Saturday, February 8, 2014

মনের মণিকোঠা থেকে ৩

মনের মণিকোঠা থেকে ।।৩।।

টিফিনশেষের ঘণ্টা এইমাত্র বাজল, সিন্‌হা স্যরের ইংরাজি ক্লাস আছে একটু পরেই । হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখা গেল, প্রিন্সিপাল তাঁর সুদৃশ্য লোহাবাঁধানো ছড়িটি বগলদাবা করে ক্লাস এইটের কোন সেকশনের দিকে যাচ্ছেন । এমন সময় একজন কেউ, তার নাম বলব না, 'বোর্ণভিটা' বলে চেঁচিয়ে উঠল । ঐ নামটি ধরে আমাদের হৃষ্টপুষ্ট চেহারার প্রিন্সিপালকে ডেকে আমরা সবাই মজা পেতাম, তাই বলে তাঁকে শুনিয়ে ডাকার কথা কখনও ভাবতে পারি নি ।

যা ভেবেছিলাম তাই ঘটল। রাগে গনগনে লালমুখে কাঁপতে কাঁপতে তিনি আমাদের ক্লাসরুমে এসে ঢুকেই তলব করলেন ছাত্রটিকে যে তাঁকে ঐ নামে সম্বোধিত করেছিল। কিন্তু কে তা স্বীকার করবে। উনিও বুঝে গেছেন যে আমরা অনেকেই জেনেও বলছি না। তখন ক্লাসসুদ্ধ সবার জন্যে দণ্ড ঘোষণা হল- দণ্ডাঘাত। আমাদের প্রসারিত হাতের তালুর উপর নেমে এলো লোহা বাঁধা লাঠির আঘাত, একে একে- তবু কেউ মুখ খুলিনি। তার পরের তিন-চারদিন আমরা কেউ হাত নাড়তে পারিনি।

পরে ভেবেছিলাম, কাকে আমরা শাস্তি থেকে রক্ষা করলাম, সে তো দোষ স্বীকার না করে সবাইকে বাধ্য করল শাস্তি পেতে! তবু আজ ঘটনাটা মনে করলে ভাবি, একটা সমগ্র ক্লাসের একাত্মবোধের যা দৃঢ়তা দেখিয়েছিলাম আমরা সেদিন, তা সব ভারতবাসী দেখাতে পারলে ভারত হয়ত আরো আগেই স্বাধীন হয়ে যেত, কিংবা হয়ত, কে বলতে পারে, পরাধীনই হত না ।
December 21, 2013


No comments:

Post a Comment