Friday, May 6, 2016

একটি ছোট্ট ঘটনা ও বিভিন্ন কবিদের মতামত।।


মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(মেঘনাদ-বধ কাব্য়)

বিপাকে পড়িয়া যবে চৌর্য-শিরোমণি
রাজন পড়িল ধরা পুলিশের হাতে
সিংগাপুরে। মিডিয়া, কি হৈল তার পরে?
কহ, কোন কেসে ফেলি পুলিশ তাহারে
পেশিল ন্যায়ের হাতে? নহে তাহা? তবে
সি-বি-আই লয়ে তারে অতি সঙ্গোপনে
লুকাতে চাহে কি তারে দাউদের ভয়ে-
এমতি কহিছে সবে।মুম্বাই পুলিশ
দাউদের ভৃত্য সবে, তাই রাজনেরে
দিল্লি রাখা হল বুঝি! বা এ সরকার
নতুন জামাতা এক পেল এতদিনে,
কাসভের পর। তবে তাই হোক, সখে,
দাউদ থাকুক সুখে পাকিস্তানে। হেথা
রাজন পালিত হোক জামাই-আদরে।।


সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(ঝর্ণা)

বল মোরে মিডিয়া, সুন্দরি মিডিয়া!
ধরলরে সিবিআই রাজনকে কি দিয়া?
সিংগাপুরে আলোড়ন, দিল্লি কম্পমান
দাউদ পড়বে ধরা এইবার বুঝি বা!

মুম্বাই পুলিশ কি দাউদের টাকা খায়!
তাই সেথা যেতে নাকি রাজন ভয়ে মরে,
তাই বুঝি সিবিআই দিল্লিতে রেখে ভাই,
রাজনে পুষতে চায় জামাইয়ের আদরে?


কাজী নজরুল ইসলাম
(কাণ্ডারী হুঁশিয়ার)

দুর্গম গিরি কান্তার মরু পেরিয়ে সিংগাপুর
রাজনকে যেথা ধরে সিবিআই সে দেশ বহুত দূর!
বলরে মিডিয়া কিভাবে হল এ রূপকথা বাস্তব?
এবার কি তবে দাউদকে ধরা হবে আজ সম্ভব।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছে কাসভ  জেহাদের জয়গান
জাতীয় জামাই হবার স্বপ্ন ভেঙ্গে তার খানখান,
দাউদের ভয়ে মুম্বাই ছেড়ে দিল্লিতে সে রাজন-
দেখি কতকাল জামাই আদরে কাটে তার দিনক্ষণ!!


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(এবার ফিরাও মোরে)

সংসারে সবাই যবে আখের গুছোতে নিজ রত
তুই সেথা সিবিআই দু:সাহসী বালকের মত
অতি দূরে সিংগাপুরে বলত কিভাবে ছুটে গেলি,
চৌর্য চূড়ামনি সেই রাজনেরে পাকড়াও করিলি
মিডিয়া দেখাও মোরে। এ কিভাবে হয়েছে সম্ভব
এবার কি তবে। দাউদ পড়িবে ধরা, কিভাবে ও কবে?
কোন পাকিস্তান মাঝে দাউদ রয়েছে বসে সুখে,
সেসব কি বলা যায়? জানোনা কি, মুম্বাই পুলিশ
দাউদের কেনা সবে? তার চেয়ে ললিপপ মুখে
দিল্লিতে ঘুমোও শুয়ে, জানি তুমি নওকো ফুলিশ।


যোগীন্দ্রনাথ সরকার 
(দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল)

গিয়ে বহুদুর সেই সিংগাপুর
পৌঁছিয়ে হেসে,
চোরাকারবারি ছোটো রাজনেরি
দুয়ারেতে এসে।
পাকড়াও করে লক আপেতে পুরে
দেখাই সবারে,
সিবিআই বলে এই ধরাতলে
কিছুতো আছে রে!
রোগে মৃতপ্রায় রাজন হেথায়
ধরা দিয়েছে যে,
তুই রে মিডিয়া সব বলি দিয়া
ফেলে দিলি লাজে!
জামাই আদরে পুষব তাহারে
দিল্লিতে রেখে,
পাবলিক জালি, দাউদকে কালই
ভুলে যাবে লোকে।


রূপচাঁদ পক্ষী
("Let me go ওরে দ্বারী")

লেট মি সে মিডিয়া ওরে
আই ওয়েন্ট টু সিংগাপুরে
গেছিলাম ইন্ডিয়া হতে
আমি সিবিআই টু মাচ ঘুরে।
সিটিং দেয়ার ইস্মল রাজন
স্টেইং বসে আর কতক্ষণ
আই অ্যাম অল স্মাগলারের যম,
রাজনকে আজ ফেলছি ধরে!
দাউদ ওদের সবারি হেড
পুলিশকে ঢের টাকাও হি পেড
ফর হুম মুম্বাই পিপ্‌ল্‌ ডেড,
দাউদ এবার যাবেই উড়ে।।


শক্তি চট্টোপাধ্যায়
(অবনী, বাড়ি আছো?)

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে সিঙ্গাপুর,
সিবিআই হাঁকে, তখন রাতদুপুর-
রাজন কি বাড়ি আছো?

ঝাঁ-চকচকে রাস্তা চারিধার
তবু এখানে অপরাধীরা ঘোরে,
ছোটা রাজন লুকিয়ে আছে হেথা
যে করে হোক, ধরতে হবে তারে।
ও রাজন, বাড়ি আছো?

দাউদ আছে কোথা পাকিস্তানে
রাজন নাকি সব খবরই জানে,
ধরে ব্যাটাকে দিল্লী নিয়ে গিয়ে
ভাল করে মোচড় দেব কানে।
রাজন হে, বাড়ি আছো??


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ।।
(সত্যবদ্ধ অভিমান)

এই হাত খেয়েছে কত শাসকদলের ঘুষ
আমি কি এ হাতে রাজনকে ধরতে পারি?
সিংগাপুরের সেই অভিশপ্ত হোটেলে
তার মুখে পড়েছিল পাঁচ সেল টর্চের আলো
মুহূর্তের মাঝে পড়েছিল হাতে হাতকড়া,
তখনি তাকে চার্টার্ড প্লেনে করে
নিয়ে যেতে চেয়েছি মুম্বাই।
সবে বলেছিল, রাজন ভুগছে রোগে
পলাতক অভিশপ্ত জীবনের থেকে বন্দীদশা ভাল
তাই সে দিয়েছে ধরা, সে যা খুশি বল
শুনতে তা বয়ে গেছে।
কি ভেবেছিলে মিডিয়া আমাকে?
এই হাত খেয়েছে কত শাসকদলের ঘুষ
এ হাতে কি সিবিআই রাজনকে ধরতে পারে!

মনে রেখো মিডিয়া, রাজনের মুখে
ফুটে উঠেছিল ভয়, মুম্বাইয়ের নামে,
সেখানে পুলিশ সবে দাউদের চর। যে হাতে তারা
খেয়েছে তার টাকা, সে হাতে কি তারা
দাউদকে ধরতে পারে? তাই আজ রাজনকে
দিল্লী নিয়ে যাব, সেখানে থাকবে সুখে জামাই আদরে।
যে হাত ধরেছে ছোটো রাজনকে, সে হাতে কি
সিবিআই আর ঘুষ নিতে পারে?!

(আপাততঃ অনেক হল, কবিদের ভুত বিদায় নিয়েছে- এবার জ্যান্ত কবিরাও আসতে পারেন।)

No comments:

Post a Comment