Sunday, September 8, 2019

বাংলা গল্প- উৎকোচ-রহস্য।

উৎকোচ-রহস্য।।
(গল্প)
না, এটা কোনও গল্প নয়। একেবারে সত্যি ঘটনা, শুধু নামধামগুলো বদলে ফেলেছি। তখনো সাইবার যুগ আসেনি। ফলে ই-মেল, ইন্টারনেট, মোবাইল, ডাটাব্যাঙ্ক, ক্রেডিট কার্ড কিছুই ছিলনা। সব কাজের যোগাযোগ ছিল ডাক মারফৎ, আর লেনাদেন নগদে।
এরকম এক সময়ে আমার বদলি হয়েছে মুম্বাই থেকে আসামের শিলচরে। কিন্তু আমার স্কুটারের নো অবজেকশন একমাসের জায়গায় ছ'মাসেও এল না দেখে আমি পড়লাম মুস্কিলে। আইন অনুসারে তিনমাসের মধ্যে কনফার্মেশন না এলে ধরে নিতে হয় যে কাগজপত্র ঠিক আছে, আর-সি বই ট্রান্সফারে কোনও বাধা থাকে না। কিন্তু আইন থাকে আইনের জায়গায়। আমাদের দেশে বে-আইনি কাজকে আইনসম্মত করা সহজ, যত ঝামেলা আইন মেনে কাজ করতে গেলে। তবু আর-টি-ও অফিসে গিয়ে আবেদন জমা দিলাম। তিন-চার দিন পরে ডাক এল। মোটর ভেহিকেলের ইন্সপেক্টার সাহেব বললেন, চিঠি তো আসে নি, কি করে বুঝব আপনার কেসটা জেনুইন?
- স্যার, তিন মাসের মধ্যে না এলে তাই ত ধরে নিতে হবে।
- দেখুন, আইন শেখাবেন না। আমাদের কাছে এ রকম কোনও সার্কুলার নেই।
আমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওনার সহকারীর আমার উপর একটু দয়া হল। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, দেখুন, কিছু মনে করবেন না, স্যারের আজ মেজাজটা ভাল নেই, সকাল সকাল চন্দনের ক্যান্টিনের চা না পেলেই এই অবস্থা হয়। আপনি প্লীজ চন্দনকে বলে এক কাপ স্পেশাল চা পাঠিয়ে দিন না ওনার জন্যে। আর হ্যাঁ, পয়সাটাও দিয়ে দেবেন। যাক্‌, এত সহজে কাজ উদ্ধার হয়ে যাবে ভেবে আমি আর কথা না বাড়িয়ে পেছন ফিরলাম।
- ও হ্যাঁ, ভদ্রলোক আবার ডাকলেন, দু' চামচ চিনি দিতে বলবেন চায়ে।
আর-টি-ও অফিসে ঢোকার মুখেই ডানদিকে চন্দন থাপার চায়ের দোকান। প্রচুর ভিড়। আমি গিয়ে বললাম, ভাই দত্তচৌধুরী সায়েবের জন্যে এককাপ স্পেশ্যাল চা পাঠিয়ে দেবেন, আর্জেন্ট।
- চিনি ক চামচ? চন্দন শুধোল।
-অ্যাঁ? ও হ্যাঁ, দু চামচ।
- নিন, দু'শো টাকা বার করুন। চা পাঠিয়ে চন্দনের তলব।
- সে কি! এক কাপ চায়ের দাম দু'শ? লেখা আছে যে স্পেশ্যাল চা পাঁচ টাকা?
- কেন, দু-চামচ চিনি বললেন যে! স্যার, যে পুজোর যা মন্তর। আপনি-আমি কি করতে পারি বলুন। চিন্তা করবেন না, টাকাটা পে করে দিন- বিকেল চারটেয় এসে দেবনাথ বাবুর কাছ থেকে আপনার আর-সি বুকটা নিয়ে যাবেন। দেবনাথকে চেনেন তো? দত্তচৌধুরী সায়েবের অ্যাসিস্ট্যান্ট.........
আমাকে থ' হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাটা আর শেষ করে না চন্দন থাপা।

No comments:

Post a Comment