বিহার-বেঙ্গল সন্তরণ চ্যালেঞ্জ!!গল্প
হাইস্কুলে পড়ার সময় সাঁতারটা মোটামুটি শেখার পর জল দেখলেই হাত-পা গুলো কেমন যেন উসখুস করত। ভাবতাম, যারা সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে যায় বা ভয়ে মরে তারা নিতান্তই বোকা। আমার পাড়ার বন্ধুরাও এ ব্যাপারে কেউ কম যেত না কিন্তু আমার মত আত্মবিশ্বাস বোধহয় কারো ছিল না।
একবার মার্চ মাসে আমরা দামোদরের ধারে পিকনিকে গেছি। এপারে আমাদের দিকটা বিহারে, ওপারটা বেঙ্গল। জল তখন অতটা ঠাণ্ডা নেই। অগত্যা আমাদের বন্ধুদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেছে সাঁতার কাটার জন্যে। তার মধ্যে তোতা বলে উঠল, বিহার থেকে বেঙ্গল গিয়ে ফিরে আসতে হবে, যে পারবে সে আজকের হিরো! এতটা কারো সাহস ছিল না, যদিও এটা সেই বিদ্যাসাগরের আমলের মেদিনীপুরের দামোদর নয়। তবু আমি কি ভেবে হাত তুলে দিলাম। অরে এই তো এতটুকু! লেকের জলে তো আমরা প্রতিদিন এর চেয়ে বেশি দূরত্বে দু-তিনবার এপার ওপর করি। তখন মরা নদী, স্রোতও তেমন ছিল না। 'তোদের সাহস হোক না হোক, আমি ঠিক পারব, দেখে নে।' সবাই হই হই করতেই আমি জলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
এদিকে আমি সাঁতার শুরু করতেই হয়েছে কি, ডিভিসির তেনুঘাট না কোথাকার যেন কোন ড্যামের জল ছেড়ে দিয়েছে। আমি বুঝতে পারছি নদীর মাঝখানে স্রোত বেড়ে গেছে, আমি কিন্তু অবলীলায় দু মিনিটের মধ্যেই মাঝনদীতে এসে পড়েছি। তারপর আর এগোতে পারি না, দম ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু মান-সম্মানের প্রশ্ন, হেরে গেলে চলবে না। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ দেখি তীরের কাছে এসে পড়েছি। 'এই তো একটু, আরেকটু হলেই -', কারা যেন উৎসাহ দিচ্ছে। আমি উত্তেজনার বশে খেয়াল করিনি কখন হাঁটু জলে এসে পড়েছি। ঠাহর হতেই হাসতে হাসতে তীরে। এবার একটু দম নিয়ে ওপারে ফিরতে হবে।
হঠাৎ কারা যেন সাবাস সাবাস বলে উঠল। গলাগুলো খুব চেনা ঠেকল। ও মা, দেখি বন্ধুরা আমার আগেই সবাই এ পারে এসে গেছে। কি করে এল? ও হরি! আমি তো যে বিহারে ছিলাম সেই বিহারেই আছি! এতক্ষন তবে কি করলাম?
হঠাৎ দেখি তীরের কাছে এসে পড়েছি। 'এই তো একটু, আরেকটু হলেই -', কারা যেন উৎসাহ দিচ্ছে। আমি উত্তেজনার বশে খেয়াল করিনি কখন হাঁটু জলে এসে পড়েছি। ঠাহর হতেই হাসতে হাসতে তীরে। এবার একটু দম নিয়ে ওপারে ফিরতে হবে।
হঠাৎ কারা যেন সাবাস সাবাস বলে উঠল। গলাগুলো খুব চেনা ঠেকল। ও মা, দেখি বন্ধুরা আমার আগেই সবাই এ পারে এসে গেছে। কি করে এল? ও হরি! আমি তো যে বিহারে ছিলাম সেই বিহারেই আছি! এতক্ষন তবে কি করলাম?
'এটা কেমন করে হলো?' আমি হতাশ হয় জিজ্ঞেস করলাম। 'এই জন্যেই বলি, বিজ্ঞানের বইগুলো শুধু মুখস্থ না করে তার মানেগুলো বোঝার চেষ্টা কর,' সদ্য হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা শেষ করা বাবলুদা হেসে বলল। আমি তবুও বুঝি না। 'ওরে গাধা, বার্নৌলির থিওরেম মনে কর। যখন ড্যামে জল ছাড়ে মাঝনদীতে জলের গতিবেগ বেড়ে যায় আর তার ফলে চাপ যায় কমে। ফলে তুই খুব সহজেই মাঝ নদীতে চলে গেলি, কিন্তু সেই একই কারণে পার হতে পারলি না।'
'তাহলে আমি ফিরে এলাম কি করে, বাবলুদা?'
'বুঝতে পারিস নি কখন ঘুরে গেছিস। আর খেয়াল করেছিস বোধহয় যে এ পাড়ে একটা ভেতরের দিকে বেন্ড আছে। তার ফলে এ প্রান্তে জলের বেগ বেশি, চাপ কম। যাক, এর বেশি বুঝতে চাস না, তাহলে আমার জ্ঞানে কুলোবে না।'
'তাহলে আমি ফিরে এলাম কি করে, বাবলুদা?'
'বুঝতে পারিস নি কখন ঘুরে গেছিস। আর খেয়াল করেছিস বোধহয় যে এ পাড়ে একটা ভেতরের দিকে বেন্ড আছে। তার ফলে এ প্রান্তে জলের বেগ বেশি, চাপ কম। যাক, এর বেশি বুঝতে চাস না, তাহলে আমার জ্ঞানে কুলোবে না।'
কি জানি বাবলুদা কতটা ঠিক বলেছিল, কোন ফিজিক্সের বইয়ে এরকম উদাহরণ জন্মে দেখিনি। তবে এ ও সত্যি যে, এরপর আর কোনোদিন আমি সাঁতরে নদী পারাপার করার সাহস দেখাই নি।
No comments:
Post a Comment