ছাগল-বাবা ।।
(ছোট গল্প)
মাটির নীচ থেকে ড্রিল করে কোল-বেড মিথেন উৎপাদন প্রজেক্টের কাজে এসেছি ঝাড়খন্ডের ধানবাদ জেলার নিরসাতে । ২নং ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে যে রাস্তা শালুকচাপরা গ্রামের ভিতর দিয়ে বালিয়াপুর গেছে তার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রিগ-রোড বানানো হয়েছে । মোরাম ঢালা কাঁচা রাস্তা, ফাঁকাই পড়ে থাকার কথা । অথচ রুট সার্ভে করতে এসে আমার তো মাথায় হাত । দলে দলে গ্রাম্য লোকেরা চলেছে ওই পথ ধরে, অন্ততঃ শ-দেড়েক তো হবেই । এদের পাশ দিয়ে জীপ নিয়ে যেতে হলেই তো দিন কাবার ! একটু নেমে খোঁজ নিলাম । ওরা যাচ্ছে ছাগল-বাবার কাছে আশীর্বাদ নিতে । অদ্ভুত নাম তো! তিনি আবার নাকি সাক্ষাৎ অশ্বিনীকুমারের অবতার- একেবারে ধন্বন্তরী । সর্দি-জ্বর-ম্যালেরিয়া-টাইফয়েড হেন রোগ নেই যা তাঁর বশ মানে নি । বোঝ ব্যাপারখানা ! নিরীহ গ্রাম্য লোকগুলোকে ঠকিয়ে ভালই জোচ্চুরির ব্যবসা ফেঁদেছে দেখছি লোকটা।
(ছোট গল্প)
মাটির নীচ থেকে ড্রিল করে কোল-বেড মিথেন উৎপাদন প্রজেক্টের কাজে এসেছি ঝাড়খন্ডের ধানবাদ জেলার নিরসাতে । ২নং ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে যে রাস্তা শালুকচাপরা গ্রামের ভিতর দিয়ে বালিয়াপুর গেছে তার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রিগ-রোড বানানো হয়েছে । মোরাম ঢালা কাঁচা রাস্তা, ফাঁকাই পড়ে থাকার কথা । অথচ রুট সার্ভে করতে এসে আমার তো মাথায় হাত । দলে দলে গ্রাম্য লোকেরা চলেছে ওই পথ ধরে, অন্ততঃ শ-দেড়েক তো হবেই । এদের পাশ দিয়ে জীপ নিয়ে যেতে হলেই তো দিন কাবার ! একটু নেমে খোঁজ নিলাম । ওরা যাচ্ছে ছাগল-বাবার কাছে আশীর্বাদ নিতে । অদ্ভুত নাম তো! তিনি আবার নাকি সাক্ষাৎ অশ্বিনীকুমারের অবতার- একেবারে ধন্বন্তরী । সর্দি-জ্বর-ম্যালেরিয়া-টাইফয়েড হেন রোগ নেই যা তাঁর বশ মানে নি । বোঝ ব্যাপারখানা ! নিরীহ গ্রাম্য লোকগুলোকে ঠকিয়ে ভালই জোচ্চুরির ব্যবসা ফেঁদেছে দেখছি লোকটা।
যাক্গে আমাদের কাজ তো শুরু হল । কিন্তু শুরুতেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটা কাজ
করতে হল আমাকে । একদিন রাত্রে আমাদের একটি লেবারকে কামড়াল পাহাড়ী বিছায় ।
মেডিকটি নতুন, তার আছে শুধু ফার্স্ট-এড সার্টিফিকেট, আর রিগের সামান্য
স্টকে তেমন ওষুধ-বিষুদও নেই । নিকটস্থ হাসপাতাল অন্ততঃ ৫০ কিমি দূরে । এই
অবস্থায় লোকজনেরা বলল, নেই মামা থেকে কানা মামা ভাল; আপনি ওকে একটু
ছাগল-বাবার কাছে নিয়ে যান না- এই তো জীপে মিনিট পনের ।
অগত্যা তাই সই । বাবার ছোট্ট কুঁড়েয় গিয়ে দেখি বাইরে দুজন শিষ্য হামান-দিস্তা নিয়ে ওষুধ তৈরী করছে, বাবা ভিতরে । একজন গিয়ে ডেকে আনতে একটি অদ্ভুত-দর্শন মানুষ বেরিয়ে এল, যার মুখখানা ছাগলের মত, অর্থাৎ ছাগ-মুখোশধারী । কোন কথা না বলে উনি রোগীকে নিয়ে পড়লেন । কিছুক্ষণ ধোওয়াধুয়ি আর ঘষাঘষির পর আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি দুটো ইঞ্জেকশন দিয়ে বললেন- টিটেনাস আর এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিলাম । বিষটাও এনেস্থেটিক ব্লীচ দিয়ে ধুয়ে দিয়েছি । তবে মনে হচ্ছে বার্ক স্কর্পিওন, তাই ২৪ ঘন্টা কিছু বলা যাবে না । এখন ও ঘুমোক, সকালে একটা আইবুপ্রুফেন দিতে হবে । আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমাকে কুঁড়ের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন । তারপর মুখোশটা সরিয়ে নিতেই আমি 'অজামিল' বলে চেঁচিয়ে উঠলাম । আমাদের বন্ধু ডাঃ অজামিল দত্ত । শুনে গেলাম তার বিস্তারিত উপাখ্যান, সব শেষে ও মন্তব্য করল-
-ভুল চিকিৎসা করে নেতার মেয়েকে মারার অপরাধে আমার মেডিক্যাল লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হল । অথচ ভুল যে আমি করিনি তা আর কাউকে বোঝাতে পারলাম না । তাই 'হিপোক্রিটিক ওথের' মান রাখতে এই পথ বেছে নিয়েছি । এদেশে বুক ফুলিয়ে বেআইনি কাজ করতে গেলে হয় সাধু নয় নেতা সাজতেই হবে ।
-আর 'অজামিল'এর সাথে মিল রাখতে 'অজ' অর্থাৎ ছাগলের মুখোশ, তাই তো ? আমি হাসলাম ।
- তা তো বটেই, আসলে identity হারাতে তো আমি চাইনি ।
সে এক যুগ ছিল, যখন মহাপাপী অজামিল বুদ্ধি করে ছেলের নাম রাখে নারায়ণ । মৃত্যুকালে ছেলেকে ডাকার ছলে সেই নারায়ণের নাম করেই সে বৈকুণ্ঠলাভ করেছিল । জানিনা আমাদের এযুগের অজামিল পাপ করছে না পুণ্য, সে কি নিজের কর্মবলে স্বর্গলাভ করবে, না ঈশ্বরও শেষে নামগানের ঘুষ চেয়ে বসবেন !
মুম্বাই, ৭ই জুন, ২০১৪ ।
অগত্যা তাই সই । বাবার ছোট্ট কুঁড়েয় গিয়ে দেখি বাইরে দুজন শিষ্য হামান-দিস্তা নিয়ে ওষুধ তৈরী করছে, বাবা ভিতরে । একজন গিয়ে ডেকে আনতে একটি অদ্ভুত-দর্শন মানুষ বেরিয়ে এল, যার মুখখানা ছাগলের মত, অর্থাৎ ছাগ-মুখোশধারী । কোন কথা না বলে উনি রোগীকে নিয়ে পড়লেন । কিছুক্ষণ ধোওয়াধুয়ি আর ঘষাঘষির পর আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি দুটো ইঞ্জেকশন দিয়ে বললেন- টিটেনাস আর এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিলাম । বিষটাও এনেস্থেটিক ব্লীচ দিয়ে ধুয়ে দিয়েছি । তবে মনে হচ্ছে বার্ক স্কর্পিওন, তাই ২৪ ঘন্টা কিছু বলা যাবে না । এখন ও ঘুমোক, সকালে একটা আইবুপ্রুফেন দিতে হবে । আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমাকে কুঁড়ের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন । তারপর মুখোশটা সরিয়ে নিতেই আমি 'অজামিল' বলে চেঁচিয়ে উঠলাম । আমাদের বন্ধু ডাঃ অজামিল দত্ত । শুনে গেলাম তার বিস্তারিত উপাখ্যান, সব শেষে ও মন্তব্য করল-
-ভুল চিকিৎসা করে নেতার মেয়েকে মারার অপরাধে আমার মেডিক্যাল লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হল । অথচ ভুল যে আমি করিনি তা আর কাউকে বোঝাতে পারলাম না । তাই 'হিপোক্রিটিক ওথের' মান রাখতে এই পথ বেছে নিয়েছি । এদেশে বুক ফুলিয়ে বেআইনি কাজ করতে গেলে হয় সাধু নয় নেতা সাজতেই হবে ।
-আর 'অজামিল'এর সাথে মিল রাখতে 'অজ' অর্থাৎ ছাগলের মুখোশ, তাই তো ? আমি হাসলাম ।
- তা তো বটেই, আসলে identity হারাতে তো আমি চাইনি ।
সে এক যুগ ছিল, যখন মহাপাপী অজামিল বুদ্ধি করে ছেলের নাম রাখে নারায়ণ । মৃত্যুকালে ছেলেকে ডাকার ছলে সেই নারায়ণের নাম করেই সে বৈকুণ্ঠলাভ করেছিল । জানিনা আমাদের এযুগের অজামিল পাপ করছে না পুণ্য, সে কি নিজের কর্মবলে স্বর্গলাভ করবে, না ঈশ্বরও শেষে নামগানের ঘুষ চেয়ে বসবেন !
মুম্বাই, ৭ই জুন, ২০১৪ ।
No comments:
Post a Comment