সবুজের স্বপ্ন।
''We don't inherit the earth from our ancestors; we borrow it from our children."
কথাটা আসলে কে বলেছিলেন তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে ১৯৭১ সালে বিশ্বখ্যাত পরিবেশবিদ ওয়েন্ডেল বেরী (Wendell Berry) তাঁর লেখা “The Unforeseen Wilderness: An Essay on Kentucky’s Red River Gorge”.বইতে অনেকটা এ ধরণের একটা উক্তি করেন। সেই থেকে এটা তাঁর নামেই চলে আসছে।
তবে বেরীরও অনেক আগে বাংলারই এক কবি স্বপ্নটা দেখেছিলেন। অবশ্য তার পর নিষ্ঠুর পৃথিবী তাঁকে বেশীদিন বাঁচিয়ে রাখেনি। একটি নবজাতককে দেখে তিনি শপথ নিয়েছিলেন-
"যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" (ছাড়পত্র)
"যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" (ছাড়পত্র)
তারপর এই সেদিন বাংলার এক গায়ক কবি লিখলেন একটি গান- তাঁর দুশ্চিন্তা তাঁদের সন্তান, এই প্রজন্মের শিশু কিসের আশায়, কী নিয়ে বাঁচবে, কী স্বপ্ন দেখবে ঘুমের মাঝে। সুকান্তের পরের অর্ধ-শতাব্দীতে আমরা কতটুকু এগিয়েছি? নচিকেতার আক্ষেপ-
"চাঁদমামাই দেবে স্বপন, স্বপ্ন দিতে আমি কি আর পারি?
যে পৃথিবী গড়লাম আমি বাসযোগ্য হয়নি তা আমারই।"
"চাঁদমামাই দেবে স্বপন, স্বপ্ন দিতে আমি কি আর পারি?
যে পৃথিবী গড়লাম আমি বাসযোগ্য হয়নি তা আমারই।"
এই পৃথিবীকে রক্ষার ব্রত মানুষ খুব বেশী দিন নেয়নি। আমরা এই প্রকৃতি থেকে নিয়েছি অনেক, এখনও নিয়েই চলেছি, দিচ্ছি কিন্তু অনেক কম। শিল্প-বিপ্লবের পরমুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত শুধু আগুন জ্বেলেছি- নিষ্ক্রান্ত গ্যাসগুলি, বর্জ্যপদার্থগুলি কোথায় গিয়ে কিসের ক্ষতি করছে তা জানিনি, জানবার চেষ্টা করিনি। মাটি খুঁড়েছি, পাহাড় ভেঙ্গেছি যত্রতত্র, সবুজকে নিঃশেষ করে জীবজগৎ করেছি ধ্বংস, ফিরে তাকাইনি পেছনে। আজ আমাদের জ্ঞান হয়েছে, জেগেছি, জেনেছি যে ভুলটা কোথায়, তার সংশোধনের পথ কী? 'যে পথে যেতে হবে, সে পথে তুমি একা' নও আর। এই পৃথিবীর প্রকৃতি, পরিবেশ, জল-মাটি-বায়ূমণ্ডল, মানুষ-জীবজন্তু-গাছপালা সব নিয়েই আমাদের জীবন, এদের কাউকে বাদ দিয়ে নয়। তাহলে কি মাটি খুঁড়ে খনিজ-উত্তোলন করব না? ঘরবাড়ি বানিয়ে থাকব না, ফলমূল-মাছমাংস না খেয়ে থাকব? ঘাসের ক্ষতি হবে বলে গরু-ভেড়া তাদের খাদ্য পাবে না? তা একেবারেই নয়। সবকিছুই চাই, সবকিছুই পাওয়া সম্ভব- তবে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে পরিবেশের সাম্যের পরিস্থিতি বজায় রেখে। Food chain, ecological balance, global warming, deforestation, green-house effect ইত্যাদি অনেক গালভরা নাম দিয়ে আমরা ব্যাপারটাকে অযথা কঠিন করে তুলেছি- কিন্তু কাজ সিধে, উদ্দেশ্য একটাই-
'প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল'।
'প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল'।
আমাদের এই সবুজ গ্রহের যে সৌন্দর্যীকরণ, তা কিন্তু আমাদের পাথেয়, ধ্যেয় নয়, উদ্দেশ্য এর অকালমৃত্যু রোধ করে একে সজীব রাখা। যদি সূর্য কোনদিন নিভে যায় বা হঠাৎ আছড়ে পড়ে কোন বিশাল উল্কা বা গ্রহাণু এর বুকে, তা রোধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই, তবে এই গ্রহে পানীয় জলের সঞ্চয় ধরে রাখা, বায়ুমণ্ডলে প্রাণদায়ক অক্সিজেনের সঠিক অনুপাত বজায় রাখা, ওজোনস্তরকে অক্ষুণ্ন রেখে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি আর উষ্ণায়ন থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা আর তৃণ-গুল্ম-বৃক্ষাদি দিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে বিশ্বে মরুর বিস্তারকে রোধ করা- এসবকিছু আছে মানুষেরই হাতে, এ আমাদের সবার দায়িত্ব।
No comments:
Post a Comment