Friday, February 24, 2017

স্বপ্নমঙ্গল

স্বপ্নমঙ্গল।।১।।


কাল রাতে শোবার আগে চশমাটা খুলতে ভুলে গেছিলাম। ভাগ্যিস! হঠাত ঘুম ভেঙে দেখি একটা ন্যাড়ামাথা ক্যাবলাকান্ত ছেলে খোলা জানলার বাইরে থেকে গান গেয়ে হাতছানি দিচ্ছে- 'আয়রে ভোলা, খেয়াল খোলা, স্বপন দোলা নাচিয়ে আয়। আয়রে...।'
কি ভেবে ওর পিছুপিছু বেরিয়ে এলাম। এসেছি ত একটা ফাঁকা মাঠে। আরে! অনেক লোকের ভীড় জমেছে দেখি এত রাতে। আর সবাই ত আমার চেনা! একদিকে দাঁড়িয়ে আছে আহ্লাদীরা তিন বোন, চন্দ্রবিন্দু নামের বেড়ালটা, হ্যাংলাথেরিয়াম, কাতুকুতু বুড়ো, পান্ত ভূতের জ্যান্ত ছানা, জগাই ক্ষ্যাপা, পাগলা দাশু আরো অনেকে- দলের শিবিরের মাথায় লেখা- 'হাসির ফোয়ারা'। ওদের ক্যাপ্টেনের নাম হিজিবিজবিজ, না না, তকাই। অন্য দিকে দেখি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গোমড়াথেরিয়াম, চিল্লানোসেরাস, হুঁকোমুখো হ্যাংলা, ট্যাঁস গরু (না কি পাখি?), কিম্ভূত, নন্দখুড়ো- ওমা, বুথ সায়েবের ওইটুকু বাচ্চাটাও রয়েছে দেখছি। ওদের নেতা রামগরুড়ের ছানা আর দলের নাম 'কান্নাসাগর'।
কি করছে ওরা এত রাতে? শুনলাম টাগ অফ ওয়ার খেলা হবে নাকি দু দলের মধ্যে। দড়ি কই? দড়ি কই? যাঃ চলে। শেষে দড়ির অভাবে খেলা হবে না নাকি! একটা চশমা পরা সুন্দর চেহারার ভদ্দরলোক, নাম বললে তাতাবাবু, রেফারি হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ওহে হাড়িম্ব মুখ দাড়িম্ব, তোমাদের ছাদের কাপড় টাঙ্গানো দড়িটা নিয়ে এস ত। আমি এই নতুন নামকরণে আপত্তি করতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ভূতের বাচ্চাটা আমাকে চুপিচুপি বলল- ওঁর কথায় কিছু মনে কোর না, উনি না, আমাকেও অন্ধবনের গন্ধগোকুল বলে ডাকেন। গন্ধগোকুল মানে জান ত, ছুঁচো। আমি কি ছুঁচো?
আমি বুঝলাম, আপত্তি করা বৃথা। তাছাড়া, খেলাটা দেখারও খুব ইচ্ছে ছিল। তাই আবার বাসায় ফিরে ছাদে এলাম। তারপর কাপড় মেলার দড়িটা সন্তর্পণে খুলে নিয়ে গেছি সেখানে।
তারপর?
তারপর আর কি, ঘুম ভেঙে গেল। আজ আবার ঠিক করেছি চশমা পরে শোব। খেলাটা শেষ পর্যন্ত দেখতেই হবে।

।।২।।
আমাদের এখানে ঠাণ্ডা খুব একটা পড়ে না, কিন্তু শুয়ে শুয়ে একটা বিলেতি বই পড়ছিলেম কিনা, তাই বেশ শীত করছিল। বইটা রেখে লেপমুড়ি দিয়ে সবে শুয়েছি, একটা ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ শব্দে চমকে উঠলাম। দেখি জানলার ওপর একটা বেড়াল আমার দিকে তাকিয়ে বিশ্রীরকম হাসছে। বেশ কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলাম- 'হাসচ কেন খোকা, এটা কি নাট্যশালা?' সে হাসতে হাসতেই বলল, 'আমায় খোকা বলছ যে বড়! জান, আমি তোমার ঠাকুরদার বয়সী? আর শীত করে তো পম্পাই গেলেই পার।ভিসুভিয়াসের আঁচে গরম হয়ে যাবে। তবে ঠিকানাটা কিন্তু বলছি না, হুঁ হুঁ।'
বুঝলাম, ইনিই সেই স্বনামধন্য রুমাল, থুড়ি চন্দ্রবিন্দু। আমি একটু অন্যমনস্ক হতেই দেখি তিনি হাসতে হাসতেই জানলা গলে পার।
আমি আবার শোবার তোড়জোড় করছি, এমন সময় আবার একটা অলৌকিক হাসি। চন্দ্রবিন্দু? কই না ত, এ দেখি অন্য একটা বেড়াল। 'তুমি আবার কোত্থেকে উদয় হলে হে? তুমি ত চন্দ্রবিন্দু নও।'
'নইই ত। দেখছ না আমি খাস বিলিতি পেডিগ্রির চেশায়ার বিল্লী, খোদ রানীর বাড়ির থেকে এসেছি। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে শোনো', বলে সে স্কুলের বাচ্চাদের মত দুলে দুলে নার্সারি রাইম বলতে লাগল-
'Pussy cat, pussy cat, where have you been?
I have been in London to meet the queen.
Pussy cat, pussy cat, what did you there?
I frightened a mouse under the queen's chair.'
আমি কিছু বলবার জন্যে জানলার দিকে তাকাতেই দেখি চেশায়ার বেড়াল ধীরে ধীরে ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে। পুরো শরীরটা অ্দৃশ্য হয়ে যাবার পরেও কিন্তু রয়ে গেল তার মুচকি হাসিটা, পরে সেটাও মিলিয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম সেই দিকে।
এবার একটু শান্তিতে ঘুমোবার জোগাড় করছি, হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে এল দুই বেড়ালের তুমুল ঝগড়া আর ফ্যাঁসফ্যাসানি, আর ঠিক তখনি কে যেন আড়াল থেকে সুন্দর গলায় আবৃত্তি করতে লাগল-
'খিলখিল্লীর মুল্লুকেতে থাকত নাকি দুই বেড়াল,
একটা শুধোয় আরেকটাকে, তুই বেড়াল না মুই বেড়াল?......'
তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি পেজ-মার্ক দিয়ে মুড়ে রাখা আছে একটা ইংরেজি বই, কাল শুয়ে শুয়ে পড়ছিলাম- 'Alice's Adventures in Wonderland' by Lewis Carroll.

No comments:

Post a Comment