেকার কথা। আসাম রেলওয়ে অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানী (AR&T)  উত্তর-পূর্ব আসামের ডিব্রুগড় শহর থেকে রেললাইন পাতছে বর্মা মুলুকের প্রান্ত পর্যন্ত, যদিও দুর্গমতার জন্যে তা লিডো পর্যন্ত যাবে স্লিপারের জন্যে কাঠের মোটা মোটা গুঁড়ি কাটা হচ্ছে, পোষা হাতির দল তা জঙ্গল থেকে পাহাড়ি পথে মাটির উপর দিয়ে টেনে আনছে ডিব্রুগড় ও তিনসুকিয়ার গুদামে। ইয়ার্ডের ইংরেজ মালিক হঠাৎ একদিন হাতির পায়ে তেলতেলে আঠালো গোছের কিছু একটা লেগে থাকতে দেখলেন। সেই একই চিহ্ন পাওয়া গেল কাঠের গুঁড়িগুলোর গায়ে। কী যেন সন্দেহ করে তিনি সাথে সাথেই শাবল-গাঁইতি ও ছেলে-ছোকরাদের দলবল নিয়ে হাতির পায়ের ছাপ অনুসরণ করে গিয়ে পৌঁছলেন পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা একটা জলা জায়গায়। চারদিকে ভেজামাটি আর গাছপালার বুনো গন্ধ সেখানেই একটা জায়গা বেছে একটি ছোকরাকে স্থানটি খুঁড়তে বললেন সাহেব। ফলও পাওয়া গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। উত্তেজনায় সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন - ‘Dig, boy, dig’ মাটির বুক থেকে বেরিয়ে এল ঘন সবুজ-কালো রঙের তরল পদার্থআধুনিক দুনিয়া যার নাম দিয়েছে পেট্রোলিয়াম – কালো সোনা


Exploring a part of my own State on wheels - Team-BHPএইভাবেই আবিষ্কৃত হল ভারতের প্রথম খনিজ তেলদুর্গম উত্তর-পূর্ব ভারতের অখ্যাত গ্রামেযার নামকরণ হল এক অজ্ঞাতনামা বালকের কাজের স্বীকৃতিতে  ডিগবয় তার মাত্র সাত বছর আগে ১৮৫৯ সালে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় বিশ্বের প্রথম তেলের কুয়ো খুঁড়ে বিখ্যাত হয়েছেন এডুইন ড্রেক অবশ্য ভারতের প্রথম তৈলকূপ খুঁড়েছিলেন ম্যাক্কিলপ-স্টুয়ার্ট কোম্পানীর কর্মী গুডএনাফ ১৮৬৭ সালেই আসামের জয়পুর অঞ্চলেতবে তাঁর প্রচেষ্টা গুড এনাফ ছিল নাফল মিলল ডিগবয়ে এসে পরে ১৮৮৯ সালে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় কূপ নং ডিগবয়-; তবে সে অন্য কাহিনি প্রথম খনিজ তেল প্রাপ্তির স্বীকৃতিতে অয়েল ইণ্ডিয়ার প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের তরফে স্থাপিত হয় ভারতের প্রথম ‘পেট্রোলিয়াম সংগ্রহশালা’, ডিগবয় শহরেই তৈলকূপ ডিগবয়-১ কে মাঝে রেখে (চিত্র ১৯)Where was India's first refinery? - Quora


হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকায় আছে জ্বালাদেবীর মন্দির যেখানে দেবীমূর্তির স্থানে আছে একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, একটি জিভের আকারে সেটা একটানা দিনের পর দিন জ্বলেই চলেছে। কথিত আছে যে এটি তথাকথিত সতীর ৫১ পীঠের একটি, শিবের তাণ্ডব-নৃত্যের সময় দেবীর জিভ পড়েছিল এখানে। স্বভাবতঃই প্রচুর ভক্তসমাগম হয়, দেবীর মহিমা-কীর্তনে আর তীর্থযাত্রীদের কোলাহলে জায়গাটি গমগম করে সদাসর্বদা। শোনা যায় সম্রাট আকবর এই শিখা জল ঢেলেও নেভাতে ব্যর্থ হন, তখন তিনি একটি ধাতুনির্মিত ছত্র দান করে যান মন্দিরে, শিখার মাথায় ধরার জন্যে। ভাঙাচোরা ছত্রটি এখনও সেখানে রাখা আছে প্রদর্শনের জন্যে।
১৮৩৫এ কাংড়া-উপত্যকায় প্রথম জিওলজিক্যাল সার্ভে হয় ও তার ফলের উপর ভিত্তি করে ১৯৫৬ সালে ওএনজিসি কাংড়া ভ্যালিতে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস থাকতে পারে ভেবে শুরু করে কূপ খনন। গোটা তিনেক কূপ ড্রিল করেও কিছু পাওয়া যায়নি, অগত্যা ১৯৮৯তে কাজ গুটিয়ে ফেলা হয়। উন্নতমানের মাপজোখের পর ২০০৮এ আবার ড্রিলিংএর পরিকল্পনা হয়, কিন্তু হিন্দু ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগার ভয়ে কাজ শুরু করার অনুমতি পাওয়া যায়নি সরকারি মহল থেকে। এই জ্যোতি বা শিখা সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নতুন কী আর ধারণা করবেন, এ রকম স্থান অজস্র আছে সারা বিশ্বে। নিউইয়ার্কের অর্চার্ড পার্কে (
Eternal Flame Falls, Orchard Park, New York) আর আজারবাইজানের বাকুর কাছে আছে আতেশগাহ (The Ateshgah at Surakhani, Baku) এর জ্বলন্ত উদাহরণ, হ্যাঁ, ধর্মস্থান হিসেবে সেগুলোও চিহ্নিত। তবে আতেশগাহ হিন্দু আর পার্শি তীর্থ ছিল এককালে। পাশে খনিজ গ্যাসের কূপ খোঁড়ার পর উৎপাদন শুরু হলে ১৯৬৯ সালে এই আগুনের শিখা একসময় নিভে যায়, এখন পার্শি তীর্থযাত্রীদের ভীড় বাড়ায় একে পুনরায় জ্বালানো হচ্ছে নিকটস্থ খনি থেকে পেট্রোলিয়াম গ্যাস নল দিয়ে পাম্প করে। এই স্থানে বিভিন্ন ভাষার প্রাচীন ফলক আছে, যার মধ্যে একটিতে দেবনাগরী লিপিতে বিক্রমাদিত্যের নামও আছে।

jwalamukhi1_web

What's the phenomenon that describes the flames at Jwalamukhi ...
Ateshgah temple Hindu Azerbaijan



(৭)
রামসেতু বা Adam's Bridge
সেতুবন্ধ রামেশ্বরম, তামিলনাডু।


আজ থেকে তিন-সাড়ে তিন হাজার বছর আগের ঘটনা। সীতার খোঁজে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সৈন্য নিয়ে এসে উপস্থিত ভারতের দক্ষিণে পম্বন দ্বীপে। সামনে বিশাল সমুদ্র পেরোলে লঙ্কাদ্বীপ। রাম ভাবছেন এত বানর সৈন্য নিয়ে কিভাবে সমুদ্র পার হবেন। ইতিমধ্যে রাবণের ছোটভাই দলবদলে রামের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শে রাম সমুদ্রকে অনুরোধ করলেন পথ করে দিতে, সমুদ্র কথায় কান দিলেন না। রাম ভীষণ রেগে 'শুষে নেব' বলে ধনুকে বাণ জুড়লেন। তখন সমুদ্র ভয় পেয়ে এসে পিঠ পেতে দিলেন, বিশ্বকর্মা-পুত্র ইঞ্জিনীয়ার নল ৩০ কিলোমিটার (রামায়ণে আছে শত মানে ১২৩০ কিলোমিটার লম্বা সেতু পাঁচ দিনে বেঁধে ফেলল। ৩০ কিলোমিটার (রামেশ্বরম থেকে ধরলে ৪৮) কিভাবে আড়াই বা চার যোজনের জায়গায় একশ বললেন মহামুনি সে প্রশ্ন অবান্তর।

  এবার আসা যাক রামেশ্বরম প্রসঙ্গে। নিকটস্থ বড় শহর ও এয়ারপোর্ট মাদুরাই থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে ভারতকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যোগ করা এই সেতুবন্ধ আর রামেশ্বরম শহর সত্যিই একটা মনোরম পর্যটক স্থল। রাম এখানে হনুমানের হিমালয় থেকে আনা শিবের বিশ্বলিঙ্গমের পুজো করেন, তাই এর মূল রামেশ্বর মন্দির শৈব-বৈষ্ণব দুদলের কাছেই আরাধ্য। বিশাল মন্দিরে ১২১২টা স্তম্ভ আর বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা অলিন্দ বা করিডর। এছাড়া আছে হনুমানের আনা গন্ধমাদন, কোদন্ডরামস্বামী ও বিভীষণ মন্দির যেখানে রাম আর বিভীষণের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। আর আছে আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডাঃ কালামের আবাস যা এখন একটি সংগ্রহালয় আর ভারতীয়দের একটি আধুনিক তীর্থক্ষেত্র। কম্বন দ্বীপে শেষ রেল স্টেশন রামেশ্বরম যেতে পার হতে হয় সমুদ্রের উপর দিয়ে ২.৫ কিমি লম্বা রেল ব্রিজ, পাশ দিয়ে চলেছে সড়ক সেতু। রেল সেতুর বিশেষত্ব এই যে এর উচ্চতা কম হওয়ায় জাহাজ পারাপারের জন্যে এর একটা গেট খোলা থাকে, শুধু রেলগাড়ি এলে সাময়িক ভাবে এর দুই প্রান্ত হাইড্রোলিক শক্তিতে জুড়ে দেওয়া হয়। আরো বিস্ময় হচ্ছে মন্দির থেকে বেলাভূমি ধরে ধনুষ্কোটির ২১ কিমি পথ, ১৯৬৪র ভয়ানক ঝড়ে এর অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তা ভাঙাচোরা, উদ্ধারকার্য চলছে কিন্তু চতুর্দিকে সমুদ্রের দৃশ্য অতুলনীয়।

      


























Wednesday, May 27, 2020

সহযাত্রী।। অনুবাদ/ শায়রী


সহযাত্রী।।


বন্ধুর পথে বন্ধুকে চাই, কিছু দূর সঙ্গে চলো।
এ পথ যে শেষ হতেই হবে, কিছু দূর সঙ্গে চলো।

এক রাতে মোরা মিলেছি দুজনে, এ মিলন দুর্লভ,
কে জানে কাল থাকব কোথায় কিছু দূর সঙ্গে চলো।

প্রিয়ার মিলনে কাতর হিয়ায় চলেছে প্রেমিকবর
এ তীর্থযাত্রায় তুমি কবি কিছু দূর সঙ্গে চলো।

বন্ধুর সাথে বন্ধুর পথে জুড়ায় বেদনা-জ্বালা
হৃদয় জ্বালিয়ে পথ চিনে যাই সঙ্গে চলো
এটুকু চাহিদা হে বন্ধু মোর কিছু দূর সঙ্গে চলো।।

Monday, May 11, 2020

কৌতুকী

কৌতুকী


আমাদের মেসবাড়ির ম্যানেজার ছিল অসম্ভব কঞ্জুষ আর ধড়িবাজ। একদিন রবিবার সে খবর দিল যে সুইট-ডিশে লাউয়ের পায়েস রান্না হয়েছে। 'ও, তোমার লাউএর পায়েস তো', এক বন্ধু বলল,'কিসমিস,কাজু কিছুই পড়ে না। সব আমার জানা আছে'।
- না দাদা, এবার ফিফটি-ফিফটি কাজু পাবেন- ম্যানেজার আশ্বাস দেয়।
খাওয়ার সময় যথারীতি দেখি কোথায় কাজু, কোথায় কিসমিস! 'এই তোমার ফিফটি- ফিফটি', আমি গর্জন করে ডাকি ম্যানেজারকে।
- আজ্ঞে মিথ্যে বলিনি। দুটো লাউ দিয়ে পায়েস হয়েছে, দুটো কাজু দিয়েছি!


একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনে এসেছেন সব দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা। লাঞ্চের অবসরে একজন রোমান ক্যাথোলিক, এক আরবের শেখ আর ভারতীয় মারোয়াড়ি আড্ডা দিচ্ছে। পুরুষদের আড্ডায় যেটা স্বাভাবিক, তর্ক উঠল সেক্স ও ছুটি নিয়ে- রবিবার কি সেক্স করা উচিত? ক্যাথোলিক বলল, ছ'দিনে বিশ্বসৃষ্টি করে ভগবান রবিবার অবসর নেন, সেদিন কোনও কাজ করা মানা।আর সেক্সও তো একটা কাজ! তাই শুনে শেখ জিভ কেড়ে বলল, তওবা, তওবা, সেক্স কি একটা কাজ! ও তো বিলাস-বিনোদন। আমাদের ছুটি রবি নয় শুক্রবারে, সেদিন আমরা প্রার্থনা করি...জুম্মাবারে বিলাসিতা যে পাপ!
এবার মারোয়াড়ী। সে বলল, দেখো ভাই, আমরাও মনে করি সেক্স একটা কাজ আর আমাদের কাছে প্রচুর টাকা। তাই আমরা নিজেরা কিছু করিনা, সব কাজই চাকর দিয়ে করাই! ৩
জলন্ধর-দিল্লী এক্সপ্রেস ট্রেনে ম্যাজিস্ট্রেট চেকিং হচ্ছে। পুলিশ সমস্ত ট্রেনটিকে ঘিরে রেখেছে যাতে একটিও বিনা-টিকিটের যাত্রী ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে না যেতে পারে। এমন সময় নীল পাগড়ি পরা এক সর্দারজি গাড়ি থেকে নেমেই ছুট দিলেন, কারো পরোয়া না করে। সমস্ত পুলিশ বাহিনী, চেকার, ম্যাজিস্ট্রেট সবাই ধর ধর করে তেড়ে গেলেন। সর্দার ধরা পড়লেন বটে কিন্তু সেই হুড়োহুড়িতে অন্ততঃ শ'খানেক বিনা-টিকিটের যাত্রী পালিয়ে গেল।
এবার হল আসল মজা। ম্যাজিস্ট্রেট সর্দারজির কাছে টিকিট আছে কিনা জিগ্যেস করতেই উনি টিকিট দেখিয়ে দিলেন। 'আশ্চর্য, তাহলে আপনি পালাচ্ছিলেন কেন?' সকলের সমবেত প্রশ্ন। সর্দারজি কিছু না বলে মৃদু মৃদু হাসতে থাকেন ও যারা পালাচ্ছেন তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তে থাকেন।
এটা রাজনৈতিক জোক ভেবে তোমরা যদি গালাগাল দাও, আমি অপারগ। তবে বিশ্বাস কর, পাগড়ির রঙ ছাড়া আমাদের গল্পে কোন রাজনৈতিক রঙ নেই, নাথিং রং!

৪ এক টুপিওলা টুপি বেচতে বেচতে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের তলায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। উঠে দেখে, গাছভর্তি বাঁদর তার টুপিগুলো নিয়ে যে যার মাথায় পরে বসে আছে। টুপিওলা তার ঠাকুরদাদার কাছে কথামালার গল্প শুনেছিল যে এই অবস্থায় বাঁদরদেরকে পাথর ছুঁড়ে মারলে ওরা গাছের ডালে পাথর না পেয়ে টুপিগুলো খুলে ছুঁড়ে মারবে। টুপিওলা ছোকরাটি এই ভেবে বাঁদরগুলোকে পাথর মারতে লাগল।
কিন্তু অবাক কাণ্ড! কেউ টুপি ফেরত দিলনা। এমন সময় একটা মস্তান-গোছের বাঁদর নেমে এসে টুপিওলাকে কষে এক চড় মেরে বলল-
'এই উল্লুক! কি ভেবেছিলি রে? তোর ঠাকুরদাদা তোকে গল্প শোনাতে পারে, আমাদের ঠাকুরদাদারা পারে না!'

প্রথম বন্ধুঃ তোমাকে কাল সন্ধ্যেয় সিনেমাহলে দেখলাম, সাথে একজন সুন্দরী মহিলা। কি হে, কে ছিল?
দ্বিতীয় বন্ধুঃ বলব, কিন্তু কথা দাও, আমার বউকে জানাবে না।
প্রথম বন্ধুঃ আরে আমি তো তোমার বউকেই চিনিনা, বলব কি করে? তবু কথা দিলাম।
দ্বিতীয় বন্ধুঃ (চারপাশে তাকিয়ে, ফিসফিসিয়ে) ওই সুন্দরী মহিলাই আমার বৌ!

আমাদের মদনদা। মানুষটি শান্তশিষ্ট ভালোমানুষ, কারো সাতে পাঁচে নেই। দোষের মধ্যে কথায় কথায় 'তোমার' বা 'আপনার' বলে ফেলা। বাজার থেকে ফিরছেন, কেউ জিজ্ঞেস করল, দাদা, বাজার কেমন আজ? মদনদা বলেল, আর বলনা, তোমার আলু এত নরম, বলে বিশ টাকা কিলো। আর তোমার পটল, ওতে তো হাত দেওয়াই যায় না- এরকম আর কি।একদিন এক বাড়িতে সত্যনারায়ণ হচ্ছে, আমরা সবাই আছি। কে যেন ভিতর থেকে মদনদাকে ডাকলো। গিয়ে দেখেন এক সুন্দরী মহিলা, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাদেরকে আলাপ করিয়ে দিয়েই ভদ্রলোক কেটে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে ভেতর থেকে একটা জোরালো 'চটাস' শব্দ পেয়ে আমরা ছুটে গেছি, দেখি মদনদা গালে হাত বুলোচ্ছেন আর মহিলাটি রেগেমেগে বেরিয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার, উনি মারলেন কেন? - জানিনা, আমি তো কোনো গালাগাল দিইনি। শুধু বলেছিলাম, আপনার 'ঢাকা' জায়গাটা আমার দেখতে খুব ইচ্ছে করে!

ডাঃ দত্ত আর কর্ণেল সেনের বন্ধুত্ব বহুদিনের, ওঁরা একসাথে মিলিটারিতে ছিলেন। দুজনেরই পঁচাত্তরের কাছাকাছি বয়স, তবু সময় কাটাতেই হোক বা আর কিছু ডাক্তার চেম্বার এখনও খুলে বসেন। সেদিন কর্ণেল এসে বসতেই ডাঃ দত্ত ওঁর হাতটা অভ্যাসমত টেনে ধরলেন প্রেসার মাপার জন্যে। কর্ণেল আজ কিন্তু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন- আরে রাখো তোমার প্রেসার। আমি একদম ফিট আছি। জানো, আমার তিন নম্বর স্ত্রীর একটা বাচ্চা হয়েছে আজ, আমি বাবা হয়েছি - সুখবরটা তোমাকে দিতে এলাম।
ডাক্তার- তোমাকে দেখে আজ একটা অনেক পুরনো ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন আমার শিকারের ভালই শখ ছিল। একদিন শিকার করতে জঙ্গলে গিয়েই না একেবারে একটা বাঘের মুখোমুখি। সাথে সাথে বন্দুকটা বাগিয়ে ধরলাম।
কর্ণেল- তারপর?
ডাক্তার- দেখি, ও মাই গড! বন্দুক কোথায়, ভুল করে ছাতাটা নিয়ে চলে এসেছি। কি আর করি, ছাতাটা বাড়িয়ে বাঘের মুখের সামনে খুলে ধরলাম। হঠাৎ দুম করে একটা শব্দ। দেখি বাঘটা মরে পড়ে আছে আমার পায়ের কাছে।
কর্ণেল- যাঃ, তাই কখনও হয় নাকি? নিশ্চয়ই কেউ পিছন থেকে গুলি চালিয়েছিল!
ডাক্তার- এগ্‌জাক্টলি! এটাই তো আমি বলতে যাচ্ছিলাম।

কালীচরণের তিন মেয়ে। তাতে ওর দুঃখ নেই, তবে বাড়ির লোকের একটা ছেলের বড় শখ। তাই চতুর্থবার বৌ যখন গর্ভবতী হল, সবাই ধরেই নিল এবার ছেলে হবে। ডেলিভারির পর বাড়িতে ফোন করতেই মা জানতে চাইল, হ্যাঁরে ছেলে হয়েছে তো? কালী আর লজ্জায় না বলতে পারল না। সবাই ছুটে এল হাসপাতালে। বাচ্চা তোয়ালে মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। দিদি বলল, দ্যাখ দ্যাখ, মুখটা ঠিক আমাদের কালীর মত। বৌদি যদি বলে, একদম খাঁদা হয়েছে বাপের মত তো মা বলে ওমা কত চুল হয়েছে, ঠিক ওর বাবার যেমন ছিল ছোটতে।
ইতিমধ্যে কাড়াকাড়িতে তোয়ালেটা কখন সরে গেছে। সবার চোখ কপালে, একি রে কালী!!!
* * *
'সবই কি বাপের মত হবে? কোন একটা কিছু তো মায়ের মতো হওয়া চাই', কালী মাথা নীচু করে বলল!

স্যাকরাদের হরিনাম
একদিন মাস্টার (মহেন্দ্র গুপ্ত) কারো সম্বন্ধে বলছিলেন-'ওরা খুব ধার্মিক। বাড়িতে প্রায়ই হরিনাম সংকীর্তন এসব হয়'। ঠাকুর (রামকৃষ্ণ) তাই শুনে হেসে বললেন- 'সেই স্যাকরাদের হরিনামের মত নয় তো!' এই বলে তিনি গল্পটি বলেন।
'এক স্যাকরা পরম ধার্মিকের বেশে সোনার দোকান চালাতেন। দোকানের কর্মচারিরাও তাই, সবার মুখে সদাই ভগবানের নাম। তা কিরকম শুনবে? একদল ভালমানুষ খদ্দের এসেছে, কিছু গয়না কিনতে চায়। কিছুক্ষণ কথাবার্তা হবার পর মালিক নিজের আসন থেকে বলে উঠলেন- কেশব, কেশব! কর্মচারীটি, যে ওদের সাথে কথা বলছিল, সে অমনি বলে উঠল- গোপাল, গোপাল। কিছুক্ষণ পরে কর্মচারী বলল- হরি হরি, সাথে সাথে মালিক বলেন- হর হর। খদ্দের ভাবল, এত ধার্মিক এরা, এদের উপর ভরসা করা যায়।
এদিকে স্যাকরারা কিন্তু ঠাকুর-নাম করছিল না। কেশব কেশব বলে মালিক জানতে চাইল, এরা কে সব, অর্থাৎ কেমন লোক? কর্মচারী উত্তর দিল- গোপাল, মানে গরুর পাল বা বোকা-সোকা। তারপর সে হরি হরি মানে চুরি করবে কিনা তার অনুমতি চাইল। মালিক অমনি বললেন- হর হর, মানে চুরি কর।
খদ্দের ভুল ওজনে বেশী দাম দিয়ে ঠকে চলে গেল!'

১০
একজন পাদ্রীসাহেব গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন সময় একটি নান (মিশনারী সন্ন্যাসিনী) লিফট চাইলেন। পাদ্রী গাড়ি থামালেন, নান উঠে তাঁর পাশের সীটে বসলেন।
কিছুক্ষণ পরে গিয়ার বদলাতে গিয়ে যেন অন্যমনস্কভাবে পাদ্রী বাঁ-হাতটা রেখেছেন নানের হাঁটুর একটু উপরে, ঠিক স্কার্টের নীচে। কিছুক্ষণ পরে নান বলে উঠলেন-'ফাদার, সাম (psalm বা বাইবেলের স্তোত্র) নম্বর ৯৫ মনে আছে?' পাদ্রীর কিছু মনে পড়ল না, তিনি ভয়ে ভয়ে হাতটি সরিয়ে নিলেন।
কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়! কিছুক্ষণ পরে হাতটি আবার উঠে এসেছে একই যায়গায়, ফাদার কি করবেন ভেবে না পেয়ে অপেক্ষা করছেন। এমন সময় নান আবার বললেন-'ফাদার ৯৫ নম্বর কি কিছুই মনে নেই!' কি জানি কি হয়, ভয়ে ফাদার আবার হাত সরিয়ে নিলেন। এরপর নানটির গন্তব্যস্থল এসে গেল, তিনি নেমে গেলেন।
পাদ্রী পড়ি-কি-মরি করে ছুটে চার্চে ঢুকলেন, বাইবেলের সাম নং ৯৫ বের করলেন। সেখানে লেখা আছে- 'হে ঈশ্বরের সন্তান, ঊর্ধ্বে ওঠ, আরো ঊর্ধ্বে- সেখানে স্বর্গ আছে।'
এইজন্যেই বলি, ধর্মগ্রন্থ নিয়মিত পাঠ কর, নয়ত পরে পস্তাতে হবে।
(এটা নিছকই জোক, কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আঘাত দেওয়া এর উদ্দেশ্য নয়)।

১১
মুর্গি বনাম বেড়াল ।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন একদিন বাজার থেকে একটা মুর্গি নিয়ে এলেন। কেটেকুটে ওজন করে দেখলেন, পুরো এক সের। বিবিকে বললেন, 'এটা রান্না করে রাখ, ঘণ্টাদুই পরে এসে খাব'।
এদিকে রান্না এত ভাল হয়েছিল যে একটু একটু করে চাখতে চাখতে বিবিসাহেবা পুরো মাংসটাই সাবাড় করে দিলেন। কিছুক্ষন পরে মোল্লা ফিরে এসে যখন খাবার চাইলেন, বিবি বললেন, আমি রান্না করে গোসলে গেছিলাম, এসে দেখি বাড়ির বেড়ালটা সবটা খেয়ে ফেলেছে। বেড়ালটা কাছেই ছিল। মোল্লা ওটাকে খপ করে ধরে দাঁড়িপাল্লায় বসালেন, ঠিক এক সের হল। এইবার মোল্লা বিবির দিকে ফিরে বললেন, 'বেগমসায়েবা, এটা যদি বেড়াল হয়, তবে মুর্গিটা কোথায়? আর......
.........আর এটা যদি মুর্গি হয়, তবে বেড়ালটা কই!!!

১২
মার্কেটিং
মোল্লা নাসিরুদ্দীনের গাধাটি বুড়ো হয়ে গেছে, সেই সাথে অকর্মণ্য ও অলস, ফলে মুল্লা সেটি বেচে দেওয়াই স্থির করলেন। সেইমত একদিন নিয়ে গেছেন হাটে, কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, খদ্দের আর জুটল না। এমন সময় একটি চালাক-চতুর গোছের ছোকরা এসে তাঁকে বলল, গাধা আমি বেচে দিচ্ছি, আমায় দশ শতকরা দেবেন। মোল্লা তো এককথায় রাজী, বললেন, ভাই আমার তো শ'খানেক টাকা হলেই চলবে, দেখ চেষ্টা করে। এবার ছেলেটি নিজের খেল শুরু করল। চিৎকার করে বলতে লাগলো, আসুন দেখে যান, দুনিয়ার এক আশ্চর্য গাধা মাত্র দু'শ টাকায়। দশ মন বোঝা অনায়াসে বইবে, চলবে না তো, উড়বে যেন পক্ষীরাজ! এটি মোল্লাসাহেবের নিজের গাধা, খোদাতালা এ জিনিষ মাত্র একটিই তৈরি করেছেন। আসুন, আসুন, দেরী করলে আর পাবেন না.........।
খদ্দের জমতে লাগল, যে গাধা মোল্লা একশোতে বিক্রি করতে পারছিলেন না, ছোকরার বক্তৃতার গুণে অনেকেই ছুটে এলো দু'শো টাকায় গাধা কিনতে। হঠাৎ মোল্লা বলে বসলেন, ভাই এই নাও বিশ টাকা, তোমার হিসেবমত মজুরি, এ গাধা আমি বেচবো না!
ছোকরাটি তো অবাক, কেন?
ইনশাল্লাহ্‌, আমার গাধার যে এতো গুণ, তুমি না বললে তো আমি জানতেই পারতাম না। আর একে কিনা আমি বেচতে চলেছিলাম!

১৩ ইতিহাসের পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে- 'শেরশাহের শ্রেষ্ঠ কীর্তি কি?' বুদ্ধিমান ছাত্র লিখল- 'শেরশাহই প্রথম ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন।' তারপর ভাবল, কি জানি স্যার যদি না বোঝেন তাই আর এক লাইন জুড়ে দিল- 'ইহার পূর্বে ঘোড়ারা ডাকিত না!!!' ১৪
আজ এক বন্ধুর সাথে বাজারে দেখা, দেখি মাথায় বিরাট টাক পড়ে গেছে। বললাম কিরে, এই সেদিনও দেখলাম মাথা ভর্তি চুল, আর তিনদিনের মধ্যেই টাক পড়ে গেল?
বন্ধুঃ আর বলিস না। স্বাধীনতা দিবসে এক সর্দারজি বন্ধুর সাথে তর্ক করছিলাম। স্বাধীনতার যুদ্ধে বাঙালী বেশী শহীদ হয়েছিল না পাঞ্জাবি। শর্ত ছিল আমি একটা বাঙালি শহীদের নাম করতে পারলে ওর একটা দাড়ি ছিঁড়ে নেব, আর পাঞ্জাবীর নাম করলে ও আমার একটা চুল। তা আমি বললাম ক্ষুদিরাম, ও বলল ভগত সিং, আমি বলি বিনয়-বাদল-দীনেশ, সর্দার বলে শুকদেব-রাজগুরু...আমি প্রফুল্ল-কানাই-প্রীতিলতা। আমার পাল্লাই ভারী যাচ্ছিল আর পটাপট ওর দাড়ি ওপড়াচ্ছিলাম।
- তারপর?
- তারপর আর কি? সর্দার ব্যাটা এমন সময় বলে উঠল- জালিয়ানওয়ালাবাগ !

১৫
পুলিশ সব জানে ।।
মন্ত্রীর মিছিল চলেছে। এক মাতাল রাস্তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে- মন্ত্রীজি চোর হ্যায়! মন্ত্রীজি চোর হ্যায়! একটা পুলিশ শুনতে পেয়েই তাকে ধরেছে, এই ব্যাটা, মন্ত্রীকে চোর বলছিস, চ, থানায়।
পুলিশ দেখে মাতালের নেশা ছুটে গেছে। 'আমি আমাদের মন্ত্রীর কথা বলিনি তো, অন্য রাজ্যের মন্ত্রীর কথা বলছি' আমতা আমতা করে সে বলল।
- ইয়ার্কি হচ্ছে, পুলিশ বলে, আমি যেন জানিনা কাদের মন্ত্রী চোর!

১৬
ওয়েটারঃ অর্ডার বলুন স্যার।
খদ্দেরঃ শোন, দুটো ছাতাপড়া বাসী রুটির স্যান্ডুইচ, রুটিগুলো যেন পুড়ে কালো হয়ে যায়, আর ঠান্ডা এক কাপ কফি।
ওয়েটারঃ কি বলছেন স্যার? এরকম বাজে জিনিষ এখানে পাবেন না।
খদ্দেরঃ কাল তো না চাইতেই পেয়েছিলাম। আজ চেয়ে কেন পাব না,শুনি?

১৭
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে একজন রসিক লোক ছিলেন সে কথা অনেকেই হয়ত জানেন না। একবার বেশ কয়েকজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত গেছেন একটি ভোজবাড়িতে, বিদ্যাসাগর ও বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারও আছেন। গৃহকর্তা তাঁদের অনুরোধ করলেন পরিবেশন নিয়ে একটি শ্লোক শোনাতে। মদনমোহন বললেন, ঈশ্বর থাকতে আমরা কেন, কি হে ঈশ্বর শুনিয়ে দাও না একটা।
বিদ্যাসাগর তৎক্ষণাৎ একটি শ্লোক রচনা করে ফেললেন-
'হুঁ হুঁ দেয়ং, হাঁ হাঁ দেয়ং, দেয়ঞ্চ শিরশ্চালনে।
হস্তপ্রসারণে দেয়ং, ন দেয়ং ব্যাঘ্রঝম্পনে।।'
অর্থাৎ, নিমন্ত্রিত হুঁ হুঁ হাঁ হাঁ করলেও দিতে থাকবে, মাথা নাড়িয়ে না না করলেও ঢেলে যাবে। পাতের উপর যদি কেউ হাত ছড়িয়ে না বলে, তাও দিয়ে যাবে। শেষে যখন সে পাতের উপর বাঘের মত লাফিয়ে পড়বে তখনই পরিবেশককে থামতে হবে!

১৮
এক নিরীহ-গোছের নির্ভেজাল বাঙালী ভদ্রলোক সপরিবারে দেরাদুন থেকে কলকাতা ফিরছেন। বেনারস বা মোগলসরাইয়ে তিনি একটু জল খেতে নেবেছেন, এসে দেখেন, এক লোকাল মাস্তান তাঁর জায়গাটি দখল করে শুয়ে আছে। 'এই উঠ, এ হামার জায়গা হায়!' তিনি চোখ পাকিয়ে বললেন।
-আবে, হেনে বয়েঠ না! ধমক দিল ছোকরাটি, পায়ের তলার দিকে একটু বসার জায়গা দিয়ে।
-তবে রে! আভি দেখেগা, এক থাপ্পড় মারকে তুমরা দাঁত-কপাটি তোড় দেগা।
-পহেলে তু সামহাল অপনে আপ কো, বলে এক চড় কষিয়ে দিল ছোকরাটি বাবুর গালে ।
- আচ্ছা, এতনা হিম্মত, গা-মে হাত দেতা, আরে সাহস হায় তো মেরা বিবি কো মারকে দেখা। মহিলা গোলমাল দেখে উঠে বসেছিলেন, তিনিও একটি চড় খেলেন।
- কিতনা অসভ্য মানুষ, আউরত কো মারতা! তুম মেরা বাচ্চালোগোকো ভি মারেগা কেয়া?
-ইসমে কা বাত বা, আভি মার দেত...বলতে বলতেই তাঁর বাচ্চারাও মার খেল।
- আচ্ছা, কোলকাতা আনে দো, ফির তুমকো দেখেগা......বলে ভদ্রলোক চুপ করে গেলেন। তবে কলকাতা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না, দানাপুরেই লোকটি নেমে গেল।
-দাদা নিজে মার খেলেন খেলেন, এবার আমি বললাম সামনের সীট থেকে, পুরো পরিবারকে অপমান না করলে কি চলছিল না?
- আপনি বুঝবেন না, ভদ্রলোক আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন, তা না হলে বাড়ি ফিরে গোটা পাড়া ওরা রাষ্ট্র করে দিত- বাবা মার খেয়েছে! বাবা মার খেয়েছে!

১৯
একটি নির্দোষ জোক
কমবয়সী নার্সটি আবার ছুটে এলো মেট্রনের কাছে। মেট্রন এই মেয়েটিকে খুব স্নেহ করেন, জিজ্ঞেস করলেন, 'কি রে কি হলো। মিলিটারির ছেলেটা আবার কিছু দুষ্টুমি করেছে বুঝি?'
-'হ্যাঁ, দ্যাখোনা দিদি কি সব উদ্ভট প্রশ্ন করছে, আমার লজ্জা লাগে না!'
-'চলত গিয়ে দেখি কি বলছে, বাবারে এতগুলো গুলি খাবার পরেও এদের এত রস আসে কোথা থেকে!' মেয়েটিকে নিয়ে মেট্রন রওনা হয়ে এলেন কেবিনে যেখানে জওয়ানটি শুয়ে আছে। 'কি হে, কি সব অসভ্য প্রশ্ন করছ নাকি তুমি?' সোজা ছেলেটিকে হিট করলেন।
-'আজ্ঞে, এমন কিছু কঠিন প্রশ্ন না, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোথায় মেয়েদের চুল হয় সবচেয়ে কালো, ছোট-ছোট, ঘন আর কোঁচকান? আপনার মেয়েটি বলতে না পেরে পালিয়ে গেল।'
-'বটে! তা উত্তরটা তুমিই বল না শুনি'।
- 'কোথায় আবার, আফ্রিকাতে!'

২০
শ্রীমতী পাকড়াশীর আর সময় কাটে না। স্বামী অফিসের কাজে ব্যস্ত, অনেক রাত করে বাড়ি ফেরেন। দুই মেয়ে বড় হয়ে গেছে, কলেজে পড়ে, তারাও গোটা দিন বাইরে। তিনি ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন বাড়িতে কিছু প্রাণী পোষা যাক্‌। ঘুরে ফিরে নিউ মার্কেটে একটা পাখির দোকানে এলেন। দোকানিকে জিজ্ঞেস করলেন কথা বলা পাখি আছে কিনা।
দোকানি- এই যে ম্যাডাম, এই ময়নাটা দেখুন, কাকাতুয়াও আছে, সবাই এরা কথা বলে।
এমন সময় একটা টিয়াপাখি বলে উঠল, 'ম্যাডাম কি সুন্দর, কি সুন্দর!' শ্রীমতীর চোখ গেল সেদিকে। বললেন, বাঃ, এও তো বেশ কথা বলে, কত দাম টিয়াটার? এটা আমাকে দেখাচ্ছেন না কেন?
- ম্যাডাম, দামের কথা নয়, আসলে ওর ঘরানাটা ঠিক নয়। আপনারা ভদ্রলোক কিনা!
'সুন্দর ম্যাডাম, খুব সুন্দরী ম্যাডাম' পাখিটি আবার বলে উঠল। ভদ্রমহিলা তো তারিফ শুনে গলে গেলেন।' পাখির আবার ঘরানা দেখে কি করব, ওর কাছে কি গান শিখতে যাচ্ছি?' বলে দরদস্তুর করে বেশ সস্তাতেই পাখিটা কিনে বাড়ি নিয়ে এলেন।
' কি সুন্দর বাড়ি। নতুন বাড়ি, নতুন মালকিন, কি সুন্দর!'- পাখি বলল।
কিছুক্ষণ পরে মেয়েরা বাড়ি ফিরল। পাখি তাদের দেখে আনন্দে বলে উঠল, 'নতুন মেয়ে, নতুন মেয়ে, কি সুন্দর, কি সুন্দর'। মেয়েদের আনন্দ দেখে কে! তারা পাখির সাথে খেলতে লাগল।
গৃহকর্তা ফিরলেন একটু রাত করে। গিন্নী খুশি হয়ে তাঁকে পাখি দেখাতে নিয়ে এলেন। পাখি তাঁকে দেখে আরো উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠল-
'নতুন বাড়ি, নতুন মালকিন, নতুন মেয়েরা, কি সুন্দর, কি সুন্দর। খদ্দের সেই পুরনো, তারপর, পাকড়াশী, কেমন আছ?'

২১
রণো- মম, বাপি আমাকে কিস না করেই আজ অফিস চলে গেল।
মা- তুমি নিশ্চয় আজ sumগুলো ঠিকঠাক করতে পারোনি।
রণো- আহা, রান্নার মাসি যেন কত sums পারে!

২২
লাল্টু: কিরে তোর না 'মিরাক্কেলে' যাবার কথা ছিল?
বল্টু: গেসলাম তো, ছাঁটাই হয়ে গেছি।
লাল্টু: বলিস কি? কি জিজ্ঞেস করেছিল?
বল্টু: আরে ধুর, পুরোটা বলতেই দিল না।
লাল্টু: আচ্ছা! তা কি হয়েছিল একটু খুলে বলনা বাবা।
বল্টু: প্রথমেই তো মীরদা রাজদার ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে আরো দুজন ছিল। রাজদা জিজ্ঞেস করল, কি, সবাই বিবাহিত? আমরা তিনজনই ঘাড় নাড়লাম। তখন বললেন, তাহলে নিজেদের বৌদের নাম বল একে একে। একজন বলল, আমার বৌএর নাম রুচিরা। মীরদা বললেন, তুমি কি বলে ডাক? ও বলল, রুচি। দ্বিতীয়জন বলল, আমার বৌএর নাম সুচিত্রা, আমি ডাকি সুচি। তারপর আমার পালা। আমি বললাম, আমার বৌএর নাম বিচিত্রা ......এটুকু শুনেই রাজদা বলে উঠলো, থাক থাক, আর বলতে হবে না। তারপরে বললেন, না মীর এ চলবে না, বাকি দুজনকে নাও।
লাল্টু: আচ্ছা বল্টু, সত্যি বলত তুই তোর বৌকে কি বলে ডাকিস।
বল্টু: কেন, চিত্রা! তা ব্যাটারা বলতে দিলে কই।
(এটাও মিরাক্কেলের)

২৩
প্রেমিক-প্রেমিকা নির্জনতার লোভে এসে পড়েছে কবরখানায়।
প্রেমিকা।। আমার ভয় করছে। যদি এখানে ভূত থাকে?
প্রেমিক।। আরে ভূত-টুত ওসব গল্পেই থাকে। এই তো দুজন ভদ্রলোক বসে আছেন, শোন না ওঁরা কি বলেন। (কাছে গিয়ে) ও দাদা, এখানে কখনো ভূত দেখেছেন?
১জন লোক।। আজ একশ বছর ধরে এখানে আছি। কবরের ভিতরে গরম লাগে বলে আমরা মাঝে মাঝে বাইরে খোলা হাওয়ায় এসে বসি। কই, ভূত তো দেখিনি কখনো!

২৪
নারাণ কলকেতায় থাকে। সন্ধেবেলা ভিক্টোরিয়া ময়দান আর পার্কগুলো ঘুরে বেড়িয়ে শহরের মেয়েদের উপরে ওর ঘেন্না ধরে গেছে। ভাবল, বিয়ে করলে কোনও সাদা-সিধে, সরল গ্রামের মেয়েকেই করবে। যেই ভাবা সেই কাজ, ধানবাদ অঞ্চলে একটি গ্রামে পাত্রী পছন্দ করে তাকে বিয়ে করে নিয়ে চলল কলকাতা।
ট্রেনে যেতে যেতে সীতারামপুর ছাড়াতেই একটা লাল-বাতি অঞ্চল পড়ে। নারাণের বৌ দেখে কয়েকটি মেয়ে পথের ধারে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জ অঙ্গভঙ্গী করছে। 'হ্যাঁগা ওরা কারা', নারাণকে বউটি প্রশ্ন করে। নারাণ বলে, 'ছিঃ ওদিকে তাকিয়ো না, ওরা বাজে মেয়ে, টাকা নিয়ে নোংরা কাজ করে'। বউও ছাড়ার পাত্রী নয়,'বল না, কি কাজ?' তখন নারাণ ওকে সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল।
'কঞ্জুষ, চামার কোথাকার!' বৌ বলল শুনে। 'কাকে বলছ এ সব', নারাণ অবাক।
'ওই আমাদের গেরামের কানুদাকে', বৌ বলে, 'ব্যাটা আমাকে দুটো করে বাতাসা দিত শুদু!'

২৫
এটা অনেকের শোনা গল্প হলেও আবার শোনাচ্ছি। মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে এক জনসভায় ভাষণ দিতে ডাকা হয়েছে। তিনি স্টেজে উঠে চারিধারে একবার ছোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন- 'এই সভায় আর কাকে কি বলব, এখানে তো অর্ধেক লোকই গণ্ডমুর্খ, কিছুই বুঝবেনা।' শ্রোতাদের মধ্যে হই-চই পড়ে গেল- এতও বড় অপমান! তারা দাবী করল মোল্লাকে এক্ষুনি কথা ফিরিয়ে নিতে হবে, নয়ত চেয়ার ভাংচুর শুরু হবে, স্টেজে ইঁট-পাথর পড়বে। কর্মকর্তারা বোঝাল- 'মোল্লাসায়েব, কথাটা দয়া করে ফিরিয়ে নিন, পাবলিক ক্ষেপে গেছে'।
মোল্লা তখন আবার স্টেজে গিয়ে দাঁড়ালেন- 'শান্ত হোন আপনারা। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি, এই সভার অর্ধেক লোক গণ্ডমুর্খ নয়!'
পাবলিক খুশী, কেউ আর কোনও আপত্তি করল না, সভা চলতে লাগল।

২৬
আলিয়া ভাটের সাথে রাহুল গান্ধীর খুব বন্ধুত্ব হয়েছে। আলিয়া একদিন এসেছে রাহুলের কাছে।
আলিয়াঃ হাই রাহুল, কি পড়ছ ওটা? রাহুলঃ জেনারেল নলেজ বাড়াবার জন্যে শেক্সপিয়ার পড়ছি। আলিয়াঃ তাই নাকি! কার লেখা? দেখি কি পড়েছ (বইটা নিয়ে)- 'নামে কি আসে যায়'- বলত কে বলেছেন? রাহুলঃ যেই বলুন না কেন, নামে কি আসে যায়?

২৭
স্বভাব যায় না ম'লে
স্বামীঃ (মনের দুঃখে) তোমার পেছনে প্রতিদিন এত খরচ হচ্ছে, আর পারছি না। সুইসাইড করে নেবো ভাবছি।
স্ত্রীঃ (ছলছল চোখে) দেখো আমাকে শুধু-শুধু কাঁদিও না। চল, আজই এক ডজন সাদা সিল্কের শাড়ী কিনে দেবে, বিধবা হয়ে গেলে পরব কি?

২৮
গ্রাহকঃ কি মাল দিয়েছেন দাদু, পাঁউরুটিটা বাসী আর পচা।
মালিকঃ কি বলছো হে তুমি ছোকরা! জান একশো বছর ধরে এই ব্যবসা করছি আমরা?
গ্রাহকঃ সর্বনাশ, একশো বছর ধরে এই মাল খাওয়াচ্ছেন লোককে! দিন, একটু পায়ের ধূলো দিন।

২৯
শিশুশিক্ষা সহজ নয়!
৪-৫ বছরের একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে পার্টিতে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। অভ্যাগতদের মধ্যে অনেকেই ডেকে জিজ্ঞেস করছেন, খুকি তোমার নাম কি? বাচ্চাটি উত্তর দিচ্ছে, আমার নাম গোপা, আমার বাবার নাম ডক্টর গুহ। একসময় তার মা ব্যাপারটি লক্ষ্য করে তাঁর মেয়েকে ডেকে বললেন, তোমাকে সবাই নাম জিজ্ঞেস করছেন, নিজের নামটাই বল, আমার বাবার নাম- এসব বাজে কথা বলার কি দরকার? এখন শিখিয়ে দিলাম, এভাবেই বলবে, কেমন? আচ্ছা, বলে মেয়ে আবার ছোটাছুটি শুরু করল।
ইতিমধ্যে এক ভদ্রলোক বাচ্চাটিকে চিনতে পেরে শুধালেন, আরে তুমি ডা: গুহর মেয়ে না!
- আমি তাই জানতাম, আঙ্কল, মেয়েটি চোখ বড়বড় করে ফিসফিস করে বলল, মা আমাকে এইমাত্র চুপিচুপি শিখিয়ে দিলেন, ওটা নাকি বাজে কথা।

৩০
রাঁচী এয়ারপোর্ট থেকে একটি প্লেন টেক-অফ করলো। তারপরেই পাইলট প্রচন্ড হাসতে শুরু করে দিল। হো, হো, হো, হাসি আর থামে না । ক্রু এর সাথে যাত্রীরাও ছুটে এলো জানতে, কি ঘটেছে। 'ওরা এতক্ষণে খুব খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে' কোনমতে হাসি থামিয়ে পাইলট বললেন।
- কারা খুঁজছে, কারা?
- ওই পাগলাগারদের লোকেরা। আমি যে পালিয়ে এসেছি....হো, হো, হো........

৩১
আপনাদের এই লম্বা অথচ সুখী বিবাহিত জীবনের রহস্য কি? ভদ্রলোককে তাঁর সুবর্ণজয়ন্তী বিবাহবার্ষিকীতে জিজ্ঞেস করা হলো।
- আমরা গত পঞ্চাশ বছর ধরে শনি ও রবিবারে বাইরে বেড়াতে যাই।
- একসাথে?
- না না, আমি শনিবারে যাই, তিনি রবিবাব্রে!

৩২
ভদ্রলোক পঁচিশ বছর সরকারী বাস চালিয়েছেন বিনা দুর্ঘটনায়। তাঁকে সম্বর্ধনা জানানোর সময় এই দু:সাধ্য কাজ তিনি করলেন কি করে তা জানতে চাওয়া হলো।
- আমি একটা যন্ত্রের সাহায্য নিই, যার নাম 'হানিস্কোপ'।
-সেটা কি?
- দেখুন আমার মাথার পিছনে আমি একটা প্রজেক্টার লাগিয়ে রাখি, যেটা সামনের গাড়ির উপর আমার স্ত্রীর ফটো প্রজেক্ট করে। সেটা দেখলে আমার ঘুম-ঘুম ভাব উড়ে যায়, স্টিয়ারিংও আর এদিক-ওদিক হয় না।

৩৩
- কি প্রমান যে আপনি গাড়ি ওভার-স্পিড করেননি? জজ শুধালেন।
- আজ্ঞে, আমি শ্বশুর-বাড়ি যাচ্ছিলাম স্ত্রীকে আনতে।
- বেকসুর খালাস। নেক্সট--

৩৪
- আপনি পুলিশের গাড়ি পিছনে দেখেও না থেমে স্পিড বাড়িয়ে দিলেন কেন?
- স্যার সত্যি কথা বলব?
- আপনার কথায় যদি যুক্তি থাকে কথা দিচ্ছি আপনাকে ছেড়ে দেব।
- স্যার মাসখানেক আগে আমার বউ কিডনাপ হয়। পুলিশের গাড়ি পেছনে দেখে ভাবলাম আপনারা ওকে ফিরিয়ে দিতে এসেছেন।
- ও কে, হ্যাপী ইস্টার!

৩৫
একটি নির্দোষ জোক
তিনজন মিশনারী সন্ন্যাসিনী (নান) একসাথে এক দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বর্গপুরিতে ঢোকার সোনার ফটকের সামনে তাদের দাঁড়াতে হয়, সেন্ট পিটার যাচাই করে তবে ছাড়বেন। এক এক করে তাদেরকে ডাকা হচ্ছে। প্রথমজনকে সেন্ট পিটার জিজ্ঞাসা করলেন- 'পৃথিবীর প্রথম পুরুষ কে ছিল'? নান বলল, 'এত সোজা, তার নাম আদম'। সোনার দরজা খুলে গেল, প্রথম নান স্বর্গে চলে গেলেন। এবার দ্বিতীয় নানকে ডেকে শুধনো হলো, 'প্রথম মহিলা কে ছিলেন?' 'এত সহজ', নান বললেন, 'ইভ'। আবার দরজা খুলল, সেও ভিতরে চলে গেল।
এবার শেষ নানটিকে ডাকা হলো। সেন্ট পিটার তাকে বললেন,'বল তো ইভ আদমকে দেখে প্রথমেই কি বলেছিলেন?' নানটি করুন গলায় বলল,'এটা ভীষণ শক্ত'। হঠাত ঘড়-ঘড় শব্দে সোনার দরজা খুলে গেল, হতভম্ব নান ভেতরে চলে গেল!

৩৬
আমাদের কানাই, যার ফিগার দেখে কাঞ্চন মল্লিকও লজ্জা পাবে। তাতে কি হয়, পাড়ার দোতলার এক বৌদির দিকে কানাইয়ের বেশ নজর। পাশের রাস্তা দিয়ে যতবার যাবে একবার সে উপরে তাকাবেই। একদিন ওরকম তাকিয়েছে, দ্যাখে বৌদিও তাকাচ্ছেন। তারপর বৌদি বললেন, ও ভাই শুনছেন, একটু উপরে আসবেন? কাজ আছে।
কানাইয়ের হৃত্পিণ্ডটা তখন লাফাচ্ছে, কার মুখ দেখে উঠেছিলাম! একমুহূর্তেই সে উপরতলায়। বৌদি বললেন, এই যে কদিন ধরেই আপনাকে ডাকব ভাবছিলাম, তা আপনি একটু জামাটা খুলবেন। আরে আপনি দাঁড়িয়ে কেন, বসুন না। হ্যাঁ, গেঞ্জিটাও খুলে ফেলুন। এবার কানাই ভাবছে, এরপর....এরপর....
হঠাত বৌদি ভিতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে পুঁচকে দুটো বাচ্চাকে নিয়ে এলেন। কানাইকে দেখিয়ে ওদেরকে বললেন-
'এই দ্যাখ, ভাত না খেলে ঐরকম চেহারা হবে, বুঝলি। ঠিক আছে ভাই, ধন্যবাদ। আপনি জামাকাপড় পরে নিন এবার।'
(মিরাক্কেল থেকে ঝাড়া)

৩৭
বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেখা হয়েছে একটি সভায়। বিদ্যাসাগরের পায়ে সেই বিখ্যাত তালতলার চটি, যার শুঁড়টা বেঁকে উপরদিকে উঠে গিয়েছে। বঙ্কিম তা দেখে ঠাট্টা করে বললেন, 'আপনার চটিজোড়ার অগ্রভাগ যে বেঁকে উঠে আকাশ ছুঁতে চলেছে!'
বিদ্যাসাগরও ছাড়বার পাত্র নন। তিনি হেসে জবাব দিলেন-'চট্টোপাধ্যায় পুরানো হলেই বঙ্কিম হয়ে যান!'

৩৮
তিন সখি মিলে একটা পার্টিতে যাবেন। তাঁরা ঠিক করলেন যাঁর স্বামীর যেমন চুলের রং তিনি সেই রঙের কাপড় পরে আসবে্ন। সেই হিসেবে একজন কালো শাড়ী ও আরেকজন সাদা চুড়িদার পরে এসেছেন। কিন্তু তৃতীয় সখির আর আসার নাম নেই। এইমাত্র জানা গেল অশ্লীলতা প্রদর্শনের জন্যে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
উপায় ছিলনা, ঐ ভদ্রমহিলার স্বামীর মাথাজোড়া টাক ছিল যে!

৩৯
একটা পার্কে জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসে আছে। একটি ছেলে-মেয়ের মধ্যে কথা হচ্ছে-
ছেলে- এই একটিবার, প্লীজ।
মেয়ে- এই, বলেছি না, বিয়ের আগে একদম কিচ্ছু নয়।
ছেলে- একবারই মাত্র!
মেয়ে- না, না, না।
ছেলে (ক্ষুন্ন হয়ে)- পাশের জুটিটাকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারতে!
মেয়ে- গাধা কোথাকার। খেয়াল করেছ, পাশের ছেলেটা মেয়েটাকে একবারও রিকোয়েস্ট করেনি!

৪০
Live and let live!
আমাদের ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান ছিলেন বাবার ব্রিজখেলার পার্টনারও । একদিন কি একটা অসুখের জন্যে বাবাকে গোটা ৬-৭ ওষুধ লিখে দিয়েছেন । বাবা রেগে গিয়ে বললেন, কি ডাক্তার, এতগুলো লেখা জরুরি ছিল । ডাক্তারবাবু বললেন, দেখুন ঐটাই আমাদের জীবিকা, আমাদের তো খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে ।
বাবাঃ তাহলে আমি সবকটা কিনছি না । আপনি একটু বলে দিন, কোনগুলো সত্যিই প্রয়োজন ।
ডাক্তারঃ আরে সবকটাই কিনুন । এতগুলো ওষুধের দোকান আছে, কেমিষ্টদেরও ত খেয়ে পরে বাঁচতে হবে ।
বাবাঃ তাই বলে যেগুলোর দরকার নেই সেগুলোও গিলতে হবে ।
ডাক্তার (হেসে)ঃ না,না, সবগুলো খাবেন না । আপনাকেও ত বাঁচতে হবে!

৪১
ব্লণ্ড বা সোনালি চুলের মেয়েদের সৌন্দর্যের খ্যাতি যেমন সর্বত্র, ঠিক ততটাই হাল্কাভাবে নেওয়া হয় তাদের মস্তিষ্ককে, অনেকে আবার সন্দেহ প্রকাশ করেন সেটি আছে কিনা তা নিয়ে। দুনিয়ার স্বর্ণকেশীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে তাদের সম্বন্ধে ক'টি গপ্পো শোনাই-
একটি ব্লণ্ড মেয়েকে তার কলেজের বন্ধুরা ধরেছে, জোক শোনাতে হবে।
'দাঁড়া, ভাবতে দে', মেয়েটি বলে। সাথে সাথে সবার মিলিত হাসি- 'আরেকটা বল, আরেকটা'।
ব্লণ্ড মেয়েটি সারা রাত বাস জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে। মা স্বাভাবিভাবেই উদ্বিগ্ন।
- কি বলব মা, একদম শেষ সীট পেয়েছিলাম। ঝাঁকুনিতে মাথা ব্যথা হয়ে গেছে।
- আহা রে! তোর উচিৎ ছিল সামনের কাউকে রিকোয়েস্ট করে সীট বদল করে নেওয়া।
- হুঁঃ, সে বুদ্ধি কি মাথায় আসেনি ভেবেছো? কিন্তু কাকে বলব, সামনের সীটগুলো তো সবকটা ফাঁকা ছিল- বুদ্ধিমতী মেয়ের উত্তর।
সব যাত্রী উঠে গেছে, তবু প্লেন ছাড়ে না কেন? পাইলট উদবিগ্ন হয়ে ক্রু-হেডকে ডেকে পাঠালেন।
- দেখুন না স্যর, এক ব্লণ্ড মহিলা ইকনমির টিকিট কেটে ফার্স্ট ক্লাসে বসে আছেন। যতবার উঠতে বলি, বলেন 'আমি ব্লণ্ড, আমি সুন্দরী, আমার সঙ্গতকারণেই এখানে বসার অধিকার আছে।' পুলিশ ডাকব, স্যর?
- না, না, সেসব কিছু করতে হবে না। আরে আমার বউও তো ব্লণ্ড। ওদেরকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় আমি জানি। এই বলে পাইলট মহিলাটির কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু বললেন। তারপরই দেখা গেল, মহিলা সুড়সুড় করে ইকনমিতে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন।
প্লেন ছাড়তেই ক্রু-এর সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল পাইলটের ককপিটে, 'স্যর, কি করে এটা করলেন?'
- 'সিম্পল', পাইলট বললেন। 'আমি গিয়ে তাকে বললাম, ম্যাম, ফার্স্ট ক্লাসটা কিন্তু লিভারপুল পর্যন্তই যাবে। আপনি যদি এডিনবরা যেতে চান, তাহলে স্যরি, আপনাকে ইকনমিতে গেয়ে বসতে হবে। অবশ্য, আপনি লিভারপুলেও নামতে পারেন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই।'



৪২
ডাক্তারের এক ডজন।।
১.
রোগী: স্যার আমার ওজন কমাতে চাই!
ডাক্তার: সকালে দুটো রুটি, দুপুরে হাফপ্লেট ভাত ও রাতে একটা রুটি খাবেন।
রোগী: এগুলো কি খাওয়ার আগে খাবো না খাওয়ার পরে?
২.
ডাক্তার: আজ কেমন আছেন?
রোগী: ভালো তবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে|
ডাক্তার: চিন্তার কিছু নেই, ওটা যাতে শিগ্‌গিরি বন্ধ হয় সে ব্যবস্থা করছি।
রোগী: কাল হাঁ করে ঘুমাতে গিয়ে মনে হয় আমার মুখের ভিতর একটা ইঁদুর ঢুকে গেছে।
ডাক্তার: আজ হাঁ করে মুখের ভিতর একটা বিড়াল ঢুকিয়ে দিন, ইঁদুরকে ধরে আনবে।
৪.
রোগী: কি ব্যাপার আপনার মলম যে কাজ করছে না?
ডাক্তার: মলম কোথায় লাগিয়েছেন?
রোগী: ঘরের চৌকাঠে।
ডাক্তার: চৌকাঠে কেন?
রোগী: আপনি তো বললেন, যে জায়গায় ব্যথা পেয়েছি সে জায়গায় লাগাতে!
৫.
ডাক্তার: বাঃ, আজ তো বেশ ভাল আছেন দেখছি!
রোগী: হ্যাঁ ডাক্তারবাবু। আপনার দেওয়া ওষুধের শিশিতে লেখা নির্দেশ যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।
ডাক্তার:(অবাক হয়ে) সেকি? কি লেখা ছিল ওতে?
রোগী: ওই যে, বোতলের ছিপি শক্ত করে লাগিয়ে রাখবেন। ওটা এখনও অমনিই লাগানো আছে।
৬.
রোগী: ডাক্তার আমি কানে কম শুনি।
ডাক্তার: বলুন তো ছয়!
রোগী: নয়।
ডাক্তার: ধুত্তোর, কোথায় কম? আপনিতো কানে বেশি শোনেন!
ডাক্তার: কি সমস্যা?
রোগী: আমার খাওয়ার পর ক্ষিধে চলে যায়।
ডাক্তার: এই ওষুধ টা খাবেন ঘুমনোর ৫ মিনিট পর আর এইটা ঘুম থেকে ওঠার ১০ মিনিট আগে।
রোগী: আমার ভীষণ পেট ব্যথা!
ডাক্তার: আপনার পায়খানা কেমন?
রোগী: গরীব মানুষের পায়খানা আর কেমন হবে! ৩ পাশে বেড়া, আর সামনে ছেঁড়া ছালার পর্দা।
ডাক্তার: আপনার কি সমস্যা?
রোগী: আমি কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি এক বিশাল তরমুজ খেয়েছি!
ডাক্তার: এতো ভালোই।
রোগী: কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি আমার কোল বালিশ নেই!
১০
রোগী: এই ঔষুধ খেলে আমার অসুখ সারবে তো?
ডাক্তার: আস্তে আস্তে সেরে যাবে।
রোগী: তাহলে আমি আসি স্যার।
ডাক্তার: আমার ফী দিয়ে যান।
রোগী: আস্তে আস্তে দিয়ে যাবো স্যার....কোনো চিন্তা নেই।
১১
ডাক্তার: ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যেকদিন ব্যায়াম করবেন।
রোগী: আমি প্রত্যেকদিন ক্রিকেট খেলি।
ডাক্তার: কতক্ষণ খেলেন?
রোগী: যতক্ষণ ব্যাটারিতে চার্জ থাকে।
১২
রোগী: ডাক্তার সাহেব আমি ঘোড়ার মত কাজ করি, গরুর মত খাই, কুকুরের মত ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কি করবো?
ডাক্তার: আমি কি ভাবে বলবো? আমিতো পশুর ডাক্তার নই!



৪৩
জামাইয়ের হাফ ডজন।
১-
বোকা জামাই - সসুরমসাই সসুরমসাই, আপনার বিয়ে হয়েছে ?
শ্বশুর - হ্যাঁ বাবা, হয়েছে । (মনে মনে- তা না হলে তুই বৌ কোথা থেকে পেলি রে শালা?)
জামাই (ব্যাকুলভাবে) - কার সঙ্গে হয়েছে সসুরমসাই?
শ্বশুর (বিরক্ত হয়ে অথচ মুখে হাসি ফুটিয়ে) - তোমার শ্বাশুড়ির সাথে, বাবাজীবন।
জামাই (আশ্বস্ত হয়ে) - তা ভালই হয়েছে, ভালই হয়েছে, বেশ ঘরে ঘরেই বিয়ে হয়েছে।
(কৃতজ্ঞতা- সৈয়দ মুজতবা আলি)
২-
মা ছেলেকে পই পই করে শিখিয়ে দিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সবার সাথে নীচুস্বরে কথা বলতে আর পারলে "তোমাদের আতিথেয়তায় আমি অভিভূত, কৃতজ্ঞ" এই কথাটি একবার অন্ততঃ তাদের শুনিয়ে দিতে ।
বোকা জামাই আর সুযোগ পায় না । শেষে শাশুড়ির সইরা যখন একবাক্যে জামাইএর মৃদু-স্বভাবের প্রশংসা করতে লাগলেন, সে থাকতে না পেরে বলল- 'দাঁড়াও, এখনই কি দেখলে? এরপর যখন "তোমাদের লাথিঝেঁটায় আমি মেরে ভূত করে দেব" কথাটা বলব তখন না বুঝবে আমার কেরামতি!'
৩-
- জান মা, তোমার জামাই বলেছিল ভাল রান্না শিখতে পারলে দারুন একটা সারপ্রাইজ দেবে! তাই তো আমি রান্না শিখলাম।
- তা কি সারপ্রাইজ দিল শুনি।
- কী আবার? রাঁধুনিকে তাড়িয়ে দিল।
৪-
বিয়ের পর ছেলে প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাবে। মা শিখিয়ে দিয়েছেন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে। বোকা জামাই এসেই বলতে শুরু করল- রসগোল্লা-ছানাবড়া-জিভেগজা-জিলিপি-মিহিদানা-সরভাজা। সীতাভোগ-সন্দেশ-কলাকান্দ-দরবেশ, রাবড়ি-ক্ষীরকদম-কালোজাম-চমচম......
৫-
পণ্ডিতমশায়ের মেয়েকে দেখে পটলা মুগ্ধ, বিয়ে করলে সে তাকেই করবে। কিন্তু কথাটা কিভাবে পাড়া যায়? একদিন সুযোগ এসেই গেল।
ক্লাশে পণ্ডিতমশাই একদিন একটি ছাত্রকে বলছেন, 'বাবা নিমাই, অফিসঘর থেকে ডাস্টারটা নিয়ে আয় তো।' একজন শুধরে দিয়ে বলে, 'পণ্ডিতমশাই, ওর নাম তো নিমাই নয়, কানাই।'
'হ্যাঁরে জানি। আসলে ও আমার অসুখের সময় রোজ নিমপাতা পেড়ে এনে দিত কিনা, তাই ওকে আমি আদর করে নিমাই বলি। বড় ভাল ছেলে'- পণ্ডিত বললেন।
পটলা এ সুযোগ ছাড়ল না। বলে, 'পণ্ডিতমশাই, এবার অসুখ হলে বলবেন, আপনাকে আমি রোজ জামপাতা এনে দেব!'
৬-
শ্বশুরমশাই মেয়ের বাসায় এসে জামাইকে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
- অনেক শুভেচ্ছা, বাবাজীবন! তোমাদের বিয়ের আজ চোদ্দ বছর পূর্ণ হল। একি বাবাজি, তুমি কাঁদছ কেন? আনন্দে বুঝি?
- ঠিক তা নয় বাবা! চোদ্দ বছর আগের সেই দিনটা মনে পড়ে গেল। সেই আপনি আমাকে আপনার মেয়ের সঙ্গে গাড়ির ব্যাকসীটে শোয়া অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন!
- হ্যাঁ বাবাজি, মনে আছে বইকি! আমি যে উকিল। তোমাকে শাসিয়েছিলাম, এক্ষুনি আমার মেয়েকে বিয়ে কর, নইলে চোদ্দ বছরের জন্যে তোমাকে জেলের ঘানি ঘোরান করাব।
- তখন যদি আপনার কথা মেনে বিয়েটা না করতাম, আজ আমি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যেতাম। সেই ভেবেই মনের দুঃখে কাঁদছি।


৪৪) তাহাদের কথা।

উপস্থিতবুদ্ধি আর রসবোধের নিরিখে ঢাকার কুট্টি গাড়োয়ানরা একসময় ছিল অতুলনীয়। ঢাকার অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য ছিল এরা। জানিনা সম্ভব ছিল কিনা সেযুগে, কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার চেষ্টা করলে এদের নামে জি-আই ট্যাগ দাবী করতে পারত। শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মুজতবা আলি সাহেব ও অন্যান্য অনেকেই এদের রসিকতার কিছু গল্প লিখে গেছেন, তার দু-একটা নীচে দিলাম।
১) -কি হে গাড়োয়ান, রমনা যাবে?
- হ, যামু না ক্যান? তিন ট্যাহা লাগবো।
- কি যে কও! দুই টাকা লইও।
- (গাড়োয়ান বাবুর কানের কাছে মুখ এনে চুপিচুপি) আস্তে কন কত্তা, ঘুরায় হুইন্যা হাসবো!
২) গাড়োয়ানেরা স্টেশনের পাশে আড্ডা দিচ্ছে। একটি যুবক সাইকেল চালিয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তার শার্টের কয়েকটা বোতাম না থাকাতে সে হাওয়ার ধাক্কা সামলাতে বোতামগুলো পেছনে করে জামাটা
উল্টিয়ে পরেছে। ও পেরিয়ে যেতেই এক কুট্টি গাড়োয়ানের টনক নড়েছে। কত্তা শুনেন, অ কত্তা শুনেন- করে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে। তা কত্তাটি কি হয়েছে ভেবে ফিরে এসে শুধোয়- কও, কী হইসে? ডাকছিলা ক্যান?
- কিছু না কত্তা। এই জিগাইত্যাসিলাম, কত্তা আইতেসেন না যাইত্যাসেন?
৩) এরকমই এক যুবক একদিন জামা উলটো করে পরে মোটর বাইক চালাচ্ছিলেন। স্টেশানের বাইরের রাস্তায় একটা গাড়িকে ধাক্কা মেরে বাইক উলটে গেছে। কি হইসে, কি হইসে বলে এক কুট্টি গাড়োয়ান ছুটে এসেছে। ভাল করে বাবুটিকে দেখে তার মন্তব্য- 'আর কিছু না, তয় মাথাখান উল্টাইয়া গ্যাসে গিয়া!'
৪) এক ধুতি-কুর্তা পরা ধোপদুরস্ত বাবু ট্রেন ধরতে ঢাকা স্টেশনে যাবেন এক কুট্টির টাঙ্গায়। পথে বাবুটি কেবল তাড়া দিচ্ছেন, এই গাড়োয়ান জলদি চল, জলদি চল, গাড়ি ছাইর্যা দিব। তা নামবার সময় তিনি ধুতিতে পা জড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে সটান মুখ থুবড়ে নীচে। গাড়োয়ান তাঁকে তুলে ঝাড়াঝাড়ি করছে আর বলছে- 'অহহ কত্তার এইখানে লাগসে, অহহ উইখানে লাগসে......তা যাই কন, হগ্‌গল কতাটি হইল কত্তা নামসেন তাড়াতাড়ি!!'
৫) -কি হে গাড়োয়ান, গুলশান মহল্লা যাবে?
-হ যামু, তিন ট্যাহা দিয়েন।
- কী কও, দুই টাকা দিমু। এই তো কাছেই, দ্যাখা যায়।
- অ! দ্যাখা তো চান্দঅ যায়! তা যাইন না চান্দে দুই ট্যাহায়!!
৬) এক নব্য যুবক গাড়িতে উঠে দেখে মাথার চাল ফুটো। বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ছে। তাতে যাত্রীটি অসন্তোষ প্রকাশ করায় কুট্টি গাড়োয়ান উত্তর দিয়েছে- "আরে রাখেন কত্তা, এক টাকা ভাড়ায় জল পড়বো না তো কি রসগুল্লার রস পড়বো"
৭) একজন গাড়িতে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেতে চাইছেন। তো কুট্টি গাড়োয়ান বুঝতেই পারছে না। শেষে অনেক ধস্তাধস্তির পর বললো- "অহ! আফনে উনিভার্সিটির কথা কন! তো বাংলায়ই কইতে পারতান।"
৮) দেশভাগের আগে ঢাকার রাস্তা খুব উঁচু নীচু ছিল। এক কুট্টি গাড়োয়ান টাঙ্গা নিয়ে রাস্তার চড়াইতে উঠার সময় ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারছে আর বলছে, 'আরে উঠ উঠ বাবু ক‌ইসেন উঠলে তরে বকশিস দিব' আর টাঙ্গায় বসা বাবু পেছন থেকে চেল্লাচ্ছেন- 'ক‌ই নাই, আমি ক‌ই নাই'!
৯) ধুবড়ির সাহারা মস্ত বড়লোক। এক শীতের সকালে তাদের বিশাল বাড়ির বারান্দায় সাহাদের মেজকর্তা রোদ পোয়াচ্ছেন। এক কুট্টি একপাল পাঁঠা নিয়ে ধুবড়ি পশু-হাটে বেচতে চলেছে। তা দেখে বাবুর পাঁঠার মাংস খাবার ইচ্ছে হয়েছে। অহংকারী মানুষ, মেজাজে ডাকছেন- এই পাঁঠা, পাঁঠা! উদ্দেশ্য পাঁঠাওয়ালা, তা সেও কুট্টির পোলা- পাত্তাই দেয় না। আবার ডাক- অ্যা...ই পাঁঠা, হালায় শুনস না?
এবার কুট্টি মেজকর্তার দিকে না তাকিয়েই পাশের পাঁঠাটাকে এক লাঠির বাড়ি দিয়েছে- তগো বন্ধু ডাকত্যাসে, সাড়া দিস না ক্যান?

(৪৫)
ভদ্র ডাকাত।
অন্ধকার রাত্রে এক ভদ্রলোক হেঁটে যাচ্ছেন। দুই অচেনা লোক সামনে এসে দাঁড়াল।
আগন্তুক ১ ।। দাদা আপনার কাছে একটা এক টাকার কয়েন হবে?
ভদ্রলোক।। হ্যাঁ, কিন্তু কেন?
আগন্তুক ২ ।। দেখুন না, আমাদের মধ্যে তর্ক হচ্ছে, কিন্তু মীমাংসা হচ্ছে না। তাই টস করব।
ভদ্রলোক।। তা টসটা কি নিয়ে?
আগন্তুক ১।। না, তেমন কিছু নয়। এই আপনার মাথায় লাঠির বাড়িটা মারার পর কে আপনার ঘড়ি নেবে আর কে মানিব্যাগ......তুচ্ছ ব্যাপার, কিছু মনে করবেন না।

(৪৬)
মুরগীর কষ্ট।
যেখানে আমাদের সাইটের কাজ চলত তার গায়ে ছিল, মুন্নার ঝুপড়ি- 'দ্য গ্রেট মুন্না টি-স্টল'। তা গ্রেটই বটে। সেদ্ধডিম দিয়ে টিফিন করতাম, তা সে ডিমের সাইজ দেখবার মত। এত ছোট সাইজের ডিম কোথায় পায়, কোন দেশ থেকে আমদানি হয় জানতে চাইলে মুন্নার সপ্রতিভ কালজয়ী উত্তর-
'শুধু ডিমের ছাইজই দ্যাখলেন ছার, মুরগির কষ্টটা কেউ বুZলেন না!'


(৪৭)
নাতি-শীতোষ্ণ সংবাদ!

১)
ভদ্রলোকের এক কথা।
নাতি- দাদু, হর্স মানে কী?
দাদু- হর্স? গুরা।
নাতি- সোলজার মানে?
দাদু- ইংরেজ যুদ্ধা যারে কয় গুরা!
নাতি- আর পাউডার মানে?
দাদু- এও জানস না! গুরা।

২)
নাতি - (টেনিস খেলোয়াড় ইলি নাসতাসের সহাস্য ছবি দেখিয়ে) দাদু, এই দেখ নাসতাসে।
দাদু - আরে নাসতাসে কই, এ তো দেহি হাসতাসে!

৩)
- উরিব্বাস দাদু, তুমি আজ হেব্বি রোমান্টিক হয়ে গেছ মাইরি। সেই থেকে ঠাম্মাকে কখনও ডার্লিং, কখনও হানি, নয়তো সুইটহার্ট বলে ডেকে যাচ্ছ!
- চুপ চুপ! ক' না দাদুভাই তর ঠাম্মার নামডা। সক্কাল থেইক্যা মনে পড়ত্যাসে না।
.
৪)
দাদু - এই যে দাদুভাই দিনরাত ঘুরে বেড়াও, তিথির খবর রাখ? বাতের ব্যথাডা বাড়সে, আমার যে পূর্ণিমা জানতে লাগে।
নাতি - (বাইক মুছতে মুছতে) কোন কলেজে পড়ে শুধু এইটুকু বল, এক ঘন্টার মধ্যে পূর্ণিমা-টুর্ণিমা সবার খবর এনে দিচ্ছি!
কোন কলেজে?
দাদু- এইযে ভাইটু, এইযে ক'দিন ধইরা কিস-ডে আর ভ্যালেন্টাইন-ডে করত্যাস, বলি তিথির কুনো খোঁজ রাখ? পূর্ণিমার খবর জান?
নাতি (বাইক মুছতে মুছতে)- শুধু কোন কলেজে পড়ে বলে দাও দাদু- একঘণ্টার মধ্যে পুরো বায়োডাটা এনে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি ।
৫)
দাদু- আমাদের সময় এত শপিং মল ছিল না। তবে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল। দশ টাকা নিয়ে যেতাম পকেটে করে আর মাসকাবারি বাজার করে আনতাম।

নাতি- হুঁ, বুঝেছি। তখন নিশ্চয় এত সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না!
দাদু হার্টফেল!

শিশুশিক্ষার হাফ ডজন।।


(১)

বাবা- আজ তোর স্কুলের রেজাল্ট না?
ছেলে- হ্যাঁ বাবা।
বাবা- এবারও যদি পাশ করতে না পারিস, আমাকে বাবা ডাকিস না।
ছেলে- বাবা! এটা স্কুলের টেস্ট, কোন ডি-এন-এ টেস্ট নয়।


(২)

পটলা বাড়ির বারান্দায় মনমরা হয়ে বসে আছে। এক পথিক যেতে যেতে জিগ্যেস করল-
- কি খোকা, তুমি বাইরে বসে আছ কেন একা একা?
- ভেতরে মা বাবার সঙ্গে মারামারি করছে।
- আচ্ছা! তোমার বাবার কী নাম?
- ঝগড়াটা তো তাই নিয়েই।


(৩)

একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। মিষ্টি বাচ্চাটাকে দেখে অনেকেই ডেকে নাম শুধোচ্ছেন। মেয়েটি সবাইকে উত্তর দিচ্ছে- 'মাই নেম ইজ রিয়া, মাই ফাদার্স নেম ইস ডিকে বোস।' মেয়ে এত কথা বলে! মা এসে ধমক দিয়ে বলেন- 'কী হচ্ছে রিয়া? তোমাকে নাম জিগ্যেস করলে নিজের নামই বলবে, বাবার নাম বলার কী দরকার? বাজে কথা বলতে মানা করেছি না!' মেয়ে ইতিবাচক ঘাড় নাড়ল।

কিছুক্ষণ পরে এক ভদ্রলোক মেয়েটিকে দেখে প্রশ্ন করলেন, 'আরে, তুমি রিয়া না, মিঃ বোসের মেয়ে?"
- "হ্যাঁ, আমি রিয়া। তবে মিঃ বোস আমার বাবা- এটা বাজে কথা।'
- "সে কী!"
- "হ্যাঁ, আমার মা আমাকে বলেছে, ওটা বাজে কথা!"


(৪) 


ছেলেঃ মাম্মা, বাপি আজ আমাকে কিস না করেই অফিস চলে গেল।
মাঃ নিশ্চয় তুমি ম্যাথস পারনি ঠিকমত!
ছেলেঃ আহা, মালতীমাসি যেন কত ম্যাথস জানে!


(৫)

প্রথম বন্ধুঃ আর বলিস না, আমার ওইটুকু বাচ্চা মেয়েটা, সদ্য হাইস্কুলে গেছে, কাল দেখি স্কুল যাবার আগে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে!

দ্বিতীয়ঃ তবু ভালো। আমার সুপুত্তুরটি ক্লাশ নাইনে পড়ে, সেদিন দেখি স্কুল থেকে ফিরে ঠোঁট থেকে লিপস্টিক তুলছে!   


(৬)

মাঃ তারপর হল কি, দেবকীর ছেলের হাতে মরতে হবে জেনে কংস না, দেবকী আর বসুদেবকে জেলে পুরে দিল। তারপর ওদের একটা করে ছেলে হয়, আর কংস তাকে মেরে ফেলে।

পাপ্পুঃ আচ্ছা মা, কংসের মাথায় এল না, যে এত কাণ্ড না করে দেবকীকে একা জেলে রাখলেই পারত, বা আলাদা আলাদা রুমে?

মা (স্তম্ভিত হয়ে)ঃ কী আর করবে? নিশ্চয় কংসের বাড়িতে কোন পাপ্পু ছিল না তখন!