Wednesday, May 11, 2016

Bengali Micro-story 42 - Cha.

চা।।

'বুঝলি ঝিঙে, একটু পরে আসছে গোবিন্দপুর। দেখবি খেয়ে, চা কাকে বলে।'
'তুমি এ চায়ের সন্ধান কোথায় পেলে রাণাদা'- ঝিঙের প্রশ্ন। আসলে কিন্তু ওর নাম পটল, ঝিঙে নয়। তবু দু'বেলা নাম নেওয়াটা তোলার থেকে কোনও অংশে কম নয় বলে রাণাদা ওকে ঝিঙে নামেই ডাকেন। পাড়াতুতো দাদা শুধু নয়, জামাইবাবুও বটে। তাই পটল আর ওনাকে ঘাঁটায় না। ওরা মিহিজাম থেকে কল্যাণেশ্বরী-মাইথন ঘুরে একেবারে তোপচাঁচি পর্যন্ত বেড়িয়ে আসবে ঠিক করেছে। গাড়ি রাণাদার, তবে ড্রাইভার চালাচ্ছে। সাথে আছে পটলের দিদি ছিম্মি বা শ্রীময়ী আর পাড়ার বন্ধু মৈনাক। এখন জিটি রোড প্রায় পুরোটাই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাওয়াতে শ'দেড়শো কিলোমিটার জার্নির সময় বিশেষ লাগে না, ধকলও পড়ে না তেমন।
তা বলে কি চা খেতে হবে না। কিন্তু রাণাদা সেই কবে ইলেকশান ডিউটিতে গিয়ে কোন ধ্যাদ্ধেড়ে গোবিন্দপুরে চা খেয়েছিলেন, তার স্মৃতি আর ভুলতে পারেন না। 'আর একটু, এই তো নিরসা পেরোল'- এইসব বলে চালিয়ে যাচ্ছেন তখন থেকে।
'জানিস, আগের ইলেকশনে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে এসেছিলাম এই গোবিন্দপুরেই। জিটি রোড থেকে একটা রাস্তা এখান হয়ে ধানবাদ যায় বলে এখানে প্রচুর ট্রাক চলে সারাদিন সারারাত ধরে। তাদের খাতিরদারির জন্যে তাই এখানে আছে বেশ কিছু ধাবা জাতীয় দেশী হোটেল। তার একটাতে রোজ সকাল-সন্ধ্যে চা খেতে আসতাম সবাই মিলে।'
'কেন, কাছাকাছি আর কোনও চায়ের দোকান ছিল না বুঝি?' মৈনাকের প্রশ্ন।
'থাকবে না কেন? তবে এরা বানাতো খাঁটি দুধের আর শেষে ইচ্ছে করেই দুধটাকে একটু পুড়িয়ে দিত। এদের দেখাদেখি অনেকেই সেটা করলেও কারোরটা তেমন জমত না। এই ত এসে গেছি ধানবাদ মোড়, আর মাত্র দু' মিনিট।'
নাঃ, যেখানকার কথা বলছিলেন রাণাদা সেখানে কোনও চায়ের দোকানই নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঢাবাওলাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে বছর দুই আগে। বিক্রি বাড়াবার জন্যেই হোক বা নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্যে, চায়ের জলে সামান্য আফিম মেশাত সে। নারকোটিক আইনের চোখে এটা নিষিদ্ধ বলে তার কারাদণ্ড হয় ও দোকানটি উঠে যায়।
'না রে, পৃথিবীর কোনও ভাল জিনিষই বোধহয় আইনসম্মতভাবে পাওয়া যায় না।' এতক্ষণে জীবনের একটা গভীর সারতত্ব উপলব্ধি করে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন রাণাদা।

No comments:

Post a Comment