পুতুল।।
রেহানার বিয়ে আজ, হাসনাবাদ হাই মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী রেহানা। মাদ্রাসা থেকে ফিরে বান্ধবী পরভিনের সঙ্গে পুতুল খেলছিল রেহানা। এমন সময় আম্মির আবির্ভাব, ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে! খেলার আসর থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে ফ্রক ছাড়িয়ে একটা নতুন রঙচঙে শালোয়ার-কামিজ পরিয়ে দেওয়া হল তাকে। আব্বু ভ্যান-রিক্সা চালায়, দেখা গেল দুল্হা আর তার পরিবারকে নিয়ে আসছে তাঁরই ভ্যানে, পাড়ার ছেলে আনোয়ার। খুব সামান্য সাজসজ্জা হলেও উৎসবের পরিবেশ।
রেহানার আব্বা সেলিম নতুন কুটুমদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রেহানার আম্মি বলছিল বটে ও নাকি পড়াশুনায় খুব ভাল, মাদ্রাসার মাস্টারমশায়-দিদিমণিরা অনেক আশা রাখেন তার উপর। কিন্তু মেয়েমানুষকে বেশি পড়িয়ে হবে কী, বিশেষ যখন একটা সাধা রিশতা হাতে এসেছে? না না, এই রোজগারে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না। স্ত্রীর বিয়েতে তেমন মত না থাকলেও সেলিমের জেদাজেদিতে রাজি হতে হয়েছে।
সাক্ষী, অতিথিরা এসে গেছে, নিকটস্থ মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবও মেহেরবানী করে আসতে রাজি হয়েছেন। দেনমোহরের কথাবার্তা হয়ে গেছে, শুধু নিকাহের কাজটুকু বাকি। কিন্তু দেরি হচ্ছে কেন? রেহানা অবশ্য সকাল থেকেই খুব কান্নাকাটি করছিল, তা মেয়ে যখন পরের বাড়ি যাবার আগে তো কাঁদবেই। সেলিম মিঞা ভেতরে সাকিনাবিবিকে তাগাদা দিতে গেল।
কিন্তু রেহানা কই? সাকিনা এদিক-ওদিক, খাটের তলা আলমারির পেছনে খুঁজে বেড়াচ্ছে, রেহানা কোথায়? 'ও গো কী হবে, রেহানাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না'- কেঁদে ফেলে সাকিনা। আক্রোশে ওর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকায় সেলিম, 'বল হারামজাদি, কোথায় ভাগিয়েছিস মেয়েটাকে?' সাকিনা উত্তর না দিয়ে কাঁদতে থাকে।
ভেতরে একচিলতে উঠোন আর গোসলখানা, তার এককোণে রেহানার খেলাঘর। পাশেই খিড়কি দরজা খোলা, পালিয়েছে রেহানা। খেলনার বাক্সের পাশে পড়ে আছে গত সপ্তাহে শবেবরাতের মেলায় কেনা ওর নতুন পুতুলখানা- তার ধড়খানা পড়ে একদিকে, গলাটা ছুরি দিয়ে কাটা- মাথা পড়ে আছে অন্য একদিকে। উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে বাইরে বেরিয়ে এল সেলিম। একি, পুলিশ কেন?
'শোন হে সেলিম!' দারোগা শাসায়, 'তোমার মেয়ে বসে আছে হাসনাবাদ থানায়, দারোগা বললেন। তোমরা মাইনর মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলে, শালা জেল খাটতে হবে সেটা জানো? বিয়ে হবার আগেই রেহানা ওর এক দিদিমণির সাথে এসে থানায় রিপোর্ট করেছে বলে তুমি বেঁচে গেলে। আঠারোর আগে আর মেয়ের রজামন্দি ছাড়া বিয়ে দেবে না লিখে মুচলেকা দিলে তবেই তুমি রেহাই পাবে, এখন কী করবে তুমিই ঠিক কর।'
তদন্ত করতে একবার ভেতরে এলেন দারোগা সাহেব। গলাকাটা পুতুল আর পাশে পড়ে থাকা ধারালো ছুরি দেখে শিউরে উঠলেন তাঁর মত একজন পোড়খাওয়া মানুষ।
গল্পটা আমার শেষ হয় নি। রেহানাদের গল্প শেষ হয় না, চলতেই থা্কে, চলতেই থাকে যে পর্যন্ত না এরকমই নৃশংসভাবে খুন হয় আরেকটি রেহানার কৈশোর, তার পুতুল খেলার বয়স। আপনারা দেখুন না যদি গল্পটাকে একটা শেষ পরিণতি দিতে পারেন।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
রেহানার বিয়ে আজ, হাসনাবাদ হাই মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী রেহানা। মাদ্রাসা থেকে ফিরে বান্ধবী পরভিনের সঙ্গে পুতুল খেলছিল রেহানা। এমন সময় আম্মির আবির্ভাব, ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে! খেলার আসর থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে ফ্রক ছাড়িয়ে একটা নতুন রঙচঙে শালোয়ার-কামিজ পরিয়ে দেওয়া হল তাকে। আব্বু ভ্যান-রিক্সা চালায়, দেখা গেল দুল্হা আর তার পরিবারকে নিয়ে আসছে তাঁরই ভ্যানে, পাড়ার ছেলে আনোয়ার। খুব সামান্য সাজসজ্জা হলেও উৎসবের পরিবেশ।
রেহানার আব্বা সেলিম নতুন কুটুমদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রেহানার আম্মি বলছিল বটে ও নাকি পড়াশুনায় খুব ভাল, মাদ্রাসার মাস্টারমশায়-দিদিমণিরা অনেক আশা রাখেন তার উপর। কিন্তু মেয়েমানুষকে বেশি পড়িয়ে হবে কী, বিশেষ যখন একটা সাধা রিশতা হাতে এসেছে? না না, এই রোজগারে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না। স্ত্রীর বিয়েতে তেমন মত না থাকলেও সেলিমের জেদাজেদিতে রাজি হতে হয়েছে।
সাক্ষী, অতিথিরা এসে গেছে, নিকটস্থ মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবও মেহেরবানী করে আসতে রাজি হয়েছেন। দেনমোহরের কথাবার্তা হয়ে গেছে, শুধু নিকাহের কাজটুকু বাকি। কিন্তু দেরি হচ্ছে কেন? রেহানা অবশ্য সকাল থেকেই খুব কান্নাকাটি করছিল, তা মেয়ে যখন পরের বাড়ি যাবার আগে তো কাঁদবেই। সেলিম মিঞা ভেতরে সাকিনাবিবিকে তাগাদা দিতে গেল।
কিন্তু রেহানা কই? সাকিনা এদিক-ওদিক, খাটের তলা আলমারির পেছনে খুঁজে বেড়াচ্ছে, রেহানা কোথায়? 'ও গো কী হবে, রেহানাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না'- কেঁদে ফেলে সাকিনা। আক্রোশে ওর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকায় সেলিম, 'বল হারামজাদি, কোথায় ভাগিয়েছিস মেয়েটাকে?' সাকিনা উত্তর না দিয়ে কাঁদতে থাকে।
ভেতরে একচিলতে উঠোন আর গোসলখানা, তার এককোণে রেহানার খেলাঘর। পাশেই খিড়কি দরজা খোলা, পালিয়েছে রেহানা। খেলনার বাক্সের পাশে পড়ে আছে গত সপ্তাহে শবেবরাতের মেলায় কেনা ওর নতুন পুতুলখানা- তার ধড়খানা পড়ে একদিকে, গলাটা ছুরি দিয়ে কাটা- মাথা পড়ে আছে অন্য একদিকে। উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে বাইরে বেরিয়ে এল সেলিম। একি, পুলিশ কেন?
'শোন হে সেলিম!' দারোগা শাসায়, 'তোমার মেয়ে বসে আছে হাসনাবাদ থানায়, দারোগা বললেন। তোমরা মাইনর মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলে, শালা জেল খাটতে হবে সেটা জানো? বিয়ে হবার আগেই রেহানা ওর এক দিদিমণির সাথে এসে থানায় রিপোর্ট করেছে বলে তুমি বেঁচে গেলে। আঠারোর আগে আর মেয়ের রজামন্দি ছাড়া বিয়ে দেবে না লিখে মুচলেকা দিলে তবেই তুমি রেহাই পাবে, এখন কী করবে তুমিই ঠিক কর।'
তদন্ত করতে একবার ভেতরে এলেন দারোগা সাহেব। গলাকাটা পুতুল আর পাশে পড়ে থাকা ধারালো ছুরি দেখে শিউরে উঠলেন তাঁর মত একজন পোড়খাওয়া মানুষ।
গল্পটা আমার শেষ হয় নি। রেহানাদের গল্প শেষ হয় না, চলতেই থা্কে, চলতেই থাকে যে পর্যন্ত না এরকমই নৃশংসভাবে খুন হয় আরেকটি রেহানার কৈশোর, তার পুতুল খেলার বয়স। আপনারা দেখুন না যদি গল্পটাকে একটা শেষ পরিণতি দিতে পারেন।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
No comments:
Post a Comment