Wednesday, January 21, 2015

বাংলা অণুগল্প ৩৭ - ঘোগ (অফিসের গল্প- ৪)

ঘোগ


সবে এসে বসেছি অফিসে, চিফ ইঞ্জিনিয়ার বনিক সায়েবের ফোন। 'মুখার্জি, তোমার ওয়ার্কশপের কয়েকটা কন্টিঞ্জেন্ট ছেলেকে পাঠিয়ে দাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, জি-এম ড্রিলিঙএর বাংলোয়, আর্জেন্ট।'
জানতাম এই কাজটাও করতে হবে। রেগুলার ওয়ার্কাররা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে, সমস্ত হ্যাপা পোয়াতে হয় ওই জনা পাঁচ-ছয় অস্থায়ী কর্মীদেরকে। তার উপর এই সব বরাত। কেউ গাড়ি নিয়ে আসে ধোওয়াবার জন্যে, কখনও ক্রিসমাস পার্টির জন্যে ক্লাব সাজানোর লোক চাই। সবাইকে খুশী করে সাইটের থেকে আসা যন্ত্রপাতিগুলো সারানোর দায়িত্ব, একেবারে থ্যাঙ্কলেস জব!
- দাদা, আজ ষোলো নম্বরে টুল পাঠাতে হবে, নইলে শাট ডাউন। আমি বারোটা নাগাদ নিজে ওদের নিয়ে পৌঁছে যাব, চিন্তা নেই- আমাকে বলতেই হল।

এসে দেখি এলাহি কাণ্ড। জি-এম দত্তসাহেব মাস-দুই হল বদলি হয়ে পণ্ডিচেরির এই অফিসে এসেছেন। প্রচণ্ড রাগী মানুষ, আমরা আড়ালে 'রয়াল বেঙ্গল টাইগার' বলেই ডাকতাম। এর আগে যাঁরা ছিলেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর চক্কোরে তাঁদের কেউই পরিবার নিয়ে আসেননি। ইনিও মাস দুই একাই ছিলেন, তবে বাঙালির পেট তো, ক্যাণ্টিনের আর হোটেলের মাদ্রাজি খাবার টানতে পারলেন না বেশিদিন, আজ ওঁর স্ত্রী এসে পৌঁছেছেন, সাথে বেশ কিছু মালপত্র। এতদিনের ব্যাচেলার রেসিডেন্সে ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে হলে যা হয়, যাবতীয় অনাবশ্যক আবর্জনা ক্লিয়ার করতে হবে এখন, ছেলেরা লেগে পড়ল। আমিও সুযোগ বুঝে লাঞ্চ সারতে বাসায় চলে এলাম।
ফিরে এসে দেখি বণিকও এসে পড়েছেন, ছেলেরা হল, বেডরুম পরিষ্কার করে লফ্‌টের উপর উঠেছে। দেখি মিঃ ও মিসেস দত্ত দুজনের মুখই হাঁড়ি। কি হল আবার কে জানে! এদিকে লফ্‌টের উপর থেকে বেরোচ্ছে একের পর এক খালি বোতল, নানা ব্র্যাণ্ডের নানা মালের। আমি আর বণিক সাহেব মুগ্ধ হয়ে বোতল দেখছি, 'এত বোতল', বণিক অবাক হয়ে বললেন। হঠাৎ কি ভেবে নিজের অসামান্য জেনারেল নলেজের পরিচয় দিতে আমি বলে উঠলাম, 'দেখুন স্যার, ওই ওয়াইনের বোতলগুলো ডিমেলো সায়েবের, ওঁর গোয়ার পোর্ট ছাড়া চলত না। ভাল স্কচগুলো চোপড়া সাহেবের আর ওই দেশীগুলো করুণাকরণের। কয়েকটা বিয়ারের বোতলও দেখছি, ওগুলো নিশ্চয় মিঃ নাম্বুদ্রিপাদের, তবে উনি খেতেন না, বোধহয় গেস্টদের জন্যে আনাতেন। আমি তো পেছনের বাড়িতেই থাকি, সবই প্রায় দেখা যেত।'
এইবার দত্তসায়েবের মুখে কথা ফুটল। বেশ ঝাঁঝের সাথে উনি শ্রীমতিকে বললেন, 'দেখ, এবার বিশ্বাস হল? বলছি, আমি সবে দু'মাস এসেছি, এর মধ্যে হার্ডলি ছ-সাতটা শনিবার ড্রিঙ্ক করেছি। বোলোনা, মুখার্জিকে আমি শিখিয়ে দিয়েছি এসব বলতে!' 'তোমার প্রমোশন এবার আটকায় কে'- বণিক একফাঁকে চুপিচুপি আমাকে বললেন।
কি বললেন, প্রমোশন হয়েছিল কিনা? সে এক অন্য কাহিনী, পরে শোনানো যাবে।

কুয়েত, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১৪।

No comments:

Post a Comment