লোকায়ত সঙ্গীত-সাধনায় হাসন রাজা ।।
'লোকে বলে বলেরে
ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাঝার।।
ভালা কইরা ঘর বানাইয়া
কয়দিন থাকমু আর
আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
পাকনা চুল আমার।।
এ ভাবিয়া হাসন রাজা
ঘর-দুয়ার না বান্ধে
কোথায় নিয়া রাখব আল্লায়
তাই ভাবিয়া কান্দে।।
জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন
বানাইত দালান-কোঠা
করিয়া রঙিন।।'
'লোকে বলে বলেরে
ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাঝার।।
ভালা কইরা ঘর বানাইয়া
কয়দিন থাকমু আর
আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
পাকনা চুল আমার।।
এ ভাবিয়া হাসন রাজা
ঘর-দুয়ার না বান্ধে
কোথায় নিয়া রাখব আল্লায়
তাই ভাবিয়া কান্দে।।
জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন
বানাইত দালান-কোঠা
করিয়া রঙিন।।'
উপরের লোকগীতিটির রচয়িতা দেওয়ান হাসন রাজা (১৮৫৪-১৯০৬)। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে
অসম ও তৎসংলগ্ন সিলেট অঞ্চলে ৮.৮ রিখটার মাত্রার ভয়ংকর ভুমিকম্প ও তারপরেই
ব্রহ্মপুত্রের ভীষণ বন্যায় ব্যাপক মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি হয় । এই সময়ে রাজর্ষি
হাসন রাজা তাঁর জমিদারির এলাকায় প্রভুত সেবাকার্য চালান । কিন্তু এই ঘটনা
থেকে জীবনের অনিত্যতা ও ঈশ্বরের মর্জির কাছে মানুষের অসহায়তা তিনি সম্যক
ভাবে উপলব্ধি করেন, যার প্রতিফলন পড়ে পরবর্তী এবং বিশেষতঃ উপর্যুক্ত
লোকগীতিতে ।
হাসন রাজার জন্ম হয় সিলেটের সুনামগঞ্জ বিভাগের লক্ষণশ্রী গ্রামে । তাঁর পিতা দেওয়ান আলি রাজা ছিলেন একজন জমিদার ও হিন্দু রাজা বীরেন্দ্রনাথ সিংদেওএর বংশধর । পিতা ও জ্যেষ্ঠভ্রাতার অকাল্প্রয়ানে খুব কম বয়েসেই জমিদারিতে হাতেখড়ি হয় হাসনের । সেই সাথে শুরু হয় এক নতুন ধারার জীবনদর্শনের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তীকালে যার অকুণ্ঠ প্রশংসক ছিলেন । বস্তুতঃ, হাসন রাজা সম্বন্ধে বৃহত্তর বিশ্বের পরিচয় ঘটান কবিগুরুই ১৯৩০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া একটি বক্তৃতায় । অবশ্য তার আগে ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৫ Indian Philosophical Congress-এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি প্রসঙ্গক্রমে হাসন রাজার দুটি গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তাঁর দর্শন চিন্তার পরিচয় দেন। ভাষণটি 'Modern Review' ( January 1926 ) পত্রিকায় 'The philosophy of Our People' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এর অনুবাদ প্রকাশিত হয় 'প্রবাসী' ( মাঘ ১৩২২ ) পত্রিকায়। তার একটি নীচে উদ্ধৃত করলামঃ
'মম আঁখি হইতে পয়দা আসমান জমিন
শরীরে করিল পয়দা শক্ত আর নরম
আর পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর গরম
নাকে পয়দা করিয়াছে খুসবয় বদবয়।'
১৯৩৬ এ রচিত এই কবিতাটির সাথে দেখুন তো, কোনও মিল পাওয়া যায় কিনা-
'আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চূনি উঠল রাঙা হয়ে ।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,
জ্বলে উঠল আলো পূবে পশ্চিমে ।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম 'সুন্দর',
সুন্দর হল সে ।'
হাসন রাজার জন্ম হয় সিলেটের সুনামগঞ্জ বিভাগের লক্ষণশ্রী গ্রামে । তাঁর পিতা দেওয়ান আলি রাজা ছিলেন একজন জমিদার ও হিন্দু রাজা বীরেন্দ্রনাথ সিংদেওএর বংশধর । পিতা ও জ্যেষ্ঠভ্রাতার অকাল্প্রয়ানে খুব কম বয়েসেই জমিদারিতে হাতেখড়ি হয় হাসনের । সেই সাথে শুরু হয় এক নতুন ধারার জীবনদর্শনের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তীকালে যার অকুণ্ঠ প্রশংসক ছিলেন । বস্তুতঃ, হাসন রাজা সম্বন্ধে বৃহত্তর বিশ্বের পরিচয় ঘটান কবিগুরুই ১৯৩০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া একটি বক্তৃতায় । অবশ্য তার আগে ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৫ Indian Philosophical Congress-এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি প্রসঙ্গক্রমে হাসন রাজার দুটি গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তাঁর দর্শন চিন্তার পরিচয় দেন। ভাষণটি 'Modern Review' ( January 1926 ) পত্রিকায় 'The philosophy of Our People' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এর অনুবাদ প্রকাশিত হয় 'প্রবাসী' ( মাঘ ১৩২২ ) পত্রিকায়। তার একটি নীচে উদ্ধৃত করলামঃ
'মম আঁখি হইতে পয়দা আসমান জমিন
শরীরে করিল পয়দা শক্ত আর নরম
আর পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর গরম
নাকে পয়দা করিয়াছে খুসবয় বদবয়।'
১৯৩৬ এ রচিত এই কবিতাটির সাথে দেখুন তো, কোনও মিল পাওয়া যায় কিনা-
'আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চূনি উঠল রাঙা হয়ে ।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,
জ্বলে উঠল আলো পূবে পশ্চিমে ।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম 'সুন্দর',
সুন্দর হল সে ।'
No comments:
Post a Comment