সলিলের গানে দুঃখ-বিরহ।
(প্রবন্ধ ও আলোচনা)
(১)
প্রস্তাবনা।।
ফেসবুকেই সলিল চৌধুরির গানের কিছু বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম একদিন। বিষয় ছিল সলিলের গানের গতিময়তা। না, গতিময়তা বলতে এক্ষেত্রে দ্রুতলয় বা চটুল-ছন্দ বা ভাষার লঘুতার কথা বলছি না, সলিল গানের প্রতিটা বিভাগে রেখেছেন নিজস্বতার স্বাক্ষর। জীবন যে চলার নাম, তা কখনও থেমে থাকে না, দুঃখ-মৃত্যু-বিরহ আসে দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়মেই এই জিনিষ কথায় আর সুরে বুঝিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, অতুল, দ্বিজেন, রজনীকান্ত আর নজরুল- লয় আর যন্ত্রানুষঙ্গে এক নতুন আঙ্গিক যোগ করলেন সলিল চৌধুরি। আমি শুরু করেছিলাম সলিলের একটি জনপ্রিয় গানের কথা দিয়ে, প্রসঙ্গক্রমে এসে পড়ল আরো নানাকথা, সলিল-সমাধি ঘটেছে এমন কিছু গুণী ব্যক্তির সংযোজন, তর্ক-বিতর্ক ক্রমে সমৃদ্ধ করে তুলল এই সূত্রটি। ভাগ্যক্রমে ফেসবুক সব কিছুই ধরে রাখে, মানে এ পর্যন্ত রেখেছে। তবে আমার পোস্টের চেয়েও যে সমৃদ্ধতর এই আলোচনাচক্র, আর তা যাতে হারিয়ে না যায় তাই সবকিছুকে সংকলিত করে উপস্থাপনা করছি বন্ধুদের জন্যে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আরো কিছু তথ্য-সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে এই রচনা।
ভূমিকা।।
আমাদের দেশের সংগীতে গানের কথার ভাব বা বিষয় অনুসারে গানের স্বভাব, গতি আর মেজাজ নির্ভর করে, সে হিসাবে অধিকাংশ সময়ে রাগ, তাল আর লয় নির্ধারিত হয়। প্রাক্-রবীন্দ্র বা রবীন্দ্রোত্তর যুগেও এর খুব একটা অন্যথা হয় নি। অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ নিজে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন এ ব্যাপারে, অতুলপ্রসাদ বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, কখনও বা নজরুল চমক সৃষ্টি করেছেন মাঝে-সাঝে ব্যতিক্রমী সৃষ্টি দিয়ে। সে প্রসঙ্গে আসার আগে প্রচলিত ধারণা বা প্রয়োগ সম্বন্ধে একটু আলোচনা করে নিই।
হিন্দুস্থানী মার্গসংগীতের এক স্বনামধন্য পণ্ডিত তাঁর কিছু বিদেশী শিষ্যদের নিয়ে ভারতীয় রাগসংগীতের বৈচিত্র্য নিয়ে চর্চা করছেন। তিনি বাদ্যযন্ত্রে ভৈরবীর সুর বাজিয়ে জানতে চাইলেন তাঁদের কী মনে হল। উত্তর এল- কার জন্যে সারারাত অপেক্ষা করলাম, সে এল না। আশ্চর্য! সুরটা ছিল বিখ্যাত বন্দিশ 'কা করুঁ সজনি, আয়ে না বালমা'র। তার পরের সুর ভীমপলশ্রী- বিদেশী শিষ্যেরা একবাক্যে বললেন কে যেন প্রিয়মিলনের অভাবে দুঃখে-অভিমানে গুমরে কাঁদছে। সুর ছিল- 'যা যারে অপনে মন্দিরবা'। পুরনো দিনের এক প্রথিতযশা শিল্পী একদিন গল্পচ্ছলে রাগ বিহাগের সম্বন্ধে কিছু বলছিলেন। এটি বিলাওয়ল ঠাটে উড়ব-সম্পূর্ণ জাতির রাত্রি মধ্য-প্রহরে গেয় একটি সুন্দর রাগ, মনকে মোহাবিষ্ট করে ফেলতে এর জুড়ি নেই। দিনে গাইতে নিষেধ কেন? কথিত আছে এক মহিলা এক সকালে নিজের ঘরে মাছ কুটছিলেন, শিশু-সন্তান পাশে শুয়ে খেলা করছে। এমন সময় পাশের বাড়ির ওস্তাদ রাগ বিহাগ ধরলেন। মোহাচ্ছন্ন হয়ে মহিলা বুঝতে পারেননি কখন মাছের পরিবর্তে শিশুটিকে রেখেছেন বঁটিতে। খবর পেয়ে দেশের রাজা সেদিন থেকে দিনে বিহাগ গাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। তানসেনের দীপক রাগ গেয়ে আগুন জ্বালানো বা বৈজুর মেঘরাগে বৃষ্টি নামিয়ে তা নেভানো, এসব হয়ত গল্পকথা। তবে লক্ষ্য করেছি যে শ্রী-রাগে গীত দত্তাত্রেয় পলুস্করের ‘হরি কে চরণ-কমল নিশাদিন সুমরো রে’ শুনে মনে হত যেন শেষ দিনের ডাক শুনতে পেয়েছেন তিনি, কেমন যেন একটা বিদায়-ব্যথা-জড়িত ক্লান্তি তাঁর সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে। সত্যি অসম্ভব গুণী মানুষটি বড় তাড়াতাড়ি যেন চলে গেলেন সংসারের মায়া ছেড়ে।
সংগীতের রাগ-রাগিনীর ব্যবহার নিয়ে এরকমই নানা গল্পকথা ছড়িয়ে আছে এ দেশের পথে প্রান্তরে। ওস্তাদ-পণ্ডিতদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা ছিল না গায়ক-সংগীতকারদের। হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত হিন্দি বলয়ের ওস্তাদদের হাতে এমনভাবে কুক্ষিগত ছিল যে খেয়াল-ঠুমরি-ধ্রুপদের বন্দিশ বাংলায় লেখার কথাও ভাবা যেত না। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে শোরী মিঞা ঘরানার অনেক বিরোধিতা সহ্য আর উপেক্ষা করে রামনিধি গুপ্ত লিখলেন বাংলায় টপ্পা, রামমোহন রায় লিখলেন ধ্রুপদ। তারপর কিছুটা হলেও খুলে গেল বাংলা গানে উত্তর আর দক্ষিণ ভারতীয় রাগরাগিনীর সার্থক প্রয়োগ, রামপ্রসাদ-মদন-দাশু রায় ভক্তিগীতিতে যা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাতে যোগ করলেন বাংলার লোকগীতি, বিদেশী সুর, ভাঙলেন উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমের যাবতীয় বেড়াজাল।
“সংগীতচিন্তা” বইয়ে রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে লিখছেন “আমাদের দেশে সংগীত এমনি শাস্ত্রগত, ব্যাকরণগত, অনুষ্ঠানগত হইয়া পড়িয়াছে, স্বাভাবিকতা হইতে এত দূরে চলিয়া গিয়াছে যে, অনুভবের সহিত সংগীতের বিচ্ছেদ হইয়া গিয়াছে, কেবল কতকগুলা সুরসৃষ্টির কর্দম এবং রাগরাগিণীর ছাঁদ ও কাঠামো অবশিষ্ট রহিয়াছে। সংগীত একটি মৃত্তিকাময়ী প্রতিমা হইয়া পড়িয়াছে।“ অন্যত্র আরো বলেছেন, “ক্লাসিক্যাল আমাদের কাছে দাবী করে নিখুঁত পুনরাবৃত্তি। তানসেন কী গেয়েছেন, জানি না, কিন্তু আজ তাঁর গানে আর-কেউ যদি পুলকিত হন, তবে বলব তিনি এখন জন্মেছেন কেন? আমরা তো তানসেনের সময়ের লোক নই, আমরা কি জড়পদার্থ? আমাদের কি কিছুমাত্র নূতনত্ব থাকবে না?” এর অর্থ কী? “আমার এ ঘর বহু যতন করে/ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।” আসলে সংগীত বা শিল্পসাহিত্য-ললিতকলা ততদিনই বেঁচে থাকে, যতদিন সে নিজেকে ঘষে মেজে নতুন করে নিতে পারছে। প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে পালটে নিতে পারছে। গোলমাল তখনই বাধে, যখন, এই ঘষামাজার কর্তবে নতুন সৃষ্টির ‘আনন্দের’ চাইতে, সে সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় ব্যাকরণ লঙ্ঘন হল কিনা, সেই তর্কে প্রাজ্ঞ পিতামহ শ্বেত শ্মশ্রু দোলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিহাস সাক্ষী, যতবার শিল্পীর প্রতিভার খামতি দেখা দেয়, ততবারই ধ্বংসের ভয়ে ব্যাকরণ টিকিয়ে রাখার ব্রতে মগ্ন হয়ে পড়েন তাত্ত্বিক পণ্ডিত।
(২)
একটি গান, কিছু কথা।
তবু যেন কিছু বাকি ছিল। রবীন্দ্রোত্তর যুগে নজরুল এনেছিলেন আরবী সুর, বাংলায় লিখেছিলেন গজল, কাওয়ালি, কাজরি, ঠুমরি, দাদরা, ইসলামি সংগীত। বাকি ছিল ভাবের সঙ্গে সুর আর লয়ের সামঞ্জস্য। নজরুল কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও প্রচলিত প্রথা যেন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেললেন সলিল। সুরের বৈচিত্র্য তো বটেই, রাগাশ্রিত গানে বিবাদী সুরের মুন্সিয়ানার সঙ্গে ব্যবহার, স্থায়ী-অন্তরা-সঞ্চারী-আভোগের প্রচলিত শৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসা, পলিফোনি, এমনকি ভোক্যাল হারমনাইজেশন নিয়ে আসা, একই গানের মধ্যে স্কেল বদল করার সাহস- পূর্বসূরীরা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেও এ সবকিছুর প্রথম সার্থক প্রয়োগ করেন সলিল চৌধুরি। কথা-সুর-লয়-ছন্দের সামঞ্জস্য আর তার বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সলিলের একটি জনপ্রিয় গানের কথা-
'দূর নয় বেশী দূর ওই সাজানো সাজানো বকুল বনের ধারে
ওই বাঁধানো ঘাটের পারে।
যেথা অবহেলা সয়ে সয়ে কিছু ফুল শুকানো শুকানো হয়ে
পড়ে পড়ে আছে তার কিছু দূরে ঘাটের চাতাল ছাড়িয়ে-
ওখানে আমার মাতাল হৃদয় সেদিন গিয়েছে হারিয়ে।।
(যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্)'
বহুশ্রুত গান, বলে দিতে হবে না নিশ্চয় যে কে গেয়েছেন। একে হৃদয়, তায় আবার মাতাল- যাক না হারিয়ে, ক্ষতি কী! তবু কবি থামেন না, অতএব গায়ক শ্যামল মিত্রকে ঠিক কী হারিয়েছে তার বর্ণনা দিতে হয়।
'শুক-সারীরা সেখানে কূজনে কূজনে দুজনে গাহিয়া যেত
ওই নদীটি বহিয়া যেত।
বনহরিণী চকিত চপল চরণে চমক লাগায়ে দিয়ে
তার চেয়ে ভাল চোখ দুটি দেখে যেখানে যেত সে দাঁড়িয়ে-
সেখানে আমার করুণ হৃদয় সেদিন গিয়েছে হারিয়ে।।
(যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্)'
প্রথম পঙ্ক্তির মধ্যমিল আর তার পরে 'চ'এর অনুপ্রাস চোখে পড়ার মত, কবিগুরুর 'চলচপলার চকিত চমকে করিছে চরণ বিচরণ' মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু তারও চেয়ে ভাল সেই চোখের বিবরণ যেখানে কবির চোখ পড়েছে, কিন্তু আমাদের এখনও পড়েনি। তাই অনায়াসে বলে উঠি, 'যাক্, যা গেছে তা যাক্' পরের স্তবকের আশায়।
'মোর মানসী কলস কাঁখেতে লইয়া ওখানে দাঁড়াত এসে,
মুখে মধুর মধুর হেসে।
তার তনুর তীরথে ডুবিয়া মরিতে নদীও উতলা হত
তার ঢেউএ ঢেউয়ে আরো দুটি ঢেউ যেখানে দিত সে বাড়িয়ে-
সেখানে আমার উতল হৃদয় সেদিন গিয়েছে হারিয়ে।।
(যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্)'
এতক্ষনে অনঙ্গ যেন অঙ্গধারণ করলেন। সে মানসীর তনুর তীরথ কথাটা অবশ্য নতুন নয়, নজরুল আগেই লিখে ফেলেছেন- 'বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে আমার তনুর তীরে'। তবে নারীর বক্ষসৌন্দর্য বর্ণনার জন্যে কোনও কুরুচিকর শব্দ বা আদিরসাত্মক বিতর্কে না গিয়ে কবি লিখে ফেললেন- 'তার ঢেউএ ঢেউয়ে আরো দুটি ঢেউ যেখানে দিত সে বাড়িয়ে' - এখানে সলিল চৌধুরি একজন ওস্তাদ শিল্পী।
'মোর দিবস রজনী হায় গো সজনী ভাবিয়া কাটিয়া যেত,
সবই স্বপ্ন যে মনে হত।
সেই মগন স্বপন সহসা কখন ভাঙিয়া ভাঙিয়া গেল
এই পথ দিয়ে বধূবেশে সেজে যেদিন গেল সে হারিয়ে
সেদিন আমার সজল হৃদয় দু'পায়ে গিয়েছে মাড়িয়ে।।
(যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্)
(যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্)'
এইখানেই আসল ট্রাজেডি। কিন্তু ভগ্নহৃদয়ের হা-হুতাশের বদলে কবি লিখলেন কি- 'যাক্, যা গেছে তা যাক্, যাক্, যা গেছে তা যাক্'। গানটিতে দ্রুতলয়ের সাথে চটুল সুরের ব্যবহার কথার সাথে হয়ত খাপ খায় না, তবে এ ব্যাপারে সলিলের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সলিল-বিশেষজ্ঞ তথাগত ভট্টাচার্য, সে কথায় পরে আসছি। এ পর্যন্ত আমরা সঙ্গীতের ভাব, সুর, রাগ, তাল ও লয়ের সমন্বয় নিয়ে যা যা শুনে এসেছি রবীন্দ্র যুগ পর্যন্ত, সবকিছু ধ্যান-ধারণা যেন এক-ঝটকায় বদলে গেল। অবশ্য নজরুলের দু-একটা কাওয়ালি জাতীয় গানে (যেমন- যেদিন লব বিদায় ধরা ছাড়ি প্রিয়ে) এধরণের একটু আভাস পাওয়া গেছে ইতিপূর্বে, তবে সেটা যেন অন্তরের অভিমানের বহিঃপ্রকাশ, কাওয়ালি বা গজলের তালবিহীন 'শায়রি'তে তার আসল রূপটা মেলে। কিন্তু এটাই সলিল 'দি অরিজিন্যাল'।
সলিল চৌধুরির হাত ধরে রবীন্দ্রোত্তর বাংলা গান যেন সাবালকত্বে পা রাখল। বন্ধু ভাস্কর বসুকে কৃতজ্ঞতা জানাই সলিল-গীতির এই বিশেষ দিকটি আমার দৃষ্টিতে তুলে ধরার জন্যে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে আমরা পরের অংশে কিছুটা আলোচনা করতে চলেছি
(৩)
আলোচনা-পর্ব।।
"গানটিতে দ্রুতলয়ের সাথে চটুল সুরের ব্যবহার কথার সাথে হয়ত খাপ খায় না" – এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সলিল-বিশেষজ্ঞ তথাগত ভট্টাচার্য জানালেন- “শক্তিশালী গীতিকারের (কবি নয়) লেখনীতে সৃষ্ট গানে অনেক সময়েই কথার অতীত কোনো অন্তরাত্মার (spirit) সন্ধান পাওয়া যায়, যা কথাকে অতিক্রম করে যায়। এই অন্তরাত্মার সন্ধান পেলে অনেক সময়েই দেখা যায়, তা গানের নিছক কথার অতিরিক্ত কিছু তো বটেই, অনেক সময় গানের কথার আপাত-বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত! সুরকারের প্রতিভা গানের এই অন্তরাত্মাকেই ধরবার চেষ্টা করে - নিছক কথা কে নয়। এক্ষেত্রেও, সুরকার সলিলের অনন্য প্রতিভা তুলে ধরবার চেষ্টা করেছে গীতিকার সলিলের অমর সৃষ্টি এই গানের আসল spirit টিকে - যা কিনা ধরা আছে ওই পাঁচটি শব্দের বাক্যবন্ধে -"যাক যা গেছে তা যাক!" পুরোনো স্মৃতির অলস রোমান্টিকতা নিয়ে পড়ে থাকা নয়, সামনে দেখো! এই তো ছিল সলিলের জীবনের মূল মন্ত্র। শ্যামল মিত্রেরই গাওয়া সলিলের অপর এক সৃষ্টিতে দেখি,
"স্মৃতি নিয়ে কি হবে আর, মিছে পুতুল খেলার মোর সাধ নাই
মনে রাখো কি না রাখো, মনে মনে ভাবা মোর কাজ নাই.
এ জীবন মোর আঁধারে আঁধারে মিশে
আলোয় আলোয় মিলে মিশে থাক।"
"স্মৃতির রোমান্টিকতাকে সার্থক সৃষ্টির প্রেরণায় ব্যবহার করো, কিন্তু সেই স্মৃতিডোর যদি দুঃখের সাগরে নিমগ্ন করে পেছনে টেনে ধরে, তো তাকে ছিন্ন করো"- এই দৃপ্ত পৌরুষই এই গানের, এবং সলিলের অন্যতর বহু গানের, অন্তর্নিহিত সুর, আর সেই সুরই ফুটে উঠেছে "যাক যা গেছে তা যাক"এ প্রযুক্ত marching tune এ। তাই দ্রুতলয় আর চটুল সুরের ব্যবহার আমার মতে ব্যাথাময় অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলার সুর।“
আরেক গুণী বন্ধু আশুতোষ ভট্টাচার্য জানালেন তাঁর একটি সুন্দর উপলব্ধি। “সত্যি এই গানের কথা,ছন্দমিল,সুর,মেলোডি আর গায়কী মিলেমিশে অনন্য হয়ে উঠেছিল। 'সেদিন আমার সজল হৃদয় দুপায়ে গিয়েছে মাড়িয়ে',দেখুন গুনগুন করে গেয়ে, মনে হবে যেন সিঁড়ির ধাপে ধাপে নামছেন আর সমতল পেয়েই 'যাক যা গেছে তা যাক' নিতান্ত অবজ্ঞাভরে, পাহাড়ি রাস্তার সর্পিল বাঁকগুলো সন্তর্পণে ধাপে ধাপে নেমে এসে সমতল পেয়েই গাড়ি যেমন নিশ্চিন্তে গতি বাড়িয়ে দেয়।“
বিশিষ্ট কবি পরাগ বরণ পাল জানালেন-
“এই গানটি নানান বিভিন্ন কারণে আমার মতে একটি cult song বাংলা গানের ইতিহাসে। অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন সঙ্গীতব্যক্তিত্ব তাঁর একটি লেখায় জানিয়েছেন গানটি নাকি গুরুচন্ডালি দোষে দুষ্ট। আমি আমার একটি লেখায় (আনন্দবাজারে প্রকাশিত) তার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই লেখাটির আরো অনেক পরিবর্ধিত রূপ পরে অন্যত্র প্রকাশিত। এখানে লিঙ্ক দিলাম।“
ভাস্কর বোস উত্তরে গুরুদেব ও গুরুচণ্ডালী সম্বন্ধে কিছুটা মজার ছলেই লিখলেন-
“গুরুচণ্ডালী কাব্যে ও গীতিকাব্যে অলৌকিকত্ব সৃষ্টি করে সেটা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেই অপূর্ব গায়নরীতিতে যখন গাইছিলেন,
"দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিতে।
শুভক্ষনে কাছে ডাকিলে,
লজ্জা আমার ঢাকিলে গো—
তোমারে সহজে পেরেছি বুঝিতে!" “
নতুন নতুন শব্দের ব্যবহারেও লিরিসিস্ট কবি হিসেবে সলিল অনবদ্য। সলিলের বিখ্যাত "আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা গানে দুটো নতুন শব্দ পাচ্ছি, 'চতুর্পাশে' আর ‘তুষারিত’ "- পরাগবাবু মনে করালেন।
“আমার চতুর্পাশে সব কিছু যায় আসে
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা।।“
ভাস্কর একবার 'মরি হায় গো হায়' গানে 'চৌদিকে' কথাটা নিয়ে লিখেছিলেন, শব্দের প্রয়োগটাও লক্ষ্যণীয় রবি ঠাকুরের 'চৌদিকে মোর সুরের জাল বুনি' র অনুসরণে।
তথাগতর কথার পরিপ্রেক্ষিতে ভাস্কর আরেকটি গানের উল্লেখ করলেন যাতে আছে সেই একই এগিয়ে চলার আপ্রাণ তাগিদ,
"জীবন বৃন্তের থেকে ঝরে
কত না স্বপ্ন না গেছে মরে।
তবুও পথ চলা কবে যে শেষ হবে জানি না"
সেখানে স্মৃতি ভার নয়, অনুপ্রেরণা। 'স্মৃতিরা যেন জোনাকির ঝিকিমিকি, ঝিকিমিকি।।'
(৪)
সলিল চৌধুরী বিরহের গানেও তথাকথিত দুঃখের সুর লাগতে দেন নি। উদাহরণ - "নিশিদিন, নিশিদিন, বাজে স্মরণের দিন" বা "অন্তবিহীন, কাটে না আর যেন বিরহের দিন"!! এমনকি " ও বৌ কথা কও বলে পাখি আর ডাকিস না" - গানেও একটা অদ্ভুত রকমের উজ্জ্বল ঔদাসীন্য কাজ করে। ওনার দর্শনে সম্ভবতঃ দুঃখ পাওয়া মানে হেরে যাওয়া।
“এই শেষ কথাটা নিয়ে আমি এক সময় বেশ ভেবেছিলাম”, বিজ্ঞানী- সাহিত্যিক অমিতাভ প্রামাণিক জানালেন।“এগুলো কি ইচ্ছে করেই করা? সন্দেহ জাগে। বিদেশী সুরের আর বাজনার জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার প্রবল আকর্ষণ থেকে সলিল হয়ত বেরোতে পারেন নি। এই গানগুলো গাওয়ার সময় গায়কের (বা গায়িকার) গলায় সামান্যতম দুঃখের পরশ পাই না। যেন বিরহ কত আনন্দের জিনিস! অথচ 'বিরহ বড় ভালো লাগে'-তে কত্তা কি অসম্ভব মেদুরতা এনেছিলেন!”
ভাস্করের কিন্তু অন্য মত। “বিরহ কিন্তু প্রেমের এমন একটা দিক যেটা ছাড়া প্রেমকে ভাবা যায়না। কালিদাসের মেঘদূতের থেকেই হয়ত পরবর্তী কবিরা বিরহের সৃজনশীলতা কে স্বীকার করেছেন। "নিদ নাহি আঁখিপাতে" - কথাটা খুবই দুঃখের কিন্তু গানে সেইরকম দুঃখের প্রকাশ নেই। সেইরকমই "আমি তোমারই বিরহে রহিব বিলীন / তোমাতে করিব বাস । দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস" - এই বিরহীর কি অসাধারণ আত্মপ্রত্যয়, সুরে ও তা চিহ্নিত। এখানেও মনে হতে পারে - প্রেমিক যেন বিরহের প্রতীক্ষাতে। এমনকি মৃত্যুকেও সেইভাবে দেখা হয়নি, বরং ভাবা হয়েছে তা জীবনেরই এক রূপ- কর্মবাদী মানুষের দুঃখবিলাস সাজেনা - "মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় সে দুঃখের কূপ,/ তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ, আপনার পানে চাই"! সলিল ও তাই হয়ত একই ভাবে বলেছেন - "জীবন বৃন্তের থেকে ঝরে, কত যে স্বপ্ন গেছে মরে / তবু এ পথচলা কবে যে শেষ হবে জানিনা"!!
আমার মনে হয় কথাটা ঠিক। 'আর নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের' গানটি শুনে আগে খটকা লাগত, বোঝা মুস্কিল ছিল যে ওটা প্রেম নয়, তার মায়াজাল কাটিয়ে 'এবার ফেরাও মোরে'র আহ্বান। 'সাত ভাই চম্পা'র prelude শুনলে মনে হয় একটা রূপকথার গল্প শুনতে চলেছি। আবার 'না, মন লাগে না' গানে কিছুটা হলেও বিরহের অভিব্যক্তি আছে। অথচ 'রানার'এর কিছু অংশে সুরে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তবে 'গাঁয়ের বধু' গানের শেষ অংশে 'আজও যদি তুমি কোনো গাঁয়ে দেখো ভাঙ্গা কুটিরের সারি, জেনো সেইখানে সে গাঁয়ের বধুর আশা-স্বপনের সমাধি।' হেমন্ত বেশ মন-উদাস-করা ভাব এনেই অংশটি গেয়েছেন। জানিনা সলিলের অনুপস্থিতিতে গানটির রেকর্ডিং হয়েছিল বলে কিনা!
ভাস্কর বললেন, “এটা নিয়ে অনেকই বিতর্ক শুনেছি। "আজ নয় গুনগুন" এ যেহেতু আহ্বান টি প্রেমিকার তাই তার মধ্যে আর্তিটাই বেশী প্রাধান্য পেয়েছে। পরের অংশটি শুনলে বোঝা যায় - "তুমি হও একজন তাদেরই কাঁধে আজ তার ভার তুলে নাও, তুলে নাও!!” “
“এই গানটা কে বলা যেতে পারে দুটি ভাবের সংমিশ্রণ। মোহিনী চৌধুরীর একটি খুব বিখ্যাত গান ছিল - পুরুষকন্ঠে - "পৃথিবী আমারে চায়, রেখোনা বেঁধে আমায়, খুলে দাও প্রিয়, খুলে দাও বাহুডোর" - এখানে যেন নারী পুরুষটিকে উলটো ভাবে অনুপ্রাণিত করছে। এর সঙ্গে "প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, " বা "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়" এই দুটি ভাবকে ও রাখা হয়েছে বলে মনে হয়।“
হালকাভাবেই বলি, প্রেমের বন্ধন অনেক সময় পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে যদি প্রেমিক বলে- 'রোগের মতন বাঁধিব তোমায় দারুন আলিঙ্গনে'। তখন সেই যন্ত্রণার থেকে ছাড়া পেতে হয়ত প্রেমিকাকেও বলতে হয়- 'ওগো প্রিয় মোর, খোল বাহুডোর, পৃথিবী তোমাকে যে চায়'। কি জানি এটাও সেই কেস কিনা!
ঠাট্টা নয়, জনশ্রুতি আছে গোস্বামী তুলসীদাস এইরকম ভালবাসতেন স্ত্রীকে। স্ত্রী যেটা করলে লোকে পতিব্রতা বলে প্রশংসা করে, স্বামীদের ক্ষেত্রে একই অবস্থায় জোটে স্ত্রৈণ বলে লাঞ্ছনা। একদিন এমন অবস্থা দাঁড়াল যে স্ত্রী একবেলার জন্যে পিত্রালয় গেছেন, তুলসীদাস থাকতে না পেরে সেই রাত্রেই ছুটে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি। লজ্জিতা, অপদস্থা তুলসী-পত্নী তখন ভর্ত্সনা করে তাঁর পতিকে যা বলেছিলেন, তুলসীদাসের লেখা থেকেই বলছি-
"লাজ না লাগত আপকো, দৌড়ে আয়হু সাথ
ধিক, ধিক, এইসে প্রেম কো, ক্যা কহুঁ ম্যয় নাথ।
অস্থি-চর্মময় দেহ মম, তামেই এয়্সী প্রীতি,
এইসা যো শ্রীরাম মে হো, ন হোতী তো ভবভীতি।"
ঘুরে গেল তুলসীর জীবনের মোড়। সংসার ছেড়ে গঙ্গাতীরে বসে তিনি রামচরিত নিয়ে পড়লেন, বাকিটা ইতিহাস।
"সলিল চৌধুরীকে চিনতে গেলে প্রচলিত সুরের ধারণাকে সরিয়ে দিতে হবে"- সাহিত্য-সেবী শ্যামা প্রসাদ সরকার মনে করালেন। "উনি একজন প্রকৃত সুরসাধক। তাই অক্লেশে নিজেই ব্যাকরণ বানিয়ে নেন আর সেটাই নিও ক্ল্যাসিকাল হয়ে যায়। গণসঙ্গীতকেও উনি মেলাতে পারেন প্রেমের সুরে!"
শেষে তাহলে একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। গণসঙ্গীত, সলিল চৌধুরি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র ও দেবব্রত বিশ্বাস।
ইতিমধ্যে একজন বন্ধু দেবব্রতের কণ্ঠে সলিল-সংগীত “যদি কিছু আমারে শুধাও” গানটির লিঙ্ক পাঠিয়েছিলেন, সেটা শোনার পর থেকে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম, সম্পূর্ণ এক অন্য জগতে পৌঁছে গেছিলাম যেন।
IPTA র সময় থেকে দেবব্রত বিশ্বাস আর সলিল চৌধুরী একসাথে কাজ করেছেন, সলিলের প্রযোজনায় প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে, তাছাড়াও অনেক গান দেবব্রত নিজের খেয়ালেই গেয়ে গেছেন, বিশেষ কোনো যন্ত্রানুসঙ্গ ছাড়াই। সলিলের দু'একটা গণনাট্যের গান যেগুলো হেমন্তের গলায় শুনে এতকাল মুগ্ধ হয়েছি আমরা, পরে শুনেছি দেবব্রতর গলায়। হেমন্তের সঙ্গে তুলনায় যাচ্ছি না, ঈশ্বরীয় কণ্ঠস্বর তাঁর, কিন্তু 'পথে এবার নামো সাথী' বলতে কী বোঝায়, তা দেবব্রতের গলায় সঠিক প্রতিফলিত হয়েছে।
"সবচেয়ে বেশি মনে হয়ে "অবাক পৃথিবী" গানে "এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম" এর উচ্চারণে"- ভাস্কর মনে করিয়ে দিলেন। "পদাঘাত, অবাক, সেলাম! কী অমোঘ, তীব্র উচ্চারণ দেবব্রতর গলাতে।"
এখন ভাবি, গাঁয়ের বধু, পাল্কীর গান, রানার এগুলোর মধ্যে বেশ খানিকটা রোমান্টিসিজম আছে যার জন্যে হেমন্ত বা শ্যামলের বিকল্প নেই, কিন্তু গণসংগীতগুলোর জন্যে বা সুকান্তের 'ঠিকানা', 'অবাক পৃথিবী' এসবের দেবব্রতের রেকর্ড রাখা উচিত ছিল।
এখন ভাবি, গাঁয়ের বধু, পাল্কী র গান, রানার এগুলোর মধ্যে বেশ খানিকটা রোমান্টিসিজম আছে যার জন্যে হেমন্ত বা শ্যামলের বিকল্প নেই, কিন্তু গণসংগীতগুলোর জন্যে বা সুকান্তের 'ঠিকানা', 'অবাক পৃথিবী' এসবের দেবব্রতের রেকর্ড রাখা উচিত ছিল।
ভাস্কর বললেন, ”আমাদের সলিল চৌধুরির ফোরামে এই দুটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। আমার মত অনেকের মনে হয়েছিল, এই গানটি শ্যামলের গলাতেই বেশী খুলেছিল কারণ তাঁর কণ্ঠস্বরের তারুণ্যের ঝংকার, অন্তরা পর্যন্ত পারকাসন যন্ত্রের বর্জন, সুর আর ভাবের আশ্চর্য অভিনবত্ব- সব মিলিয়ে গানটিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। অনেকটা- "যাক যা গেছে তা যাক" বা " ঐ আঁকা বাঁকা পথ" যেরকম প্রেমের গান, এটিও সেইরকম একটি নিপাট প্রেমের গান। হয়ত ঠিক দেবব্রতর উপযোগী নয়। শুরুতেই "যদি কিছু আমারে শুধাও" এর মধ্যেই শ্যামলের গলায় একটি অদ্ভুত অনুরণন আছে! "তাসের দেশ" এ রাজপুত্রের গান শ্যামল কে দিয়ে গাওয়ানো হওয়ার ওইটিই মুখ্য কারণ। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেছিল - দেবব্রতর কন্ঠস্বর, বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও গাম্ভীর্য গানটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল।“
আমিও কথাটা সমর্থন করি। প্রেমের গান হিসেবে ধরলে এখানে কণ্ঠস্বরের তারুণ্য ও মাধুর্যের গুরুত্ব আছে, আর সেদিক থেকে শ্যামল নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবেন। তবু যেন দেবব্রত বিশ্বাসের গলার কী যাদু, কী মোহ আছে, এই অংশটা যখন উনি শুধুমাত্র একটা কী-বোর্ড সহযোগে গাইছেন-
“তেমনি আমার বাণী, সৌরভে কানাকানি…” যেন তাঁর প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠের থেকে একঝলক সুগন্ধী হাওয়া ছুটে আসে।
সলিলকে নিয়ে আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই, অপরিসীম প্রতিভা নিয়েও শুধুমাত্র আলস্যের কারণে তাঁর সৃষ্টি যতদূর যেতে পারত হয়ত আমরা তা পাইনি- এই অনুযোগ শুধু আমার নয়, সলিল-শিষ্য কবি গুলজারের। তাই এই আলোচনারও শেষ নেই, মৃত্যুর এতদিন পরেও সলিলের প্রতিভার নিত্য নতুন দিক উন্মোচিত হয়ে চলেছে, হতে থাকবে।
(আপাততঃ এইটুকু)
No comments:
Post a Comment