Thursday, August 10, 2017

বাংলা অণুগল্প- শিশুতীর্থ।

শিশুতীর্থ।।
((অণুগল্প)
'আবার সেই পাগলিটা এসেছে স্যার', গগৈ চিৎকার করে, 'ভাত চাইছে'।
'বেশ্যা মাগী!' ঘেন্নার সাথে নাক কুঁচকোন ফীল্ড ইনচার্য অনুপ কর্মকার। 'যা ভাগ, এখান থেকে।'
পাগলি নড়ে না। হয়ত নড়তে পারে না।
'যাবে কি করে', ডেটোনেটার-ম্যান মুন্সী বলে, 'ওর ত এখন দুটো খাবার লোক', বলে পাগলির পেটের দিকে ইশারা করে একটা অশ্লীল ইঙ্গিত করে সে।
'কোন হারামির কাজ এটা?' এবার সত্যিই রেগে ওঠে্ন অনুপ। যদিও তিনি জানেন যে পাগলিটার অসহায়তার সুযোগ নিয়েছে অনেকেই দু'মুঠো ভাত আর দু-এক বোতল হাঁড়িয়ার বিনিময়ে। কিন্তু এখন সে কথা কে আর স্বীকার করবে। রাগে ঘেন্নায় ক্যাম্প ছেড়ে জীপ নিয়ে ফিল্ড অফিসের দিকে বেরিয়ে পড়েন অনুপ।
আসামের কাছাড় অঞ্চলের সোনাই নদীর তীরের জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম অঞ্চলে তাঁবু পেতেছে সরকারি সিস্মিক সার্ভের দলটি। দীর্ঘকাল ধরে স্ত্রী-সংসর্গ বহির্ভূত লোকগুলি মাঝে মাঝে একটু উচ্ছৃংখল হয়ে পড়ে, সমর্থন না করলেও কিছু করার থাকে না অনুপের। তবে এবার একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে ওরা। একটা মানসিক সন্তুলনহীন মেয়েকে, তায় আবার জাত-পাঁতের ঠিক নেই, ছি ছি।
মাসদুই পরে কিন্তু অবস্থা সঙ্গীনের দিকে মোড় নিল। 'স্যার পাগলিটা মরতে বসেছে'- ক্যাম্প-বস গগৈ খবর দিল। 'গ্রামে ধাই আছে কেউ? চলতো আমার সাথে', জীপে গগৈকে বসিয়ে রওনা দিলেন অনুপ।

*    *     *     *
'বাবা, একটা পাগলি এসেছে বাইরের রাস্তায়। হি হি, কেমন নাচছে ধেই ধেই করে।' ছেলে তীর্থ বাইরে থেকে এসে বলে। ভারি আমোদ তার।
'তীর্থ!' ধমকে ওঠে অনুপ। নিষ্পাপ শিশু, কাকে কি বলতে হয় জানেনা। তাঁর মনে পড়ে যায় দশ বছর আগেকার আর এক মৃত্যুপথযাত্রী পাগলির আকুল মিনতি, 'ছাহেব, আমার পোলাডারে দ্যাহেন'।তখন তার কথায় পাগলামির আর কোনও লক্ষণ নেই। নরকের জীব বলে ঘৃণা করলেও অসহায় মেয়েটির কথা ফেলতে পারেননা তিনি!

বিয়ে আর করা হয়ে ওঠেনি। বিশ্বের বিষ কণ্ঠে নিয়ে নীলকণ্ঠ হয়েছেন অনুপ কর্মকার, শিশুতীর্থে অবগাহন করে তবু তিনি তৃপ্ত

Pallab Kumar Chatterjee
8th October, 2017

No comments:

Post a Comment