আংটি
(অণু-গল্প)
'দেখ, এখন আর আমাদের মধ্যে অতীত নিয়ে কোন আলোচনা না হওয়াই ভাল। তোমার যদি অতীত থাকে, আমারও আছে। এস আমরা কথা দিই কেউ কাউকে পুরনো কথা জিগ্যেস করব না।' একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল জিতেন।
ধীরা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একটু নিশ্চিন্তও যেন। যাক কী হবে আর পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে। বিয়েটা ভালয় ভালয় মিটে গেছে, কেউ বাগড়া দেয়নি। আজ ফুলশয্যায় একটু চাপ আছে, দেখা যাক, কী হয়। এমন সময় ডানহাতের অনামিকায় কিসের একটা চাপ অনুভব করল ধীরা। একটা আংটি, জিতেন পরিয়ে দিল, বলল, বাঃ, পারফেক্ট ফিট করে গেছে তো। সাইজ জানতাম না, খুব চিন্তা ছিল!
কিন্তু এবার ধীরার কী হল? সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে আংটিটার দিকে। ভোলার কথা নয়, তবু আরেকবার মনে পড়ে গেল দু'বছর আগের সেই বিভীষিকার রাত্রি। ইউনিভার্সিটির ক্লাসের পর বন্ধুদের একটা গেট টুগেদার ছিল কফি হাউসে। শেয়ালদা ফিরতে রাত্রি সাড়ে ন'টা। ধীরাকে বনগাঁ লোকালে গুমা ফিরতে হবে। ভীড় ছিল বলে লেডিস কামরায় উঠেছিল। হঠাৎ দেখে বারাসতে কামরাটা খালি হয়ে গেল, রইল শুধু ও আর দু'জন বোরকা পরা মহিলা। সেই সময় কেউ যেন কামরার আলো নিভিয়ে দিল। সিঙ্গল লাইনে ট্রেন চলছে ঢিমে গতিতে। ভয়ে আতঙ্কে ধীরা দেখল ওদের মুখ থেকে বোরকা সরে গেছে আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে দুটো পুরুষের মুখ। কিছু বোঝার আগেই গাড়ির সীটের উপর শুইয়ে দিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল নরপশু দু'টো। জ্ঞান হারাবার আগে ধীরা বুঝতে পারল ওর আঙুল থেকে একজন আংটিটা টেনে খুলে নিল, এই সেই আংটি।
এই সেই আংটি! এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা মাথায় ঢুকতেই আতঙ্কে একটা চিৎকার করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ধীরা। তারপর দরজা খুলেই দিগ্বিদিক ভুলে দৌড়। পেছন পেছন ছুটে আসছে জিতেন। বড় রাস্তায় আসতেই সামনে একটা ভ্যান সজোরে ব্রেক কষল। পড়েই জ্ঞান হারাল ধীরা। না, ধাক্কা লাগেনি। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে এসে ঘরে শুইয়ে দিল জিতেন। কিছুক্ষণ পরেই ওর জ্ঞান ফিরল।
'কী ব্যাপার বল তো? মাথায় ছিট আছে নাকি, ছুটলে কেন খামখা? যদি কিছু একটা হয়ে যেত!'
'তার আগে বল এ আংটি তুমি কোথায় পেলে? জানো, এ আংটি আমার ভীষণ চেনা?'
'কেন, গয়নার দোকানে। রসিদ দিয়েছে, তবে কাঁচা রসিদ- অন্যের বিক্রি করা জিনিষ, সেটা অবশ্য ওরা জানিয়ে দিয়ে ছিল।'
'আগে বলনি কেন?'
'তুমি তো জিগ্যেস করনি!'
আবার চোখ বন্ধ করল ধীরা। তবে এবার পরম নিশ্চিন্তের নিদ্রা। ধীরে ধীরে ওর মাথাটা নিজের বুক থেকে বালিশে নামিয়ে দিল জিতেন।
(অণু-গল্প)
'দেখ, এখন আর আমাদের মধ্যে অতীত নিয়ে কোন আলোচনা না হওয়াই ভাল। তোমার যদি অতীত থাকে, আমারও আছে। এস আমরা কথা দিই কেউ কাউকে পুরনো কথা জিগ্যেস করব না।' একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল জিতেন।
ধীরা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একটু নিশ্চিন্তও যেন। যাক কী হবে আর পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে। বিয়েটা ভালয় ভালয় মিটে গেছে, কেউ বাগড়া দেয়নি। আজ ফুলশয্যায় একটু চাপ আছে, দেখা যাক, কী হয়। এমন সময় ডানহাতের অনামিকায় কিসের একটা চাপ অনুভব করল ধীরা। একটা আংটি, জিতেন পরিয়ে দিল, বলল, বাঃ, পারফেক্ট ফিট করে গেছে তো। সাইজ জানতাম না, খুব চিন্তা ছিল!
কিন্তু এবার ধীরার কী হল? সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে আংটিটার দিকে। ভোলার কথা নয়, তবু আরেকবার মনে পড়ে গেল দু'বছর আগের সেই বিভীষিকার রাত্রি। ইউনিভার্সিটির ক্লাসের পর বন্ধুদের একটা গেট টুগেদার ছিল কফি হাউসে। শেয়ালদা ফিরতে রাত্রি সাড়ে ন'টা। ধীরাকে বনগাঁ লোকালে গুমা ফিরতে হবে। ভীড় ছিল বলে লেডিস কামরায় উঠেছিল। হঠাৎ দেখে বারাসতে কামরাটা খালি হয়ে গেল, রইল শুধু ও আর দু'জন বোরকা পরা মহিলা। সেই সময় কেউ যেন কামরার আলো নিভিয়ে দিল। সিঙ্গল লাইনে ট্রেন চলছে ঢিমে গতিতে। ভয়ে আতঙ্কে ধীরা দেখল ওদের মুখ থেকে বোরকা সরে গেছে আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে দুটো পুরুষের মুখ। কিছু বোঝার আগেই গাড়ির সীটের উপর শুইয়ে দিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল নরপশু দু'টো। জ্ঞান হারাবার আগে ধীরা বুঝতে পারল ওর আঙুল থেকে একজন আংটিটা টেনে খুলে নিল, এই সেই আংটি।
এই সেই আংটি! এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা মাথায় ঢুকতেই আতঙ্কে একটা চিৎকার করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ধীরা। তারপর দরজা খুলেই দিগ্বিদিক ভুলে দৌড়। পেছন পেছন ছুটে আসছে জিতেন। বড় রাস্তায় আসতেই সামনে একটা ভ্যান সজোরে ব্রেক কষল। পড়েই জ্ঞান হারাল ধীরা। না, ধাক্কা লাগেনি। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে এসে ঘরে শুইয়ে দিল জিতেন। কিছুক্ষণ পরেই ওর জ্ঞান ফিরল।
'কী ব্যাপার বল তো? মাথায় ছিট আছে নাকি, ছুটলে কেন খামখা? যদি কিছু একটা হয়ে যেত!'
'তার আগে বল এ আংটি তুমি কোথায় পেলে? জানো, এ আংটি আমার ভীষণ চেনা?'
'কেন, গয়নার দোকানে। রসিদ দিয়েছে, তবে কাঁচা রসিদ- অন্যের বিক্রি করা জিনিষ, সেটা অবশ্য ওরা জানিয়ে দিয়ে ছিল।'
'আগে বলনি কেন?'
'তুমি তো জিগ্যেস করনি!'
আবার চোখ বন্ধ করল ধীরা। তবে এবার পরম নিশ্চিন্তের নিদ্রা। ধীরে ধীরে ওর মাথাটা নিজের বুক থেকে বালিশে নামিয়ে দিল জিতেন।
No comments:
Post a Comment