Wednesday, July 29, 2015

Bengali Poem- "আজব ভূগোল"

আজব ভূগোল ।।


'হিংলাজে' হিং চেয়ে লজ্জা কি কম বা?
'সিকিমে'তে টু সি কিম্‌? অষ্টটি রম্ভা!
'পণ্ডিচেরি'তে নাকি চেরি খুব সস্তা?
'জামনগরে'তে জাম দশ টাকা বস্তা!

আজব ভূগোলে ভাই লেখা আছে 'ভুটানে'
পা দুখানি ওঠে না, ভূ-অভিকর্ষ টানে।
'রাজাভাতখাওয়া' গিয়ে রাজা ভাত খায় কি?
মাল-দার সবলোক থাকে 'মালদা'য় কি!

শীতকালে গাছ থেকে পাতা যায় ‘ঝরিয়া’,
ভারতকে হকিতেও হারাল কী 'কোরিয়া’?
চিনি যদি নাই চিনি যাব কি 'চিন'-পানে,
‘যা পান আনগে’ বলে পাঠাবে কি 'জাপানে'?
লঙ্কায় ঝাল নেই, ঝাল কি 'শ্রীলঙ্কা'য়
'সিঙ্গাপুরে' সিঙা ফুঁকে মরে ভয়ে-শঙ্কায়।
'খাইবার পাস' থেকে পাশটি করে এসে
'পুরী' গিয়ে ভুরিভোজ খায় লুচি পায়েসে।

আর্মানি হার মানি জার্মানি ছোটে রে
কাতারে কাতারে লোক কাতারেই জোটে যে!
 'নাই রবি', তবু তা যে আঁধার নগরী নয়
'কে নিয়া' গেল বলে সে দেশ উদাস হয়। 
শহরেতে বাস করে ‘বন’বাসী কাহারা?
বে-সাহারা মরুভূমি, নাম তবু 'সাহারা'!
পুত্রের দেশ বলে 'পো-ল্যান্ড' কে জানি গো
জামাতার বলে তবে 'জামাইকা' মানি তো? 
যাও আর এসো শুনে গিয়ে দেখি 'গোআ'তে-
গেছে- জেনে পিণ্ডি কে দিয়ে এল 'গয়া'তে।।

(মুম্বাই, ৩০শে আগস্ট, ২০১৫)

Bengali From Diary - 'Smriti Satatai'



।। স্মৃতি সততই ।।



শিলচরে 'রাবিন্দ্রিকী' গোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার শ্রীমতী মৈত্রেয়ী দামের কাছে আমার স্ত্রী তখন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতেন। স্বামী রূপক ও কন্যা সোহিনীকে নিয়ে বেশ একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ছিল গুরুচরণ কলেজ রোডের ঐ বাড়িটিতে। ওখানেই দেখেছি সাহিত্যিক দেবেশ রায়কে, 'তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত' উপন্যাসের জন্যে সদ্য তিনি তখন আকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। দেখেছি গৌরী ঘোষকে, সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত ও ঢাকার প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞা প্রফেসর সন্‌জিদা খাতুনকে। ১৯৯১র মে মাসের এক বৃষ্টির দিনে রবীন্দ্রজন্মবার্ষিকীর প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা জমেছিল। রূপকদা ও কিশোর শিল্পী রাহুল দত্ত গেয়ে চলেছে একের পর এক বর্ষার গান। তখনই মৈত্রেয়ীদি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বলে উঠলেন- 'রবি ঠাকুর কি সব একেকটা বর্ষাঋতুর উপর গান লিখেছেন, কিন্তু আমাদের ভাগ্যে জুটেছে একটিই'।
- 'সে আবার কি?' সবাই হৈ হৈ করে উঠি। 'আমাদের ভাগ্যে মানে?'
- 'আর কিতা! ওই 'ঝর ঝর বরিষে বারিধারা। হায় পথবাসী, হায় গতিহীন, হায় গৃহহারা।' '
সবাই হো হো করে হেসে উঠলেও কথাটা যে কতটা সত্যি তা বোঝা গেল ২৫শে বৈশাখের অনুষ্ঠানের দিনেই। 'প্রভু আমার, প্রিয় আমার' নামে একটা গীতি-আলেখ্য চলছিল। রবি ঠাকুরের গানে যে প্রভু আর প্রিয়র মধ্যে বিশেষ ভেদ নেই, প্রেম আর পূজা পর্যায় কোথায় যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে, গানে গানে সেটাই যেন বোঝানো হচ্ছিল ইনিয়ে-বিনিয়ে। গিন্নী এই অনুষ্ঠানে নেই, তিনি বাপের বাড়িতে, আর আমি বসে দর্শক আসনে। এমন সময় রূপকদা হন্ত-দন্ত হয়ে এসে বল্লেন- 'ব্যস, কাম সারসে। শিলচরের দ্যাবতা হাতে-নাতে দেখাইয়া দিসেন- তাইনের 'প্রেমে আঘাত আছে, নাইক অবহেলা।'
- তার মানে?
- বরাক নদীর বাঁধ ভাঙিয়া বন্যা ছুটেছে......আইজকার প্রোগ্রামের এখানেই ইতি।
ব্যস, দশ মিনিটে হল খালি। জল ঢুকতে লাগলো হু হু করে। কোনোমতে স্কুটার চালিয়ে বাড়ি পৌছলাম। বাসায় শুধু মা ছিলেন, তাঁকে আর সে রাত্রে কিছু বললাম না।
পরদিন সকালে উঠেই দেখি ধুন্ধুমার কাণ্ড। সামনের রাস্তায়, তখনো ঠিক পাকা হয় নি, মোরাম-ঢালা ছিল, এক হাঁটু জল ও ক্রমশঃই বর্ধমান। পঞ্চায়েত রোডে আমাদের ভাড়া-বাড়ি, মালিক ব্যাঙ্কের অফিসার, নরসিংটোলায় থাকেন। সযত্নে বানানো বাড়ি্র বাগানটি রাস্তার লেভেল থেকে অনেকটা উঁচুতে, তারও আড়াই ফুট উঁচু বাড়ির প্লিন্থ। খুব বড়সড় বন্যা না হলে অতদূর জল ওঠা অসম্ভব, তাই বেশ নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এর একটা অন্য দিক ছিল, সেটা এবার টের পেলাম। পনের মিনিটের মধ্যেই হুড়মুড় করে এসে পড়ল আমার ঠিকে ঝি, কাচ্চা-বাচ্চা, তোলা উনুন, কাপড়-চোপড় নিয়ে একেবারে সপরিবারে। এক্ষেত্রে না বলা সঙ্গত নয়, এটাই কাছাড়ের দস্তুর। তারপর বন্ধুবান্ধবরা স্কুটার রাখতে আসতে লাগলো। ধীরে ধীরে আটটি স্কুটার নিয়ে আমার বাড়িটি অচিরাত একটি স্কুটার গ্যারেজে পরিণত হল।

(২)

এইবার চিন্তা হল অফিস যাব কি ভাবে। ছুটি ডিক্লেয়ার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কর্মীরই দায়িত্ব হল যেনতেনপ্রকারেন দপ্তরে পৌঁছিয়ে কাজ বন্ধ করাবার জন্যে দরবার করা। তারপর যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ দেখিয়ে হেডকোয়ার্টার থেকে ছুটি পাওয়া যায় তবে দুর্যোগ আর উপভোগে তফাৎ কতটুকু? এদিকে পাজামা গুটিয়ে বাজারের দিকে একটু এগিয়ে দেখে এলাম চ্যাং-কুড়ি রোডের কাঠের পুলটুকু বাকি আছে বটে, তবে দুপাশের রাস্তা জলমগ্ন। তাকিয়ে দেখি পাশের বাড়ি প্রফেসর রঞ্জন ভট্টাচার্যের বাড়ির বারান্দায় তিনি প্রফেসার বন্ধু শ্যামলদার সাথে বসে চা খাচ্ছেন। আজ কলেজ ছুটি, ওঁরা জানালেন। 'সে কি, আপনাদের কলেজ তো টিলার উপরে, জলে ডোবার তো কথা নয়' আমি বলি।

- আরে ভাইটি, গরু-বাছুরগুলো না আসতে পারলে আমরা চরাব কাদের?' শ্যামলদা বললেন। প্রসঙ্গতঃ জানাই যে গুরুচরণ কলেজকে ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে 'গরু-চরানো' কলেজ বলতেন মজা করে এবং ছাত্রেরা সেটা ঠিক পছন্দ না করলেও অধ্যাপকেরা নিজেদেরকে ব্রজের সেই রাখালরাজার সাথে তুলনা করে যারপরোনাস্তি আনন্দ পেতেন। কিম্বা হয়ত সিলেটিরা স্বভাবতঃই খুব বুদ্ধিমান প্রাণী, অন্ততঃ মানুষের থেকে তো বটেই, তাই কথাটার অসম্ভবতা অনুমান করেই মজা পেতেন। আমি তাঁদের দলে যোগ দেব কিনা ভাবছিলাম, এমন সময় দেখি, অঙ্কের অধ্যাপক যাদব ভট্টাচার্য ধুতিখানা গুটিয়ে সেদিকপানেই আসছেন। তিন ভট্টাচার্যের ত্র্যহস্পর্শ থেকে ত্রিপাদদোষ লেগে যেতে পারে ভেবে আমি আর সেদিকপানে এগোলাম না।
হঠাত মনে হল কেউ যেন গেট খুলছে। তাকিয়ে দেখি আমাদের সহকর্মী গৌরীশংকর দত্ত গুটিগুটি পায় ঘরে ঢুকছে। 'কি রে, তুই এখনও ঘরে বসে', দত্ত আমাকে দেখে হৈ হৈ করে উঠল। 'কেন, তুই কি অফিস যাবার জন্যে নৌকো ভাড়া করে এনেছিস?' আমি জানতে চাই।
- ঠিক ধরেছিস তো! ডিঙ্গি নৌকোটা কাঠের পুলে বেঁধে রেখে এসেছি। সকালে জি-এমের ফোন এসেছে বাড়িওলা মারফত, বন্ধুবান্ধবরা বন্যায় কে কেমন আছে তার খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে। তাই বেরিয়ে পড়েছি। তুই তো এখন ঝাড়া হাত পা, চল আমার সাথে।
আমি তো একপায়ে খাড়া। মাকে জানিয়ে ওর সাথে নৌকো করে বেরিয়ে পড়লাম।
প্রথমে কলেজ রোডে আশিস বিশ্বাসের বাড়ি। ঘরের একতলায় জল থৈ থৈ। ও থাকে দোতলায়। মালিক একতলায় ছিল, জল ঢুকতেই তিনিও উঠে পড়েছেন ওপরে। আমরা হাঁক-ডাক করতেই বিশ্বাস দোতলার বারান্দা থেকে মই ঝুলিয়ে দিল, আমরা তাই বেয়ে বাসায় ঢুকলাম। ওর চিন্তা ছিল স্কুটারখানা নিয়ে, গৌরি বলল, 'চ্যাটার্জির বাগানে অন্ততঃ সাতটা স্কুটার দেখে এলাম। চল সেখানেই রেখে আসি, চিন্তা নেই, কোনও ভাড়া লাগবে না'। 'ভাড়া কেন, কুলি খরচও লাগবে না, আমরা আছি তো, শিক্ষিত কুলি', আমি আশ্বস্ত করলাম। তারপর তিনজনে মিলে ধ্বস্তাধস্তি করে স্কুটারকে নৌকোয় চাপিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে রাখা হল।
ফেরার সময় আবার একই পথ ধরলাম। এবার আমরা তিনজন। হঠাৎ খেয়াল হল, নীহারের খবর তো নেওয়া দরকার, ওর জ্বর ছিল দু-তিনদিন ধরে। যদিও ওরা থাকে কলেজের পেছনে টিলার ঢালু অংশটিতে, সেখানে কোনদিনই বন্যা আসবে না। তবু ওরা কেমন আছে খবরটা নেওয়া প্রয়োজন মনে করে আমরা রাস্তার ধারে নৌকো 'পার্ক' করে নীহার ব্যানার্জির বাসার কড়া নাড়ালাম।


 (৩)

নীহার বেরিয়ে এল, মুখে জ্বলন্ত সিগারেট। আমরা ওকে স্মোক করতে কখনো দেখিনি। 'বুলা, তুমি নীহারকে সিগারেট ধরিয়েছ?' গৌরী হাঁক পাড়ল অন্তরালবর্তিনীর উদ্দেশ্যে।
'ওহ্‌, আমার কি ক্ষমতা ওকে কিছু ধরাই বা ছাড়াই! ওর ধারণা একটানা সিগারেট খেলে জল তাড়াতাড়ি নেমে যাবে'- বুলা দেবী এবার সরোষে প্রকট হলেন, হাতে ধূমায়িত কাপের ট্রে।
- আসলে আমার জলে একটা আতঙ্ক আছে...না, না কুকুরের কামড় থেকে নয়, ছোটবেলায় খড়গপুরে দেখা একটা ভয়াবহ বন্যার ঘটনা থেকে। পরের বছরও যদি এরকম দেখি, আমি এখান থেকে ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাব- নীহারের বক্তব্য।
আমি ছোটনাগপুরের পাহাড়ি শহরে মানুষ, বর্ষায় তোড়ে জল বয়ে যেতে দেখেছি। সেই সময় সাধারণ অবস্থায় লাফ দিয়ে পার হওয়া যায় এমন এক নালার জলের স্রোতে শুধু মানুষ নয়, আস্ত একটা বাস ভেসে যেতে দেখেছি চোখের সামনে দিয়ে। পুরো ঘটনাটা হৃদয়-বিদারক, তবে এটুকু বলতে পারি যে বাস ড্রাইভার ভাল অঙ্ক জানত না, ভেলোসিটি প্যারালেলোগ্রামের ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। যাক সে কথা। তবু একবার আরেক পাহাড়ি শিল্প-শহর জামসেদপুরের সোনারি অঞ্চলে বন্যা দেখেছিলাম সে কোন ১৯৭৪ সালে। সেও নেহাৎ শহুরে বাবুদের শখ-চরিতার্থের বন্যা। সুবর্ণরেখা-খড়কাই-এর সঙ্গমস্থলে হঠাৎ জল বেড়ে এক কাণ্ড, অপ্রস্তুত গৃহবাসীদের অবাক করে ফ্রীজ-সোফাসেট-আলমারি সব ভাসিয়ে নিয়ে এসেছিল ঘরের বাইরে, সে এক দেখবার মতো দৃশ্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই হুজুগে দর্শনার্থীদের ভীড় লেগে গেল শহরের একপ্রান্তের এই অঞ্চলটিতে। সেই শ্রাবণে অনেকে পৌষমাস দেখে ফেলল, যেমন ফুচকা-অলা, বেলুন-বাঁশীওলা ইত্যাদি। রথ দেখা আর কলা-বেচা একসাথে চলতে থাকল। শুনেছিলাম একটা নাগরদোলাও নাকি এসেছিল, ভেজা মাঠে সাহস করে খুঁটি পুঁততে পারেনি বলে ফিরে যেতে হয়েছিল তাদের!
সেই আমার চোখের সামনে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জল শুধু জল। আমার তো ভালই লাগছিল দেখতে, জানিনা নীহারের চিত্ত কেন হয়েছে বিকল। ওকে অনেক বলেও বাড়ি থেকে বের করা গেল না। অগত্যা আমরা এবার সৎসঙ্গ আশ্রমের জলপথ ধরলাম, সেখানে আছে দুই গুজরাটি পরিবার, হরিয়ানি আর উকিল। দুজনের নামেরই কোনও ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। ভরতভাই হরিয়ানির সাথে হরিয়ানার কোনো সম্বন্ধ নেই, আর মিঃ উকিল ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনীয়ার। যাই হোক, তাঁরা সপরিবারে ভালই আছেন, গুজুভাইদের বাসায় সর্বদা অন্ততঃ একমাসের চাল-ডাল-নুন-তেল স্টক করাই থাকে, তাই ওদের বিশেষ চিন্তা নেই। তবে ছেলেমেয়েরা কান্নাকাটি করছে, গুজরাটে একসাথে এত জল দেখা যায় না কিনা! আমরা অগত্যা ফিরলাম। এরপর আমাদের গন্তব্য বিবেকানন্দ রোড, স্বপন দাস এণ্ড কোং।


(৪)

শিলচরের বিবেকানন্দ রোড তখন ত্রিশ ফুট চওড়া একটি নদী। একপ্রান্তে রামকৃষ্ণ মিশন রোড ও তারাপুরের দিক থেকে ঢাল নেমেছে, অন্যদিকে অনুকুল ঠাকুরের সত্সঙ্গ আশ্রম রোড আর উত্তরে কলেজ রোড ঢালু হয়ে বিবেকানন্দ রোডের সাথে মিশেছে যে তেমাথায়, সেখানে একটি মাছ-সবজির বাজার বসে। আজ সেখানে বিশ বাঁও জলের আনুকূল্যে আর মরা নয়, জ্যান্ত মাছ ধরছে পাড়ার দুঃসাহসী ছেলেরা। সেখান থেকে নৌকোয় বিবেকানন্দ রোডে ঢুকেই বাঁদিকে প্রথমে পড়ল প্রদীপ মন্ডলের বাড়ি। ওর বিয়ের তখনও বর্ষপূর্তি হয় নি, বলতে গেলে হানিমুন কাপল। ওর বাড়িওলা জানালেন, কাল রাতে জল বাড়তে দেখেই প্রদীপ আজ ভোরে সস্ত্রীক এয়ারপোর্ট রওনা হয়ে গেছে, টিকিট পেলেই সোজা কলকাতা। বেচারা, একটা থ্রিলিং হনিমুন অন এ রিভার ক্রুজের চান্স মিস করলো! তার ওপাশের বাড়িতে থাকে আশিস বসাক। হুজুগে মানুষ, একটু ডাকাডাকি করতেই বৌয়ের গজগজানি কর্ণপাত না করে আমাদের 'বজরা'য় এসে বসল।
উল্টোদিকের একটা গলিতে একতলা বেশ বড় একখানা বাড়িতে স্বপন দাস থাকে বউ-বাচ্চা ও বাবা-মাকে নিয়ে। ওদের বাড়ি গিয়ে দেখি একতলার অর্ধেকের উপর জলের তলায়। ওরা গেল কোথায়? তখনই যেন স্বর্গ থেকে দৈববাণী হলো- 'নৌকোর মুখটা সোজা সিঁড়িঘরে ঢুকিয়ে দে'। ওপরে তাকিয়ে দেখি স্বপন নির্দেশ দিচ্ছে ছাদ থেকে। অগত্যা সেইভাবেই সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে এলাম।
স্বপনদের ছাদের উপরে এসে দেখি এলাহী কান্ড! তিনখানা তাঁবু পাতা হয়েছে বিশাল ছাদ জুড়ে। তার একটাতে তিন পরিবারের বারোয়ারী রান্না চড়েছে, খিচুড়ি আর ইলিশের ঝাল। পাওয়ার নেই বটে, তবে স্ট্যান্ড-বাই জেনারেটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ পিকনিকের মেজাজ।ইতিমধ্যে বাড়িওয়ালার বড়ছেলে সাইকেলে করে গোটা চার-পাঁচ ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে এলো, রাতের খোরাক হিসেবে। রিমি আর স্বপন খেয়ে যাবার জন্যে অনুরোধ করছিল বার বার, লোভ যে হয়নি তাও নয়, কিন্তু আমরা তো কেউ একা নই, তাছাড়া বাসায় খবর যে পাঠাব, তখন এমন ঘরে ঘরে ফোন ছিলনা, মোবাইল তো দুরের কথা। অগত্যা সবিনয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হল। মেসোমশাই অবশ্য অন্য একটা লোভ দেখাচ্ছিলেন। আমি থাকলে চারজন পার্টনার হয়ে যেত আর তাহলে বেশ ব্রিজ খেলা যেত খেয়ে-দেয়ে। কদিনের রসদ আর কদিনেরই বা আনন্দ! তবু ওদের মানিয়ে নেওয়া দেখে বেশ ভাল লাগলো। চা আর পকোড়ি খেয়ে ওখান থেকে বিদায় নিলাম।
'আজকের মত অনেক ঘোরা হল', এই বলে গৌরী আমাকে আর বসাককে যথাস্থানে নামিয়ে দিয়ে নৌকো নিয়ে মালুগ্রামে নিজের বাসায় রওনা দিল। আমার বাড়ির উল্টোদিকের দোতলা বিল্ডিংটা হল সরকারী বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আঞ্চলিক হেড অফিস। দেখি সেখানে আলোর মালা সাজানো হচ্ছে। ওদের ইলেকট্রিসিয়ান দত্তগুপ্ত তদারকি করছে। জিজ্ঞেস করলাম- 'কি ভাই, আপনাদের এখন পৌষমাস নাকি?' ব্যঙ্গের খোঁচাটুকু মাঠে মারা গেল। উত্তর পেলাম- 'না দাদা, আমরার এনুয়াল ডে হইত আজ সৈন্ধায়, আইয়েন নিশ্চয়'।
এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ অফিসটি বরাক-অববাহিকায় বন্যা প্রতিরোধ ও তত্কালীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছিল কয়েকবছর আগে। কিন্তু দেখা গেল প্র্যাকটিক্যালি সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে 'বন্যা-আমন্ত্রণ বিভাগ' আর সেটা যে অমূলক নয় বন্যার সময় কর্মচারীদের মুখ-চোখের উদ্দীপ্ত ভাব থেকেই তা বোঝা যেত। ৯১-৯৩-৯৪ এর ক্রমবর্ধমান বন্যার থেকে শিক্ষা নিয়ে শুনেছি নাকি ১৯৯৫ সালে এই অফিসটি তুলে দেওয়া হয়। আমি শিলচরের পাট উঠিয়ে বদলি হয়ে পন্ডিচেরি চলে আসি ১৯৯৪-এ। বন্ধুদের মুখে শুনেছি তার পরে নাকি বরাকে তেমন উল্লেখনীয় বন্যা আসেনি- আজ পর্যন্ত !

(শেষ)

Saturday, July 25, 2015

New: Translated rhyme- Bengali to Hindi

New: Translated rhyme- Bengali to Hindi

"मान न मान"
सुकुमार रॉय  

सुनरे भैया गांव में मेरे ऐसा आदमी दीखा,
खाते समय वह दाल-चावल को मुंह के अंदर फेंका।   
सुना है उसे भूख भी लगती दिनभर जो न खाएं,  
आँखें बंद हो अपने आप ही नींद जैसे आये।  
चलते समय दो पैर उसके पड़ते हैं धरती पे, 
आँखों से वह देखता है सब, सुनता है कानों से।
मान न मान, वह सोता है सर सिरहाने पे रखके 
 ऐसा भी होता है क्या भला, चल आते हैं देखके!   

(मेरा अनुवाद, मूल बंगाली से)

"আরে ছি ছি রাম রাম কলকেতা শহরে
লাল ধুতি পরে মুদি তিন হাত বহরে।
মখমলে জামা গায় ঝকঝকে টোপরে,
খায় দায় গান গায় রাস্তার ওপরে।"

(সুকুমার রায়)


अरे छी छी राम राम का कहूँ रे भैया
कोलकाता जाके देखा हमार रमैया ।
मख़मली लाल धोती-कुर्ता टोपी सर पे
खाए-पिए-नाचे-गाये सड़कवा के मोड़ पे!


"কহ ভাই কহরে, আঁকাচোরা শহরে
বদ্যিরা কেন কেউ আলুভাতে খায় না?
লেখা আছে কাগজে, আলু খেলে মগজে
ঘিলু যায় ভেস্তিয়ে, বুদ্ধি গজায় না।"
(সুকুমার রায়)


जानते हो मेरे भाई, जाके देखा मुंबई
वहां के हकीम कोई आलू नहीं खाता है!
लिखा है किताबों में, आलू से खोपड़ी में
दिमाग न उपजे रे, भेजा सुख जाता है ।



क्या कहूं मैं गया था हुगली
किसी से ना यह कहना,
दीखा मुझे तीन ऐसे सूअर
टोपी न किसीने पहना!



खामखा कुत्ते क्यों चिल्लाएं रात भर-
दांत के कीड़े रहे न टूटे दांत पर?
किसकी गलती से है पृथ्वी के दबे सर?
चल यार सोचते हैं छाओं में बैठकर !
(सुकुमार रॉय)
Original in Bengali:
'কেন সব কুকুরগুলো খামখা চেঁচায় রাতে-
কেন বল দাঁতের পোকা থাকেনা ফোক্‌লা দাঁতে?
পৃথিবীর চ্যাপ্টা মাথা কেন, সে কাদের দোষে?
এসো ভাই চিন্তা করি দুজনে ছায়ায় বসে ।'


पता क्या कह गया सीताराम मेहता-
आसमाँ मंहके जैसा खट्टा सा रायता ।
खटाई रहती नहीं, होने पर वर्षा,
चखकर देखा तब मीठा शक्कर सा ।


ए बकरी का बच्चा,
तू उडने काहे को चला?
पंख कहाँ रे तेरे -
कूदता-फिरता क्यों भला !


नन्द घोष की काली गाय भाग के गयी कहाँ-
गाँव-मुहल्ला नन्द घूमे, खोजता सारा जहाँ।
आधी रात को बेखबर
लौट अधमरा सा थककर,
अपने आंगन पहुँचके देखा गाय सोयी है वहाँ।


आसमान में सात रंगों के इन्द्रधनुष खिले बेजोड़
कितने लोग देखने को आये सारे काम काज को छोड़.
एक था बुड्ढा भला किसीका न देखे वह आदत से-
कहने लगा- 'रंग कच्चा है, टिकाऊ नहीं, पूछो मुझसे!'

जंगला गांव का पगला बुड्ढा मुझसे आकर उलझे,
ढाई बिघाभर समुन्दर में कटहल कितने उपजे?
मैंने भी कहा उसी अंदाज़ में सच कहूँ मैं कितने-
एक एकड़ मूली के खेत में झींगा फले हैं जितने।

आंगन में रक्खा था डब्बा, खीर था उसमें पड़ा,
कौए ने उसके लिए बूढे से जोर का लड़ा। 
जीत लड़ाई खुशी से कौए ने मुड़कर देखा क्या-
जाने कब खीर साफ कर गयी छोटी सी एक चिड़िया।   

बुड्ढे तुम हो आदमी अच्छे,
दिल से भी लगते हो सच्चे,
फिर भी क्यों तुम मुझे पसन्द आते नहीं?
कारण इसका मुझे क्या पता
सोचूं भी तो समझ न आता 
वजह न कोई तो भी दिल भाते नहीं।

Friday, July 24, 2015

Translation- Bengali to Hindi

"কহ ভাই কহরে, আঁকাচোরা শহরে
বদ্যিরা কেন কেউ আলুভাতে খায় না?
লেখা আছে কাগজে, আলু খেলে মগজে
ঘিলু যায় ভেস্তিয়ে, বুদ্ধি গজায় না।"
(সুকুমার রায়)


जानते हो मेरे भाई, जाके देखा मुंबई
वहां के हकीम कोई आलू नहीं खाता है!
लिखा है किताबों में, आलू से खोपड़ी में
दिमाग न उपजे रे, भेजा सुख जाता है ।

(सुकुमाय रॉय)

"আরে ছি ছি রাম রাম কলকেতা শহরে
লাল ধুতি পরে মুদি তিন হাত বহরে।
মখমলে জামা গায় ঝকঝকে টোপরে,
খায় দায় গান গায় রাস্তার ওপরে।"

(সুকুমার রায়)


अरे छी छी राम राम का कहूँ रे भैया
कलकत्ते में जाके देखा हमार रमैया ।
लाल धोती मलमल के कुर्ता-टोपी डालकर
खाए-पिए-नाचे-गाये सड़कवा के मोड़ पर !



Tuesday, July 14, 2015

Bengali Short Story- কুবের, কন্দর্প ও কোয়টাস ।।

কুবের, কন্দর্প ও কোয়টাস ।।

(১)

'কোয়টাস !!'
কথাটা শুনে একটু অস্বস্তি নিয়ে ভ্রূ কুঁচকে তাকান সুন্দরমূর্তি। হ্যাঁ, ইনি সেই বিখ্যাত টেকনোসিস কোম্পানির মালিক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মি: সুন্দরমূর্তি আয়ারই বটেন। কথা হচ্ছিল তাঁর সফটওয়ের বিভাগের মাথা দুর্দান্ত প্রতিভাবান হ্যান্ডসাম যুবক অনঙ্গ দেশাইয়ের সাথে। ছেলেটিকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। এই বয়েসেই যা সব ইনোভেটিভ গ্যাজেট তৈরী করে দুনিয়ার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে, তাতে তিনি অনঙ্গকে তাঁর কোম্পানির আদর্শ উত্তরাধিকারী রূপে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। অপুত্রক ও বিপত্নীক তিনি। নিজের বলতে একমাত্র কন্যা মালিনী। তিনি তো অনঙ্গকে বেশ কয়েকদিন ধরে চোখে চোখে রাখছেন, এখন তাঁর মেয়েটির এদিকে একটু নজর পড়তেই যা বাকি।

না, মেয়ে তাঁর পাগল বা কুরূপা নয়। টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে রীতিমত পড়াশুনা করে এসেছে আমেরিকা থেকে। এখন বাবার সাথে অফিসে বসে হাতে-কলমে কাজ শিখছে। আয়ার সাহেবের ইচ্ছে আছে মেয়ের বিয়ে দিয়ে মেয়ে জামাইকে একত্রে নিজের কোম্পানির দায়িত্ব ধরিয়ে দেন। কিন্তু মেয়ে তার কথায় আমল দিলে তো! তার নেশা মোবাইলে বসে শুধু বন্ধুদের সাথে হোয়াটস-অ্যাপ বা গুগলে চ্যাট করা। তাই বলে ভাববেন না যে সে তাদের কারো সাথে প্রেম করে। মালিনী হয়ত তার অর্ধেক বন্ধুর দিকে মুখ তুলে তাকায়ইনি কখনো। তাই এই মা-মরা মেয়েটিকে নিয়ে মি: আয়ারের চিন্তা হওয়ারই কথা। তবে এই অনঙ্গ ছেলেটিকে তিনি ছাড়তে রাজী নন। আপাত নির্লোভ আর সচ্চরিত্র হলেও যে কোনও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার হিম্মত আছে অনঙ্গের। তাই অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা জয়ের একটা চ্যালেঞ্জের আভাস দিয়ে তাকে আটকে রেখেছেন কোনমতে, নইলে বিদেশী কোম্পানিগুলো তো ওকে লোফার জন্যে হাত উঁচু করেই আছে। তাই কিছুটা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়েই জানুয়ারি মাসের এক সুন্দর সকালে অনঙ্গকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর অফিসে মেয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু হবু জামাই যে প্রথমেই 'কোয়টাস' বা যৌন-সঙ্গম জাতীয় কিছু একটা বলে বসবে সেকথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

'স্যার, আপনি যা ভাবছেন তা নয়', মিঃ আয়ারকে ভ্যাবাচ্যাকা খেতে দেখে এবার অনঙ্গের ব্যাখ্যা করার পালা, 'কোয়টাস একটা এপ্লিকেশন সফটওয়্যার, যার পুরো নাম 'ক্লোজার অফ ইন্টারনেট টেলিকম ইউজার্স সফটওয়্যারস' (Closure Of Internet Telecom Users' Softwares), যা বিশেষ ধরনের স্মার্ট ফোনের সাহায্যে ব্যবহার করা যায়। প্লিজ, এ ব্যাপারে এখন আর কিছু জানতে চাইবেন না, এখন এটা এক্সপেরিমেন্টাল স্টেজে আছে'।
'তবু ব্যাপারটা কি একটু বলবে তো, না কি নিজস্ব পেটেন্ট নিতে চাইছ?' একটু রসিকতার ছলেই বললেন আয়ার। তাঁর বিশ্বাস আছে ছেলেটির উপর।
'স্যার, এই টেকনোলজির যুগে মানুষ যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলো হারিয়ে ফেলতে বসেছে- যার জন্যে আজ পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোর জনসংখ্যা কমতে কমতে এলার্মিং অবস্থায় ঠেকেছে এসে, তার বিরুদ্ধে কাজ করবে এই অ্যাপ। এবার আপনি শুধু বলুন, মিস মালিনী সম্বন্ধে আপনার প্ল্যানটা কি? বাকি কাজটুকু আমার উপর ছেড়ে দিন।'

'দাঁড়াও, একটু ভাবা দরকার। তুমি বরং লাঞ্চের পর একবার এস।'

অনঙ্গ চলে গেলে এসি বন্ধ করে অফিসের জানালাটা খুলে দিলেন মিঃ আয়ার। অন্য আইটি ও কম্প্যুটার কোম্পানীগুলোর থেকে কিছুটা তফাৎ রেখেই বছর দশেক আগে এখানে হেড অফিস বানিয়েছিলেন তিনি, তখন শহরের প্রায় বাইরে ইয়ালাহাঙ্কাতে। স্যাটেলাইট টাউনশিপের ৩ নং ক্রশ রোডের এই অফিসের জানালায় দাঁড়ালে দেখা যায় নয় নম্বর জাতীয় সড়ক আর নিউ টাউন মেন রোডের শৃঙ্খলাবদ্ধ গাড়ির মিছিল, গ্রেটার বাঙ্গালোর ম্যুনিসিপাল কর্পোরেশনের তত্বাবধানে যার মধ্যে কোন ত্রুটি পাওয়াই ভার। যার ফলে তিনি মাল্লেশ্বরমে নিজের বাড়ি যাবার জন্যে নয় নম্বর হাইওয়ে না ধরে এ পথেই যাওয়া আসা করেন। নতুন এয়ারপোর্টটাও কাছে পড়ে। এখন ত পুরনো আই-টি পার্কের মালিকরা রীতিমত হিংসে করে তাঁকে আর মনে মনে তারিফ করে দূরদর্শিতার জন্যে। তবে মিঃ আয়ার জানেন যে হেড অফিসের অবস্থানের সাথে কোম্পানীর উন্নতির কোনও সম্বন্ধ নেই, তার জন্যে অনং নামের এই রত্নটিকে বেঁধে রাখতে হবে। কিন্ত কিভাবে? জানলার বাইরে তিন নম্বর ক্রস রোডে কি আছে এই সমস্যার সমাধান? তিনি চিন্তিতমনে মোবাইলে একের পর এক নম্বর ডায়াল করতে লাগলেন। তারপর একসময় টিফিন বাক্স বের করে হাল্কা লাঞ্চ সেরে নিলেন।

 
লাঞ্চ আওয়ারের পর অনঙ্গ এল দেখা করতে। তবে তারপর প্রায় আধঘন্টা ধরে ইয়ালাহাঙ্কার অফিসে বসে বাঙ্গালুরু সিলিকন সাম্রাজ্যের একজন অধীশ্বর আর তাঁর কোম্পানির 'মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলার'এর মধ্যে কি কথা হল তা আমরা কেউ কিছুই জানতে পারলাম না।



(২)

১৪ই ফেব্রুয়ারির বিকেল পাঁচটায় মি: আয়ার মেয়েকে নিজের অফিসঘরে ডেকে বললেন, 'মা, আমি আজ ইউনিয়ানের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকব, ফিরতে অনেক রাত্রি হবে। তুই বরং অনঙ্গের সাথে অফিসের গাড়িটাতে করে চলে যা, ওকে মাল্লেশ্বরমে ড্রপ করে দিস। মেয়ে বাবাকে চেনে, তাই আর কোনো কথা না বলে ধীরে ধীরে চলে গেল অনঙ্গের অফিসের দিকে।

সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে ওরা দুজনে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে বাইরে আসতেই দেখে তিন নম্বর ক্রস রোড থেকে নিউ টাউন মেন রোডের রাস্তায় সবকটা গাড়ি সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। সাধারণত: এ সময়টা একটু জ্যাম হয়, তা বলে এত। গাড়ি তো গেট ছেড়ে নড়তেই পারছে না। বাঁদিকে ঘুরতে পারলে একটা না একটা রেডিয়াল রোড অনায়াসে ধরা যায়, কিন্তু গাড়ি এগোলে তো! ড্রাইভার যথেষ্ট অভিজ্ঞ, সে পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয় স্যার, এখন ঘন্টা দুই মনে হচ্ছে বাঁদিকে এগোনো যাবে না, চলুন বরং ডানদিকে ঘুরে হাইওয়ে ধরি। কিন্তু সেখানেও বিপদ। শেষাদ্রিপুরম কলেজের কাছে এসে আর গাড়ি এগোয় না, এত ট্র্যাফিক। শেষে যেন কিছুটা নিরুপায় হয়েই অনঙ্গ বলল, 'ম্যাম, এখন আর গাড়িতে বসে কি হবে, চলুন সামনের সি-সি-ডি'তে গিয়ে ততক্ষণ আসল কলোম্বিয়ান কফির স্বাদ নিয়ে আসি'। 'চলুন', অনিচ্ছাসত্ত্বেই বলল মালিনী, তার চোখ তখনও মোবাইলের দিকে।

ওরা দুজনে কাফেতে গিয়ে বসেই আছে, যেন একে অপরকে চেনেই না। মালিনী নিবিষ্টমনে ফোন নিয়ে হোয়াটস-অ্যাপে চ্যাট করছে আর অনঙ্গ ওকে একমনে দেখে যাচ্ছে। ইস, এমনিভাবে যদি মালিনী ওকে দেখত! কনভেন্ট পড়া মেয়ে, নিশ্চয়ই অনঙ্গ কথাটার মানে জানে না। হঠাৎ কি খেয়াল হওয়ায় নিজের স্মার্টফোন বের করলো অনঙ্গ। 'এ কি এসময় নেট চলে গেল যে' - অবাক হয়ে বলল মালিনী। 'আমার তো সাবস্ক্রাইবার কানেকশন, সিটি ওয়াই-ফাই তো নয়!'
'আপনি বসুন, ম্যাম, আমি দেখছি, এদের ওয়াই-ফাই আছে কিনা', বলে উঠল অনঙ্গ।
'আপনি বসুন তো', এতক্ষণে বোধহয় মুখ তুলে তাকাল মালিনী অনঙ্গের দিকে। আরে, বেশ হ্যান্ডসাম ছেলেটি তো, নম্র, ভদ্রও বটে। 'কি ম্যাম ম্যাম করছেন তখন থেকে? আমার নাম মালিনী, আমি আপনার থেকে অনেক ছোট। এত তাড়া কিসের, নাহয় কিছুক্ষণ গল্পই করলে আমার সাথে', হাত ধরে টেনে ওকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিল মালিনী। তারপরে ঘণ্টা দুয়েক যে কিভাবে কোথা থেকে কেটে গেল, কেউই তা টের পেল না। একে ত জেট-সাইবার যুগের ছেলেমেয়ে, তার উপরে ভ্যালেন্টাইনের সন্ধ্যা, কখন, কোথায়, কি হয়ে যায় তা কে জানে। রবি ঠাকুরের আমলে এই দিনটি থাকলে মনের কথাটি তারে বলার জন্যে আর ঘনঘোর বরষার অপেক্ষা না করলেও চলত।

পরদিন সকাল সকাল মিঃ আয়ারের চেম্বারে অনঙ্গ, সঙ্গে মালিনী, এই প্রথম একসাথে। 'স্যার, কনগ্রাচুলেট মি, স্যরি, মানে আমাদের দুজনকেই আশীর্বাদ করুন। আমরা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আদর্শে দীক্ষা নিয়েছি গতকাল'। অনঙ্গ বলল । 'বাকি কাজটা এবার আপনার হাতে'। আনন্দ ও বেদনার যুগপৎ অনুভবে মিঃ আয়ারের মন ভরে উঠল। তিনি উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার থেকে।
'আমি আজ দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী বাবা', মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন মি: সুন্দরমূর্তি আয়ার। একফাঁকে একটু চোখ টিপে দিলেন অনঙ্গের দিকে তাকিয়ে।

ওরা দুজনে চলে গেল। এখন অনেক কাজ মি: আয়ারের। চিন্তা কি ছিল না! রেডিয়াল আর ক্রশ রোডের নেটওয়ার্ক দিয়ে ইয়েলাহাঙ্কা সার্কেলের প্ল্যানটাই এমনভাবে করেছে বাঙ্গালুরু কর্পোরেশন যে বিজিয়েস্ট আওয়ারেও কখনো জ্যাম হয় না। কাল সেটাও সম্ভব হয়েছে। সুতরাং আয়ার সাহেবের প্রথম কাজ হল ডি সি ট্রাফিকের বাসায় অন্তত: পাঁচলাখ টাকার একটা তোফা পাঠান- অবশ্যই অতি গোপনে, গতকাল তিন নম্বরের মুখ থেকে সবকটা ট্রাফিক পুলিশকে ঠিক সময়ে ঘন্টা তিনেকের জন্যে তুলে নেবার জন্যে। তারপর ক্যাফে কফি ডে'র ম্যানেজারকে হাজার দশেক, সার্ভিং-এ দেরী করানোর জন্যে। ড্রাইভারকে তার সুন্দর অভিনয়ের জন্যে একটা স্পেশ্যাল বোনাস দেওয়া যেতেই পারে, ব্যাটা এক্সপার্ট হয়েও বলে কিনা এগোনো যাবে না হুজুর!

আর অনঙ্গকে- তার 'কোয়টাস' এর জন্যে? তা আর বলতে! সে ছোঁড়াই তো সবচেয়ে বড় দাঁওখানা মারলো। তাহলে কুবের আর কন্দর্পের খেলায় জিতল কে? ছি ছি, জিতল কিনা একটা সফটওয়ার, যার কোনও ভূমিকা থাকারই কথা নয় এখানে!

Kuwait, 13th April, 2015.

Bengali Poem- Translated from Hindi- বসন্ত


वसंत

अखबार में नहीं छपता की वसंत आया
छपती हैं दंगे, कर्फ्यू और हिंसा की वारदातें.
अखबार में नहीं छपती तस्वीर खिले फूल की
छपती हैं तस्वीर जलते मकानों से उठते काले धुंए की.
वसंत की कहीं कोई चर्चा नहीं
वह चुपचाप आया है....
सूखी बिफरती हवाओं के बीच
कर रहा है इंतज़ार.
पुराने ज़र्द पत्तों के झरने का
नन्ही-सी कोंपल के उग कर
हरा बन जाने का.
कभी किसी दिन
चर्चा में आने का.
खूबसूरत खबर बन जाने का!

-अनीता प्रकाश

বসন্ত



কাগজে ছাপেনা বার্তা বসন্ত আসার
ছাপে যত তাণ্ডব ও দাঙ্গার খবর,
হিংসা-কার্ফু-মারামারি সংবাদ অসার
জীবন্ত লাশের কথা, সুখের কবর ।

কখনও ছাপেনা ছবি প্রস্ফুটিত ফুল
কোকিল-কূজিত-কুঞ্জ শুধু কি স্বপন?
বিষের ধোঁয়ায় ঝরে অস্ফুট মুকুল
বিষণ্ন বেহালা গাহে মৃত্যু-আলাপন ।

বসন্তের কথা হায়, কেউ তো বলেনা!
নিঃশব্দ-চরণপাতে এসে তরুমূলে,
রবে প্রতীক্ষায় কবে বর্ণহীন হেনা
ভিক্ষুবেশে দাঁড়াবে দু-বাহু অগ্রে মেলে ।

রিক্ত সহকার হবে পুনঃ মুকুলিতা
পলাশ-শিমূল বনে হবে হোলিখেলা,
বার্তাবহ ভ্রমরই তো জানাবে সে কথা
আকাশের গায়ে লেখা রবে দুই বেলা ।

অনুবাদঃ পল্লব চট্টোপাধ্যায়

Bengali Poem- ফলাফল ।

ফলাফল

আম মানে বারোয়ারী, বেল কভু হয় ফুল
জল যদি না ও পাই, জলপাই নয় ভুল;
কলাটি শিল্প যথা, বংশ যেমন কুল,
জামের শাসনকেই বলা হয় 'জামরুল'!!

দাড়ি যদি নাও পাকে, দাড়িম্ব বলি তাকে
না হয় বেদানা বল, দানা তো অনেক থাকে,
পেয়ারা মিষ্টি ফল, গুজরাতে 'জাম' ডাকে
আতাগাছে দেখেছ কি তোতা বসে ঝাঁকে ঝাঁকে?

কামের রঙেতে রাঙ্গা, কামরাঙ্গা টক তাই,
আমড়া ও আমলকি তাদেরি ভায়রাভাই।
আনা-দরে আনারস কত যেন কিনে খাই!
চালতা ও তেঁতুলের চাটনি কোথায় পাই?

এই রোদে মুসম্বি-কমলা খাও অঢেল,
জল নেই খালে-বিলে, আছে ডাব-নারকেল।
কপিত্থ-বিল্বকে, মোরা বলি কত-বেল;
দেখেছ কাঁঠাল গাছে? গোঁফেতে লাগাও তেল।

- পল্লব চট্টোপাধ্যায় ২৬ মে, ২০১৫।

Light Comedy- Bengali

নীচের লেখাটা একটা জোকের গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম। সেখানে যখন লোকের ভাল লেগেছে, 'আড্ডা'র বন্ধুরা আশা করি এটা পড়বেন।
" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মমাস বৈশাখ। অনেকে অনেক রকম চর্চা করছে তাঁর সম্বন্ধে। আমি একটা নতুন তথ্য পেলাম, সবাইকে না জানিয়ে শান্তি পাচ্ছি না। গান্ধীজী, চিত্তরঞ্জন ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সাথে ওনার ঘনিষ্ঠতার কথা প্রায় সবাই জানে। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে তাঁর বন্ধু ছিলেন সেটা সম্প্রতি জানা গেল। একটা গানে আছে-
"তব নন্দনবন-অঙ্গনদ্বারে, মনোমোহন বন্ধু-
আকুল প্রাণে পারিজাতমালা সুগন্ধ হানে।।"

কোনও একসময় মনমোহন হয়ত রবি ঠাকুরের রুমমেট ছিলেন, রোজ সকালে মর্নিং-ওয়াক করতেন একসাথে! বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে কি কবিগুরু শুধু শুধুই লিখে গেছেন-
"মনোমোহন, গহন যামিনীশেষে
দিলে আমারে জাগায়ে।।"
শুধু কি তাই? কখনও কখনো এমনিতে ঘুম না ভাঙলে সেতার বা সরোদ বাজিয়েও শোনাতেন মনমোহন। তারও প্রমাণ আছে, আমি বিনা প্রমাণে কিছু বলি না-
"কী রাগিনী বাজালে হৃদয়ে, মোহন, মনোমোহন,
তাহা তুমি জান হে, তুমি জান।।"
উপরোক্ত গানের এই মোহনটি কে তা নিয়ে আমাদের একটু সংশয় আছে। ইনি কি মোহনদাস গান্ধী না মনোমোহনেরই ডাকনাম? এ নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু রিসার্চ করা যাবে, কেমন?"

Bengali Poem- কোনিক

কোনিক ।।


আমি ছিলাম একটি বিন্দুর সঞ্চারপথ।
জীবনের কেন্দ্রে ছিল আর একটি বিন্দু, তিনিই বুঝি ঈশ্বর!
অর্ধেক জীবন আবর্তনে কেটে গেল,
ঈশ্বরের থেকে আমার দূরত্ব কিন্তু একই রয়ে গেল।

তারপর কেন্দ্রবিন্দু হল দুখানা, নাম দিলাম ফোকাস
দুটি রেখা, তাদেরকে বলা হল ডাইরেক্‌ট্রিক্স ।
ধর্মের চেয়ে আমি ঈশ্বরের বেশী কাছে এসেছি
দুই ঈশ্বরকে সূর্য মনে করে প্রদক্ষিণ করে চলেছি
এক উপবৃত্তীয় পথে। বুঝতে পারি না,
কোনটা জীবনের ধর্ম, আর কোনটা পাপ-পুণ্যের ।

তাই শেষে সরিয়ে দিলাম একটি করে বিন্দু ও রেখাকে।
ভাবি বুঝি এবার দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিতের ।
তা হল না, আমি চলতে থাকলাম-
ধর্ম ও ঈশ্বরের সাথে সমান দূরত্ব রেখে।
আমার নতুন নামকরণ হল 'প্যারাবোলা',
ঈশ্বর ও ধর্ম দুইই থাকল অধরা হয়ে।

ক্রমে ঈশ্বর থেকে আমার ব্যবধান বাড়তে থাকে।
নাস্তিকেরা উল্লসিত হতে থাকে-
বিশ্বাসীরা টিটকিরি দেয়্
ঐ যায় 'হাইপারবোলা' বলে।
তাই বুঝি আমি অনন্তেই মিলিয়ে গেলাম,
আর কখনও ফিরব না, মিলব না কারো সাথে।
কেউ কি পেয়েছ খুঁজে কেন্দ্রাভিমুখী পথটিকে?
আমায় তার ঠিকানা দিতে পার?

মুম্বাই, ১১ই মে, ২০১৫

Bengali Story- সবটা মোটেও গল্প না

সবটা মোটেও গল্প না (১)

রাজ্যারোহনের সাঁইত্রিশ বছর পরে প্রভাস থেকে খবর এল যে পাণ্ডবদের মামাতো ভাই আর পরম শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু কৃষ্ণ-বলরাম দুজনেই দেহরক্ষা করেছেন। যুধিষ্ঠির বললেন, ‘আর কেন ভাইসব, অনেক তো রাজ্যভোগ হল, চল এবার আমরাও যাই। সত্যি বলতে কি, কৌরবরা নেই, জরাসন্ধ-শিশুপাল-কীচকের মত বীরও আর দেখা যায় না। যুদ্ধ কার সাথে করি আর এই ঐশ্বর্য দেখাই বা কাকে! তা তোমার কি মত, বৃকোদর।‘ ভীম বসে থেকে থেকে আর রাজভোগ খেয়ে পেল্লায় একটি ভুঁড়ি বানিয়েছেন এতদিনে। তিনি পেটে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘দাদা, ইচ্ছে ছিল কেসি দাস বা হলদিরামের মত একটা জমাটি দোকান খুলে বসি হস্তিনাপুরে, তা আর হল না। আগ্রা থেকে আনানো পঞ্ছীর মোরব্বা খেয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেয়ে মনে হয় স্বর্গে যাওয়াই ভাল। শুনেছি ওখানকার পারিজাতের মধু থেকে তৈরি মাধ্বী নাকি দারুন, একবার চেখে দেখতেই হচ্ছে!’
অর্জুন অবাক। ‘বল কি মেজদা, তুমি এখনও ওসব ছাইপাঁশ হজম করতে পার? আমার তো অম্লশূল শুরু হয়েছে। স্বর্গবৈদ্য অশ্বিনীকুমারদের ছেলে মানে আমাদের ছোট ভাই নকুল-সহদেবের তৈরি ক্ষারক-চূর্ণ না থাকলে এমনিতেই আমার স্বর্গপ্রাপ্তি হত। তা, বড়দা যখন বলছেন, আমার আপত্তি নেই। তবে হ্যাঁ, দ্রৌপদীকে ছেড়ে আমি কোথাও নড়ছি নে।‘ নকুল তো বরাবরই চুপচাপ। আর পাশাখেলার সময় দ্রৌপদীর অপমান দেখে সহদেব একবার চিৎকার করে উঠেছিলেন, সেই তাঁর শেষ প্রতিবাদ। দ্রৌপদী আড়াল থেকে সব শুনছিলেন। তিনি মহা উৎসাহে চুল বাঁধতে গেলেন। তারপর অর্জুনের নাতি পরীক্ষিৎকে সিংহাসনে বসিয়ে শুভদিন দেখে একদিন পাঁচভাই-বৌ মিলে রওনা হয়ে গেলেন মহাপ্রস্থানের পথে। সে পথের বর্ণনা তো মহাভারতেই ভাল আছে, তাই তার আর পুনরাবৃত্তি করলাম না, আমাদের গল্প তাই নিয়ে যা মহাভারতে নেই।
(২)
পাণ্ডবরা হস্তিনাপুর থেকে হিমালয়ের পথ ধরলেন। ভীমের ইচ্ছেয় পাণ্ডবরা ভীমদত্ত, পশুপতিনগর হয়ে কৈলাস-মানসের পথ ধরলেন। এই ভীমদত্ত একসময় বৃকোদর ভীমের রাজত্ব ছিল। জতুগৃহ পুড়ে যাবার পর পাণ্ডবরা যখন চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেই সময় কুমায়ূন অঞ্চলের উপজাতীয় রাক্ষসবংশীয় সর্দার হাড়িম্বকে ঘটনাচক্রে মেরে তাঁর বোন হাড়িম্বাকে বিয়ে করেছিলেন ভীম। তারপর বছরখানেক সেই অঞ্চলেই থেকে রাজত্ব চালান তিনি। পুত্র ঘটোৎকচের জন্মের পর হাড়িম্বা(তিনি আদর করে বলতেন হিড়িম্বা, আমরাও তাই বলব)কে রাজ্যভার দিয়ে তিনি চলে এসেছিলেন ভাইদের কাছে। রুদ্রপুর পেরিয়েই ভীমের রাজ্য শুরু হল। পথে পড়ল ভীমতাল সরোবর, যেটা তিনি পাহাড়ের একদিক থেকে বেঁধে জল ধরে রাখার জন্যে তৈরি করিয়েছিলেন। সেখানে স্নানাদি সেরে তাঁরা ভীমদত্ত শহরে এসে হিড়িম্বার দেখা পেলেন।
হিড়িম্বা তো ভীমকে কিছুতেই ছাড়বেন না। মহাপ্রস্থানে যাবার জেদ ধরে বসে আছেন। ‘কৃষ্ণাদি যেতে পারে, আর আমি গেলেই দোষ! কেন, দিদি কি আমার চেয়ে বেশি ফর্সা? আমি পাহাড়ি মেয়ে, তোমাদের থেকে ভাল এসব পারি, তা জান? নন্দনকাননের রাস্তা চেন তোমরা?’ অনেক কষ্টে, অনেক ভুজুং-ভাজাং দিয়ে তাঁকে কাটান হল। তিনি কচি মোষের কলজে ভাজা অনেকটা আর সেই সাথে সেদ্ধ-ভুট্টা গেঁজানো মদ দিতে চেয়েছিলেন সাথে, শরীর গরম থাকবে বলে। ‘আমরা তো মরতেই যাচ্ছি, তার আগে কি ওই ছাই-পাঁশগুলো না খেলেই নয়’, এই বলে অর্জুন কাটিয়ে দিলেন। ওঁরা এগিয়ে গেলেন। ‘মন দিয়ে প্রজাদের দেখাশুনো কর, আর খুব ক্ষিদে না পেলে তাদের মাংস খেয়ো না’ এই উপদেশ দিয়ে ভীম ভাইদের পিছু নিলেন। গোয়ালা দুধ দিতে এসেছিল, রাগের চোটে তাকেই ফুটন্ত দুধের মধ্যে ফেলে হিড়িম্বা পায়েস বানাতে লেগে গেলেন।
একজালা পায়েস খেয়ে হিড়িম্বার ক্ষুধা আর রাগ মিটলেও তাঁর মন শান্ত হল না। ‘দূর ছাই’ বলে তিনি প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে উলটোপথে হাঁটা দিলেন ও বেশ কদিন পরে ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় গঙ্গোত্রী-গোমুখে এসে হাজির হলেন। নাম শুনে ভেবেছিলেন, বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট কিছু গোবৎস পাওয়া যাবে সেখানে, পেট ভরে খাওয়া জুটবে বহুদিন পরে। কিন্তু দেখলেন কি? গরুর হাঁ-এর মত একটা গুহা, সেখান থেকে ভীষণ বেগে বেরিয়ে আসছে বরফ-জলের স্রোত, আর তার পাশেই এক ছাগল-দাড়িওলা মুনিঠাকুর চোখ বুজে বসে আছেন। হিড়িম্বা ভাবলেন আজ এটাকে দিয়ে জলখাবার খেলে কেমন হয়! বেচারা, তিনি কি করে জানবেন যে ঐ মুনিঠাকুরটি আর কেউ নন, মানুষে তাড়ানো দেবতায় খেদানো পরম নাস্তিক জাবালি ঋষি।
(৩)
জাবালি মুনির পরিচয় কিছু দিতে হবে কি? তিনি ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মেছিলেন, বিধিমত পৈতেও হয়েছিল। তারপর অন্য মুনি-ঋষিদের মত একজায়গায় বসে ধ্যান-টান করার বদলে দুনিয়ার সারসত্যটা জানার তাঁর খুব ইচ্ছে হল। ঈশ্বর বলে কেউ আছে কিনা, থাকলেও তাঁর বাসা কোথায়, দেবতারা কি অমর, তাঁরা কি সত্যিই ভগবান? স্বর্গ-নরক কোথায়, আত্মা কি বস্তু, পুনর্জন্ম সত্যি আছে কিনা এসব প্রশ্ন সবাইকে শুধিয়ে বেড়াতে লাগলেন। লোকে বিরক্ত হয়, আরে বাবা ব্যাদ পড় না কেন, ব্যাদেই তো সব পাবে, তাঁরা বোঝান। কিন্তু উনি দেখলেন বেদ মানে স্বতঃসিদ্ধ কিছু ধারণা মাত্র, এগুলো সব সত্যি বলে মেনে নিয়েই তা লেখা হয়েছে, আসলে তার কোন প্রমাণ নেই। ব্রাহ্মন, আরণ্যক আর উপনিষদে বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু গল্প-গাথা আর শ্লোক আছে, তবে সেগুলো নিছক নীতিশাস্ত্র আর মন্ত্র-তন্ত্র, যদিও কাব্যমাধুর্য তাদের ভালই। তখন উনি খুঁজে খুঁজে দেবতাদের ঠিকানা জোগাড় করে ছদ্মবেশে সব ঘুরে-টুরে দেখে এলেন। তারপর ফিরে এসে পৈতে ছিঁড়ে ফেললেন, আর প্রচার করতে লাগলেন- দেবতা-টেবতা সব ফাঁকিবাজি। একদল ফর্সা লোক, চেহারা ভাল, হিমালয়ের ওপারে কৈলাসপাহাড়ের তলায় মানসসরোবরের তীরে নন্দনকাননে থাকে, তারাই নিজেদেরকে দেবতা বলে। তাদের মধ্যেও জন্মমৃত্যু-আহার-নিদ্রা-মৈথুন সব আছে। ইন্দ্র-অগ্নি-বরুণ এগুলো শুধু তাদের পদনাম, ইন্দ্র মরলে আর একজন ইন্দ্র হয়, বরুণ মরলে তার ছেলে বা অন্য কেউ বরুণ হয়। এঁদের আসলে অস্ত্র-বল আর চাতুর্য যথেষ্ট পরিমাণে আছে, তাই দিয়ে এরা ব্রাহ্মণদের দিয়ে বেদ লিখিয়েছেন আর ক্ষত্রিয়দের দিয়ে ক্রিয়াবিধিগুলো করিয়ে তাতে করে নিজেদের ভাবমূর্তি বজায় রেখে সবার উপরে ছড়ি ঘোরাতে থাকেন। স্বর্গ-নরক বলে মারা যাবার পরে আলাদা করে কিছু নেই, যা আছে তা এই জীবনেই আছে। ভগবান যদি থাকেনও তাঁর সম্বন্ধে মানুষ যা জানে, দেবতারা তার বেশি কিছু জানে না। তাঁর কথা শুনে কেউ কানে আঙুল দিল, কেউ বা ঝাঁটা হাতে তেড়ে এল। দেবতা আর অন্য ঋষিমুনিরা মিলে তাঁকে একঘরে করে দিল।
এই সেই জাবালি মুনি যিনি পিতৃসত্য রক্ষা করতে বনবাসে যাওয়ার সময় রামকে বেশ দামী-দামী উপদেশ দিয়েছিলেন, যেগুলো বাল্মীকিমুনি চক্ষুলজ্জার খাতিরেও বাদ দিতে পারেন নি। উনি পষ্টোভাষায় বলেছিলেন-‘দেখ বাপু, রাজার কাজ হল মন দিয়ে রাজ্যশাসন করা। প্রজা সুখে থাকলেই রাজার সার্থকতা, এই শুধু তার নৈতিক দায়িত্ব। তা না রাম, তুমি চলেছ বনে, কি না পিতৃসত্য পালন করবে। আরে বাবা, ভেবে দেখ কে তোমার মা-বাবা? একটি শুক্রকীট আর একটি ডিম্বানুই তোমার মা, তোমার বাবাও। আর তুমি যেহেতু ক্ষত্রিয়, শত্রুশাসনই তোমার ধর্ম। তুমি রাজা, প্রজারঞ্জনই তোমার কর্ম- এর বাইরে তোমার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। তাছাড়া যে মরেছে তাকে পিণ্ডদান করেই বা কার কি লাভ? মরা মানুষকে যদি তুমি ভাত খাওয়াতে পার তাহলে তো বিদেশ-বিভুঁইয়ে গিয়েও আমার খাওয়া-পরার কোন চিন্তা থাকবে না, বৌ আমাকে ঘরে বসেই রোজ খাইয়ে দেবে!‘ রাজা দশরথ যতদিন বেঁচেছিলেন, জাবালির রুজিরুটির কোনও অভাব হয় নি, তিনি মুচকি হেসে সব শুনতেন, তর্কও জুড়তেন মাঝে মাঝে। রাম কিন্তু এসব শুনে চড়াত করে রেগে উঠলেন। তিনি মুনিকে যা নয় তাই বলে গালাগাল দিলেন। পারিষদদলে বলে তার শতগুণ! অগত্যা অন্য মুনিরা তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে একেবারে সরযূ-গোমতী পার করিয়ে দিয়ে এলেন।
এখন জাবালি কি করেন? হৃষিকেশে গঙ্গাতীরে বসে তিনি আবার বেদ পড়তে শুরু করলেন। ঋষিপত্নী আগেই গত হয়েছেন, ঝামেলা ঝঞ্ঝাট নেই, দু-চারটে গাঁজাখোর শিষ্য জুটতেও দেরি হল না। তা একদিন জাবালি ঋগ্বেদে চার্বাক বা চারুবাক বলে এক তার্কিক পণ্ডিতের সম্বন্ধে পড়লেন। কি আশ্চর্য, তিনিও তো সেই একই কথা বলছেন-
‘যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পীবেৎ।
ভস্মীভূতস্য দেহস্য
পুনরাগমনম্‌ কুতঃ।।‘
ইতিমধ্যে পিপ্পলাদ বলে তাঁর একটি শিষ্য জুটেছে। তাকে তিনি মহা উৎসাহে এই নতুন খুঁজে পাওয়া দর্শন বোঝাতে লাগলেন। মাসছয়েক শাস্ত্র-আলোচনার পর তিনি এই নতুন দর্শনটি পিপ্পলাদকে প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে গঙ্গোত্রী ছাড়িয়ে গোমুখে অলকানন্দার তীরে আরাম করছেন, এমন সময় খবর পেলেন শিষ্যটি ব্রাহ্মণ আর ঋষিদের চাপে পড়ে জাবালি-উপনিষদ নামে একখানা বই লিখে ফেলেছে। তাতে আবার তত্ব, জীব, আত্মা আর বিভূতি নিয়ে জ্ঞান গম্ভীর বিশ্লেষণ ঢুকিয়েছে একগাদা। ঈশ্বর আর মোক্ষ নিয়েও নাকি অনেক এঁড়েমি করেছে ব্যাটা। নাস্তিকের নীতিজ্ঞান জিনিষটা অবশ্য জাবালিরও পছন্দের। নাস্তিক যদি বিবেক বিসর্জন দেয় তবে তার আর পশুর মধ্যে তফাৎটা আর রইল কোথায়। তবু তিনি কোথায় ভেবেছিলেন চার্বাকের দর্শনকে আরো কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন, পিপ্পলাদ দিল সব তপস্যার ফল নষ্ট করে।
তাই তিনি ইদানীং আর কারো সাথে কথাবার্তা বলেন না বিশেষ। শুনেছেন নেপালের তরাই অঞ্চলে নাকি বোধিসত্ব বা তথাগত বলে একদল নব্য সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটেছে যারা বেদ সত্য নয় বলে প্রচার চালাচ্ছে। যাকগে, বয়স একশো পেরিয়ে গেছে, এই বয়সে না তো তাঁর বুদ্ধ-বোধিসত্ব হবার দেহবল আছে আর না নতুন করে ঈশ্বর-ভজনা শুরু করতে পারবেন। এখন তাঁর অলস প্রহর কাটে এই অলকানন্দার তীরের ছোট্ট বাসাখানায় বসে বসে আর ক্বচিৎ দু-একটা পাখির ডাক শুনে। কিন্তু সামনে যে এই বিশাল জন্তুটি, দেখে অবশ্য কোন পাহাড়ি উপজাতির মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে, বিশাল হাঁ করে এগিয়ে আসছে, তার কি করা
যায় এখন!
(৪)
‘আহা, আজ যেন অসময়ে চাঁদ উঠল, তাও এই মর্ত্যলোকে, বরফের উপত্যকায় যেন পারিজাত ফুটল। কে গো মা তুমি?’ ঋষি নাস্তিক হলেও তাঁর রাক্ষসীর পেটে যাবার ইচ্ছে নেই, আর প্রাণ বাঁচাতে মিথ্যে কথা কে না বলে।
তবে কাজ হল তাতে। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও হিড়িম্বা থমকে দাঁড়ালেন। ‘আরে এ তো একটা চিম্‌সে বুড়ো! দূর ছাই, চিবোনোই যাবে না, দাঁতেরই গুষ্টিনাশ হবে শুধু’, তিনি ভাবলেন। যদিও বুড়োর কথাবার্তা ভাল, অনেকদিন নিজের সম্বন্ধে এরকম সত্যি কথা শোনেন নি, তবু ভাবলেন, ‘নাঃ, যখন এগিয়ে এসেছি, একটু তো ভয় দেখাতেই হবে- নইলে মান থাকে না।‘ কিন্তু তার আগেই জাবালি বলে উঠলেন, ‘উঃ কত বছর ধরে এই দেহভার থেকে মুক্তি পাবার আশায় এখানে বসে আছি। আজ মনে হয় আমার ইচ্ছে পূর্ণ হল। এখানে যে আসে সেই কিছু না কিছু বর চায়। আমিও বর দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছি। এখন তুমি আমাকে খেয়ে উদ্ধার করলেই আমি বাঁচি।‘
বরের নামে হিড়িম্বা এবার থমকে দাঁড়ালেন। তারপরেই হঠাৎ ‘আমার বর, আমার বর’ বলে কেঁদে উঠলেন। ‘কি হল মা, তোমার বুঝি ক্ষিদে নেই এখন?’ মুনি বললেন। ‘না না, মুনিঠাকুর বলছিলাম কি আমার বর, মানে মধ্যমপাণ্ডব ভীমসেন আমায় ফেলে মহাপ্রস্থান করতে চলে গেছেন। এবার আমার কি হবে!’
‘সে কি গো কন্যে? না না, এ বর আমি তো দিতে পারব নি। তবে অন্য কিছু ইচ্ছে থাকে তো বল। যদিও ভগবানের সঙ্গে আমার আড়ি, তবু বলা যায় না, লেগে যেতেও পারে।‘
‘ঠাকুর, কত কি ভেবেছিলাম করব, তা আর এ জন্মে হল না। গান গাইতে, কাব্য লিখতে, ছবি আঁকতে, তা আর হল কই! বৃকোদর চলে যাওয়ায় একা রাজ্য চালাতে হল। ছেলেটাও অকালে মরে গেল, দাদার তো বিয়েই হয়নি, বংশরক্ষাও হলনা। আর কি এ জন্মে সেসব পাব?’
‘এ জন্মে হবে না তো কি আছে, পরের জন্মে হবে’ মুনি বলছেন আর মনে ভাবছেন- এরকম অবস্থায় পড়েই তো মানুষ হয় গাদাগুচ্ছেক মিথ্যে বলে বা ভগবানকে ডাকে। ভগবান বা পুনর্জন্ম না মানার ভাল শাস্তি পাচ্ছি আজ, বাধ্য হয়ে সব মানতে হচ্ছে। ‘আমি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি পরের জন্মে তুমি রাজ্যশাসন করছ। ভীম তোমাকে এ জন্মে কষ্ট দিয়েছে তাই পরজন্মে তুমি অনূঢ়া থাকবে। ভাইয়ের বংশরক্ষা হয়নি বলছ, নাহয় একটি ভাইপোও থাকবে। আর কি চাও?’
‘আর অন্য ইচ্ছেগুলো?’
‘আরে, আমাকে কি ভূতের রাজা পেয়েছ! হবে হবে, সব হবে’ বলে জাবালি একটু মুচকি হাসলেন। ‘বৎসে, আমার বরে পরজন্মে তুমি গলা খুল্লেই মিঞা তানসেন, রঙের তুলি ধরলেই দা-ভিঞ্চি আর কলম ধরলেই শেক্ষপীয়ার বা কালিদাস হবে। এবার যাও দেখি, আমার ঘুম পেয়েছে।‘
‘আর কোথায় যাব, ঋষিঠাকুর? তোমার এখানেই থাকি না, তোমার পদসেবা করেই জীবনের বাকি কটা দিন কাটিয়ে দিই।‘
‘ওরে বাবা!’ জাবালি আঁতকে উঠলেন। ‘না না এখানে নয়। এখানে কি মানুষ থাকে? তুমি বরং আরো উত্তর পশ্চিমে চলে যাও বিতস্তা নদীর তীর ধরে। মানালি নামে সেখানে একটা গ্রাম আছে, যেখানে একসময় বৈবস্বত মনু থাকতেন। ওখানকার রাক্ষসজাতির মধ্যে কোন বড় নেতা নেই, সবাই খাওয়া-খাওয়ি করে মরছে। সেখানে তুমি তোমার নতুন রাজধানী বসাও। পরজন্মে নেতৃত্ব করার প্রাথমিক পাঠটাও সেখানেই হয়ে যাবে।
(৫)
এরপরের ঘটনা মহাভারতে নেই বটে, তবে হিড়িম্বা যে মনুলীলাভূমি বা মানালিতে গিয়ে একজন নামজাদা শাসক হয়ে উঠেছিলেন তা সেখানকার হিড়িম্বা আর ঘটোৎকচ মন্দির দেখলেই বোঝা যায়। আর জাবালির বর? যে ভদ্দরলোক পুনর্জন্মেই বিশ্বাস রাখেন না তাঁর বর যে ফলতেই হবে তার কোনও মানে আছে নাকি? তবে এ দুনিয়ার অনেক জায়গাতে অনেক কিছুই তো ঘটে থাকে। তাই যদি কাকতালীয়ভাবে কোথাও কিছু ঘটতে দেখাও যায়, তবে তা কি জাবালির দোষ?

12/june/2015