অফিসের গল্প (৮)
দাদা।
অফিসের গল্প (৮)
দাদা।
অফিসের গল্প- ৯
ব্যাঙের ছাতা
উকিল ও গামছা।
"নন্দিনী ও বিশুপাগলা"
वह आता-
दो टूक कलेजे के करता
पछताता पथ पर आता।
पेट-पीठ दोनों मिलकर हैं एक,
चल रहा लकुटिया टेक,
मुट्ठीभर दाने को, भूख मिटाने को,
मुँह फटी पुरानी झोली को फैलाता
दो टूक कलेजे के करता
पछताता पथ पर आता।
भूख से सूख होंठ जब जाते,
दाता-भाग्यविधाता से क्या पाते
घूँट-आँसुओं के पीकर रह जाते हैं,
चाट रहे जूठी पत्तल वे
कभी सङक पर खड़े हुए,
और झपट लेने को उनसे कुत्ते भी हैं अड़े हुए।
ठहरो, अहो है मेरे हृदय में,
अमृत में सींच दूँगा
अभिमन्यु जैसे को सकोगे तुम
तुम्हारे दुख मैं अपने हृदय में खींच लूँगा।
সে আসে।
অসহ দুঃখে-তাপে হৃদয় বিদীর্ণ করে
পথ ধরে আসে।
পেটে-পিঠে হয়েছে সমান
ক্ষুধার জ্বালায় ম্রিয়মান।
ভর দিয়ে চলে লাঠি পরে
একমুঠি ভিক্ষা তরে
শতছিন্ন ঝুলিখানা অগ্রে মেলে ধরে
অসহ দুঃখে-তাপে হৃদয় বিদীর্ণ করে
পথ ধরে আসে।
সঙ্গে চলে দুটি শিশু সদা হাত মেলে
বাম হাত বুলায় জঠরে
দক্ষিণ বাড়িয়ে ধরে দয়াদৃষ্টি তরে।
খিদেয় শুকনো ঠোঁটে
অন্নদাতা বিধাতার দ্বারে কী বা জোটে?
খিদে-তেষ্টা সব কি গো মেটে আঁখিজলে!
আস্তাকুঁড়ে উচ্ছিষ্ট ঘাঁটে
কুড়িয়ে পাতা সে চাটে
সেখানে কুকুর সাথে কাড়াকাড়ি চলে!
দাঁড়াও, অমৃত-সিঞ্চিত করি
আমার হৃদয়াধার হতে
একা অভিমন্যু সম হৃদয় নিঙাড়ি
তোমার সকল ক্লেশ বক্ষমাঝে শুষে নিতে পারি।
প্রেতচক্র রহস্য।।
'প্ল্যাঞ্চেট নয়, ওর উচ্চারণ হবে 'প্লাঁশেৎ' - ইতু বলল। ও টেনিদার গল্পের খুব ভক্ত, নির্ঘাৎ আঁতেল ক্যাবলার রোল প্লে করছে এখন।
'আচ্ছা, মেনে নিলাম। গল্পটা শুনতে দিবি এখন?' ঋতুদি স্পষ্টই বিরক্ত ছোট বোনের পাকামোতে।
এসেছি কলেজের বন্ধু দেবুর বিয়েতে ওদের বাড়ি রাঁচিতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে ওর ছোড়দি ঋতুদি, ছোট বোন ইতু আর তাদের বন্ধুরা মিলে বাসর জাগতে এসেছে, আমরাও কয়েকজন বন্ধু আছি। দেবুর ছন্দাদি মস্ত গায়িকা, ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিটা ফাংশনে ওঁর গান ধরাবাঁধা। তাই আসর জমতে দেরি হল না। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে আর এদিকে গান হচ্ছে "...... এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরে পড়ে, তপনহীন ঘন তমসায়"। বর্ষার দেবীর আর কাঁহাতক সহ্য হয়! ঝপ করে পাওয়ার কাট। এমার্জেন্সি ল্যাম্পে ভাল চার্জ নেই, টিমটিম করে জ্বলছে। এর মাঝে আর গান হয়? ভাগ্যিস গরম নেই। তাছাড়া রাঁচি শহরটা পাহাড়ি বলে এমনিতেই গরম কম। তার মধ্যে জ্যোতি আবার 'দীপ নিবে গেছে মম' ধরতেই সবাই বকাবকি করে ওকে থামিয়ে দিল।
তাহলে কী করা যায় এখন? 'সখী আঁধারে একেলা ঘরে মন মানে না'- ইতু এক কলি সুর করে গেয়েই কথা বদলে পরের লাইন গাইল, 'ভূতের গল্প ছাড়া আর কিছুই জমে না'। অগত্যা টিমটিমে আলোছায়ার দুলুনির মাঝে আমি শুরু করলাম রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে আমাদের প্রেত-চর্চার গল্প। তারই সূত্র ধরে এল প্ল্যাঞ্চেটের প্রসঙ্গ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি, যেখানে শুরু করেছিলাম তার পর থেকে।
'আমরা সবাই তখন সদ্য কিশোর, বিহারের বিভিন্ন গ্রাম-শহর থেকে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে এসেছি রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। হোস্টেলে থাকি। তখনকার ফার্স্ট ইয়ারের হোস্টেলগুলো ছিল ঘোড়ার আস্তাবলের তুল্য, থ্রি-সিটার রুম একেকটা। জানলা নেই, তবে ওপর কিছুটা খোলা আর লম্বা টানা জাফরি আর গ্রিল দেওয়া বারান্দা। আমাদের রুমগুলো ছিল দোতলায়, নীচের তলায় আদিবাসী ছাত্রদের হোস্টেল। বাথরুম ছিল নিচের তলায়, হোস্টেলের বাইরের দিকে। রাত্রে যেতে হলে বাজে অবস্থা। তার চেয়েও বাজে ছিল মিশনারি কলেজের হোস্টেলের ডিসিপ্লিন। রাত্রি সাড়ে দশটায় মেন সুইচ অফ করে দেওয়া হত, অর্থাৎ ঘুমোও এবার। আরে ঘুমোব কী! হোমটাস্ক আছে না? ক্লাস-টেস্ট আছে না? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফাদার সুরিন সেসব বুঝতেন না, এখন ঘুমোও, ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। ধুর, তাই হয় নাকি আবার! আমরা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়তাম। রাঁচিতে গরমটা কম বলে ফ্যানের জন্যে কষ্ট হত না।
'অ্যাই, তোদের মাঠে ঘুমনোর একটা ব্যাপার ছিল না?' রবি শুধোয়। ও আর দেবু ডে-স্কলার ছিল, হোস্টেলে থাকে নি।
'হ্যাঁ, পরীক্ষা কাছে থাকলে তাও করতাম। বেড-রোল, হ্যারিকেন আর বই-পত্র নিয়ে মাঠে সারি-সারি এসে শুয়ে পড়তাম। কিছুক্ষণ পড়া আর তারপর সেখানেই ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘুম। একদিন দেরি হয়ে গেছিল উঠতে। হোস্টেলের অ্যাটেন্ডেন্ট জেমসের ডাকে ঘুম ভাঙতেই দেখি রোদ উঠে গেছে, পুরো মাঠে আমি একা শুয়ে। কমার্সের স্টুডেন্টরা দলে দলে কলেজে আসতে শুরু করেছে, যাচ্ছেতাই অবস্থা একেবারে।
'তা যা বলছিলাম। একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি রুমমেট প্রিয়তোষের মশারি দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবলাম লণ্ঠনের থেকে আগুন লেগে গেছে হয়ত। তার ঠিক দু'দিন পরে মাঝরাতে বাথরুম গেছি। ফিরে এসে দেখি আমার সব ক'টা বই খাতা যত্ন করে বিছানায় সাজানো- টেবিলে একটাও নেই! বুঝেছি, ব্যাটা প্রিয় বা শিশিরের কাণ্ড, অথচ ওরা কিনা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরো দু'দিন পরে বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দেখি শিশিরের তোষক-বিছানা ধিকধিক করে জ্বলছে- বন্ধ ঘরে আগুন এল কোত্থেকে! পরদিন রবিবার ছিল। সকালে আমার স্টিলের ট্রাঙ্কে এক বাটি জল রেখেছিলাম, হঠাৎ আমার চোখের সামনে বাটিটা প্রায় ছ-ইঞ্চি লাফিয়ে নীচে পড়ে গেল, ঘর জলে জলময়। এবার মনে হল ভৌতিক কাণ্ডই বটে।
'কথাটা চাউর হতেই কল্যাণ, জহর, প্রদীপ, অশোক সবাই জড়ো হল। অশোক বলল ও নাকি প্ল্যাঞ্চেট করে ভূত নামাতে পারে। আমি বাবার কাছে প্ল্যাঞ্চেটের গল্প শুনেছিলাম আর শরদিন্দুর বরদার গল্পও পড়া ছিল, তবে ব্যাপারটায় কৌতূহল থাকলেও বিশ্বাস তেমন ছিল না, তবু আমরা প্রাণের দায়ে মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব। ঠিক হল পরদিন রাত্রি সাড়ে দশটায় আলো নিভলে অশোক ওর যন্ত্র পাতবে, আর হারুন রশিদ থাকবে রুমের বাইরে ফাদার সুরিন বা ডুংডুং এলে অ্যালার্ট করতে।
'কথামত পরদিন অশোক ওর স্পেশ্যাল টেবল আর প্ল্যাঞ্চেটের বোর্ড নিয়ে এল। ঘরের এককোণে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে বোর্ডে সাদা কাগজ পেতে একটা পেন্সিল দু-আঙুলে হাল্কা করে ধরলাম আমরা চারজনে- আমি, অশোক, কল্যাণ আর প্রিয়তোষ, শিশির আর প্রদীপ বসে আছে ঘরের এক কোণে, বাইরে হারুন। হঠাৎ একটা হাল্কা চন্দনের গন্ধ এল নাকে, সেই সঙ্গে দরজায় মৃদু করাঘাত। 'এসেছে'- অশোক ফিসফিস করে বলল। ও প্রশ্ন শুরু করল আর উত্তরে আমাদের আঙুলে ধরা পেন্সিল খসখস করে চলতে লাগল কাগজে।
'তুমি এসেছ?'- অশোক বলা মাত্র পেন্সিল নড়ে উঠল।
'কী নাম তোমার?'
'গোপাল।'- লেখা হল অস্পষ্ট অক্ষরে।
'কী চাও?'
'তোমাদের সবার মৃত্যু!'
'কেন? কী ক্ষতি করেছি আমরা তোমার?'
' আমার শান্তি নষ্ট করেছ। এই রুমে কেউ থাকবে না তোমরা।'
'কেউ না?'
'শুধু অশোক থাকতে পারে।'
'কেন?'
'ও খুব ভাল ছেলে। ভূত বিশ্বাস করে।'
'এটুকু লেখা হতেই কল্যাণের মাথা গরম হয়ে উঠল। 'ব্যাটা ভূত! অশোক একলা ভাল ছেলে! আর আমরা সব খারাপ? এ সব অশোকের আঙুলের কারসাজি। কিরে, বলবি!'- বলেই ও অন্ধকারে অশোকের কলার চেপে ধরল। এই সুযোগে ভূত পালাল আর শিশির হ্যারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিল। সবাই চেপে ধরায় অশোক স্বীকার করল যে সে কিছুটা মজা করেছে ঠিকই, তবে ওর উপরেও মনে হয় আরো কেউ কারসাজি করছিল, সেটা কে সে নিজেও জানে না।
'আমরা বাইরে এলাম। দেখি হারুন বারান্দার এককোণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নাড়া দিতেই উঠে বলে- 'এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' কে জানে সেও ব্যাটা ঢপ দিচ্ছে কিনা!
'পরদিন ফাদার সুরিন ডাকলেন ওঁর রুমে। বলেন 'কাল তোমাদের রুমে অনেক রাত অব্ধি আলো জ্বলেছে, এনিথিং রং?'
'না ফাদার, একটা হোমটাস্ক বাকি ছিল, তাই চারজনে মিলে সল্ভ করছিলাম।'
'ইটস অলরাইট। তবে কি জানো? এই হোস্টেলের একটা রুমে অনেক বছর আগে একটা ছেলে ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে সুইসাইড করেছিল। তাই রাত্রে একটু সাবধানে থাকবে।'
'আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনমতে ঢোঁক গিলে বললাম, 'ফাদার, ছেলেটার নাম কী ছিল?'
'হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো দ্যাট? আই থিঙ্ক, গোপাল। হ্যাঁ, গোপাল মহাপাত্র। দ্যাট কিউট ওড়িয়া বয়!' '
হঠাৎ দপ করে আলো জ্বলে উঠল। 'শেষে তুইও গুল দিচ্ছিস'- পেছন থেকে কার গলা পেলাম। দেখি দেবু। ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছে, কে জানে সব শুনছিল, কখন উঠে পড়েছে। 'আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের হোস্টেলে থাকিনি কখনও, কিন্তু রুমগুলো তো দেখেছি। ফ্যান কোথায় আছে রে যে গলায় দড়ি দেবে!'
'ওরে ব্যাটা! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর? এতগুলো মানুষ বাসরে বসে আছে, এই লোডশেডিং-এর মাঝে তাদের জাগিয়ে রেখে তোর বাসর জমিয়ে দিলাম, কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবি!'
'ছোড়দা, গুল হলেই বা ক্ষতি কী? গল্পটা কিন্তু হেব্বি জমেছিল।'- ইতু বলে।
ইতিমধ্যে দেবুর মাসতুতো দাদা বিক্রমদা কখন ঢুকেছে দেখিনি। ও সেই কলেজে আমাদের চার বছরের সিনিয়ার ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- 'গোপালের গল্পটা মিথ্যে নয় রে। এই ঘটনার পরেই ঘাবড়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল সব কটা ফ্যান খুলে ফেলেন। আংটাগুলো আছে, দেখিসনি?'
'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?' ঋতুদি যেন অকূলপাথারে।
'ভূত জিনিষটা এত রহস্যময়, তার গল্পে একটু রহস্য থাকবে না? ধরে নাও এটা আরেকটা আনসল্ভড মিস্ট্রি'- আমি গল্প শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
অমৃত-সমান।।
এইয়ো, মুখ সামলে!
প্রেতচক্র রহস্য।।
'প্ল্যাঞ্চেট নয়, ওর উচ্চারণ হবে 'প্লাঁশেৎ' ' - ইতু বলল। ও টেনিদার গল্পের খুব ভক্ত, নির্ঘাৎ ক্যাবলার রোল প্লে করছে এখন।
'আচ্ছা, মানছি। গল্পটা শুনতে দিবি এখন?' ঋতুদি স্পষ্টই বিরক্ত ছোট বোনের পাকামোতে।
এসেছি কলেজের বন্ধু দেবুর বিয়ের বউভাতে ওদের বাড়ি রাঁচিতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে ওর ছোড়দি ঋতুদি, ছোট বোন ইতু আর তাদের বন্ধুরা প্ল্যান করছিল ফুলশয্যায় আড়ি পাতার। দেবুর এই ব্যাপারটা একেবারে অপছন্দ। তাই আমি আর আরেক পুরনো বন্ধু রবি মিলে দায়িত্ব নিয়েছি সবাইকে আটকাবার, অথচ বেশ কায়দা করে। কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই লোডশেডিং। জেনারেটার চললেও, সে তো এমার্জেন্সি সার্ভিস দিচ্ছে শুধু। এই টিমটিমে আলোয় আমি শুরু করলাম রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে আমাদের প্রেত-চর্চার গল্প। তারই সূত্র ধরে এল প্ল্যাঞ্চেটের প্রসঙ্গ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি, যেখানে শুরু করেছিলাম তার পর থেকে।
আমরা সবাই তখন সদ্য কিশোর, ইন্টারমিডিয়েট পড়তে এসেছি ধানবাদ থেকে রাঁচিতে। তখনকার ফার্স্ট ইয়ারের হোস্টেলগুলো ছিল ঘোড়ার আস্তাবলের তুল্য, থ্রি-বেডের রুম একেকটা। জানলা নেই, তবে ওপর কিছুটা খোলা আর লম্বা টানা জাফরি আর গ্রিল দেওয়া বারান্দা। আমাদের রুমগুলো ছিল দোতলায়, নীচের তলায় আদিবাসী ছাত্রদের হোস্টেল। বাথরুম ছিল নিচের তলায়, হোস্টেলের বাইরের দিকে। রাত্রে যেতে হলে বাজে অবস্থা। তার চেয়েও বাজে ছিল মিশনারি কলেজের হোস্টেলের ডিসিপ্লিন। রাত্রি সাড়ে দশটায় মেন সুইচ অফ করে দেওয়া হত, অর্থাৎ ঘুমোও এবার। আরে ঘুমোব কী! হোমটাস্ক আছে না? ক্লাস-টেস্ট আছে না? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফাদার সুরিন সেসব বুঝতেন না, এখন ঘুমোও, ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। ধুর, তাই হয় নাকি আবার! আমরা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়তাম। রাঁচিতে গরমটা কম বলে ফ্যানের জন্যে কষ্ট হত না।
একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি রুমমেট প্রিয়তোষের মশারি দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবলাম লণ্ঠনের থেকে আগুন লেগে গেছে হয়ত। তার ঠিক দু'দিন পরে মাঝরাতে বাথরুম গেছি। ফিরে এসে দেখি আমার সব ক'টা বই খাতা যত্ন করে বিছানায় সাজানো- টেবিলে একটাও নেই! বুঝেছি, ব্যাটা প্রিয় বা শিশিরের কাণ্ড, অথচ ওরা কিনা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরো দু'দিন পরে বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দেখি শিশিরের তোষক-বিছানা ধিকধিক করে জ্বলছে- বন্ধ ঘরে আগুন এল কোত্থেকে! পরদিন রবিবার ছিল। সকালে আমার স্টিলের ট্রাঙ্কে এক বাটি জল রেখেছিলাম, হঠাৎ আমার চোখের সামনে বাটিটা প্রায় ছ-ইঞ্চি লাফিয়ে নীচে পড়ে গেল, ঘর জলে জলময়। এবার মনে হল ভৌতিক কাণ্ডই বটে।
কথাটা চাউর হতেই কল্যাণ, জহর, প্রদীপ, অশোক সবাই জড়ো হল। অশোক বলল ও নাকি প্ল্যাঞ্চেট করে ভূত নামাতে পারে। আমি বাবার কাছে প্ল্যাঞ্চেটের গল্প শুনেছিলাম আর শরদিন্দুর বরদার গল্পও পড়া ছিল, তবে ব্যাপারটায় কৌতূহল থাকলেও বিশ্বাস তেমন ছিল না, তবু আমরা প্রাণের দায়ে মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব। ঠিক হল পরদিন রাত্রি সাড়ে দশটায় আলো নিভলে অশোক ওর যন্ত্র পাতবে, আর হারুন রশিদ থাকবে রুমের বাইরে ফাদার সুরিন বা ডুংডুং এলে অ্যালার্ট করতে।
কথামত পরদিন অশোক ওর স্পেশ্যাল টেবল আর প্ল্যাঞ্চেটের বোর্ড নিয়ে এল। ঘরের এককোণে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে বোর্ডে সাদা কাগজ পেতে একটা পেন্সিল দু-আঙুলে হাল্কা করে ধরলাম আমরা চারজনে- আমি, অশোক, কল্যাণ আর প্রিয়তোষ, শিশির আর প্রদীপ বসে আছে ঘরের এক কোণে, বাইরে হারুন। হঠাৎ একটা হাল্কা চন্দনের গন্ধ এল নাকে, সেই সঙ্গে দরজায় মৃদু করাঘাত। 'এসেছে'- অশোক ফিসফিস করে বলল। ও প্রশ্ন শুরু করল আর উত্তরে আমাদের আঙুলে ধরা পেন্সিল খসখস করে চলতে লাগল কাগজে।
'তুমি এসেছ?'- অশোক বলা মাত্র পেন্সিল নড়ে উঠল।
'কী নাম তোমার?'
'গোপাল।'- লেখা হল অস্পষ্ট অক্ষরে।
'কী চাও?'
'তুম সব কী মৌত!'
'কেন? কী ক্ষতি করেছি আমরা তোমার?'
'এই রুমে কেউ থাকবে না তোমরা।'
'কেউ না?'
'শুধু অশোক থাকবে।'
'কেন?'
'ও খুব ভাল ছেলে। ভূত বিশ্বাস করে।'
এটুকু লেখা হতেই কল্যাণের মাথা গরম হয়ে উঠল। 'ব্যাটা ভূত! অশোক একলা ভাল ছেলে! আর আমরা সব খারাপ? এ সব অশোকের আঙুলের কারসাজি। বল!'- বলেই অন্ধকারে অশোকের কলার চেপে ধরল। এই সুযোগে ভূত পালাল আর শিশির আলো বাড়িয়ে দিল। সবাই চেপে ধরায় অশোক স্বীকার করল যে সে কিছুটা মজা করেছে, তবে ওর উপরেও মনে হয় আরো কেউ কারসাজি করছিল, সেটা কে সেও জানে না।
আমরা বাইরে এলাম। দেখি হারুন বারান্দার এককোণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নাড়া দিতেই উঠে বলে- 'এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' কে জানে সেও ব্যাটা ঢপ দিচ্ছে কিনা!
পরদিন ফাদার সুরিন ডাকলেন ওঁর রুমে। বলেন 'কাল তোমাদের রুমে অনেক রাত অব্ধি আলো জ্বলেছে, এনিথিং রং?'
'না ফাদার, একটা হোমটাস্ক বাকি ছিল, তাই চারজনে মিলে সল্ভ করছিলাম।'
'ইটস অলরাইট। তবে কি জানো? এই হোস্টেলের একটা রুমে অনেক বছর আগে একটা ছেলে ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে সুইসাইড করেছিল। তাই রাত্রে একটু সাবধানে থাকবে।'
আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনমতে ঢোঁক গিলে বললাম, 'ফাদার, ছেলেটার নাম কী ছিল?'
'হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো দ্যাট? আই থিঙ্ক, গোপাল। হ্যাঁ, গোপাল মহাপাত্র। দ্যাট কিউট ওড়িয়া বয়!'
হঠাৎ দপ করে আলো জ্বলে উঠল। 'শেষে তুইও ঢপ দিচ্ছিস'- পেছন থেকে কার গলা পেলাম। দেখি দেবু। কখন উঠে এসেছে ফুলশয্যা থেকে। 'আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের হোস্টেলে থাকিনি কখনও, কিন্তু রুমগুলো তো দেখেছি। ফ্যান কোথায় আছে রে যে গলায় দড়ি দেবে!'
'শালা! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর? ফুলশয্যাটা বিনা আড়ি-পাতায় উদ্ধার করে দিলাম, কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবি!'
'দাদা, ঢপ হলেই বা ক্ষতি কী? গল্পটা কিন্তু হেব্বি জমেছিল।'- ইতু বলে।
ইতিমধ্যে দেবুর মাসতুতো দাদা বিক্রমদা কখন ঢুকেছে দেখিনি। ও সেই কলেজে আমাদের চার বছরের সিনিয়ার ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- 'গোপালের গল্পটা মিথ্যে নয়। এই ঘটনার পরেই ঘাবড়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল সব কটা ফ্যান খুলে ফেলেন। আংটাগুলো আছে, দেখিসনি?'
'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?' ঋতুদি যেন অকূলপাথারে।
'ভূত জিনিষটা এত রহস্যময়, তার গল্পে একটু রহস্য থাকবে না?' আমি গল্প শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।