Thursday, November 28, 2019

রম্য রচনা- বিয়ের চিঠি।।

বিয়ের চিঠি।।
বাড়িতে খুঁজলে এখনও পুরোনো কিছু বিয়ের নিমন্ত্রণের চিঠিপত্র খুঁজে পাই। তার মধ্যে কয়েকটা বেশ মনে রাখার মত। একবার একটা খুঁজে পেলাম কাকার এক বন্ধুর বিয়ের প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো চিঠি। ছাপানো কভারের ভেতরের ভাঁজে তিনি লিখছেন নিজের হাতে-
"জীবনটা নয় কঠিন পাথরে গড়া,
মালার বাঁধনে তাই ত দিতেছি ধরা;
আঠারো বোশেখ হে বন্ধু এসো
প্রীতিতে হৃদয় ভরি,
তব শুভেচ্ছা আজিকে পাথেয় করি।"
উত্তর ভারতীয়দের বিয়েতে একটা শ্লোক নিশ্চয়ই থাকবে হেডিংএ, মন্দ লাগে না পড়তে, শুধুমাত্র 'শ্রীশ্রী প্রজাপতয়ে নমঃ' থেকে হয়ত ভাল-
"মঙ্গলম্‌ ভগবান বিষ্ণু, মঙ্গলম্‌ গরুড়ধ্বজঃ।
মঙ্গলম্‌ পুণ্ডরীকাক্ষঃ, মঙ্গলায় তনো হরিঃ।।
আমাদের পাড়ার ভার্মা চাচা আরেকটু বৈচিত্র্য দেখিয়েছিলেন তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ের কার্ডে। তার মূল অংশে হিন্দিতে লেখা ছিল-
"ভবসাগর মেঁ উতর রহে হ্যাঁয় দো প্রাণী নাদান খিবৈয়া,
শ্রীমান দো আশিস উনহে, ত্যয়র সকে ওয়ে জীবন নাইয়া।
ভেজ রহে হ্যাঁয় নেহ নিমন্ত্রণ প্রিয়বর তুমহে বুলানে কো,
হে মানস কে হংসরাজ তুম ভুল ন জানা আনে কো।"
প্রসঙ্গ ক্রমে জানা গেল একজন বিখ্যাত ব্যক্তির কথা। বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীকে মেজবৌদি তাঁর ছোট দেওরটির জন্যে পছন্দ করে শ্বশুর মহাশয়কে বিস্তারিত জানালে তিনি কূল গোত্র ইত্যাদি দেখে বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন মামা ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের পিসিমা আদ্যাসুন্দরী। ২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ, রবিবার, ইংরেজি ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্য পাত্রীর পিত্রালয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কন্যাহ্বানের নিয়মানুযায়ী পাত্রীকে পাত্রের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করা হয়। পাত্রীপক্ষ সদলবলে কলকাতায় চলে আসেন। বেণীমাধব রায়চৌধুরী আত্মীয় স্বজনসহ কলকাতায় একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। এ জন্য কন্যা পক্ষের পাথেয় খরচ বাবদ ষাট টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ বাইশ টাকা তিন পাই খরচ বহন করেছিলেন পাত্রের বাবা। ক্যাশ বইয়ের হিসাবে আরো জানা যায়, বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও ছাপা হয়েছিল এবং ডাকযোগে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছিল।
পাত্র রসিক মানুষ, তাই দীনেশচন্দ্র সেন, নগেন্দ্র গুপ্ত প্রমুখ ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল হাতে লেখা একটি বিচিত্র রকমের চিঠি দিয়ে। নিমন্ত্রণপত্রটির বয়ানটি হুবহু এরকম:
‘আগামী রবিবার ২৪শে অগ্রহায়ণ তারিখে শুভদিনে শুভলগ্নে আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ বিবাহ হইবেক। আপনি তদুপলক্ষে বৈকালে উক্ত দিবসে ৬নং জোড়াসাঁকোস্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে উপস্থিত থাকিয়া বিবাহাদি সন্দর্শন করিয়া আমাকে এবং আত্মীয়বর্গকে বাধিত করিবেন।
ইতি
অনুগত
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’
চিঠিটা বিচিত্র নয়? পাত্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং! এই চিঠির উপরের দিকে সচিত্র অ্যাম্বুস করা ছিল, ‘আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু হায়’।

No comments:

Post a Comment