Wednesday, January 21, 2015

বাংলা অণুগল্প ৩৬ - স্বর্গীয় ব্যাপার

স্বর্গীয় ব্যাপার ।।


শিবঠাকুরের অসম্ভব মাথাব্যথা। ব্রেনে শর্ট-সার্কিট হয়েছে, অশ্বিনীকুমাররা মত দিলেন, ব্রেন অপারেশন করতে হবে। তবে সে তো আর স্বর্গের হাসপাতালে হবে না, সেখানে একটা স্টেথো আর প্রেসার মাপার যন্ত্র ছাড়া যে আর কিছুই নেই। 'এই, যা তো রে, মর্ত্য থেকে একটা ভাল ডাক্তার ধরে নিয়ে আয়', শিবঠাকুর নন্দীকে আদেশ দিলেন। 'কিন্তু গুরুদেব, ভাল ডাক্তার চিনব কি করে', নন্দীর প্রশ্ন। 'আরে ব্যাটা রুগীর ভীড় দেখলেই বুঝবি, কি গুরু, ঠিক বলিনি', ভৃঙ্গি শুধোয়।
- তোরা দুটোই গাড়ল। দাঁড়া, আমি তোকে একটা দিব্যদৃষ্টি দিচ্ছি। গিয়েই ডাক্তারের চেম্বারের কোনাটা দেখবি, ওর হাতে যে রোগীরা মরেছে তাদের ছায়াশরীর দেখতে পাবি সেখানে। সেই দেখে হিসেবেমত একটা ডাক্তার নিয়ে আসিস।

ঘন্টাদুয়েক পরে নন্দী ফিরল একটি ছোকরামত ডাক্তারকে নিয়ে। 'একিরে, এ কাকে নিয়ে এলি', শিবঠাকুর শুধোন, 'এর গায়ে তো এখনও মেডিক্যাল কলেজের স্টাফ নার্সদের জামায় লাগা পারফিয়ুমের গন্ধ লেগে! কি হে, ইন্টার্নশিপ শেষ করেছ তো?'
- গুরু সব ডাক্তারের চেম্বারেই দেখি মরা রুগীদের ভীড়। এর ওখানে মাত্র দুটো ছিল- নন্দী বলে।
- আজ্ঞে, কালকেই ইন্টার্নি শেষ করে ডাক্তারি শুরু করেছি, তাই এখনও বেশী রুগী মারতে পারিনি- ডাক্তারের সলজ্জ উত্তর। তা মশায়ের নামটা.....অদ্ভুত ড্রেস করেছেন, যাত্রাপালায় অভিনয় করতে যাচ্ছিলেন বুঝি?
- অ্যাই, চোপরাও। আমি শিব।
- চোখ রাঙাবেন না, আমি নীরস মেডিক্যাল কলেজে স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি ছিলাম। কি আমার ভি-আই-পি রে, ওইটুকু নামেই চিনবে লোকে। আপনি কি মদন-মুকুল-মমতা যে একডাকে চিনবে সবাই? পুরো নাম বলুন।
- মদন? সে তো পুড়ে ছাই কোনকালে। আমার পুরো নাম শিবচন্দ্র দেবাদিদেব মহাদেব মহেশ্বর।
- বাপ্‌স্‌, এ যে রেলগাড়ি! মাথার কোথায় ব্যথা? ব্রহ্মতালুতে? প্রেসার তো অ্যাবনর্মালি হাই! হুম যা ভেবেছি। এ ঠিক ড্রাগের রি-অ্যাকশন। কি খান? চণ্ডু, চরস না ব্রাউন সুগার?
- ক্যানো, তাতে তোমার কি হে ছোকরা, নিজের পয়সায় খাই।
- আমার যা মনে হচ্ছে গাঁজার ধোঁয়া ব্রহ্মতালুতে উঠে আটকে গেছে, বেরোবার রাস্তা পাচ্ছে না। এই যে শিববাবু, শুনুন, ওসব নিষিদ্ধ ড্রাগ বন্ধ করুন। নতুন সরকার আসায় সাধু-সন্ন্যাসিদের তো এখন পোয়াবারো। যা খুশী তাই চলছে খুলে-আম! এই যে, ছ'মাস এ সব বন্ধ না রাখলে কিন্তু তালু ফটাস! আমার হাতে তখন তিন নম্বর হয়ে যাবেন।
- আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে। ওরে ভিরিঙ্গি, ব্যাটা ওকে ভিজিটটা দিয়ে এবার বিদেয় কর।
খানিকক্ষণ পরে শিব তখনও ফুঁসছেন। হুঁ, ডাক্তার না আরো কিছু! এসেছে আমাকে মদনার গল্প শোনাতে যাকে আমি কোনকালে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছি, তা নিয়ে কুমারসম্ভব-টম্ভভ কি সব লেখাও হয়ে গেল মর্ত্যে! যাকগে, মাথাটা ছেড়েছে মনে হচ্ছে। ওরে নন্দি, এক ছিলিম সাজা বাপ আমার!

২৯শে নভেম্বর, ২০১৪।

No comments:

Post a Comment