Friday, July 23, 2021

অফিসের গল্প -৮ । দাদা।।

অফিসের গল্প (৮) 


দাদা।


'উঃ, লম্বা লাইন ছিল টেলারের কাউন্টারে'- সিনহাদা বন্ধ ভিজে ছাতাটা অফিসের কোনায় খুলে শুকোতে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন। 'হাজার টাকা তুলতে হাজারটা ঝামেলা' বলে আরেকবার নোটের বান্ডিলটা পকেট থেকে বের করে দেখে আবার ঢুকিয়ে রাখলেন। আমি একবার তাকিয়ে দেখে আবার হাতের ফাইলে মনোনিবেশ করলাম।
আশির দশকের গল্প। এটিএম কথাটা শোনা গেলেও বস্তুটি ভারতীয়রা তখনও চোখে দেখেনি। ব্যাঙ্ক কর্মচারিরা তখন যথেষ্ট চাপে থাকতেন আর মাঝে মাঝে রোয়াবও দেখাতেন বেশ। 'আরে!' হঠাৎ সিন্‌হাদা বলে উঠলেন, 'মনে হল একশ'র বান্ডিল ঢোকালাম পকেটে। কী সর্বনাশ!'
'কী হল, দাদা', আমি শুধোলাম।
'এই, তোমার ছাতা আছে? যাবে আমার সাথে একবার ব্যাঙ্কে? দেরি করলে আবার ট্রান্স্যাকশান আওয়ার বন্ধ হয়ে যাবে।'
'কেন, গোলমাল হয়েছে কিছু?'
'গোলমাল বলে গোলমাল! দশের বদলে একশ'র নোটের বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েছে মেয়েটা ভুল করে। বেচারা মারা পড়বে একেবারে।' অগত্যা ছাতা হাতে আমরা দুজন আবার ব্যাঙ্কের কাউন্টারে।
সিন্‌হাদা মাস দুই হল কলকাতা অফিস থেকে বদলি হয়ে এসেছেন বোম্বে অফিসে। মধ্যবয়সী মানুষ, ছেলেমেয়েরা কলকাতায় পড়াশুনা করে বলে আমাদের মেসবাড়ি আলো করে একাই থাকেন আর অবসর সময়ে ব্রিজ খেলেন আমাদের সাথে। হিন্দি এমনিতেই কম বোঝেন, মুম্বাইয়া হিন্দি তো আরো ভয়ংকর।
মেয়েটা প্রথমে কিছুই বোঝেনি ব্যাপারটা। সে তো শোনেই না কিছু- 'আপনি আগে নোট গুণে নেননি কেন, এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ হ্যাঁ, যান ম্যানেজারের কাছে, কোই পরোয়া নেহি!'
'আরে হাম বোলতা কম, তোম শুনতা বেশি।' দমদম-মার্কা অননুকরণীয় হিন্দিতে সিন্‌হাদা বোঝাতে গেলেন। 'তেমনি মাংতা কম, দেতা বেশি! এইঠো এক হাজার হ্যায় না দশ হাজার? তোমকো তিনমাসকা মাইনে কাটা জায়েগা ম্যানেজার কো বোলেগা তো!'
এইবার দাদার ওই ভাঙা হিন্দি বক্তব্য মরাঠি মেয়েটার মাথায় ঢুকল। না, ও কোন ধন্যবাদ দেয়নি পরিবর্তে। বরং কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এসে সিন্‌হাদার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিল।

kabitaashram@gmail.com, Amit Saha Editor www.kabitaashram.com

অফিসের গল্প- ৯ লাঠি।।

 অফিসের গল্প-

লাঠি।।

পিনাকীদার লেখা পড়ে বন্ধুরা খনিজ তেলের অনুসন্ধান নিয়ে হয়ত কিছু জেনেছেন ইতিমধ্যে, না জেনে থাকলেও আমার এ বিষয়ে মুখ খোলার তেমন অধিকার নেই। আমি মাটি খোঁড়ার মিস্ত্রি, ভূগর্ভশাস্ত্রবিদ পণ্ডিত মানুষেরা যে জায়গাটা দেখিয়ে দেন, সেখানে একটা পরিমাণ-মতো গর্ত খুঁড়ে তেল উৎপাদনের পথ তৈরি করে দিই মাত্র। এই খোঁড়াখুড়ি শুরু করার আগে ল্যান্ড একুইজিশন, সিভিল ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনীয়াররাও যথেষ্ট সাহায্য করেন আমাদের।
১৯৯৯ সালের একটা দিনে আমাদের কারাইকাল(পণ্ডিচেরি) অফিসের বাইরের দোকানে চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছি সিভিলের বন্ধু তন্ময় বাসুর সঙ্গে। এমন সময় একজন অন্ধ ভদ্রলোক লাঠিটা হাতড়ে আমাদের কাছে এসে প্রজেক্ট হেডের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। তামিল হলেও ইংরেজি বলেন ভালই, বললেন এক্সপ্লোরেশনের ব্যাপারে কথা বলতে চান। আমরা ভাবলাম, একটু মজা দেখা যাক, প্রোজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন না, ড্রিলিংএর হেড নাম্বুদ্রির কাছে নিয়ে এলাম ওঁকে।
সেখানে এসে ভদ্রলোক যা বললেন, শুনে তো আমাদের চোখ কপালে। ওঁর লাঠির সাহায্যে এক বিশেষ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার বলে উনি নাকি মাটির নীচে জলের উপস্থিতির কথা বলে দিতে পারেন। এই ক্ষমতা জানার পর থেকে এলাকার গ্রামবাসীরা মাটির নীচে জলের সন্ধানের জন্যে ওঁকে নিয়ে যান, বলতে গেলে এটাই ওঁর পেশা। এখন উনি এই ক্ষমতা খনিজ তেলের সম্বন্ধে খাটে কিনা তা একটু পরখ করে দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে তিনি কোন পারিশ্রমিক নেবেন না, শুধু সাহায্য চান। আমরা যেখানকার তথ্য জানি সেরকম কোন স্থানে যদি নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করার কোন সুযোগ দেওয়া হয়, খুব খুশি হতেন!
নাম্বুদ্রি সাহেব ঠিক বিশ্বাস করতে না পারলেও কৌতূহলী হলেন। আমি এধরণের কিছু আধিভৌতিক হাতুড়ে ওঝার কথা পড়েছিলাম জোনাথন ব্ল্যাকের 'অয়েল' উপন্যাসে, তবে এখানে তেমন কাউকে দেখতে পাব আশা করিনি। যাহোক মি: নাম্বুদ্রি ভদ্রলোককে নিরাশ করলেন না, হয়ত জিনিষটা সম্পর্কে তাঁর নিজেরও কিছুটা আগ্রহ ছিল। তাই তন্ময়কেই দায়িত্ব দিলেন গাড়িতে করে ওঁকে কোন তৈলকূপে নিয়ে যেতে। আমিও চললাম সঙ্গে।
'এই যে স্যার, কমলাপুরম এসে পড়েছি আমরা। নিন আপনার যন্তরটা বের করুন'- তন্ময় বলে। এখানে কদিন আগেই তেল পাওয়া গেছে, পরীক্ষার উপযুক্ত জায়গা। ভদ্রলোক ডাক শুনেই গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতড়ে এগিয়ে চললেন। এ কি! উনি তো দেখছি রিগের দিকে যাচ্ছেনই না, সাইটের গেটে না ঢুকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে এগিয়ে চলেছেন। আমি ইশারায় তন্ময়কে চুপ করতে বলে ওনাকে ফলো করতে লাগলাম। প্রায় আধ কিলোমিটার হেঁটে একটা পুকুরের ধারে এসে থামলেন ভদ্রলোক। 'সামনে জল আছে মনে হচ্ছে, আর এগোতে পারছি না। তবে আমার যন্ত্র যা দেখাচ্ছে, তাতে মনে হয় সামনেই কোথাও মাটির নীচে তেলের ভাণ্ডার আছে। পুকুরের তলায় থাকাও বিচিত্র নয়।'
'হয়েছে, ওঝাগিরি শেষ', তন্ময় হেসে বলল, 'চল অফিস ফিরি- এনার মুরোদ জানা গেল।' আমরা ফেরার পথ ধরলাম।
'ভদ্রলোক কিন্তু একশ ভাগ ঠিক বলেছেন, তন্ময়', আমি গাড়িতে চেপে বাংলায় বললাম। কমলাপুরমে টেস্টিং-এ হাইড্রোকার্বন পাওয়া গেছে বটে, কিন্তু রিজার্ভয়েরের ট্র্যাপটা আসলে জলের তলেই। জলের উপর রিগ বসবে না বলে আমরা ডেভিয়েটেড ড্রিলিং করেছি।'
নাম্বুদ্রি সাহেব সব কথা শুনে ভদ্রলোককে চা আর ইডলি খাইয়ে বিদায় দিলেন। একটা বিজনেস কার্ড ধরিয়ে দিয়ে উনি বিদায় নিলেন। লোকটা চলে যেতেই নাম্বুদ্রি কার্ডখানা ছিঁড়ে ওয়েস্ট বিনে ফেলে দিলেন। 'কি করলেন, স্যার', তন্ময় হাঁ হাঁ করে উঠল, 'এরকম একটা প্রতিভা!'
'আমাদের এই কোম্পানীতে অন্তত: হাজারখানেক এক্সপ্লোরেশন জিওলজিস্ট আর জিওফিজিসিস্ট আছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই মোটা মোটা বই পড়ে, অনেক খেটে-খুটে ডিগ্রী নিয়েছেন, তারপরেও ফীল্ডে পরিশ্রম করেছেন। তাদের সবাইকে কি তাহলে একটা করে লাঠি ধরিয়ে দেব বলতে চাও?' মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিলেন উনি।
আমরা দুজনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

Friday, June 18, 2021

ব্যাঙের ছাতা- ছড়া

 ব্যাঙের ছাতা


কহিল হবু, শোনগো গবু রায়
ব্যাঙেরা কাল ডেকেছে সারা রাত্র,
বুঝিবা তারা ভিজেছে খালি গায়
কালকে তুমি কিনিয়া দেহ ছত্র।
আমরা সবে আরামে ঘরে থাকি
প্রাণীর প্রতি নাহি মোদের দৃষ্টি,
রাত্রি-ভোর ব্যাঙেরা চলে ডাকি
মুষলধারে পড়িছে যবে বৃষ্টি।
রাজ্যে সবে বলিবে মোরে যা-তা,
শীঘ্র তুমি কিনিয়া দাও ছাতা।

মন্ত্রী ভাবে, এই না হলে রাজা?
ভেকের তরে কত না তাঁর চিন্তা
ঘর ডুবেছে, কাঁদছে কত প্রজা
দেখেন কভু? ভাবেন কোন দিন তা
পৌষে যবে ফসল আসে ঘরে
প্রজারা সুখে করিছে গান-বাজনা,
তহুশিলদার পৌঁছে যায় দ্বারে
ঠ্যাঙায়ে তারা আদায় করে খাজনা।
সেসব কথা মাথায় থাকে কার?
ভিজিছে ব্যাঙ কর রে প্রতিকার!

মন্ত্রী ভাবে রাত্রি জেগে জেগে 
রাজার কাজে কিছুই নাহি যুক্তি
বোঝাতে গেলে হঠাৎ যান রেগে
ঝামেলা থেকে কেমনে পাই মুক্তি!
ছাতা নাহয় কিনতে হবে মেলা
ব্যাঙের তরে সংখ্যা যত লাগে
কিন্তু কত? নয় তো ছেলেখেলা!
ব্যাঙ-গণনা করতে হবে আগে।
আদেশ পেয়ে হাজার কর্মচারি
পড়ল লেগে করতে ভেক-সুমারি।

ক'দিন পরে রাজসভাতে এসে
হবুচন্দ্র হেঁকে বলেন সবে, 
ব্যাঙের দল যদি হবুর দেশে
সর্দিজ্বরে মরিতে থাকে তবে।
পণ্ডিতেরে মাইনে কেন দেওয়া?
তাড়ায়ে দিব সবারে ঘাড় ধরে-
বন্ধ হলে ব্যাঙের পোকা খাওয়া
ফসল সব মরবে ক্ষেত জুড়ে।
রাজকোষেতে খাজনা যদি কমে
সবারে বেঁধে ভেট চড়াব যমে।

গবুচন্দ্র ভেকসুমারি শেষে
রাজসভাতে করিল পেশ অদ্য,
সতেরো লাখ ব্যাঙ রয়েছে দেশে,
পোকা-মাকড় খাইয়া বাঁচে সদ্য।
সতেরো লাখ ছাতা কিনিতে হবে,
রাজকোষেতে ফুরায়ে যাবে টাকা
কহেন রাজা, কর বাড়াও তবে
সহিব ক্ষতি এমন নহি বোকা!
মন্ত্রী তুমি হয়েছ কেন তবে?
পারিষদেরা নাড়িল মাথা সবে।

ব্যাঙের ছাতা কিনিতে বাড়ে ট্যাক্সো
এমন কথা শুনেছে কেউ কোথা?
মাথা পিছু যে লাগিবে টাকা এক শো
ভাবিয়া হল সবার মাথাব্যথা।
কাঁদিয়া প্রজা না পায় কেহ কুল,
ঘরে সবার বন্ধ হল রান্না,
পণ্ডিতেরা ছেঁড়ে মাথার চুল,
রাস্তাঘাটে উঠিল রোল কান্নার।
ভাবিনু কিছু, অনেক করি যত্ন
সভার মাঝে কহে তর্করত্ন।

পুকুরপাড়ে চলিল মিলি সবে
ফুটিয়া আছে কত ব্যাঙের ছাতা,
দেখুন গুনে, তার্কিক কন তবে 
প্রতি ব্যাঙের যাবেই ঢেকে মাথা!
একেকখানা ব্যাঙকে যদি ধরো
বসিয়ে দাও প্রতি ছাতার নীচে
নিরর্থক টাকা খরচ করো,
প্রজার কেন কষ্ট বাড়ে মিছে?
মন্ত্রী ভাবে, কাটমানির হিসেব
করেছিলাম, জলে গেল সবই সে! 

কিন্তু কাজ এতই নাকি সোজা?
ধরতে ব্যাঙ প্রায় সতেরো লক্ষ
ডোবায়-বিলে ফেলতে হবে গো জাল
তিন হাজার ধীবর এল দক্ষ!
পুকুর-বিল হইল তোলপাড়,
মরিল কত মাছ আর জলজন্তু
কাদায় কাদা হইল চারিধার
ব্যাঙের দল দেয়না ধরা কিন্তু।
হেন সময় পথিক এল রাজ্যে
বিজ্ঞানী সে, এসেছে কোন কার্যে।

পথিক কহে, মুর্খ হলে রাজা
প্রজার মাথে বুদ্ধি থাকে বাকি?
বাস জলে যার তাহার জলে ভেজা!
গাছের থেকে পক্ষী পড়ে নাকি?  
শুনেছ কেউ মাছেরা জলে ডুবে
মরেছে কভু? তেমনি ব্যাঙ ভিজে? 
প্রজারা কহে, আমাদের কী হবে? 
রাজা এসব বুঝিবেন কি নিজে?
পথিক বলে, সে দায়িত্ব আমার
নেই প্রয়োজন কারোর মাথা ঘামার।

পরদিবসে বন্ধ ঘরে গিয়া
হবু-গবুর সঙ্গে সে বিজ্ঞানী
বকযন্ত্রে রসায়নী বিক্রিয়া   
ব্যাঙের ছাতা দিয়ে দেখান তিনি।
বোঝান সবে, ছত্রাক নয় ছাতা
প্রোটিন নামে খাদ্যসার তাতে,
ব্যাঙের নাহি রক্ষা করে মাথা
বুদ্ধি বাড়ে মাখিয়া খেলে ভাতে।
প্রোটিন খেলে শক্তি হবে আরো
কোন ক্ষতিই হবে না তাতে কারো।

ব্যাঙের ছাতা ব্যাঙের কিছু নয়!
এমনধারা নূতন কথা শুনি
প্রজাকূলের ভাঙিয়া গেল ভয়
অবাক হল সকল জ্ঞানীগুণী।
পরিবেশের রাখিতে ভারসাম্য
বিজ্ঞানী সকলকে দেন শিক্ষা
হোক সে জন শহুরে কিবা গ্রাম্য
পঞ্চভূতে করিতে হবে রক্ষা।
জলেতে করে মণ্ডূকেরা বাস
ডাঙার পরে ছত্রাকেরি চাষ!

প্রজার সুখে রাজার জয়কার
বিনা জুলুমে বাড়িয়া চলে খাজনা
খাদ্য লয়ে মিটিল হাহাকার
রাজ্যে বাজে আনন্দেরি বাজনা।
হবুচন্দ্র সভায় আসি কহে
মন্ত্রীসনে করেছি এক ফন্দি
বিজ্ঞানী এ রাজ্যে যাতে রহে
আজকে তারে করিতে হবে বন্দি
বাজিল কাড়া-নাকাড়া আর সানাই
বিজ্ঞানী আজ হল রাজার জামাই!   



   


Monday, June 7, 2021

 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী।


গল্পকে গল্প বলে মনে করলে আর ঝামেলা থাকে না, কিন্তু জীবন গল্পের নিয়মে নয়, বরং বিজ্ঞানের নিয়মেই চলে। গল্পকথাকে জীবনে স্থান দেওয়ার মতো বিপজ্জনক বস্তু আর নেই।

Saturday, May 29, 2021

উকিল ও গামছা

 উকিল ও গামছা।

(স্মৃতিকথা)

আমার ঠাকুর্দা ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় পাবলিক প্রসিক্যুটার ছিলেন পুরুলিয়ার জাজেস কোর্টে। তাঁর পিতৃদেব পুলিশ সুপার তেজচন্দ্র সারাজীবনের উপার্জনে নিজের গ্রামে প্রচুর ভূ-সম্পত্তি কিনে জমিদার হয়েছিলেন। এই জমিদারি রক্ষা করার সুবিধের জন্যে তেজচন্দ্র তাঁর বড় ছেলে হরিপদকে পুলিশের চাকরি নিতে উৎসাহিত করেন। ভোলানাথের ঝোঁক ছিল সাহিত্য আর গানবাজনায়। এম-এ পাশও করেছিলেন। কিন্তু সম্পত্তি-রক্ষার জন্যে পরিবারে একজন উকিল চাই, তাই বাবা-দাদার চাপে আইন পাশ করে প্র্যাকটিস শুরু করেন। তাঁর বিয়েও হয় বর্ধমানের(পরে পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর) উকিল বিনোদবিহারী চক্রবর্তীর মেয়ে প্রভাবতীর সঙ্গে। ভোলানাথের সরকারি উকিল হিসেবে খ্যাতি তখন তুঙ্গে, ৮০% জয় পিপি’র পক্ষে একটা রেকর্ড- এমতাবস্থায় বেনারসের সঙ্গীত-সমাজ তাঁর পাখোয়াজ শুনে ‘বাদ্য-বিদ্যাসাগর’ উপাধি দিয়ে বসল। সেইসাথে কাশীপুরের তৎকালীন মহারাজার সনির্বন্ধ অনুরোধে পুরুলিয়া জেলার ভাষা ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস উদ্ধারের গবেষণার কাজে তিনি লেগে পড়লেন, ভাষাচার্য সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের সাহায্যে এই কাজে নিয়োজিত করলেন নিজেকে।
সঙ্গত কারণেই ওকালতি মাথায় উঠল। পি-পি’র চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস শুরু করলেন। সেখানেও বিপত্তি। দাদু আজ এখানে কাল সেখানে সংগীতচর্চা আর গবেষণার কাজে ছুটে বেড়ান আর মক্কেল বাসায় এসে অপেক্ষা করে ফিরে যায়। ফলে জেলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁর নাম যত ছড়াতে থাকে, উকিল হিসেবে পসার তত পড়তে থাকে। ইতিমধ্যে তিনি ষাট বছরে পদার্পণ করলেন, বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে সম্বর্ধনা দেবার দিন ঘোষণা করলেন আর ওকালতি নয়, সব কাজ থেকে অবসর নিয়ে গবেষণা-পত্রগুলো এবার শেষ করবেন। ইতিমধ্যে হিন্দিতে তাঁর দুটি বই ‘মানভঞ্জন কাব্য’ আর ‘রাধাভিসার’ প্রকাশিত হয়েছে, বাংলায় ‘মানভঞ্জন’, ‘পঞ্চকন্যা’ আর ‘দানবীর’ প্রকাশের মুখে। ‘পুরুলিয়া জেলার গ্রাম্যভাষা-তত্ত্ব’, ‘সংগীতের তাল’ আর ‘মানভূমের ঝুমুর’ নিয়ে লেখালেখি আর গবেষণা চলছে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্যত্র। আমাদের পুরুলিয়া (তখন ধানবাদকে নিয়ে মিলিত জেলা মানভূম) জেলা অনুন্নত, অবহেলিত। বিহার কয়লার লোভে ধানবাদকে কেড়ে নিয়েছে, পুরুলিয়া নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। ১৯১২ সাল থেকে ভাষা-আন্দোলন চলতে থাকলেও পশ্চিম বঙ্গও এ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায় না, বিধান রায়কে বাদ দিলে তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলের অনেকে হয়ত জানেনই না যে মানভূম জেলার প্রায় ৭৩% বঙ্গভাষী আর ১৬% কুর্মি, আদিবাসী আর ওড়িয়া। বিহারী ১১%এর বেশী নয়, অথচ অবলীলাক্রমে জেলাটি দান করা হল বিহারকে। যাই হোক, ধানবাদ মহকুমায় তবু কয়লা আছে, পুরুলিয়ায় তাও নেই। একফসলি পাথুরে জমি, সেচের ব্যবস্থা নেই, পাঞ্চেত জলাধার তখনও নির্মীয়মান। তাই গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত চাষী আর কৃষিজীবি শ্রমিকদের পৌষ থেকে জৈষ্ঠ্য প্রায় কোন কাজই থাকে না, কুলিগিরি, বেগার খাটা আর রেল ওয়াগন থেকে কয়লা চুরিই তাদের জীবিকা হয়ে দাঁড়ায় সেই সময়টুকুতে। বর্গা-ভাগচাষ তখনও শুরু হয়নি। আমাদের জমিতে চাষ করে যে মজুর-মুনিষরা, তাদেরও একই অবস্থা। এরকম এক সময় রাতের অন্ধকারে রেল-ওয়াগন থেকে কয়লা চুরি করতে গিয়ে আমাদের এক হতদরিদ্র ক্ষেত-মজুর ধরা পড়ল। পুলিশ দেখে মাথার ঝুড়ি ফেলে পালাচ্ছিল, পুলিশ ছুটে গিয়ে তাকে বাড়ি পর্যন্ত তাড়া করে ধরে, পরদিন আদালতে হাজির করা হবে। মজুরটির পরিবার দাদুর কাছে এসে কেঁদে পড়ে, কিছু একটা করে যেন ছাড়ান হয় তাকে। বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে দাদুর ফীস পাবার কোন প্রশ্নই নেই।
কী মুশকিল! হাতেনাতে ধরা পড়েছে, তাকে ছাড়াতে হবে। দাদু তখন কোর্ট থেকে প্রায় পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেছেন। অথচ গরিব মানুষটার জন্যে কিছু না করলেও নয়! অগত্যা কেসটা উনি নিলেন। সেদিন বিকেলের দিকে চিন্তিত মনে তিনি বাজারের দিকে গেলেন, তারপর হাজতে গিয়ে মজুরটির, যার নাম রবি বাউরি, সঙ্গে দেখা করে কিছু নির্দেশ দিলেন।
পরদিন কেস কোর্টে উঠল, রবি বাউরি বনাম বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে, আদ্রা ডিভিশন। রুকনি-আনাড়া রুটে রেলের ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াগন থেকে কয়লা চুরির অভিযোগ। রবিকে বিচারকক্ষে আনা হল, পরণে খাটো ধুতি, ময়লা গেঞ্জি, গলায় একটা লাল গামছা। ও ত শেখানো বুলি ধরে প্রথমেই সব অভিযোগ অস্বীকার করল। ‘হুজুর আমি ঘরে শুয়েছিলাম, পুলিশ এসে ধরল। কয়লা চুরির আমি কিছুই জানিনা ধম্মাবতার, আমার বাপও জম্মে কখনও চুরি করে নাই।‘ এদিকে পুলিশের পক্ষের সাক্ষী কনেস্টবলটি হলফ করে বলছে তাকে ছুটে পালানোর সময় বাউরিপাড়ার একটি গলি থেকে ধরা হয়। ‘দেখুন হুজুর, আসামীর গায়ে এখনও কয়লা লেগে আছে।‘
এবার দাদুর সওয়ালের পালা। ‘আপনি কি নিশ্চিত যে এই সেই লোক যে কয়লা চুরি করছিল?’
- ‘আজ্ঞে হ্যাঁ, দেখুন না, ওর গায়ে, কাপড়ে এখনও কয়লা লেগে আছে।‘
- ‘ধর্মাবতার, গরীব মানুষের জামাকাপড় নোংরা হয়েই থাকে। তার জন্যে কাউকে চোর বলে দাগানো যায় না।‘ এর পর পুলিশকে- ‘আচ্ছা, আপনারা যখন ওকে কয়লা চুরি করতে দ্যাখেন, এই গামছাটি কোথায় ছিল?’
- ‘কেন হুজুর, ওর মাথায়, পাগড়ির মত করে পরেছিল!’
দাদুর অনুরোধে পুলিশ থেকে বাকি দুজন প্রত্যক্ষদর্শী কনেস্টবলদেরও এজলাসে আনা হল একে একে। প্রতি সাক্ষীকে দাদু একই প্রশ্ন করলেন। উত্তরে একজন বলল, গামছাটা কোমরে জড়ানো ছিল; অন্যজন বলল- এরকম কোন গামছা ছিলই না আসামীর সঙ্গে। সাক্ষ্য শেষ হল।
এবার উকিল ভোলানাথের বক্তব্য বিচারকের প্রতি। ‘ধর্মাবতার, চুরি হয়েছে, পুলিশের কাজ চোর ধরা। রবি ঠাকুরের গানে আছে- ‘চোর চাই, যে করেই হোক, চোর চাই হোক না সে যে কোন লোক।‘ তাই তারা সঙ্গতকারণেই একজন নিরপরাধ গরীব মানুষকে তার বাসা থেকে চোর বলে আদালতে
এনে হাজির করেছে।‘
-‘আসামী পক্ষের ল'ইয়ার কিভাবে এতটা নিশ্চিত হলেন যে আসামী চোর নয়?’ সরকারি উকিল প্রতিবাদ করলেন। ‘কুলি-মজুর-ছিঁচকে চোরদের কাছে একটা গামছা থাকেই, ওর কাছেও ওই গামছাটি ছিল। এখন সেটা কোথায় কিভাবে ছিল, তা মনে রাখা কি এতই জরুরি?’
- ‘তাহলে স্বীকার করছেন যে গামছাটা ছিল? ধর্মাবতার, গামছাটা আমি গতকাল বিকেলে পুরুলিয়ার বাজার থেকে কিনে ওকে দিয়ে আসি, এই তার রশিদ। গামছাতে লেবেল এখনও আছে, তাতে দোকানের নাম আর দাম মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। অতএব প্রমাণ হচ্ছে যে রবি বাউরি নির্দোষ, রেল পুলিশের লোক অন্য কাউকে চুরি করতে দেখে তাড়া করে। তাকে অন্ধকারে চিনতে না পেরে আমার মক্কেলটিকে ধরে নিয়ে আসে।‘
নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণের অভাবে রবি বাউরি বেকসুর খালাস পায়, তারপরে আজীবন সে বিশ্বাসযোগ্যভাবে আমাদের জমিজমার তত্ত্বাবধান করেছে। তবে এই মামলার পরে দাদুর আর অবসর নেওয়া হয়নি তখন, এত গরীব মানুষের কেস আসতে শুরু করেছিল।

নন্দিনী ও বিশুপাগলা

"নন্দিনী ও বিশুপাগলা"



আমার বয়েস তখন পাঁচ, বাড়িতে ভাড়াটে এল। মা অসুস্থ বলে দাদু-ঠাম্মার কাছে গ্রামেই থাকি, ক'দিন আগেই ভর্তি হয়েছি সেখানকার পাঠশালায়। দাদু মানে আমার ঠাকুরদা পুরুলিয়া জেলা আদালতে পাবলিক প্রসিক্যুটারের পোস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরেও ব্যক্তিগত ওকালতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ইদানীং সে প্র্যাকটিশও প্রায় ছেড়ে গবেষণামূলক লেখালেখি শুরু করায় বাইরের ঘর-দুটো খালি পড়ে থাকে বলে ঠাকুমার জেদাজেদিতে তিনি ভাড়াটে বসাতে রাজী হয়েছেন।

মিহির আচার্য ও বাসন্তী, নববিবাহিত দম্পতি। মিহিরকাকু গ্রামের পোস্ট অফিসে সহকারী পোস্টমাস্টার। মিহিরকাকু স্ত্রীকে বাসন্তী নামেই ডাকেন, আমার দাদু- ঠাকুমাও তাই। খুব রূপসী না হলেও সুশ্রীই বলা যায় কাকীকে। আমাকে কিন্তু উনি প্রথমেই বলেছিলেন, 'এই, আমার নাম কিন্তু নন্দিনী, আর কাকুর নাম রঞ্জন।' আমি বলতাম, 'ধ্যেৎ, তুমি বাসন্তী।' আমার কী দোষ, এক তো আমি রক্তকরবী পড়ি নি, আর কারো এতগুলো নাম হতে পারে সেসব আমি কি করে বুঝব!  

কিন্তু দিনে দিনে কাকীর আরো অনেক গুণ প্রকাশ পেতে থাকল। গ্রামের মেয়েরা ওঁর কথাবার্তা চালচলনে, সাজসজ্জার আধুনিকতায় রীতিমত ফ্যান হয়ে পড়ল। একদিন কাকীর বাক্স থেকে বেরোল একটা রংচটা খাতা আর একটা সিংগল রীড হারমোনিয়ম। যেসব গান রেডিও ছাড়া কখনও শোনা যায় না- যেমন 'ওই সুরভরা দূর নীলিমায়', 'এই সুন্দর স্বর্নালি সন্ধ্যায়' এইসব অবলীলাক্রমে গেয়ে যেতেন। আবার দাদুর পায়ের শব্দ শুনতেই 'মহারাজ একি সাজে' ধরে ফেলতেও দ্বিধা করতেন না। মিহিরকাকু দিনভর কাজ করেন আর সন্ধ্যেয় দু-চারজনকে ট্যুশন পড়ান বাড়ির বারান্দায় বসে। অন্দরমহল থাকে আমার ও কাকীর দখলে। নির্ঝঞ্ঝাট সংসার। দুঃখ দুটি, প্রেম বিবাহ, তাও অসবর্ণ (কাকী বিয়ের আগে ছিলেন গুপ্ত, ওঁর গানের খাতায় নাম লেখা দেখেছি) বলে কোন পক্ষই বাড়ি থেকে মানেনি, তার ফলে ওঁদের আত্মীয় স্বজন থেকেও ছিল না। আর বাসন্তী নামটা কাকীর পছন্দ ছিল কিনা জানিনা, কিন্তু জানিনা কেন কেউ ওঁকে নন্দিনী নামে ডাকত না, মিহিরকাকুও নয়। বাসন্তীকাকী আমাকে আবার বিশুপাগলা বলে একটা অদ্ভুত নামে ডাকতেন। আমার এসব ভাল লাগতনা, কিন্তু স্নেহের ডাক ভেবে মেনে নিয়েছিলাম। তখন ছোট ছিলাম বলে অনেক কিছুই বুঝতাম না, আজ ভাবতে বসলে মাথায় ঢোকে যে কাকীর একটা স্বপ্নবিলাসী মন ছিল, যাতে তিনি নিজের মধ্যেই যেন রক্তকরবীর অভিনয় করে যেতেন। মিহিরকাকু ছিলেন নির্বিরোধী ভালমানুষ, সেইসঙ্গে ভীতুর ডিম একটি। একবার একতলার ঘরে আরশুলা ঢুকেছে, ঠাকুমা চেঁচাচ্ছেন- 'মিহির, দেখছ কি, মারো ওটাকে!' আর কাকু তখন খাটের উপর দাঁড়িয়ে নিরাপদ দূরত্ব থেকে বোঝাচ্ছেন- 'ভয় পাবেন না জ্যেঠিমা, ওনারা কামড়ান না।' শেষে কাকীই ওটাকে ঝাঁটাপেটা করে শেষ করল।

সহজেই বোঝা যায় যে মিহিরকাকু এই স্বপ্নবিলাসের কিছুই বুঝত না, আর বুঝলেও পাত্তা দিত না। এই নিয়ে বড় দুঃখ ছিল কাকীর। আমাকে মাঝে মাঝে বলতেন, 'রঞ্জনটা বেরসিক, তুই আমাকে লাল করবী ফুল এনে দিতে পারবি রে বিশু?' আমি তো করবীই চিনি না তায় লাল! বাড়িতে জবা আর সন্ধ্যামণি ফুটত তাই এনে দিতাম- বাসন্তীকাকী তাতেই খুশী। 
 
পল্লীগ্রামের ছোট্ট পুকুরে ঢেউ উঠতে যেমন সময় নেয়না, তা মিলিয়ে যেতেও তেমনি দেরী হয়না। কিন্তু এবার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা পাড়ে এসে লাগার আগেই আরেকটা বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল গ্রামের মাটিতে। বন-ভোজন! কাকী গ্রামের ছেলে-মেয়ে সবাইকে নাচিয়েছেন পৌষ-পয়লায় এবার হবে পৌষালু, ডিভিসির পরিত্যক্ত বাগানে। আমার ঠাকুমার ফুল সাপোর্ট। কিন্তু পঞ্চায়েতের মাথা মাথা লোকেদের মহা আপত্তি। ধাড়ি-ধাড়ি ছেলেমেয়েদের একসাথে ফূর্তি-আমোদ! সব এক কথায় নাকচ হয়ে গেল। কাকীও ছাড়ার পাত্রী নন, ছেলেছোকরাদের ভোট তাঁর দিকে। তবু সুবিধে হচ্ছে না। শেষে কী খেয়াল হওয়ায় আমি বললাম, 'কাকী, তুমি দাদুকে ধরো'। দাদু শুনে বললেন, 'এই কথা! তা এতে আপত্তির কি আছে?' দাদু গ্রামের নাম-কে-ওয়াস্তে জমিদার হলেও উকিল আর পণ্ডিত মানুষ বলে একটা আলাদা ওজন ছিল। পঞ্চায়েতের দল তাঁর যুক্তি-তর্কের সাথে পারবে কেন? আমি ছুটতে ছুটতে এসে কাকীকে জড়িয়ে ধরে বললাম, নন্দিনীকাকী, ওরা রাজী হয়েছে।

'সে আমি জানতাম। জ্যেঠামশায় যখন আছেন, ওরা রাজী হবেই। কিন্তু তুই আমাকে কি বললি আরেকবার বল।' আমি বুঝতে পেরে কেন জানিনা আরো লজ্জা পেয়ে গেলাম। 'আমার রঞ্জন আমাকে যে নামেই ডাকুক, তুই আমাকে এবার থেকে নন্দিনীকাকীই বলবি, কেমন,' বাসন্তীকাকী বললেন।
আমি এবার খুশী হয়ে ঘাড় নাড়লাম।

Sunday, May 9, 2021

भिक्षुक || सूर्यकांत त्रिपाठी निराला ||

 

वह आता-

दो टूक कलेजे के करता
पछताता पथ पर आता।
पेट-पीठ दोनों मिलकर हैं एक,
चल रहा लकुटिया टेक,
मुट्ठीभर दाने को, भूख मिटाने को,
मुँह फटी पुरानी झोली को फैलाता
दो टूक कलेजे के करता
पछताता पथ पर आता।

साथ दो बच्चे भी हैं सदा हाथ फैलाये,
बायें से वे मलते हुए पेट चलते हैं,
और दाहिना दयादृष्टि पाने की ओर बढ़ाये।

भूख से सूख होंठ जब जाते,
दाता-भाग्यविधाता से क्या पाते
घूँट-आँसुओं के पीकर रह जाते हैं,
चाट रहे जूठी पत्तल वे
कभी सङक पर खड़े हुए,
और झपट लेने को उनसे कुत्ते भी हैं अड़े हुए।

ठहरो, अहो है मेरे हृदय में,
अमृत में सींच दूँगा
अभिमन्यु जैसे को सकोगे तुम
तुम्हारे दुख मैं अपने हृदय में खींच लूँगा।


সে আসে।
অসহ দুঃখে-তাপে হৃদয় বিদীর্ণ করে 
পথ ধরে আসে।

পেটে-পিঠে হয়েছে সমান
ক্ষুধার জ্বালায় ম্রিয়মান।
ভর দিয়ে চলে লাঠি পরে 
একমুঠি ভিক্ষা তরে
শতছিন্ন ঝুলিখানা অগ্রে মেলে ধরে
অসহ দুঃখে-তাপে হৃদয় বিদীর্ণ করে  
পথ ধরে আসে।

সঙ্গে চলে দুটি শিশু সদা হাত মেলে
বাম হাত বুলায় জঠরে
দক্ষিণ বাড়িয়ে ধরে দয়াদৃষ্টি তরে।

খিদেয় শুকনো ঠোঁটে
অন্নদাতা বিধাতার দ্বারে কী বা জোটে?
খিদে-তেষ্টা সব কি গো মেটে আঁখিজলে!
আস্তাকুঁড়ে উচ্ছিষ্ট ঘাঁটে
কুড়িয়ে পাতা সে চাটে  
সেখানে কুকুর সাথে কাড়াকাড়ি চলে!

দাঁড়াও, অমৃত-সিঞ্চিত করি
আমার হৃদয়াধার হতে
একা অভিমন্যু সম 
হৃদয় নিঙাড়ি
তোমার সকল ক্লেশ 
বক্ষমাঝে শুষে নিতে পারি।

 



Thursday, May 6, 2021

 প্রেতচক্র রহস্য।।


'প্ল্যাঞ্চেট নয়, ওর উচ্চারণ হবে 'প্লাঁশেৎ' - ইতু বলল। ও টেনিদার গল্পের খুব ভক্ত, নির্ঘাৎ আঁতেল ক্যাবলার রোল প্লে করছে এখন।

'আচ্ছা, মেনে নিলাম। গল্পটা শুনতে দিবি এখন?' ঋতুদি স্পষ্টই বিরক্ত ছোট বোনের পাকামোতে। 

এসেছি কলেজের বন্ধু দেবুর বিয়েতে ওদের বাড়ি রাঁচিতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে ওর ছোড়দি ঋতুদি, ছোট বোন ইতু আর তাদের বন্ধুরা মিলে বাসর জাগতে এসেছে, আমরাও কয়েকজন বন্ধু আছি। দেবুর ছন্দাদি মস্ত গায়িকা, ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিটা ফাংশনে ওঁর গান ধরাবাঁধা। তাই আসর জমতে দেরি হল না। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে আর এদিকে গান হচ্ছে "...... এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরে পড়ে, তপনহীন ঘন তমসায়"। বর্ষার দেবীর আর কাঁহাতক সহ্য হয়! ঝপ করে পাওয়ার কাট। এমার্জেন্সি ল্যাম্পে ভাল চার্জ নেই, টিমটিম করে জ্বলছে। এর মাঝে আর গান হয়? ভাগ্যিস গরম নেই। তাছাড়া রাঁচি শহরটা পাহাড়ি বলে এমনিতেই গরম কম। তার মধ্যে জ্যোতি আবার 'দীপ নিবে গেছে মম' ধরতেই সবাই বকাবকি করে ওকে থামিয়ে দিল।

তাহলে কী করা যায় এখন? 'সখী আঁধারে একেলা ঘরে মন মানে না'- ইতু এক কলি সুর করে গেয়েই কথা বদলে পরের লাইন গাইল, 'ভূতের গল্প ছাড়া আর কিছুই জমে না'। অগত্যা টিমটিমে আলোছায়ার দুলুনির মাঝে আমি শুরু করলাম রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে আমাদের প্রেত-চর্চার গল্প। তারই সূত্র ধরে এল প্ল্যাঞ্চেটের প্রসঙ্গ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি, যেখানে শুরু করেছিলাম তার পর থেকে। 

'আমরা সবাই তখন সদ্য কিশোর, বিহারের বিভিন্ন গ্রাম-শহর থেকে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে এসেছি  রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। হোস্টেলে থাকি। তখনকার ফার্স্ট ইয়ারের হোস্টেলগুলো ছিল ঘোড়ার আস্তাবলের তুল্য, থ্রি-সিটার রুম একেকটা। জানলা নেই, তবে ওপর কিছুটা খোলা আর লম্বা টানা জাফরি আর গ্রিল দেওয়া বারান্দা। আমাদের রুমগুলো ছিল দোতলায়, নীচের তলায় আদিবাসী ছাত্রদের হোস্টেল। বাথরুম ছিল নিচের তলায়, হোস্টেলের বাইরের দিকে। রাত্রে যেতে হলে বাজে অবস্থা। তার চেয়েও বাজে ছিল মিশনারি কলেজের হোস্টেলের ডিসিপ্লিন। রাত্রি সাড়ে দশটায় মেন সুইচ অফ করে দেওয়া হত, অর্থাৎ ঘুমোও এবার। আরে ঘুমোব কী! হোমটাস্ক আছে না? ক্লাস-টেস্ট আছে না? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফাদার সুরিন সেসব বুঝতেন না, এখন ঘুমোও, ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। ধুর, তাই হয় নাকি আবার! আমরা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়তাম। রাঁচিতে গরমটা কম বলে ফ্যানের জন্যে কষ্ট হত না।

'অ্যাই, তোদের মাঠে ঘুমনোর একটা ব্যাপার ছিল না?' রবি শুধোয়। ও আর দেবু ডে-স্কলার ছিল, হোস্টেলে থাকে নি।

'হ্যাঁ, পরীক্ষা কাছে থাকলে তাও করতাম। বেড-রোল, হ্যারিকেন আর বই-পত্র নিয়ে মাঠে সারি-সারি এসে শুয়ে পড়তাম। কিছুক্ষণ পড়া আর তারপর সেখানেই ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘুম। একদিন দেরি হয়ে গেছিল উঠতে। হোস্টেলের অ্যাটেন্ডেন্ট জেমসের ডাকে ঘুম ভাঙতেই দেখি রোদ উঠে গেছে, পুরো মাঠে আমি একা শুয়ে। কমার্সের স্টুডেন্টরা দলে দলে কলেজে আসতে শুরু করেছে, যাচ্ছেতাই অবস্থা একেবারে। 

'তা যা বলছিলাম। একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি রুমমেট প্রিয়তোষের মশারি দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবলাম লণ্ঠনের থেকে আগুন লেগে গেছে হয়ত। তার ঠিক দু'দিন পরে মাঝরাতে বাথরুম গেছি। ফিরে এসে দেখি আমার সব ক'টা বই খাতা যত্ন করে বিছানায় সাজানো- টেবিলে একটাও নেই! বুঝেছি, ব্যাটা প্রিয় বা শিশিরের কাণ্ড, অথচ ওরা কিনা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরো দু'দিন পরে বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দেখি শিশিরের তোষক-বিছানা ধিকধিক করে জ্বলছে- বন্ধ ঘরে আগুন এল কোত্থেকে! পরদিন রবিবার ছিল।  সকালে আমার স্টিলের ট্রাঙ্কে এক বাটি জল রেখেছিলাম, হঠাৎ আমার চোখের সামনে বাটিটা প্রায় ছ-ইঞ্চি লাফিয়ে নীচে পড়ে গেল, ঘর জলে জলময়। এবার মনে হল ভৌতিক কাণ্ডই বটে।

'কথাটা চাউর হতেই কল্যাণ, জহর, প্রদীপ, অশোক সবাই জড়ো হল। অশোক বলল ও নাকি প্ল্যাঞ্চেট করে ভূত নামাতে পারে। আমি বাবার কাছে প্ল্যাঞ্চেটের গল্প শুনেছিলাম আর শরদিন্দুর বরদার গল্পও পড়া ছিল, তবে ব্যাপারটায় কৌতূহল থাকলেও বিশ্বাস তেমন ছিল না, তবু আমরা প্রাণের দায়ে মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব। ঠিক হল পরদিন রাত্রি সাড়ে দশটায় আলো নিভলে অশোক ওর যন্ত্র পাতবে, আর হারুন রশিদ থাকবে রুমের বাইরে ফাদার সুরিন বা ডুংডুং এলে অ্যালার্ট করতে। 

'কথামত পরদিন অশোক ওর স্পেশ্যাল টেবল আর প্ল্যাঞ্চেটের বোর্ড নিয়ে এল। ঘরের এককোণে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে বোর্ডে সাদা কাগজ পেতে একটা পেন্সিল দু-আঙুলে হাল্কা করে ধরলাম আমরা চারজনে- আমি, অশোক, কল্যাণ আর প্রিয়তোষ, শিশির আর প্রদীপ বসে আছে ঘরের এক কোণে, বাইরে হারুন। হঠাৎ একটা হাল্কা চন্দনের গন্ধ এল নাকে, সেই সঙ্গে দরজায় মৃদু করাঘাত। 'এসেছে'- অশোক ফিসফিস করে বলল। ও প্রশ্ন শুরু করল আর উত্তরে আমাদের আঙুলে ধরা পেন্সিল খসখস করে চলতে লাগল কাগজে।

'তুমি এসেছ?'- অশোক বলা মাত্র পেন্সিল নড়ে উঠল।
'কী নাম তোমার?'
'গোপাল।'- লেখা হল অস্পষ্ট অক্ষরে।
'কী চাও?'
'তোমাদের সবার মৃত্যু!'
'কেন? কী ক্ষতি করেছি আমরা তোমার?'
' আমার শান্তি নষ্ট করেছ। এই রুমে কেউ থাকবে না তোমরা।'
'কেউ না?'
'শুধু অশোক থাকতে পারে।'
'কেন?'
'ও খুব ভাল ছেলে। ভূত বিশ্বাস করে।'

'এটুকু লেখা হতেই কল্যাণের মাথা গরম হয়ে উঠল। 'ব্যাটা ভূত! অশোক একলা ভাল ছেলে! আর আমরা সব খারাপ? এ সব অশোকের আঙুলের কারসাজি। কিরে, বলবি!'- বলেই ও অন্ধকারে অশোকের কলার চেপে ধরল। এই সুযোগে ভূত পালাল আর শিশির হ্যারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিল। সবাই চেপে ধরায় অশোক স্বীকার করল যে সে কিছুটা মজা করেছে ঠিকই, তবে ওর উপরেও মনে হয় আরো কেউ কারসাজি করছিল, সেটা কে সে নিজেও জানে না।

'আমরা বাইরে এলাম। দেখি হারুন বারান্দার এককোণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নাড়া দিতেই উঠে বলে- 'এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' কে জানে সেও ব্যাটা ঢপ দিচ্ছে কিনা!

'পরদিন ফাদার সুরিন ডাকলেন ওঁর রুমে। বলেন 'কাল তোমাদের রুমে অনেক রাত অব্ধি আলো জ্বলেছে, এনিথিং রং?' 
'না ফাদার, একটা হোমটাস্ক বাকি ছিল, তাই চারজনে মিলে সল্ভ করছিলাম।'
'ইটস অলরাইট। তবে কি জানো? এই হোস্টেলের একটা রুমে অনেক বছর আগে একটা ছেলে ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে সুইসাইড করেছিল। তাই রাত্রে একটু সাবধানে থাকবে।'

'আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনমতে ঢোঁক গিলে বললাম, 'ফাদার, ছেলেটার নাম কী ছিল?'
'হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো দ্যাট? আই থিঙ্ক, গোপাল। হ্যাঁ, গোপাল মহাপাত্র। দ্যাট কিউট ওড়িয়া বয়!' '

হঠাৎ দপ করে আলো জ্বলে উঠল। 'শেষে তুইও গুল দিচ্ছিস'- পেছন থেকে কার গলা পেলাম। দেখি দেবু। ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছে, কে জানে সব শুনছিল, কখন উঠে পড়েছে। 'আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের হোস্টেলে থাকিনি কখনও, কিন্তু রুমগুলো তো দেখেছি। ফ্যান কোথায় আছে রে যে গলায় দড়ি দেবে!'

'ওরে ব্যাটা! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর? এতগুলো মানুষ বাসরে বসে আছে, এই লোডশেডিং-এর মাঝে তাদের জাগিয়ে রেখে তোর বাসর জমিয়ে দিলাম, কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবি!'  

'ছোড়দা, গুল হলেই বা ক্ষতি কী? গল্পটা কিন্তু হেব্বি জমেছিল।'- ইতু বলে।

ইতিমধ্যে দেবুর মাসতুতো দাদা বিক্রমদা কখন ঢুকেছে দেখিনি। ও সেই কলেজে আমাদের চার বছরের সিনিয়ার ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- 'গোপালের গল্পটা মিথ্যে নয় রে। এই ঘটনার পরেই ঘাবড়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল সব কটা ফ্যান খুলে ফেলেন। আংটাগুলো আছে, দেখিসনি?' 

'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?' ঋতুদি যেন অকূলপাথারে। 
'ভূত জিনিষটা এত রহস্যময়, তার গল্পে একটু রহস্য থাকবে না? ধরে নাও এটা আরেকটা আনসল্ভড মিস্ট্রি'- আমি গল্প শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

Friday, March 26, 2021

 অমৃত-সমান।।


মহাভারতের সব পৃষ্ঠায়
নেই ছড়ানো মোটেই বিষ্ঠা
জেনো অমৃত-কুম্ভ সবটাই
তবু প্রশ্ন প্রচুর থেকে যায়।

মহারানী গান্ধারী পতিপ্রাণ
কেন ঢেকে রাখলেন চোখখান?
হয়ে, অন্ধরাজার যষ্টি
তিনি ভজলেন মাতা ষষ্ঠী?

জতুগৃহটা যে ছিল লাক্ষার
এই কথাটা ছিলনা জানা কার?
তবু নিজেই আগুন লাগিয়ে
ওরা সবকটা গেল পালিয়ে!

ভীম হিড়িম্বে হল যুদ্ধ
ছিল দুজনেই ভারি ক্রুদ্ধ;
তার দাদাটা যখন মরল
কিনা হিড়িম্বা প্রেমে পড়ল!

বিশ্বরূপ দেখালো কেষ্ট
বুঝি জাদুকর ছিল বেস্ট ও
শির আকাশ করল তুচ্ছ
রাজসভা কত ছিল উচ্চ?

কেন রাজভোগ ছেড়ে কেষ্টা
খেল বিদুরের খুদ শেষটায়?
অশ্বত্থামা পায়নি ত দুধ
তাই কেষ্টঠাকুর খান খুদ!

খেয়ে যজ্ঞঘৃতের খাদ্য
হল অগ্নির অগ্নিমান্দ্য
অর্জুন কত পশু মারল
খেয়ে প্রোটিন অসুখ সারল! 

এই হাজার রকম লেখাটি
সব পোয়াতো গণেশ বোকাটি
খেয়ে সিদ্ধি মেশানো মিষ্টি
লিখতেন যা যা অনাসৃষ্টি

তিনি না ভেবেই কিছু সাত-পাঁচ
লিখে চলতেন বাতেঁ সাঁচ সাঁচ!
তবে ইঁদুরটা ছিল শয়তান
সব কেটে দিত করে খানখান!
যবে গণশা ব্যস্ত লিখতে,
তাঁর ইঁদুরটা যেত শিখতে-
জাভা ভিস্যুয়াল আর ওরাক্‌ল,
তাই ঘটে যেত এত মিরাক্‌ল!

Thursday, March 25, 2021

 এইয়ো, মুখ সামলে! 


কবি ফেসবুকানন্দকে ধন্যবাদ, পথ দেখানোর জন্যে। কবিতা মঝে মাঝে সোডার মত গুঁতো দিয়ে ওঠে, অথচ কলমের (বা মাউসের) ডগায় আসতে চায় না, তখন এই কায়দায় মহাকাব্য লিখে ফেলা যায়। যেমন ধর-
এদিন আজি কোন দুধে গো ভরে দিলে ভাঁড়,
আজি প্রাতে গাই-দোয়ানো সফল যে আমার।
লিখি যত কবিতা, বেকার সবি তা-
পাবলিশারের খোঁজে ছিঁড়ে গেল সোল,
অমাবস্যার চাঁদ যেন ব্ল্যাক হোল।
এইভাবে সবে বাখানিল মোর উপস্থিতবুদ্ধি
তাই কবিতার শেষে রেখো খানিকটা মুখশুদ্ধি।
উঃ, কি উল্লাস যে হচ্ছে!
একথা তো সুকুমার বলেছেন বুঝিয়ে,
জবাবটা জেনে নিন মেজদাকে খুঁচিয়ে।
মেজদাকে ধরবেন কিভাবে জানেন না?
গাছে থাকে গেছোদাদা, তার কাছে যান না।
দাদা থাকে তিব্বতে, উড়ে যাব, ডানা কই?
কি করব? আমরা তো গুরু-মারা চেলা নই!

(লিমেরিক)
ও ডাক্তার, কী হল গো আমার ডায়াগ্নোসিস?
ডাক্তার কন, বলি যদি অরোরা বোরিয়ালিস্‌-
বুঝবে কিছু? মাথা নাড়াই,
লাভ কী মিছে করে লড়াই,
মোবাইলেই গুগল আছে, যৎসামান্য ফীস!

হালকাভাবেই বলি, প্রেমের বন্ধন অনেক সময় পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে যদি প্রেমিক বলে- 'রোগের মতন বাঁধিব তোমায় দারুন আলিঙ্গনে'। তখন সেই যন্ত্রণার থেকে ছাড়া পেতে হয়ত প্রেমিকাকেও বলতে হয়- 'ওগো প্রিয় মোর, খোল বাহুডোর, পৃথিবী তোমাকে যে চায়'। কি জানি কেসটা আসলে কি ছিল!
ঠাট্টা নয়, জনশ্রুতি আছে গোস্বামী তুলসীদাস এইরকম ভালবাসতেন স্ত্রীকে। স্ত্রী যেটা করলে লোকে পতিব্রতা বলে প্রশংসা করে, স্বামীদের ক্ষেত্রে একই অবস্থায় জোটে স্ত্রৈণ বলে লাঞ্ছনা। একদিন এমন অবস্থা দাঁড়াল যে স্ত্রী একবেলার জন্যে পিত্রালয় গেছেন, তুলসীদাস থাকতে না পেরে সেই রাত্রেই ছুটে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি। লজ্জিতা, অপদস্থা তুলসী-পত্নী তখন ভর্ত্সনা করে তাঁর পতিকে যা বলেছিলেন, তুলসীদাসের লেখা থেকেই বলছি-
"লাজ না লাগত আপকো, দৌড়ে আয়হু সাথ
ধিক, ধিক, এইসে প্রেম কো, ক্যা কহুঁ ম্যয় নাথ।
অস্থি-চর্মময় দেহ মম, তামেই এয়্সী প্রীতি,
এইসা যো শ্রীরাম মে হো, ন হোতী তো ভবভীতি।"
ঘুরে গেল তুলসীর জীবনের মোড়। সংসার ছেড়ে তিনি রামচরিত নিয়ে পড়লেন, বাকিটা ইতিহাস।

অনেকে বলেন শরৎচন্দ্রের সাহিত্যে মুসলমানদের সেভাবে দেখানো হয়নি। ভুল কথা। তিনটি মুসলিম চরিত্র, মহেশের গফুর মিঞা, পল্লীসমাজের আকবর লেঠেল আর শ্রীকান্তের গহর এরাই যথেষ্ট বাংলার তখনকার মুসলমান জাতির দারিদ্য, নিষ্ঠা ও আত্মসম্মানবোধের পরিচয় দেবার জন্যে। আকবর লেঠেলের সেই মার খেয়েও শত্রুর তারিফ- 'সাবাস ছোটবাবু। মায়ের দুধ খেয়েছিলে বটে। লাঠি ধরলে বটে!' আর সেই বিখ্যাত উক্তি- 'আপনি হুকুম করলে আসামী হইয়্যে জ্যাল যেতে পারি, ফৈরিদি হব কোন কালামুয়ে?'- এই দুটি উক্তিই মুসলমানী চরিত্রের দৃঢ়তা ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট।

বিদ্যাসাগরের 'সততসঞ্চরমানজলধরপটল' কথাটা মনে পড়ল আকাশের ঘনঘটা দেখে, ওটা বেশ ভালভাবে উরুশ্চারন করা যায়। কিন্তু 'প্রোষিতভর্তৃকা' কথাটা অভিধান থেকে তুলে তার জায়গায় 'পোসিতভত্তিকা' করে দিতে হবে, বুঝলে পার্থ......একন আর ব্রাত্য শিক্ষামন্ত্রী নেই যে টিক-টিক করবে, তাপস্পালটাও কোতায় যেন পাইলে গেল!

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় 'গু' এর আধিক্য আছে বটে। উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, গুইয়ানা বা গায়ানা(guyana), নিকারাগুয়া (তার আবার রাজধানী মানাগুয়া), গুয়াতেমালা। ওদের কবির নাম (তিনি শ্রদ্ধেয়, ছোট না করেই বলছি) গুয়েভরা। পেরুর গুয়ানো আর চিঞ্চা দ্বীপপুঞ্জে তো গুয়ানো পাখির গু থেকে উত্পন্ন সার ও গুয়ানো পাখি বহু দেশে রপ্তানি হত এককালে, শেষে দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে পেরু-চিলির যুদ্ধই বেধে গেল স্পেনের সাথে। তাই বলি, 'গু' বলে যেন কেউ হেলাফেলা না করে!


গুয়াহাটি ছাড়ার প্রায় সতের বছর পর গোবর্ধন ফিরছে। পাড়ার পুরনো বুড়ো মুচি কিন্তু তার গোবরাভাইকে ঠিক চিনেছে। 'তোমায় একটা জুতোজোড়া সারতে দিয়ে গেছিলাম, মনে আছে?' গোবরার প্রশ্ন। 'এই দেখো, মনে থাকবে না কেন? এই তো সেদিনের কথা', মুচি বলে, 'তবে গোবরাদাদা, জুতোজোড়াটায় সামান্য একটু কাজ বাকী আছে, ওটা তুমি কাল পাবে।'
শিব্রামের এই গল্পটার কোনও জুড়ি নেই! এর পরের অংশটা আরো মজার। এত টাকা করেছেন, তাই হর্ষবর্ধনের ইচ্ছা গুয়াহাটিতে একটা সর্ব-ধর্ম-সমন্বয়ের তীর্থক্ষেত্র স্থাপনা করা। মুচিভায়াকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে টাকা-পয়সা গুনে দিয়ে গোবরা কলকাতা ফিরে এল। তারপর কাজ শেষ হওয়ার খবর পেয়ে দুই ভাই গিয়ে দেখে, মুচিভাই সেখানে স্থাপন করেছেন সারি সারি পায়খানা - সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ!
এতদিনে মোদীভাই এ কথাটা ভেবেছেন। বাঙালি শিবরাম বহু আগেই ভেবেছিলেন।


শুওরটা কচু চেনে, মা কালী চেনে পাঁঠা-
রতনে রতন চেনে, টাটায় চেনে ঝাঁটা !
টাটা ঢুকলেই শিল্প, শিল্প মানেই চাকরি, তার মানেই কাজ করতে হবে। অতএব বন্ধুগণ, আসুন আমরা পোত্যেকে মিলে টাটাকে বাংলা থেকে চির নিব্বাসন দিই, এখন দিদি বললেও মানছি না।
কোরাস।। মানছি না, মানব না, ইনকিলাব জিন্দাবাদ....ইত্যাদি।


Kiss-এ kiss-এ লাভ নেই আইনের চক্ষে,
নোট ছাড় পুলিশকে, তবে পাবে রক্ষে।
তেলে-জলে মিশ খায় নাকি কোনও দিন তা?
অলি ফুলে কিস্‌ খায়, মন নাচে ধিন্‌-তা।
শোনো সুধীজন শোনো, সব ফুলে মধু নেই-
কিসে-বিষে-মিশে শেষে যাবে টেঁশে, জেনো এই।

Friday, March 5, 2021

প্রেতচক্র রহস্য

 প্রেতচক্র রহস্য।।


'প্ল্যাঞ্চেট নয়, ওর উচ্চারণ হবে 'প্লাঁশেৎ' ' - ইতু বলল। ও টেনিদার গল্পের খুব ভক্ত, নির্ঘাৎ ক্যাবলার রোল প্লে করছে এখন।

'আচ্ছা, মানছি। গল্পটা শুনতে দিবি এখন?' ঋতুদি স্পষ্টই বিরক্ত ছোট বোনের পাকামোতে। 

এসেছি কলেজের বন্ধু দেবুর বিয়ের বউভাতে ওদের বাড়ি রাঁচিতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে ওর ছোড়দি ঋতুদি, ছোট বোন ইতু আর তাদের বন্ধুরা প্ল্যান করছিল ফুলশয্যায় আড়ি পাতার। দেবুর এই ব্যাপারটা একেবারে অপছন্দ। তাই আমি আর আরেক পুরনো বন্ধু রবি মিলে দায়িত্ব নিয়েছি সবাইকে আটকাবার, অথচ বেশ কায়দা করে। কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই লোডশেডিং। জেনারেটার চললেও, সে তো এমার্জেন্সি সার্ভিস দিচ্ছে শুধু। এই টিমটিমে আলোয় আমি শুরু করলাম রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে আমাদের প্রেত-চর্চার গল্প। তারই সূত্র ধরে এল প্ল্যাঞ্চেটের প্রসঙ্গ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি, যেখানে শুরু করেছিলাম তার পর থেকে। 

আমরা সবাই তখন সদ্য কিশোর, ইন্টারমিডিয়েট পড়তে এসেছি ধানবাদ থেকে রাঁচিতে। তখনকার ফার্স্ট ইয়ারের হোস্টেলগুলো ছিল ঘোড়ার আস্তাবলের তুল্য, থ্রি-বেডের রুম একেকটা। জানলা নেই, তবে ওপর কিছুটা খোলা আর লম্বা টানা জাফরি আর গ্রিল দেওয়া বারান্দা। আমাদের রুমগুলো ছিল দোতলায়, নীচের তলায় আদিবাসী ছাত্রদের হোস্টেল। বাথরুম ছিল নিচের তলায়, হোস্টেলের বাইরের দিকে। রাত্রে যেতে হলে বাজে অবস্থা। তার চেয়েও বাজে ছিল মিশনারি কলেজের হোস্টেলের ডিসিপ্লিন। রাত্রি সাড়ে দশটায় মেন সুইচ অফ করে দেওয়া হত, অর্থাৎ ঘুমোও এবার। আরে ঘুমোব কী! হোমটাস্ক আছে না? ক্লাস-টেস্ট আছে না? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফাদার সুরিন সেসব বুঝতেন না, এখন ঘুমোও, ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। ধুর, তাই হয় নাকি আবার! আমরা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়তাম। রাঁচিতে গরমটা কম বলে ফ্যানের জন্যে কষ্ট হত না।

একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি রুমমেট প্রিয়তোষের মশারি দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবলাম লণ্ঠনের থেকে আগুন লেগে গেছে হয়ত। তার ঠিক দু'দিন পরে মাঝরাতে বাথরুম গেছি। ফিরে এসে দেখি আমার সব ক'টা বই খাতা যত্ন করে বিছানায় সাজানো- টেবিলে একটাও নেই! বুঝেছি, ব্যাটা প্রিয় বা শিশিরের কাণ্ড, অথচ ওরা কিনা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরো দু'দিন পরে বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দেখি শিশিরের তোষক-বিছানা ধিকধিক করে জ্বলছে- বন্ধ ঘরে আগুন এল কোত্থেকে! পরদিন রবিবার ছিল।  সকালে আমার স্টিলের ট্রাঙ্কে এক বাটি জল রেখেছিলাম, হঠাৎ আমার চোখের সামনে বাটিটা প্রায় ছ-ইঞ্চি লাফিয়ে নীচে পড়ে গেল, ঘর জলে জলময়। এবার মনে হল ভৌতিক কাণ্ডই বটে।

কথাটা চাউর হতেই কল্যাণ, জহর, প্রদীপ, অশোক সবাই জড়ো হল। অশোক বলল ও নাকি প্ল্যাঞ্চেট করে ভূত নামাতে পারে। আমি বাবার কাছে প্ল্যাঞ্চেটের গল্প শুনেছিলাম আর শরদিন্দুর বরদার গল্পও পড়া ছিল, তবে ব্যাপারটায় কৌতূহল থাকলেও বিশ্বাস তেমন ছিল না, তবু আমরা প্রাণের দায়ে মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব। ঠিক হল পরদিন রাত্রি সাড়ে দশটায় আলো নিভলে অশোক ওর যন্ত্র পাতবে, আর হারুন রশিদ থাকবে রুমের বাইরে ফাদার সুরিন বা ডুংডুং এলে অ্যালার্ট করতে। 

কথামত পরদিন অশোক ওর স্পেশ্যাল টেবল আর প্ল্যাঞ্চেটের বোর্ড নিয়ে এল। ঘরের এককোণে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে বোর্ডে সাদা কাগজ পেতে একটা পেন্সিল দু-আঙুলে হাল্কা করে ধরলাম আমরা চারজনে- আমি, অশোক, কল্যাণ আর প্রিয়তোষ, শিশির আর প্রদীপ বসে আছে ঘরের এক কোণে, বাইরে হারুন। হঠাৎ একটা হাল্কা চন্দনের গন্ধ এল নাকে, সেই সঙ্গে দরজায় মৃদু করাঘাত। 'এসেছে'- অশোক ফিসফিস করে বলল। ও প্রশ্ন শুরু করল আর উত্তরে আমাদের আঙুলে ধরা পেন্সিল খসখস করে চলতে লাগল কাগজে।

'তুমি এসেছ?'- অশোক বলা মাত্র পেন্সিল নড়ে উঠল।
'কী নাম তোমার?'
'গোপাল।'- লেখা হল অস্পষ্ট অক্ষরে।
'কী চাও?'
'তুম সব কী মৌত!'
'কেন? কী ক্ষতি করেছি আমরা তোমার?'
'এই রুমে কেউ থাকবে না তোমরা।'
'কেউ না?'
'শুধু অশোক থাকবে।'
'কেন?'
'ও খুব ভাল ছেলে। ভূত বিশ্বাস করে।'
এটুকু লেখা হতেই কল্যাণের মাথা গরম হয়ে উঠল। 'ব্যাটা ভূত! অশোক একলা ভাল ছেলে! আর আমরা সব খারাপ? এ সব অশোকের আঙুলের কারসাজি। বল!'- বলেই অন্ধকারে অশোকের কলার চেপে ধরল। এই সুযোগে ভূত পালাল আর শিশির আলো বাড়িয়ে দিল। সবাই চেপে ধরায় অশোক স্বীকার করল যে সে কিছুটা মজা করেছে, তবে ওর উপরেও মনে হয় আরো কেউ কারসাজি করছিল, সেটা কে সেও জানে না।

আমরা বাইরে এলাম। দেখি হারুন বারান্দার এককোণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নাড়া দিতেই উঠে বলে- 'এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।' কে জানে সেও ব্যাটা ঢপ দিচ্ছে কিনা!

পরদিন ফাদার সুরিন ডাকলেন ওঁর রুমে। বলেন 'কাল তোমাদের রুমে অনেক রাত অব্ধি আলো জ্বলেছে, এনিথিং রং?' 
'না ফাদার, একটা হোমটাস্ক বাকি ছিল, তাই চারজনে মিলে সল্ভ করছিলাম।'
'ইটস অলরাইট। তবে কি জানো? এই হোস্টেলের একটা রুমে অনেক বছর আগে একটা ছেলে ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে সুইসাইড করেছিল। তাই রাত্রে একটু সাবধানে থাকবে।'

আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনমতে ঢোঁক গিলে বললাম, 'ফাদার, ছেলেটার নাম কী ছিল?'
'হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো দ্যাট? আই থিঙ্ক, গোপাল। হ্যাঁ, গোপাল মহাপাত্র। দ্যাট কিউট ওড়িয়া বয়!'

হঠাৎ দপ করে আলো জ্বলে উঠল। 'শেষে তুইও ঢপ দিচ্ছিস'- পেছন থেকে কার গলা পেলাম। দেখি দেবু। কখন উঠে এসেছে ফুলশয্যা থেকে। 'আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের হোস্টেলে থাকিনি কখনও, কিন্তু রুমগুলো তো দেখেছি। ফ্যান কোথায় আছে রে যে গলায় দড়ি দেবে!'

'শালা! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর? ফুলশয্যাটা বিনা আড়ি-পাতায় উদ্ধার করে দিলাম, কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবি!'  

'দাদা, ঢপ হলেই বা ক্ষতি কী? গল্পটা কিন্তু হেব্বি জমেছিল।'- ইতু বলে।

ইতিমধ্যে দেবুর মাসতুতো দাদা বিক্রমদা কখন ঢুকেছে দেখিনি। ও সেই কলেজে আমাদের চার বছরের সিনিয়ার ছিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- 'গোপালের গল্পটা মিথ্যে নয়। এই ঘটনার পরেই ঘাবড়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল সব কটা ফ্যান খুলে ফেলেন। আংটাগুলো আছে, দেখিসনি?' 

'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?' ঋতুদি যেন অকূলপাথারে। 
'ভূত জিনিষটা এত রহস্যময়, তার গল্পে একটু রহস্য থাকবে না?' আমি গল্প শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।