Monday, October 28, 2019

সীমন্ত ।। বাংলা অণু-গল্প

সীমন্ত ।।
(অণু-গল্প)

'একদিন আমার সাথে মহামায়া আশ্রমে চল, মহাগুরুকে তোর হাতটা দেখিয়ে আনি গে। একেবারে অব্যর্থ গণনা। তাছাড়া তাঁর আশীর্বাদের ফলও খুব ফলে। এই শনিবারেই চ' দেখি।'

মিষ্টুর ওই এক দোষ, কথা শুরু করলে আর থামতে চায় না, আর ওই গোঁ ধরলে তা করেই ছাড়বে। অবশ্য রীনার সমস্যাটা নিয়ে সে যে ভাবছে সেটা দেখেও ভাল লাগে ওর। প্রায় চার বছর হল রীনার বিয়ে হয়েছে সীমন্তের সাথে। ইতিমধ্যে বার দুয়েক তার সন্তান গর্ভে এসেও পাঁচ-ছ'মাসের মাথায় নষ্ট হয়েছে, মানে মিস্‌ক্যারেজ, আর কি। অবশ্য এবার ডাক্তার ভরসা দিয়েছেন পরের বার একটা শিরোদকার-স্টিচ দিয়ে দেবেন। তবু কি চিন্তা যায়! মিষ্টুর বর পার্থ সীমন্তের সহকর্মী, সেই হিসেবেই ওদের বন্ধুত্ব হলেও আজকাল সেটা সহোদরা বোনদের মতই হয়ে উঠেছে।
মহামায়া আশ্রমে শনিবার বেশ ভীড়। জন পাঁচ-ছয় ষণ্ডাগোছের চ্যালা দর্শনার্থীদের সামলাচ্ছে। ওরা চারজন পার্থের গাড়িতেই এসেছে, গাড়ির ব্র্যাণ্ড আর চাকচিক্য মহাগুরুর নজর এড়ায় নি বোঝা গেল, যখন শিগ্‌গিরই তাদের ডাক পড়ল। সীমন্ত একটু আগে নেমে গেছিল সিগারেট কিনতে, ও হেঁটে আশ্রমের বাইরে এসে সিগারেট ধরিয়েছে। দুই সখী এগিয়ে গিয়ে মহাগুরুকে প্রণাম করল, পার্থ আশ্রমের বাইরে গিয়ে সীমন্তের কাছ থেকে একটা সিগারেট নিল।
'তোমার ত দেখছি মা দাম্পত্য-জীবনে শুক্রের আধিপত্য। স্বামীভাগ্য খুব ভাল। তবে একটু চোখে চোখে রেখো, কখন কি ঘটে বলা যায় না।' মহাগুরু মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললেন। মিষ্টু দেখা গেল ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিল না। 'আমার কথা ছেড়ে দিন, গুরুদেব, আপনি আমার এই বোনটিকে একটু দেখুন। ওকে নিয়েই যত সমস্যা।'

মহাগুরুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তিনি কিছু প্রশ্ন করেন না। করবেন কেন, তিনি ত অন্তর্যামী, সর্বজ্ঞ! তিনি রীনার মুখের দিকে তাকিয়ে 'সীমন্ত' কথাটা বার দুই অস্ফুটে উচ্চারণ করলেন। তারপর চমৎকৃত রীনা কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন-'হবে মা, হবে। তোমার বিয়ের ফুল খুব শিগগিরই ফুটবে!'
এদিকে ধূমপান শেষ করে সীমন্ত সেদিকেই আসছিল তখন, তার পেছনে পার্থ। মহাগুরুর শেষ কথাটা কানে যেতেই সীমন্ত তড়িঘড়ি সেদিকে এগিয়ে গেল। তারপর রীনাকে টেনে তুলে বলল, 'আমাদের এক্ষুনি ফিরতে হবে, একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে অফিসে।' মহাগুরুর দিকে তাকিয়ে বলল- 'নমস্কার গুরুদেব। আমি ওর হাসব্যাণ্ড। এবার তবে আসি'- বলে হতভম্ব মহাগুরুর দিকে আর না তাকিয়েই রীনাকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে এল।
'না হয় গুরুদেব একটু ভুল করেছেন। তাবলে এত তাড়াহুড়ো করে চলে আসার কি দরকার ছিল?' গাড়িতে বসে কৈফিয়ত তলব করল রীনা। 'জানো, উনি তোমার নামটা পর্যন্ত ঠিক-ঠিক বলে দিয়েছেন।'
'দোষটা ত তোমারই। কতবার বলেছি সিঁদুরটা একটু ভাল করে পর। এত ঘন চুল মাথার সামনের দিকে যে কিছু দেখাই যায় না! আর হ্যাঁ, সীমন্ত হল সিঁথি, ওটাই গুরুদেবের চোখে পড়েছে, আমা্র নামটা নয়! চালাক মানুষ, জিগ্যেস তো করতে পারেন না তাই সীমন্তে সিঁদুর খুঁজছিলেন, দেখতে পাননি যথারীতি। মহাগুরুর চ্যালাদেরকে দেখেছ, গুণ্ডা পালোয়ান একেকটা। গুরুদেবের কথা যাতে বিফল না হয় তার জন্যে ওরা তোমার এই মুহূর্তে একটা বিয়েও দিয়ে দিতে পারত।'
গাড়িতে গোটা রাস্তা কেউ আর কোনও কথা বলে না।

No comments:

Post a Comment