Saturday, February 8, 2014

মনের মণিকোঠা থেকে ২

মনের মণিকোঠা থেকে ।।২।।

আমাদের ক্লাসের শংকরের কথা একদিন বলেছিলাম, মনে আছে? শংকর সিংহ, যে আমাদের শিক্ষক- ছাত্র থেকে দারোয়ান- ফুচকাওয়ালা, সবাইকে তার আনপ্রেডিক্টেব্‌ল্‌ উইট দিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত । আগে যেটা বলেছি সেটাই রিপীট করছি প্রথমে, তাতে শংকরের কিছুটা প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যাবে । বাংলার ক্লাসে হরিদাস স্যর হংসডিম্বের ব্যাসবাক্য জিগ্যেস করেছেন । আমি 'হংসের ডিম্ব' বলে ইতিমধ্যে একটি গাঁট্টা উপার্জন করেছি । লঘুপাপে গুরুদণ্ড হয়ে গেল মনে করে স্যর তখন বুঝিয়ে বললেন, ওরে বোকা, হংস...ের কি ডিম হয়, ডিম তো হংসী পাড়ে!
আমরা সমঝদারের মত মাথা নাড়ছি, এমন সময় শ্রীমান শংকর ফস্‌ করে বলে বসল, স্যর , তাহলে অশ্বডিম্ব কি হবে?
এইবার হরিদাস স্যর পড়লেন বিপদে । বেশ খানিকক্ষণ মাথা চুলকে বললেন, মনে হয় 'অশ্বের ডিম্ব' আর 'অশ্বীর ডিম্ব' দুটোই চলবে, কারণ দুটোই সমান অসম্ভব ।
সেসময় আমাদের শহরের একমাত্র সিনেমাহলে কোনও ছোটদের দেখার ভালো বই এলে স্কুলের উদ্যোগে একটি শো-এর জন্য হলভাড়া নিয়ে ছাত্রদেরকে নামমাত্র দক্ষিণায় সিনেমাটি দেখান হত । বলা বাহুল্য, শিক্ষকদের কোনও টিকিট লাগতো না ।
সে সময় ছোট শহরে মধ্যবিত্তের সংখ্যাই ছিল বেশী । তাই অধিকাংশ লোকেই ব্যালকনি বা ড্রেস সার্কেলে টিকিট কাটতেন না, সীটগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকত । সেদিন কিন্তু সুযোগ পেয়ে অল্পবিত্ত শিক্ষকরাও ব্যালকনি দখল করে বসতেন ।
সেদিনের ছবি ছিল 'হাম পঞ্ছী এক ডাল কে' । পরদিন স্বভাব-রসিক হরিদাস স্যর ক্লাসে জিগ্যেস করছেন, কিরে, কাল সিনেমা কেমন দেখলি? 'ভাল, খুব ভাল', আমরা সমস্বরে বললাম । 'কিরে, শংকর কিছু বলবি? তোর অভিজ্ঞতাটাও শুনি'।
- স্যর, ভয়ে বলব, না নির্ভয়ে ? যাত্রাদলের সেনাপতির মত শুধোল শংকর ।
- ভয়ের কি আছে রে? বল, বল ।
- স্যর, ব্যালকনিতে বেজায় ভীড় !

সিনেমা কেমন দেখলি-র উত্তরে এখনও আমরা ক্লাসমেটরা শংকরের ভাষায় জবাব দিই, ব্যালকনিতে বেজায় ভীড় ।




No comments:

Post a Comment