Sunday, April 15, 2018

মনের মণিকোঠা থেকে ।।১১।।


অগ্রজপ্রতিম সুজন দাশগুপ্ত মানুষ চেনা বা না চিনতে পারা নিয়ে নিজের জীবনের একটা মজার ঘটনার উল্লেখ করেছেন সেদিন। আমারও বয়স হচ্ছে, সুতরাং এরকম দুয়েকটা ঘটতেই থাকবে। তবে সুজন আর ক'জন হয়? আমার একদিনের দুটো ঘটনা মনে পড়ল- চার দশক আগেকার, তবে একটু অন্যধরণের।
১৯৭৭ সালের অক্টোবর। পুজোর ছুটিতে আমেদাবাদ গেছিলাম কাকার কাছে। এক রবিবার গুজরাট স্টেডিয়ামে গেছি ওঁর সঙ্গে, উদ্দেশ্য কিছু খেলা দেখা। সেদিন ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের ন্যাশনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার শেষ দিন। পূর্বাঞ্চল বনাম পশ্চিমাঞ্চল। আমাদের দেশে জাতীয় টিম নিয়ে যা উন্মাদনা তার শতাংশও ছিল না সেখানে, তবু দেখলাম পশ্চিমাঞ্চলের অধিনায়ক ধীরাজ পরসানাকে, রামনাথ পার্কারও ছিলেন, অজিত ওয়াদেকার তখন টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, তবু কেন জানিনা ছিলেন দেশের বাইরে। মাঠ ফাঁকা, পূর্বাঞ্চলের টেন্টে কাকা আমাকে বসিয়ে পাশের স্টেডিয়ামে কি চলছে তার খোঁজ নিতে গেলেন। এগিয়ে গিয়ে আলাপ করলাম সুব্রত গুহর সঙ্গে, নিতান্ত বালক হলেও বাঙালি দেখে খুশিই হলেন। গোপাল বোস ব্যাটিং করছিলেন, তপনজ্যোতি ব্যানার্জি অটোগ্রাফ দিলেন। ইতিমধ্যে ওঁদের ক্যাপ্টেন আউট হয়ে প্যাভেলিয়ানে ফিরলেন। 'জানো উনি কে? সুবিমল গোস্বামী', তপনজ্যোতি বললেন। আমি তেমন গা করলাম না। কিছুক্ষণ পরে কাকা এসে বললেন, 'কি রে, আমাদের পূর্বাঞ্চলের ক্যাপ্টেনের খেলা কেমন লাগল?'
'আচ্ছা কাকা, অম্বর রায়, গোপাল বোস থাকতে কে একজন সুবিমলকে ক্যাপ্টেন করা হল কেন? অবশ্য ভালই খেলেন ভদ্রলোক।' আমি জিজ্ঞেস করলাম।
কাকা হাঁ। 'সে কি রে! তুই চুনী গোস্বামীকে চিনতে পারলি না? সুবিমলেরই ডাক নাম চুনী।'
চিনব কোত্থেকে! তখন কি টিভি কমেন্ট্রি ছিল? আর খবরের কাগজের ছবিতে তো সবাই সমান।

কাকার ইন্টারেস্ট ছিল টেনিসে, নিজে খেলতেনও নিয়মিত। পাশের মাঠে চলছে জুনিয়ার চ্যাম্পিয়ানশিপ, মেয়ে-পুরুষ দু-দলেরই। মেয়েদের খেলা দেখছি। তখনকার দিনে আজকের সানিয়া মির্জার ধারে-কাছে ঘেঁসার মত কোন মেয়ে ছিলনা ভারতের টেনিস-দুনিয়ায়। ফলে যা ফাইনাল খেলা হচ্ছিল, আজকের বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েরাও তা দেখে হাসবে। উঁচু-উঁচু লব, ভলি নেই, স্ম্যাশ নেই- খুব মজা পাচ্ছে সবাই। হঠাৎ পেছন ফিরে দেখি নন্দন বল আর রমেশ কৃষ্ণন- তখন জুনিয়ার টেনিসে ভারতের দুই ও এক নম্বর যথাক্রমে, খুব হাসছে দুজনে। কিছুক্ষণ পরেই ফাইনাল খেলবে ওরা, সাধারণ পোষাকেই ঘোরাফেরা করছে।
এত ঠাট্টা-ইয়ার্কি এক বয়স্ক ভদ্রলোক ঠিক সহ্য করতে পারছিলেন না। উনি রমেশকে ডেকে বললেন, 'মাই বয়, টেনিস খেলাটা যদি শিখতে, তাহলে বুঝতে এটা কত কঠিন খেলা- এভাবে হাসতে না!'

অপ্রত্যাশিত অভিযোগে রমেশ তো হতভম্ব। এদিকে তাকিয়ে দেখি আমার কাকা এবং আরো কয়েকজন ভদ্রলোক আর কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেন না।

No comments:

Post a Comment