জয় বাবা ভোটনাথ!
অণুগল্প
অণুগল্প
'ভোট এস্যেছে। কাল গরুর গাড়ি লিয়ে আইসব, খুড়িমা-জ্যেঠিমারা সব ভোট দিতে যাবেন গো'- হাঁক দিল মটর, বাবুগাঁয়ের মটর দত্ত। এ সেই ছাপ্পান্ন, না না, বোধহয় সাতান্নর বাংলার নির্বাচন। ছাপ্পা-ভোট ছিল কিনা জানিনা, তবে কংগ্রেসেরই বোলবালা তখনও।
ভৈরব ঘোষালের বুড়ি বেধবা রাজেশ্বরী, যাঁকে গাঁয়ের ছেলে-ছোকরারা ডাকে রাজু-বুড়ি, সামনে অবশ্য রাজু-ঠাম্মা, তিনি মটরকে ডেকে ভোটের খবরাদি নিলেন। 'হ্যাঁরে, ভোট দিলে কি হয়?' তাঁর প্রশ্ন। 'পেরজাতন্ত্রে ভোট বড় যন্তর ঠাম্মা, নিজের রাজা নিজেই বাছো, ইচ্ছেমত কাজ করাবে তার পর।' এর বেশী কি মটর নিজেই জানে, ছাই? তবে বুড়ীর অত শোনার শখ নেই। গতমাসে তাঁর একমাত্র পুত্র সুদামের তিন নম্বর কন্যা জন্মাবার পর থেকেই ছেলের জন্যে পুন্নাম নরকের ভয় চেপে বসেছে বুড়ীর মনে, নানা জায়গায় মানত করে যাচ্ছেন তিনি ক্রমাগত।
যথাসময়ে গাঁয়ের বউ-ঝিরা রাজু-ঠাম্মার নেতৃত্বে সদলবলে এসে ভোটগাড়ি, থুড়ি, গরুর গাড়ির সওয়ার হলেন। পুরুষরা আগেই রওনা হয়ে গেছে হেঁটে বা সাইকেলে। গোবিন্দপুরের ইস্কুলে যখন পৌঁছল তারা, বেলা বেড়ে গেছে, সুয্যিমামা সওয়ার মাথার উপরে। না, মেয়ে-বউদের আলাদা লাইন হলেও বয়েসের সম্মানে ঠাম্মাকে লাইন দিতে হলনা, গদাই আর পটলা- কংগ্রেস আর জনসঙ্ঘের এজেন্ট, তখনও ছিপিম বা সিপিএম নামেনি মাঠে, ধরাধরি করে নিয়ে এল রাজুবুড়িকে পোলিং বুথের ভিতরে। 'ওটা কি মাখায় রে আঙ্গুলে? সিঁদুর লয় তো? আমি বেধবা মাগী, সিঁদুর পরাস নে যেন হতভাগা!' আঙ্গুলে টিপ পরার পর ঠাম্মা বাক্সের দিকে এগিয়ে গেলেন। আদ্রার পোস্টমাস্টার সেনবাবু, প্রিসাইডিং অফিসার, যথেষ্ট সম্মান দেখিয়ে বুড়ীকে ধরে ধরে নিয়ে গেলেন বাক্সর কাছে- 'মাসিমা, এই কাগজটায় আপনার পছন্দমত চিহ্নে ছাপ মেরে...হ্যাঁ, এভাবে মুড়ে বাক্সে ফেলবেন। আমরা বাইরেই আছি, কোনও দরকার হলে ডাকবেন।' ঠাম্মা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন বাক্সের দিকে।
কিন্তু, একি! বুড়ী আগে গিয়েই ভোটবাক্সকে সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ করলেন। তারপর আঁচলের গিঁঠ খুলে বের করলেন সওয়া পাঁচ আনা পয়সা, ফুল বেলপাতা, চারটি দুর্বাঘাস, সিঁদুর আর বাতাসা। ভাল করে ভোটবাক্সে সিঁদুর মাখিয়ে তিনি ছাপমারা কাগজটি বাক্সে ফেললেন। তারপর নমস্কার করে মানত করলেন- 'হেই ভোটবাবা, ভোট তো দিল্যম। দেখো বাবা ইবারে যেন আমার সুদামের একটি ব্যাটা হয়'।
বলা বাহুল্য, হতভম্ব সেনবাবু আরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন যখন যাবার আগে ঠাম্মা তাঁকে পুরুতের বরাদ্দ সোয়া-পাঁচ আনা দক্ষিণা হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন।
কিন্তু, একি! বুড়ী আগে গিয়েই ভোটবাক্সকে সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ করলেন। তারপর আঁচলের গিঁঠ খুলে বের করলেন সওয়া পাঁচ আনা পয়সা, ফুল বেলপাতা, চারটি দুর্বাঘাস, সিঁদুর আর বাতাসা। ভাল করে ভোটবাক্সে সিঁদুর মাখিয়ে তিনি ছাপমারা কাগজটি বাক্সে ফেললেন। তারপর নমস্কার করে মানত করলেন- 'হেই ভোটবাবা, ভোট তো দিল্যম। দেখো বাবা ইবারে যেন আমার সুদামের একটি ব্যাটা হয়'।
বলা বাহুল্য, হতভম্ব সেনবাবু আরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন যখন যাবার আগে ঠাম্মা তাঁকে পুরুতের বরাদ্দ সোয়া-পাঁচ আনা দক্ষিণা হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন।
No comments:
Post a Comment