Saturday, February 4, 2017

মনের মণিকোঠা থেকে - ৯

মনের মণিকোঠা থেকে- ৯।।


আমার স্কুলের গল্প নিয়ে আমার নবম লেখা। আমি নিজেও তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। সেই সময় আমাদের স্কুলে এসেছেন জীববিজ্ঞানের নতুন টিচার শ্রী কে এন রায়। ভাগ্যের দোষে সে সময় আমাদের অঙ্কের মাস্টারমশাই দাস স্যার মাসখানেকের ছুটি নিলেন। প্রিন্সিপাল ভেবেছিলেন, নাইনের আর কি এমন অঙ্ক থাকে, ও ত যে কেউ পারবে, ভেবে তিনি রায় স্যারকে আমাদের ক্লাস নিতে পাঠিয়ে দিলেন। উনি ঠিক করেছিলেন, না ভুল সে কথায় পরে আসছি।

আমরা কিন্তু বায়োলজির শিক্ষককে, তাও আবার নতুন, অঙ্কের ক্লাস নিতে আসাটা ভাল মনে নিইনি। কিন্তু কি বা করা যায়? জানি ত, এসেই একটা সোজা প্রশ্ন সমাধান করে কয়েকটা কঠিন কঠিন টাস্ক দিয়ে চলে যাবেন। আমাদের বন্ধু অসীম কি ভেবে একটু নড়েচড়ে বসল। স্যার এই অঙ্কটা হচ্ছে না, একটু দেখাবেন? কালিপদ বসুর আলজেব্রা বই থেকে একটা সমীকরণ বের করে সে দেখাল।

সে কি, এটা পারছ না তোমরা! দেখ, এভাবে করতে হয় সাইমল্টেনিয়াস ইকোয়েশনের অঙ্ক, উনি x আর y এর পেছনে লেগে পড়লেন চক হাতে ব্ল্যাকবোর্ডের উপর। তারপর আধ ঘণ্টা ধরে চলে টানাহেঁচড়া, x মেলে ত y মেলেনা, y এর value বের করে বসালে x মেলে না। বুঝলে, ডিটারমিন্যান্ট মেথডে সহজ হয়, কিন্তু তোমাদের কোর্সে নেই ত। এই করতে করতে ঘণ্টা বেজে গেল।
দু দিন পরে আবার ক্লাস। স্যার বেশ উ√ৎফুল্ল হয়ে ঢুকেই আগের দিনের অঙ্কটা শুরু করে দিয়েছেন। স্যার ওটা আমরা পেরে গেছি- সমস্বরে চিৎকার। আবার অসীম। স্যার, এটা দেখুন না, ঘোড়া-ঘোড়া, ঘাস-ঘাসের অঙ্কটা। সে দিনটা গেল।

তার পরের ক্লাস। অসীমের কাছ থেকে কালিপদ বোস আবার বেরিয়ে পড়েছে। এবারের অঙ্কটা মনে হচ্ছে বেশ সোজা।
1+ 1/(1+1/(1+1/(.........এর শেষ নেই। একি, এটা কিরকম অ্যালজেব্রা, a-b-x-y কিচ্ছু নেই। না না, কোথাও কিছু ভুল আছে। স্যার টেক্সট বইয়ে ভুল হবে কি করে? এটা ত সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক! রায় স্যার রেগেমেগে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন সোজা প্রিন্সিপালের অফিসে। ততক্ষণে অসীম সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে পুরো expression টাকে x ধরে নিলে সমীকরণটা হবে x = 1+ 1/x, এটা একটা দ্বিঘাত সমীকরণ (quadratic equation), যার উত্তর হবে (1±√5)/ 2.  কিছুক্ষণ পরে প্রিন্সিপাল এলেন, একা। ছড়িটা এই প্রথম নামিয়ে কথা বললেন আমাদের সাথে- আমারই ভুল হয়েছিল। সবাই উমানাথ ঝা বা হরিদাসবাবু নন, হত পারেন না। কাল থেকে রায়বাবু শুধু বায়োলজিই পড়াবেন।

মাস্টারমশায়ের সাথে এরকম ব্যবহার আমাদের অনেকেরই ভাল লাগছিল না, কিন্তু আমাদের নিজেদের স্বার্থেই আমাদেরকে সব মেনে নিতে হচ্ছিল। তবে সেদিন থেকে অসীম বোসের নাম আমরা দিলাম কেপি বোস 'জুনিয়ার'।

No comments:

Post a Comment