Friday, October 18, 2013

Translated Poem- English to Bengali- Abide With Me

Abide with Me

Henry F. Lyte

Abide with me; fast falls the eventide; ...
the darkness deepens; Lord, with me abide.
When other helpers fail and comforts flee,
Help of the helpless, O abide with me.

Swift to its close ebbs out life's little day;
earth's joys grow dim; its glories pass away;
change and decay in all around I see;
O thou who changest not, abide with me.

I need thy presence every passing hour.
What but thy grace can foil the tempter's power?
Who, like thyself, my guide and stay can be?
Through cloud and sunshine, Lord, abide with me.

I fear no foe, with thee at hand to bless;
ills have no weight, and tears not bitterness.
Where is death's sting? Where, grave, thy victory?
I triumph still, if thou abide with me.

Hold thou thy cross before my closing eyes;
shine through the gloom and point me to the skies.
Heaven's morning breaks, and earth's vain shadows flee;
in life, in death, O Lord, abide with me.

রহ সাথে মোর

অনুবাদঃ পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়

রহ সাথে মোর, জীবন-সায়াহ্ন আসে নামি
ঘনাইছে অন্ধকার, তুমি সাথে রহ মোর, স্বামি !
সকল ভরসা লুপ্ত, আরাম সুদূরপরাহত
অন্ধের যষ্টির মত তুমি সাথে রহ অবিরত ।

হ্রস্ব দিবা জীবনের দ্রুত দিকচক্রবালে ধায়
বিশ্বের আনন্দ ক্ষীণ, গৌরবও অস্তমিত প্রায় ।
ধ্বংস ও পরিবর্তন চারিপাশে হেরি অহরহ
হে অপরিবর্তনশীল, তুমি শুধু পাশে মোর রহ ।

আমি যে তোমারে চাই প্রতি পলে, প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
লালসার ঘৃণ্য রূপ কে জিনিবে তব কৃপা বিনে ?
ধ্রুবতারাসম প্রভু, চালিত করিতে মোরে জীবনে-মরণে
মেঘ ও রৌদ্রের মাঝে হে দিশারি, রহ মোর সনে ।

শত্রুরে করিনা ভয়, তোমার আশিস যদি পাই
দুষ্ট হয় পরাভূত, অশ্রু তার তিক্ততা হারায় ।
মৃত্যুর দংশন কোথা? শ্মশান - ত তোমারই বিজয়
সর্বত্র লভিব জয় তব সঙ্গ যদি মোর রয় ।

তব বরাভয় হস্ত রাখ মোর নিমীলিত চোখে
তিমির বিদীর্ণ করি দেখাও সে জ্যোতির্ময় লোকে ।
ঊষার সুষমা হেরি মর্তের তমিস্রা পলায়িত
জনমে-মরণে প্রভু তুমি সাথে রহ অবিরত ।।

4th March, 2013.

Translated Rhyme- Sanskrit to Bengali.

"Ushtranam vivaheshu geetam gayanti gardabhah.
Parasparang prashasante, aho rupamaho dhwanih!"

Uter biye, jolsa hawbe, gan gaibe gadha.
Ut bolle, dada!...
Galati tor akkebare sadha.
Gadhao bawle, bhai,
Tor mato kandarpo-kanti duti dekhi nai.

Translated Poem English to Bengali- The Rose Family

The Rose Family
(Robert Frost)

The rose is a rose,
And was always a rose....
But the theory now goes
That the apple's a rose.
And the pear is, and so's
The plum, I suppose.

The dear only knows
What will next prove a rose.
You, of course are a rose -
But were always a rose.

গোলাপ কাহিনী

গোলাপকে ত গোলাপ বলেই জানতাম রে ভাই,
এখন শুনি বলছে সবাই আপেল নাকি তাই ।
নাসপাতিটাও গোলাপ হ'ল,
শোন হে সব্বাই;
টোপাকুল কি গোলাপ ফুল?
হয়ত হবে তাই ।

লক্ষ্মীটি তুই এবার বল,
গোলাপ হবে কোন সে ফল -
তুই তো ছিলি গোলাপ আমার,
যেন থাকিস তাই ।।

(পল্লব চ্যাটার্জি, ১০ এপ্রিল ২০১৩)

Bengali Poem- Adamya

অদম্য

মহাপ্রলয়ের পরে শান্তি আসবে কবে
তার তরে গুনব না দিন আর ।
মাথায় থাকুন ঋষি ম্যালথস...
মানুষ আমরা, নই খরগোস-
মরতে পারি, তবে মরব কেন ?
শেষ দেখে যাবই প্রতীক্ষার ।

শহিদ হয়েই বল কি পেলেন তাঁরা আজ
দেশ আজও হয়নি স্বাধীন
সোনার গদিতে বসে জনতার প্রতিনিধি
ভোটের ভাবনা নিশিদিন ।

অগ্নিযুগের বীর ট্র্যাফিক পুলিশ হায়
স্ট্যাচু হয়ে রাস্তার মোড়ে
জাগায় কি কোনও স্মৃতি, অতীতের কোনও গীতি
আজও জনতার অন্তরে ?

তার চেয়ে ভুলে গিয়ে অতীতের গৌরব
মোকাবিলা করি এই ঝঞ্ঝার,
মরতে পারি, তবে মরব কেন
হাতে হাতে তৈয়ার হাতিয়ার ।।

Translated Poem English to Bengali- An Epitaph

An Epitaph
(Robert Lewis Stevenson)

Under the wide starry sky
Dig the grave and let me lie,...
Glad did I live and gladly die
And I lay me down with a will-

This be the verse you grave for me
'Here he lies where he longed to be.
Home is the sailor home from sea-
And the hunter home from the hill'.

তারাভরা বিশাল এ গগনের তলে
রচিত সমাধি হোক মোর শয়নের
আনন্দে কেটেছে কাল ছিনু যতদিন
সে আনন্দে হয় যেন শেষ জীবনের ।

লিখে রেখ সমাধিতে ছোট এই গাথা
শায়িত হেথায়, সে চেয়েছিল যেথা
সমুদ্র হইতে ঘরে ফিরিল কাণ্ডারি
পর্বত শিখর হ'তে ফিরিল শিকারি ।
(12-04-2013)

Bengali কবিতা - শাশ্বত-ধন

শাশ্বত-ধন।

দিবস গেল, বর্ষ এল
'দি বস' বলে এবার চল
দাঁড়িয়ে আছে তরী,
দিয়েছি তেল, দিয়েছি ঘি-ও
যাবার বেলা সঙ্গে নিও
শেষ পারাণির কড়ি।
অনেক গেল বর্ষ-মাস,
ঢের হয়েছে বিশ্ব-বাস
সাঙ্গ হল খেলা;
মগ্ন ছিলে কুচক্রেতে
চোখ খুললে দেখতে পেতে ফুরিয়ে গেছে বেলা।

কোথায় কত জমল কড়ি
কত প্রাসাদ উঠল গড়ি
হিসেব দেখি মেলা,
কী হবে আর এসব ভেবে
কিছুই নাহি সঙ্গে যাবে
সকলই যাবে ফেলা।
অমর্ত-ধন আছে কিছু?
তাও চেয়ে দেখো না পিছু
রইল যাহা পড়ে,
মহাকালের সোনার তরী
নিয়ে যাবে সকল ভরি
চিরকালের তরে।

Bengali Poem- Shudhu Tumi

Misc Poems- Nimantran.

নিমন্ত্রণ ।।

 এস ব্রাহ্মণ, পাবে কিছু ধন, ধর হাত সবাকার
এস এস মুচি, ভাজ দুটো লুচি- খাবো গো হাতে তোমার ।
ত্যজে মারামারি এস গুণ্ডারা, নিয়ে এস সাথে পাঁঠা জোড়া জোড়া
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হবে তা এমনি কিরে ?
এই মুম্বাই শহরে আরব সাগরতীরে ।।

(রবি ঠাকুর নিজগুণে ক্ষমা করবেন)

Bngali Poem- Barshabhisar.


বর্ষাভিসার

(কীর্তন)


বল কি হবে সজনি, সারাটি রজনী ঝরে যে বাদল ধারা
কাদা প্যাচ-প্যাচ, হাঁচি ফ্যাচ ফ্যাচ, এবার পড়িব মারা ।
(আখর)
আমি মারা পড়িব । এবে নির্ঘাত আমি মারা পড়িব ।
রাস্তায় ঘাটে জল থৈ থৈ, বাজারেতে তরিতরকারি কই?
মাছের বাজারে লেগেছে আগুন, মূল্য যে হল দ্বিগুণ ত্রিগুণ-
এবার সেই আগুনেই পুড়ে মরিব ।। ...

সখি হমার দুখের নাহিক ওর ।
এ ভরা গগন মাহ শ্রাবণ ভরিল অঙ্গন মোর
(জলে) ডুবিল অঙ্গন মোর ।
আকাশে হের গো মেহ দারুণ, হাঁড়ির হাল যে বড়ই করুণ
চাল বাড়ন্ত, পেট চলন্ত, এ বারিধারার নাহিক অন্ত
এবে নিতান্ত হবে প্রাণান্ত, হবে ভবলীলা সারা ।।

পল্লব কুমার চ্যাটার্জি
— in Mumbai. ১২-০৭-২০১২। 

Bengali Poem- Karnadharer Proti.

।। কর্ণধারের প্রতি ।।

সেদিন হঠাৎ মধ্যরাত্রে সূর্য উঠেছিল
তূর্য নিনাদে ঘোষিত হয়েছিল স্বাধীনতার জন্মলগ্ন
লক্ষ শহীদের রক্তটিকায় তুমি শপথ নিলে
ব্যর্থ হবেনা তাঁদের আত্মবলিদান ।

তারপর তো বহুযুগ কেটে গেছে
নিয়ম করে প্রতিদিন আকাশ হয়েছে লাল
লজ্জায় আর ঘেন্নায় ।...
কর্ণধার, তুমি তো দিলেনা জবাব
আমাদের তরী সাগর নয়,
চলেছে কেন গঙ্গোত্রীর দিকে ?

Translated Poem- English to Bengali- Ozymandias.

ওজিম্যানডায়াস।।
(P.B. Shelly রচিত Ozymandias কবিতার বঙ্গানুবাদ)

কোন এক প্রাচীন নগরে
একদা ভ্রমিতেছিনু আপনার মনে
মিলিত হইনু এক পথিকের সনে ।
কহিল সে, মরুভূমি মাঝে
আছিল দাঁড়ায়ে এক বিশাল মূরতি
জীর্ণ অতি, দুর্দশায় ভগ্নপ্রায় গতি ।
অর্ধাংশ বালুকায়, ঈষৎ বঙ্কিম ...
ওষ্ঠে গর্বোদ্ধত হাসি, আদেশ-ভঙ্গিম
অধরে প্রচ্ছন্ন যেন। অভিব্যক্তি
দয়ামায়ালেশহীন, বলিষ্ঠ কঠিন
সুচতুর শিল্পী যেন দিন-প্রতিদিন -
নিরখি চরিত্র তার অতি সযতনে
গড়িয়াছে তারে । যাহা অদ্যাপি আসীন
নির্মম সজীব সম, নির্জীব আননে
নিখুঁত তুলির টানে; হৃদয় তাহার
অধিষ্ঠিত সে চরিত্রে, সে রাজ-আসনে ।
আধারে খচিত যেন শব্দ কতিপয়-
'ওজিম্যান্ডায়াস আমি, রাজরাজেশ্বর,
হের মোর কীর্তিরাশি, অতুল বৈভব
ঐ হের শ্ত্রু মোর লুটায় ধুলায় ।
কিছু না রহিল । কালচক্র আবর্তনে
ধ্বংস ঘূর্ন্যাবর্তে পড়ি বিশাল মূরতি
ক্ষুদ্র খণ্ড খণ্ড রূপে ভাঙিয়া পড়িল ।
যতদূর দৃষ্টি যায় দিগন্ত-প্রসারী
মরুবালি ভিন্ন আর কিছু না রহিল ।।

Bengali Poem- Is-s-s-s.

ইস-স-স-স !

দাদা গো দাদা,
দেখছি ভেবে অনেক কাল--

এই বাংলার সকল ভালো
আসল ভালো, নকল ভালো
শরত ভালো, রবিও ভালো,
শিল্পী ভালো, কবিও ভালো ।...
কাস্তে-হাতুড়ি দাদাও ভালো,
ঘাস-ফুল-পাতা দিদিও ভালো ।
মরিচ-ঝাঁপি টা যেমন ভালো,
নন্দিগ্রামও তেমন ভালো ।
সাদা-পাঞ্জাবি ধুতিও ভালো
হাওয়াই ও শাড়ি সুতিও ভালো ।
পার্টির প্রতি ভক্তি ভালো,
সুনীল ভালো, শক্তি ভালো ।
গলদা চিংড়ি যেমনি ভালো,
পদ্মা-ইলিশ তেমনি ভালো ।
ধনীও ভালো, কাঙ্গাল ভালো,
ঘটীও ভালো, বাঙ্গাল ভালো ।
নলেন রসের গোল্লা ভালো,
পুরুত ভালো, মোল্লা ভালো ।
গঙ্গাজলে নাইতে ভালো,
নজরুল-গান গাইতে ভালো ।
টেনিদা ভালো, ঘনাদা ভালো,
ব্যোমকেশ ভালো, ফেলুদাও ভালো ।

কিন্তু যেটা নয়কো ভাল---
এই বাংলার 'বাংলা' মাল !!!

Bengali Poem- Feu.

ফেউ
পল্লব কুমার চ্যাটার্জি

ওরে, তোরা কি জানিস কেউ
পিছে লেগেছে আমার ফেউ ?
সে যে দিনরাত লেগে আছে
কি যে চায় ছাই মোর কাছে !
এরে নারি ঝেড়ে ফেলে দিতে
পুনঃ জুটে যায় যে চকিতে ।
আমি সদা মরে আছি মনে,...
নিজে হারাই যে ক্ষণে ক্ষণে
কভু চমকি পিছনে চাই,
হেরি কেহই কোথাও নাই
ফিরে যবে কাজে দিই মন
বুঝি, আছে সে যে অনুক্ষণ
তাই চিত্ত শঙ্কাকুল
পদে পদে হয়ে যায় ভুল ।

হায়, কি কব দুখের কথা
মনে পেয়েছি বড়ই ব্যথা
ওগো দিয়েছি কি আমি সই,
কারও পাকা ধানে কভু মই?
কারো কাটিনি গাঁটের কড়ি
চুরি করিনি গয়না ঘড়ি
কভু মারিনি কাহারো ভাত
নিজ জ্বালাতেই নিজে কাত ।
কত কব আর নিজ গুণ
কভু পিঁপড়া করিনি খুন !
ওরে, তবু তোরা দেখ দিকি
মোর পিছু নেয় টিকটিকি
ইস ! ভেবে ভেবে সব চুল
সাদা হয়ে গেল বিলকুল ।

তাই, সারা রাত জেগে জেগে
এবে গিয়েছি ভীষণ রেগে ।
খুন টগবগ করে ফোটে
নাড়ী তড়বড় করে ছোটে
হাতে রয়েছে মস্ত লাঠি
আজ হয় হোক ফাটাফাটি
তাই প্রাণপণে পিছু ঘুরে
লাঠি চালাই গায়ের জোরে
সারা অঙ্গে খুশীর ঢেউ
ভাবি মরেছে এবার ফেউ ।
দেখে মুখ হয়ে গেল কালো
ছি ছি, মরণ যে ছিল ভালো ।
কে সে? জানতে চেয়ো না ভায়া
ছিল আমারি নিজের ছায়া !

(রবীন্দ্রনাথের 'নদী' কবিতার ছন্দ অনুসরণে)

Miscellaneous- Compilation : Rammoni Moktar

রামমণি মোক্তার
(কবিতাটি আমার স্বর্গত ঠাকুরমার সংগ্রহে ছিল, কবি-পরিচয় অজ্ঞাত । একটি চমৎকার satire, পড়ে আনন্দ পেলে জানাবেন)

রামমণি মোক্তার, আহা কিবা শোক তার
ট্রেনেতে হারিয়ে গেছে কৌটোটি দোক্তার ।
বুড়ি তার গিন্নি মানিয়াছে শিন্নী-
পতির বিপদ দেখে চড়ে গেছে রোখ তার ।
দু'ছটাক সর্ষে, পিষে নিয়ে জোরসে
মেখে নিল রামমণি স্ত্রী'র পরামর্শে ।
মাংসের ঝোল খেয়ে কাংস্যের পাত্রে...
দশ সের নস্যের সেঁক নিল রাত্রে ।

বন্ধুরা বলে, বাপু, চাও যদি বাঁচিতে
চটি পরে চটপট চলে যাও রাঁচিতে ।
খাড়ি মুসুরির দাল হাঁড়ি করে খেয়োনা
দাঁড়িপাল্লায় চড়ে কারো বাড়ী যেওনা ।
শাড়ী পরে হেঁটো না, দাড়ি নেড়ে নেচ না,
কিনোনা মটরশুঁটি, পুঁটিমাছ বেছো না ।
এইরূপে চেপেচুপে থাকো যদি মাস-তিন
ঠিক দেখো ফেটে যাবে কামিজের আস্তিন।

কেউ বলে, উঁহু উঁহু, গেঁটে-বাত ধরবে
যদিবা বাঁচতে কিছু, একেবারে মরবে ।
তার চেয়ে শোন কথা, সোজা কথা বাৎলাই
মোজা পরে কিনে আন তাজা দুটো কাৎলা-ই ।
পিঁড়ে পেতে চিঁড়ে দিয়ে খাও তাই গুঁড়িয়ে,
কাঁচপোকা পাঁচ পোয়া দিও তাতে মিশিয়ে ।
ফণীমনসার পাতা বাঁটা খেয়ো দুপুরে
পাঁঠা পেলে চাঁটা মেরো, ঝাঁটা মেরো কুকুরে ।

আর জনে বলে বাপু, চাও যদি রক্ষা
দক্ষিণে চলে যাও, নয় হবে যক্ষ্মা ।
সাগরের ধারে থেকো, হাঘরের তাঁবুতে
কোজাগরে কচি শাঁখ সাঁতলিয়ে সাবুতে ।
নুলিয়ার টুপি পরে পিছু হটে যাইয়ো-
নীচু চোখে কিছুদিন চুপি চুপি চাইয়ো ।
উল দিয়ে ফুলকপি বেঁধে রেখো ভুঁড়িতে
সব দোষ কেটে যাবে, দেখো তিন তুড়িতে ।

নানাজনে মানা করে ঘুমাতে ও খাইতে
শেষে হল রামমণি গ্রামছাড়া তাইতে ।
শালপাতে ডাল ভাতে খেয়ে গেছে শালকে
আলবাত বেঁচে আছে, খুঁজে দেখো কালকে ।


Bengali Poem- Peynaji Sonnet

পেঁয়াজি-সনেট

বড়ই নির্মম তারে ভাবি আমি মনে
রে পলাণ্ডু । লুকায়ে যে অতি সযতনে-
রাখি তোরে অন্ধকার গুদামের মাঝে
বসি রহে সচেতন দুরাশার সাঁঝে
মূল্যবৃদ্ধি তরে । বাড়ি ওঠে ক্রমাগত,
মূল্য হায়, গগনের উচ্চতার মত -
ছুঁইল সে শতমুদ্রা । রে পেঁয়াজ তোরে
কাটিতে ঝরিত অশ্রু । এখন তা ঝরে...
পকেট হইতে যবে বাহিরায় টাকা
এক কিলো পেঁয়াজ কিনিতে হয় ফাঁকা
মানিব্যাগ । ভাবি আহা জৈন-সম্প্রদায়
কত সুখী, তাহারা পেঁয়াজ নাহি খায় ।

হে বিধাতা, বাস তব হউক নাশিক-
পলান্ডু-খচিত যেন হেরি দশদিক্‌ ।

২১শে আগস্ট, ২০১৩



শুধু পেঁয়াজের জন্যে ।।




পেঁয়াজ-কলি আমি তারেই বলি,
ফুল যে তারে বলে গাঁয়ের লোক,
ফুটলে তাহা, জানি মাটির নীচে...
ফলছে টাকা থোকের পরে থোক।
গাঁয়ের বধূ বেচতে যখন আসে
দশ বা বিশের পরোয়া থোড়াই করি,
ফেরে সে যবে গাঁয়ের পথ ধরে
আনমনেতে তাহার পিছু ধরি।

সুদূর! তা সে যতই দূরে হোক,
ঘরেতে তার পেঁয়াজ ফলে থোক।।
ঘন মেঘে আঁধার হলে পরে
বোঝাই তারে, ওগো গ্রামের বধূ,
এই সময়ে বৃষ্টি হলে পরে
পেঁয়াজ তোমার পচবে শুধু শুধু।
তার চে বরং এই টাকাটা ধর,
গোটা দুয়েক বস্তা বাহির কর,
সারা পেঁয়াজ দাও আমারে বেচে,
মিথ্যে কেন বাজার ঘুরে মর?
দামি! সে যে যতই দামি হোক,
পেঁয়াজ পেয়ে ভুলেছি সব শোক।।


"এমনটা কি হয়?"


যদি এমন হয়!
পথের ধারে গাছের পরে থরে থরে পেঁয়াজ ঝুলে রয়,
এমন যদি হয়?
...
পথের শ্রমে শ্রান্ত হয়ে পান্থ যখন বসছে এসে গাছের ছায়ে
পাড়ছে তারা আঁকশি দিয়ে একটি দুটি ঝুলছে যারা গাছের গায়ে,
কিম্বা উঁচু ডালের পরে রয়েছে ধরে টুপুর-টুপ পড়ছে খসে
যখন হাওয়া বয়,
যদি এমন হয়!
মন্ত্রী হয়ে সংসদেতে যাচ্ছে যারা জানেকি তারা পেঁয়াজ কোথা ফলে?
গাছের ডালে ঝোলে নাকি মাটির নীচে রসাতলে গজায় দলে দলে।
কোটির কমে ধন না মানে, তারা কি জানে আশি টাকায় ক'টা মানুষ খায়,
সারাটা দিন ক্লান্ত হয়ে অর্ধ-পেটে দু-বেলা খেটে মজুরি কত পায়?
চারটি রুটি, দিন ফুরিয়ে খায় চিবিয়ে পেঁয়াজ দিয়ে এই চাইতেও ভয়,
পেঁয়াজ কিলো একশ হল হয়ত কিছু গরীব ম'ল,
এই দেশেতে আজব কিছু নয়,
এমন যদি হয়!!



টম্যাটো -অসম্ভব কাব্য।।


পরশু রাতে পান্তাভাতে সাবড়ে শুয়ে বিছনাতে,
ভোরবেলাতে আবছায়াতে স্বপ্ন দেখে মন মাতে।
কি বলব ভাই, যা ইচ্ছে তাই কাণ্ড দেখে মাথায় বাজ...

টম্যাটো আর পেঁয়াজ ভায়ার ঝগড়া তুমুল ঝুড়ির মাঝ।
টম্যাটো কয় পেঁয়াজ নাহয় করল প্রথম সেঞ্চুরী,
শরদ পওয়ার তুঙ্গে সওয়ার পালায় কোথায় ইয়েচুরী!
তাইতো পেঁয়াজ বরঞ্চ আজ নাসিক গিয়ে থাক বসে,
এবার আমি মারব শতক গিটকিরিতে তান কষে।
টুকটুকে লাল খুকী তোর গাল তাও কি ছোঁয়া যায় তোকে!
আলিমুদ্দিন দেখছে সুদিন নীল-সবুজ মরে শোকে।


একটি প্রেমের কবিতা !

তার হাতে ছিল একটি টিনের ক্যান পেট্রোল তেলে ভরা
পেট্রোলের তেলে ভরা ।
মোর সাথে ছিল পেঁয়াজ ভরা থলে...
নাসিক থেকে বাজার করা ।।

সহসা আসিয়া কহিল সে সুন্দরী, এসো না বদল করি ।
রাঁধছি চিকেন বাড়িতে, তেল ভরে নাও গাড়িতে- নাও ত্বরা ।।
তুমি যদি ওল, আমিও তেঁতুল- বললাম, তবে এসো
লিফট দি-নাহয়, আমার পাশেই বসো ।
দুজনেই মোরা হলাম যে জয়ী একে অপরকে পেয়ে
কিছুই হলনা গো হাতছাড়া !!



অণুগল্প ।।

-- বলো কি! ছেলে পেঁয়াজ খায়? জেনেশুনে এমন জামাই করলে নন্দলাল!
- আহা সে কি রোজ রোজ খায়, দেবদুলাল? হাজার হোক ওরা নিতান্তই মধ্যবিত্ত ঘরের লোক।
- তবে?...
- ইলেকশানের আগে ক'দিনের জন্যে দাম কমে, তখনই খায়!

Miscelaneous- Bengali.


মানভুম পুরুলিয়া অঞ্চলের বৈবাহিক প্রথাগুলির একটি হল 'বিটি বিকা' বা কনে বিক্রি । এটা মুলতঃ নিম্নবর্ণের মধ্যে দেখা যায় । এর বিপরীত হল 'কুল করা' অর্থাৎ উচ্চশ্রেণীয় লেন-দেন রহিত পদ্ধতি । এ-নিয়ে একটি মজার ছড়া ছিল আমার ঠাকুরমার সংগ্রহে, মানভুমের লোক ভাষায় রচিত ।

'বিটি- বিকা'

নিধিরাম মাহাশয় শন কাটছেন বস্যে...
খেলারাম ভসচাজ্জি উত্তরিলেন এস্যে ।
নিধিরাম খেলারামকে করছ্যেন জিগ্যাসা-
মাহাশয়ের নিবাস কোথা ?

নীল-বসন, নীলোদড়ি ।
যদি বা এস্যেছি কিছু নিবেদন করি ।
অবিবাহিতা কইন্যা আছে মাহাশয়ের ঘরে
সম্বন্ধ কইরবার লাগি আইচি তাহার তরে ।

শুন মাহাশয়, মনের কথা কই,
কোন পুরুষের বিটি-বিকা লই ।
পাঁঠী বিকে কোন পুরুষে খাইনাইখ কড়ি
খরচান্ত লিব টাকা সাড়ে দশ কুড়ি ।

যেইমাত্র নিধিরাম 'কুল' কইরব বলে,
উল্কাপাতের পারা তাকে মাগী উইঠছে জল্যে ।
কি বললি পোড়াকপাল্যা, কি বইলতে লাগ্যেছিস?
এই বল্যে নিধিরামকে দাবড়ে দিয়ে কষে,
গালভরা পান-দোক্তা চিভাত্যে চিভাত্যে
নিধিরামের সম্মুখেতে বৈসল পিঁড়া পাত্যে ।

দুই-চাইর কথা কয় দিয়ে নথ নাড়া
খামচি-খামচির পারা মগজ করে ট্যাঁরা-
বট-ঠাকুরকে বল্যে দিব, খাঁয়ে যাক তাপ
সব্বকাল পুড়াই খাল্যেক এই মিন্স্যা বাপ ।

অলংকারের কথা বলি, শুন মন দিয়ে,
এমনি করে বরের মা-কে বইলতে চাওগা গিয়ে-
দু-ললিতে ললি দিবে, তে-ললিতে পলি,
ছাড়-কঙ্কন, বাজু-বন্ধন, সোনায় বাঁধা চুড়ি ।
ডান নাকে বেসর দিবে, বাঁ নাকে নথ দিবে,
সোনায় বাঁধা নথ দিবে তায় ঘুঙুর যেমন থাকে ।

অল্পবয়সি বরটি হবেক, দেইখতে ফিটিংটিঙ্গা
রং-বিনোদ্যা ফরক-চান্দা, তোফা রং-চঙ্গা ।
সখি-সংবাদ গাইতে পারবে, মুখে মধুর হাসি,
ঠ্যাঙ্গা-ল্যাজা কাপড় পইরব্যে, দাঁতে মাজা মিশি ।
গাছের পাড়ি, তলের কুড়াই, কাদা উড়াই ফুঁকে
কার সাধ্যি গণ্ডগোলে টিকে আমার মুখে ।

কি বইলব ঘটক্ ঠাকুর, তেল নাইখ ভাঁড়ে,
ছেল্যা-পুলার ঘর আমার, বাসি নাইখ পড়ে ।
গুড়ের মিষ্টান্ন থাকত যদি, দিথম তুমার হাতে
চান-আনহিক করে তুমি পথে জল খাত্যে ।
এই শুনে উচ্ছইন্ন্যারা করে আনাগোনা,
আইসব বল্যে যায়, আর ফিরে আসে না

Bengali Poem- Swadhinata কবিতা ।। স্বাধীনতা


স্বাধীনতা

মহাপ্রলয়ের পরে শান্তি আসবে কবে তার তরে গুনব না দিন আর ।
মাথায় থাকুন ঋষি ম্যালথস্‌,
মানুষ আমরা, নই খরগোশ-...
মরতে পারি, তবে মরব কেন, শেষ দেখে যাবই প্রতীক্ষার ।

শহীদ হয়েই বল কি পেলেন তাঁরা আজ, দেশ আজও হয়নি স্বাধীন ,
সোনার গদিতে বসে জনতার প্রতিনিধি- ভোটের ভাবনা নিশিদিন ।

অগ্নিযুগের বীর ট্র্যাফিক পুলিশ আজ স্ট্যাচু হয়ে রাস্তার মোড়ে,
জাগায় কি কোনও স্মৃতি, অতীতের কোনও গীতি আজও জনতার অন্তরে ?

তার চেয়ে ভুলে গিয়ে অতীতের গৌরব মোকাবিলা করি আজ ঝঞ্ঝার ।
মরতে পারি তবে মরব কেন, হাতে হাতে তৈয়ার হাতিয়ার ।।

৮ ই আগস্ট, ২০১৩

Thursday, October 17, 2013

Translated Poem- English to Bengali- James Honeyman.

জেমস হনিম্যান
(WH Auden )

ছোট্ট ছেলে জিম হনিম্যান
জানত না সে হাসি-কান্না
কৌতূহলে দেখত মা-কে
শিখতে চাইত রান্না-বান্না ।

হনিম্যানের খোঁজে মা তার
দ্যাখেন এসে পাঠশালাতে...
ছেলে সেথা নিবিষ্ট মন
দেশলাই এর বাক্স হাতে ।

উৎসবেতে আর সকলে
খাচ্ছে যবে কেক চকোলেট
ছোট্ট জিমি চা-এর কাপে
ঘোলায় বসে চিনির প্যাকেট ।

এইত সেবার জন্মদিনে
(জিমি যেবার পড়ল আটে)
রইলো সে তার ঘরের ভিতর
কেমিস্ট্রি-সেট শোবার খাটে ।

শিক্ষক কন লেখাপড়ায়
জিমের কোন তুলনা নেই,
দুঃখ মোদের খেলাধুলা
করে না সে একেবারেই ।

মাতে সবাই ফুটবলেতে,
হনিম্যানের ল্যাবরেটরি
ফার্স্ট ক্লাস আর বৃত্তি পেয়ে
কলেজে সে দিল পাড়ি ।

কড়া কফির সহকারে
পড়ত সারা রাত্রি ধরে
চশমা চোখে লিখত থিসিস
ঝাঁঝালো সব গ্যাসের ‘পরে ।

চলত যবে গ্রামের পথে
কিংবা যদি চড়ত বাস
দেখত পাহাড়, দেখত নদী,
মাথায় ঘুরত ফসফরাস ।

বলত, আহা লুইসাইট, তা
বিস্ফোরক সে মন্দ কি,
তবুও তাহা এ যুগেতে
চলবে না তায় সন্দ কি !

চমৎকৃত অধ্যাপক
বলেন, এত পরিষ্কার,
জেমস ছাড়া আর কে পাবে
এ বছরের পুরস্কার !

নামল গবেষণার কাজে
‘ইম্পিরিয়াল অ্যালকালি’তে
ভাবল মনে মরার আগে
নাম কামিয়ে হবেই নিতে ।

বলেন ডেকে বাড়িওয়ালি
জন্ম যখন নিলেই মশাই,
সরস করে তুলতে তারে
এবার একটা বৌ আনো ভাই ।

ইম্পিরিয়াল অ্যালকালিতেই
পাত্রী ছিল, নামটি ডোরীন
একদিন তার কাটলে আঙুল
চাইতে গেল আইওডিন ।

এই বুঝি সে হারাল জ্ঞান,
ছুটল জিমি, আনল চেয়ার ।
ঠাণ্ডা পানি গেলাস ভরে
ছিটিয়ে দিল চুলেতে তার ।

যা হবার তা হয়েই গেল,
ভাড়া হল রঙ্গিন বাড়ি
বাঁ- পাশে তার ডেয়ারি-ফার্ম
সিনেমা-হল ডাইনে তারি ।

তৈরি হল ল্যাবরেটরি
বাগানের এক প্রান্ত জুড়ে
পাড়াপড়শি ভাবলে মনে
এবার বুঝি গেলেম উড়ে ।

ডোরীন ডাকে রাত-দুপুরে
লক্ষ্মীটি, জিম শোবে চল
‘এক্সপেরিমেন্ট শেষ না হলে
কেমন করে যাব বল ?’

বড়দিনেই পড়ল ফ্লু-এ
ডাক্তার কন, বিশ্রাম নাও ।
-করছি কঠিন পরীক্ষা যে
আরেকটু ক্ষণ চালাতে দাও ।

রবিবারদিন বাচ্চা নিয়ে
প্র্যাম ঠেলতে ঠেলতে বলে
খুঁজছি, প্রিয়ে এমন গ্যাস,
নিঃশ্বাসে লোক মরবে দলে ।

... এনেছি প্রায় হাতের মুঠোয়
সে জিনিষ কে এখন আমি
ডোরীন কাঁপে রুদ্ধগলায়
পারবে, প্রিয়, পারবে তুমি !

গ্রীষ্মে যখন তপ্ত রাতে
রক্ত-রাঙ্গা গোলাপ ফোটে
ব্যস্ত কাজে জিম হনিম্যান
হাজার চিন্তা মাথায় ছোটে ।

হঠাৎ এসে মধ্যরাতে
শিশুর ললাট চুমে কয়,
এই সে গ্যাস, টেস্ট টিউবে
বন্দী, প্রিয়ে লভেছি জয় ।

দাঁড়ায় দোঁহে জানালা ধারে
স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, চাঁদের হাসি
রয়্যাল সোসাইটি তে তবে
এটা নিয়ে ঘুরেই আসি ।

চললে রেলগাড়িতে চড়ে
সেদিন রাজভবন পানে
থিসিসখানা সঙ্গে নিয়ে
দেখাতে হবে আজ সেখানে ।

ছাপানো কার্ডে নামটি দেখে
ভুরূ-যুগল কুঁচকে কয়,
ব্যস্ত আছি, এ আবার কে ?
রাস্তা দেখ, নেই সময় ।

ডোরীন শোনায় পড়শিদিগে
এ দেশে কি রইল আর
আমার স্বামী এত যে নামী,
খবর রাখে কেউ কি তার !

মিসেস ফ্লাওয়ার পড়শি ছিলেন
দেখান তিনি সহানুভূতি
প্রতিবেশী শত্রু দেশের
তিনি ছিলেন গোপন দূতী ।

এক সন্ধ্যায় খাবার বেলা
অচেনা কারা অতিথি ঘরে
হনিম্যানের সঙ্গে কথা
চলল সারারাত্রি ধরে ।

সবাই মিলে বাগান ঘুরে
গেল ছোট্ট শেডের ঘরে,
তারপরেতে মিলিয়ে গেল
কোথায় যেন অন্ধকারে ।

ডোভার কূলে ছাড়ল তরী
জিমি তখন ফিরল ঘরে
বললে, দেখ, এন-পি-সি মোর
নোবেল পাবে বছর পরে ।

বসেছিল সে বাগান মাঝে
লিখছিল কি খাতার পরে
ছোট্ট শিশু করছে খেলা
ডোরীন বসে অল্প দূরে ।

হঠাৎ একি ! পূব- আকাশে
উড়ো-জাহাজ রাশি রাশি
যুদ্ধ শুরু? বোমারু নাকি ?
ভাগে মজুর, পলায় চাষী ।

ডেয়ারি গেল, দ্বিতীয় বোমা
সিনেমাহলে করে আঘাত
তৃতীয় খানা বাগানে পড়ে
ঘটছে যেন উল্কাপাত ।

‘কোলে নাও মা, চুমো আমায়
ঘরেতে মা নিয়ে চল-
বাবার আবিষ্কারে বুঝি
এবার আমার প্রাণই গেল’।

‘কোথায় জিমি, কোথায় তুমি,
বাঁধ আমায় বাহুর ডোরে ,
হনিম্যানের এন-পি-সিতে
গ্রাস করল এবার মোরে ।‘

‘হতেম যদি স্যামন মাছ,
সাগরতলে দিতেম পাড়ি
কিম্বা ছোট পাখিটি হয়ে
গগনময় বেড়াই উড়ি ।‘

হায়রে, তুমি নওকো স্যামন
নওকো পাখি, নেইত পাখা
তোমার সৃষ্টি আনল তোমার
জীবন পটের যবনিকা

‘লুকাও আমায় শৈল গুহায়
ডুবাও মোরে সাগরজলে
অন্ধকারায় বন্দী কর
বিভীষিকার পাতালতলে ।‘

হায়রে, কোথা শৈল গুহা,
কই বা অতল জলরাশি,
মরতে তোমায় হবেই, কারন
হনিম্যানের এন-পি-সি !!

-----------------------------------------

Bengali Micro-fiction- 13- Nostalgia.


।। নষ্টালজিয়া ।।

বহু বছর পরে আবার যাচ্ছি সেই শহরে যা ছিল আমার 'শৈশবের লীলাভূমি ও যৌবনের উপবন' । না, স্বামীজীর ভাষায় তাকে 'বার্ধক্যের বারাণসী' বানাবার জন্যে আমাদের যাত্রা নয় । আমাদের এঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হীরক-জয়ন্তী উপলক্ষ্যে Alumniদের ডাক পড়েছে পুরনো কলেজে, সেই সূত্রে বহুকাল পরে ফিরছি শুধু আমার বিদ্যায়তন নয়, আশৈশব যেখানে কাটিয়েছি সেই শহরে ।

ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার এই আধা শহরের স্মৃতিতে আমরা চারজনই বুঁদ । মুম্বাই থেকে আমরা রওনা হয়ে ধানবাদে নেবে একটা ট্যাক্সি নিয়েছি । অজস্র কয়লাখনি পার করে ঝরিয়া এলাম । ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘুম এসে যাচ্ছে । মনে পড়ে গেল সেদিনকার কথা, ম্যাট্রিক দিয়ে বসে আছি, আমাকে স্কুটার চালান শেখাচ্ছে পাশের বাড়ির ধনুদা । রাস্তার মাঝামাঝি আড়া-আড়ি করে একটি মোষ দাঁড়িয়ে । আমি স্কুটার থামিয়ে দিলাম । মনে পড়ল এক অখ্যাত কবির আমাদের শহরকে নিয়ে লেখা ছড়া-...
'পথের ধারে গাদা গাদা- ঘুমায় গরু-মহিষ-গাধা ।
ওরাও তো ভাই পূর্ণ স্বাধীন, পথ ছাড়েনা কেউ কোনদিন ।
ওদের কানের খুলতে তালা হর্ণ ছিঁড়ে যায় ট্যাক্সিওলা ।'

- কিরে, গাড়ি থামিয়ে আবার কবিতা শুরু করলি ! ধনুদা ধমক দিল, ও তো সরবে না, কোন দিক দিয়ে কাটাবি ?
- কেন, মাথার সামনে দিয়ে ।
- তুই একটা গাধা । যদি ও last moment-এ এগিয়ে আসে । জেনে রাখ, গরু-মোষের পেছন দিয়ে হামেশা কাটবি, কেননা ওদের রিভার্স গিয়ার থাকেনা ।
- আর ছাগলকে, ধনুদা ?

হঠাৎ ট্যাক্সি সজোরে ব্রেক কষায় তন্দ্রা উড়ে গেল । নাকে এলো ছাতিম ফুলের পরিচিত মিষ্টি গন্ধ । তাকিয়ে দেখি গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে পেল্লায় দুটো ষাঁড় । পথের দুপাশে থোকায় থোকায় সপ্তপর্ণ ফুল ফুটেছে শুভ্রবর্ণ । ঠিক যেমন দু-যুগ আগে ছিল ।

বুঝলাম, আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেছি ।

October 8, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 12- Bhokh.


।। ভোখ ।।

ঝুক্‌ঝুক্‌ ঝুক্‌ঝুক্‌......, ছুটে চলেছে হাতিয়া-আসানসোল ফাস্ট প্যাসেঞ্জার । তালগড়িয়া পার হয়েছে বেশ খানিকক্ষণ আগে, ভোজুডি এলো বলে । সিজুয়া কোলিয়ারিতে নাইট শিফ্‌ট করে মহুদায় চেপে ঘরে ফেরে প্রতি সকালে ভিখা, রুক্‌নীবেড়্যার ভিখা বাউরি । ভোজুডি থেকে সাঁওতালডি বেশ একটানা চলে । তারপর কি হয় কে জানে, সিগন্যাল পেতে হামেশাই দেরি হয় । পেটের ভিতর থেকে একটানা একটা চিন্‌চিনে ব্যথা শুরু হয়ে যায় । ভিখা জানে, এটাই হল ভোখ, ভোখের জ্বালা ।

বাপের চাকরিটাই ভিখা পেয়েছে । বাপটাকে ভোলেনি সে, এই চিন্‌চিনে ব্যথাটা শুরু হলেই তার সাধুকে মনে পড়ে যায় । সাধু বাউরিকে আমারও মনে আছে কিছুটা । আমার দাদুর শ্রাদ্ধের কাজটা সে প্রায় একাই টেনেছিল তার কালো কুচকুচে মেদহীন শরীরটা দিয়ে । তারপর বিকেল চারটেয় খেতে বসেছিল । প্রায় আশীটা লুচি খেয়ে সাধুর মন্তব্য ছিল-'তা জলখাওকার পারা হল্য ব'। ...

এই ক্ষিদে, যাকে সে বলত 'ভোখ'- ছিল সাধু বাউরির দুই দুর্বলতার একটি । আরটি তার পুত্র ভিখারাম । সেদিনও আসানসোল ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে বসে সে দুটোই টের পেয়েছিল । সাঁওতালডির পরে এত দাঁড়ায় কেন গাড়িটা । পনের মিনিটে রুক্‌নি পৌঁছনোর কথা, কিন্তু কই? পেটের ব্যথাটা বাড়ছে । ঐ তো বাসা দেখা যাচ্ছে, ঐ তো ভিখা ডাং-গুলি খেলছে । ট্রেনটা লেভেল ক্রসিঙের কাছে একটু স্পীড কমিয়েছে । ঘরে গিয়ে কিছু না খেলে আর চলছে না । এখানে নেমে পড়লেই তো হয় !

পায়ে পায়ে কখন গাড়ীর দরজার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি ভিখা । এমন সময় পিছন থেকে কানে এলো উপিন মাঝির গলা- 'তর বাপট ইখানটতেই লাফায়ঁ মর‍্যেছিল না রে ভিখা ?'

না, বাপের ভুলটা সে আর করবে না । প্রাণপণে চিন্‌চিনে ব্যথাটাকে সে ভুলতে চাইল...তার ব্যাটাটা যে মাত্র চার বছরের ।

October 6, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 11- Dwitiyo Ripu.


।। দ্বিতীয় রিপু ।।

- সতেরো, আঠারো, উনিশ...একটানা আউড়ে চলেছেন বামাঠাকুর ওরফে শ্রী বামাচরণ আচার্য । আমাদের গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ।
- কি ঠাকুর, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছেন ? জানতে চাইলেন একজন ।
- একত্রিশ, বত্রিশ, তেত্রিশ... ক্রুদ্ধদৃষ্টি হানলেন বামাঠাকুর । পথিকটি কথা না বাড়িয়ে পা বাড়ালেন । ঠাকুরের মাথাটা আবার বিগড়েছে বোধহয় ।...
- কি হে আচায্যির পো, কি গুনছ, গুণা পণ্ডিত ধরলেন এবার ।
- আটানব্বই, নিরানব্বই, একশো । কই কোন শুয়োরের বাচ্ছা বলেছিল একশো গুনলে রাগ পড়ে যায়...? কোথায় সে ! হুংকার ছাড়লেন বামাচরণ ।

এতক্ষণে ব্যাপারটা পাঠকেরা হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছেন । উগ্র রাগের জন্যে আস-পাশের দশটা গ্রামে কিংবদন্তি-সমান হচ্ছেন আচায্যিঠাকুর । কেউ বলে দুব্বাসা, কেউ বা চাণক্কপন্ডিত । তবে সবই আড়ালে । সামনাসামনি কিছু বলার সাহস কারো আছে নাকি । তবে তাঁর বিখ্যাত রাগ নিয়ে বহু কথা শোনা যায় । একবার তাঁর গাড়ুতে একটি ফুটো হওয়ায় প্রাতঃকৃত্য শেষ হওয়ার আগেই সব জল বেরিয়ে যেত । রাগের চোটে তিনি নাকি পণ করেন আগে ধোয়া-ধোয়ি সব সেরে পরে তিনি পায়খানায় বসবেন! ভাবতে পারেন ?

সেদিন উনি গেছিলেন রঘুনাথপুর হাটে । ফেরার সময় একটি নধর গাই পছন্দ হওয়ায় দরদস্তুর করে দু-শ টাকায় রফা করে কিনে নিলেন ।
- ঠাকুর, গাইটা সুন্দর তো ! কত নিল? একজন জানতে চাইলেন ।
- দুশো- বামাচরণ উত্তর দিয়ে এগিয়ে চললেন ।
- ও বামাখুড়ো, গাইটা কোথা হতে কিনলে গ'? আরেকজনের প্রশ্ন ।
- রঘুনাথপুরের হাট থেকে । উনি জানালেন ।
ঠাকুর এগিয়ে চলেন । ক'পা যেতে না যেতেই কেউ না কেউ গরু নিয়ে প্রশ্ন তোলে । ক্রমে ধৈর্য হারান বামাচরন । কোনমতে বাড়ি ফিরেই এক কাণ্ড করেন । উঠোনে ছিল বাঁধা মরাই, সেই খড়ের গাদায় দিলেন আগুন লাগিয়ে । হই-হই করে গ্রামের লোক ছুটে এল আগুন নিভাতে ।

- এইযে, গ্রামের সকলে এসেছ ? কেউ বাকি নেই তো ? বামাচরন শুধোন সকলকে । শোন হে বাপু । এই গরুটি আমি আজ রঘুনাথপুর হাট থেকে দুশোটাকা দিয়ে কিনে এনেছি । ফের যদি কেউ জিগ্যাসা করেছ, তাহলে......।
কথা আর শেষ করেন না শ্রী বামাচরন ।

October 5, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 10- Swadhinata.


।। স্বাধীনতা দিবস ।।

- শীগগির ঝাণ্ডাগুলো শেষ কর । অন্ধকার হয়ে গেলে সব বাঁকাট্যারা হয়ে যাবে, একটা কেউ নেবে না ।
- আমার আঠা ফুরিয়ে গেছে, একটু বানিয়ে দেবে, মা ?
- অ্যারারুট নেই, সবুর কর, ভাত নামুক ।...
- ভাত দিয়ে ভাল চেটেনা ।
- ভোর হতেই দু'শ পতাকা হাতে নেমে পড়তে হবে, নয়ত মুনুয়া-শান্তিরা ডানদিকের দখল নিয়ে নেবে ।

১৪ই আগস্ট সন্ধ্যেয় বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম আন্ধেরি ফ্লাইওভারের উলটোদিকের বাস-স্টপে, এই কথাগুলো কানে আসছিল পাশের ঝুপড়ি বস্তিবাড়ীগুলোর একটা থেকে । তাকিয়ে দেখি, দুটো বাচ্চা ছেলে প্লাস্টিকের পতাকায় কাঠি চিটিয়ে গাড়িতে লাগানোর উপযোগী করে তৈরী করছে । আঠা ফুরিয়ে যাওয়ায় ওরা বসে ছিল, একটাকে কাছে ডাকলাম ।
- কি নাম তোর
- জী, ইরফান ।
- পতাকাগুলো কি করবি?
- কাল সকালে সিগন্যালে গাড়ীওলাদের বেচব ।
- কাল কি জানিস্‌ ?
- জী, পন্দ্রহ আগস্ট । ঝান্ডা বেচনেকা দিন ।
- সে আবার কি !
- হাঁ সাব, কাল সবাই খুব ঝাণ্ডা কিনবে । আমি আর ভাই দু'শ বিক্রি করব । আউর এক দিন হ্যায়, ছাব্বিস জনওয়ারি । হামলোগ দেড়শও ঝাণ্ডা বেঁচে থে ।
সেদিন সন্ধ্যেয় আনোয়ার আর ইরফান, দুই ভাইএর কাছে শুনলাম স্বাধীনতা দিবসের অজানা কাহিনী । পরদিন তারা শ-দুই পতাকা বিক্রী করতে পারলে পরিবার অন্ততঃ তিন দিন পেট পুরে খেতে পারবে । যেমন পেরেছিল ছাব্বিশে জানুয়ারীতে ।
August 18, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction-9- Rakkhosi.


।। রাক্ষসী ।।

চাকরিটা পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিল সুবীর, আজ কাজে জয়েন করতে এসে ততটাই মন খারাপ হয়ে গেল । ঝাড়খন্ডের সিংভূম জেলার বড়াজামদা স্টেশনে নেমে গুয়া প্যাসেঞ্জার ধরেছে । ট্রেন ছাড়তেই শুরু হয়ে গেল লাল আর সবুজের সমারোহ, জনমানবহীন ল্যাটেরাইটের পাহাড় আর শাল-পলাশের বিস্তীর্ণ জঙ্গল দু'পাশে । গুয়াতে নেমে অফিসের জীপ পেল, মাইল তিনেক দূরে সাইট ।
- আপনি নিশ্চয়ই সুবীর রায়, নতুন জিওলজিস্ট? আমি তিমিরবরণ সাহা, পার্সোন্যাল ম্যানেজার । আপনার বাসার বন্দোবস্ত হয়ে গেছে, আগের জিওলজিস্টের কোয়ার্টারেই থাকবেন । কাল থেকে কাজে লেগে পড়ুন । হয়ে গেল সুবীরের induction.
- আগের জিওলজিস্ট নাকি মারা গেছেন, কি হয়েছিল তাঁর ? সুবীর জিজ্ঞাসা করল ।...
- ও কিছু না । থাকুন কদিন, মিঃ ওঝা সম্বন্ধে সবই জানতে পারবেন ।

পরদিন থেকে কাজ শুরু । সুবীর যেগুলোকে laterite ভাবছিল, দেখা গেল ওগুলো banded haematite quartzite যা লৌহ আকরিক হিসেবে মাইনিং করা হয় । টাটার মাইন্স শেষ হতেই তাদের শুরু, বেশ গভীর জঙ্গলের মধ্যে । বিভূতিভূষণ এলে হয়ত আনন্দ পেতেন, আমরা পেতাম আর একটা 'আরণ্যক'- এই মুহূর্তে কিন্তু সুবীরের মাথায় একাকীত্বের ভয় পেয়ে বসেছে । একটা সীম শেষ হতে অন্য সীম খুঁজে রাখা তার কাজ, তারপরে অঢেল সময় । বাসা থেকে অল্প দূরেই আগের পরিত্যক্ত মাইন, এক অতলস্পর্শী খাদে পরিণত হয়েছে । কেয়ারটেকার মুরমু তাকে সেদিকে যেতে মানা করেছে বার বার ।

সেদিন ছিল পূর্ণিমা । হঠাৎ‌ ঘুম ভেঙে গেছে সুবীরের । গভীর রাত্রে তরল চন্দ্রালোক গাছের মাথা থেকে গলিত রূপোর মত গড়িয়ে পড়ছে- এক অদ্ভুত দৃশ্য । slowly, silently, now the moon...আবৃত্তি করতে করতে মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে গেল সুবীর । একটু পরেই জঙ্গলের খানিক বিরতি, সবুজ ঘাসের কার্পেট পাতা মাঠ, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এস, তুমিই তো এ রাজ্যের অধীশ্বর! সত্যিই ত, কিসের ভয় ? পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সুবীর, সবুজ ঘাসের উপর পা রাখল । পায়ের তলায়......

পায়ের তলায় অতলস্পর্শী খাদ । তার নীচে পড়ে সুবীর রায়ের প্রাণহীন দেহ । মুখের উপর ঝুঁকে আর একজন, মিঃ ওঝা । রাক্ষসী মনে হয় কোনও জিওলজিস্টকেই ছাড়বে না , নিজের মনেই তিনি বললেন ।
August 18, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 8- Madhurena.

মধুরেণ

দ্বিরাগমন থেকে ফেরার পরই প্রমথ লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা । পুষ্প হাসে না একেবারেই । মুখের উপরে একরাশ শ্রাবণের মেঘ অহর্নিশি থমথম করছে যেন ভেঙ্গে পড়ার অপেক্ষাতেই । অথচ কোনও অনুযোগ-অভিযোগও নেই । এ কি রহস্য, স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম- নাকি দেবাঃ ন জানন্তি, হবেও বা ।

সেদিন অফিস থেকে বেশ খুশিমনেই ফিরেছে প্রমথ । হাতে একটা কাগজের বাণ্ডিল । কি গো ওগুলো, পুষ্প শুধোয় ? চিঠি- অশেষ হালদারকে লিখেছে একটি মেয়ে । তোমার কাছে টাকা না পেয়ে দেখাতে এসেছিল আমাকে, হাজার দশেক টাকা আর পুলিশের ভয় দেখিয়ে উদ্ধার করেছি ওগুলো । বোকা, প্রমথ বাসুকে ও ঠিক চিনতে পারেনি ।...

চিঠিগুলো পুড়ল এক এক করে, কোনও নাটক হল না । হঠাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল, পুষ্প কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে । মেয়েদের মন বোঝা ভার, ওকে আর না ঘাঁটিয়ে শুয়ে পড়ল প্রমথ ।

পরদিন খুব ভোরে পুষ্পর ঠেলাঠেলিতে প্রমথর ঘুম ভাঙল । দ্যাখ, দ্যাখ, এখানে কত পাখি আছে, তারা গানও গায় ।
- বাঃ, ভাল বলেছ তো, শেষের কবিতা পড়ছ বুঝি ?
- শেষের কবিতা? কই, না তো ।

প্রমথ মুগ্ধচোখে তাকিয়ে আছে । পুষ্প হাসছে, বহুদিন পরে । অনাবিল, অকৃত্রিম- ঝর্ণাধারার মত স্বতঃস্ফূর্ত সে হাসি ।
June 10, 2013.

Bengali Micro-fiction- 7- Guru.

গুরু

- কে, নরেন? এসেছিস? আয় বস ।
- আমি নরেন নই, খগেন । গুরুর কি চোখে ছানি পড়েছে?
- ওরে, নরেন যা, খগেন ও তাই । সব মায়া ।...
- আমি তোমার মায়া ভাঙতে এসেছি । শা... হা... বা... আমার টাকা ফেরত দাও । বলেছিলে ২০১২ তে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে । কি হল ঘোড়ার ডিম ! মাঝখান থেকে আমার রোজগারের জমান টাকা জোয়ানের আরক না কি বানাবার জন্যে হাতিয়ে নিলে ।
- আহা ওটা জোয়ানের আরক নয়, নোয়ার আর্ক । গালাগাল দিস নে, তার জোরেই তো তোরা বেঁচে গেলি এযাত্রা । তোর পয়সা বৃথা খরচ হয় নি ।
- তার মানে বলতে চাও পৃথিবী সত্যি ধ্বংস হয়েছে ? আমরা কি তবে ভূত !
- ওরে, ধ্বংস টা তো symbolic । একটা যে মন্বন্তর ঘটে গেছে তা টের পাচ্ছিস নে ? বলি পরিবর্তন চোখে পড়ছে না?
- কিসের পরিবর্তন? দিদি তো আগেই এসে গেছে । রেপ আর স্ক্যাম কি আগে হতনা, না আনাজের দাম আগে কখনও বাড়েনি ? ওসবে ভুলছি না গুরু, ভালয় ভালয় টাকা ফেরৎ দাও । আমি আজ খালি হাত যাব না ।
- হায়রে দুনিয়া, সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী শিষ্যের টাকা মেরে নিচ্ছে, আর কাল পর্যন্ত পাদোদক খাওয়া শিষ্য তার প্রণম্য গুরুদেবকে শা- হা- বা- ইত্যাদি গালাগালে সম্বোধন করছে, এসবের পরেও কি বলতে হবে পৃথিবী একইরকম আছে !

June 12, 2013.

Bengali Micro-fiction- 6- Anyay-Abichar.

অন্যায়-অবিচার

১৯৭২-৭৩ সাল হবে বোধহয় । অফিসপাড়াগামী সরকারি বাসটি অন্যদিনের মত আজও ভীড়ে ঠাসা । নিত্যকার অফিসযাত্রী সকলে, সকালবেলায় মেজাজ একেবারে খাসা । প্রতি সীট থেকে ছুটছে কথার তুবড়ি ।
- ইন্ডিয়া আজও কোনও প্রতিবাদ করল না কম্বোডিয়ায় কম্যুনিস্ট হত্যার । এটা ভীষণ অন্যায় ।
- উঃ, ভিয়েতনাম কি ফাইটটাই না দিল, নিক্সন একেবারে টাইট ।...
- শুনেছেন, কিসিঞ্জার আর লি-ডাক-থোকে নাকি একসাথে নোবেল শান্তি দেওয়া হবে ?
- দেখিস থো কিছুতেই একসেপ্ট করবে না ।
- এটা অন্যায় । ইন্ডিয়ার কিছু বলা উচিত । শেষে নারদ কিনা পাবে শান্তি-পুরষ্কার !
- আরে দিল্লিতে যারা আছে সব তো আমেরিকার দালাল । তবে আমাদের এবারে কিছু করা উচিত ।
- আলবাত ! ইন্ডিয়া শুনছি আমেরিকার কথায় নাইজিরিয়ায় সৈন্য পাঠাবে । এ আমরা হতে দেব না ।
- আমরা প্রতিবাদ করব ।

এমন সময় লিকলিকে চেহারার দুটি ছোকরা বাসে চাপল । 'আপনারা সবাই নেমে যান । এ বাসটা আমরা পোড়াব '- একজন আদেশ দিল ।
সুড়সুড় করে নেমে পড়ল একে একে সকলে । বাসে আগুন লাগান হল ।

বাস পুড়তে থাকল, সেই সঙ্গে ন্যায়নীতি অন্যায়-অবিচারের যাবতীয় প্রশ্ন ।

 April 25, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 5- Chithi


চিঠি

স্নেহের বাবলা,
তুই রাঁচি যাবার পর আমার ঠিকানা-লেখা খাতাটা পাচ্ছিলাম না, এখন তোর চিঠি পেয়ে বোঝা গেল ওটা তোর কাছে আছে । কারণ তুই লিখেছিস সেজদা, লালু, তোর মেজপিসি, ছোটমামি, এমনকি আমার বন্ধু মটরকেও তুই চিঠি দিয়েছিস । এত চিঠি লেখার বদভ্যাস তো তোর আগে ছিলনা । আমরা বলাবলি করছিলাম যে ছেলেটার মাথাটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল না তো, তাই শুনে ছ-বছরের বাবু গম্ভীরভাবে মন্তব্য করল,'আমি তখনই বলেছিলাম দাদাকে রাঁচিতে পাঠিয়ো না, এখন হল তো !'
তোর জ্বরে প্রশান্তবাবু যা করেছেন, আমার হয়ে তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে দিস । মনির তানপুরাটির তার ছিঁড়ে গেছে, তুই এলেই সারান হবে, এসব আমি ঠিক বুঝি না । ভালো থাকিস । ইতি ।...
আশীর্বাদক বাবা ।

প্রায় ৩৮ বছরের পুরনো চিঠি খুঁজে পেলাম আমার একটা পুরনো বইয়ের ভিতর থেকে । তখন আমার বয়স ১৫, সদ্য ভর্তি হয়েছি রাঁচির সেন্ট জেভিয়ারস কলেজে, হোস্টেলে আছি । ঘর থেকে বেরিয়ে প্রথম একা আছি, তাই একাকিত্ব কাটাতে দুনিয়ার যেখানে যাকে পাচ্ছি, চিঠি লিখে যাচ্ছি । আজ বাবা নেই, সেই ছোট ভাই বাবু এখন কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত বিজনেসম্যান । অথচ মনে হল এই সেদিনের ঘটনা ।

না, 'টাইম মেসিন' কোনোভাবেই কল্পনা নয় । প্রয়োজনে একটা সামান্য পোষ্টকার্ডও টাইম মেসিনের রূপ নিতে পারে ।

April 25, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction/ Rambling -4- Path-nirdesh


পথনির্দেশ

বদলির চাকরিতে নানা রাজ্যে এত ঘুরতে হয়েছে যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের রীতিনীতি, বাচনভঙ্গি সম্বন্ধে আমাকে একজন বিশেষজ্ঞ বলতে পারেন । তবে মৌলিকত্ব দাবি করতে পারে কোনো কোনো শহরের পথনির্দেশ-শৈলী । মুম্বাইএ রাস্তার নাম লেখা থাকে প্রতি মোড়ে, তবে ভ্রমিত হবেন না । ক্র্যাফোরড মার্কেট খুঁজছেন ? সবাই যেটা দেখিয়ে দেবে সেখানে কিন্তু লেখা থাকবে- 'মহাত্মা ফুলে বাজার' । জানেন কি, মেরিন ড্রাইভ নামে মুম্বাইতে কোনও রাস্তা নেই, যা আছে, তার নাম নেতাজি সুভাষ রোড (যা কক্ষনও কেউ বলেনা)।

'গোলঘর কে বাটে নু ?' পাটনাতে গোলঘর খুঁজতে গিয়ে ভদ্রলোকটি যেভাবে আমায় শুধোলেন, মনে হল যেন আশীর্বাদ দিচ্ছেন । এর আগে যাকেই জিগ্যেস করেছি, আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে- 'উ কা সামনে', বলা বাহুল্য সামনে দু-চারটে গরুর খাটাল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি । এইবার একটু আশা নিয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম এবং কানে এল মোক্ষম নিদান- 'উও তো হম নহি...য়ে বতাইব'।
চণ্ডীগড় গেছেন ? সেক্টর ৩ থেকে ১০ যাবার রাস্তা জানতে চাইলে সর্দার বন্ধুটি এমন এক হাসি দেবেন যেন বিশাল এক ইয়ার্কি করছি তার সাথে । তার পর শুরু হয়ে যাবে লে কারবুসিএরের চণ্ডীগড় প্ল্যানিং-এর গল্প, সেক্টর ১৩ না রাখায় উনি কায়দা করে সেক্টরগুলিকে এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যেন পাশাপাশি দুটো সেক্টরের যোগফল হয় ১৩ বা তার গুণিতক ।

লখনউতে এসেছি, ইমামবাড়া যাব । একজন নবাব বললেন (মনে রাখবেন, লখনউএর খানদানিরা সবাই নবাব), 'জনাব, সিধে নাক বরাবর তশরিফ লে যাইয়ে (আমি তখন খুঁজছি, তশরিফ জিনিশটা কোথায়)। আগে এক বরকত কা পেড় মিলেগা, পর উধর মত যাইয়ে...।' এরপর তার সুদীর্ঘ পথনির্দেশে বিরক্ত হয়ে আমি বলতে বাধ্য হই, বুঝেছি মশাই, আপনি যা যা বললেন সেগুলো বাদ দিয়ে এগিয়ে গেলেই ঠিক পৌঁছে যাব ইমামবাড়া !

কলকাতা । বেহালা ১৪ নং বাস স্ট্যান্ডে নেমেছি, সেনহাটি যাব জ্যেঠুর বাড়ী । দাদা বলেছিল একটা রিকশা নিতে, কিন্তু বোশেখের দুপুর রোদে রিকশা আর কোথায় ? বেহাল হয়ে কোথায় খুঁজি ভাবছি, দেখি একটি আধবুড়ো মানুষ পাব্লিক কলতলায় স্নান করছেন । উনি শুনে বললেন, দু-মিনিট দাঁড়ান, দেখিয়ে দিচ্ছি । স্নান সেরে আমাকে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে কলোনির মাথায় ছেড়ে লোকটি বিদায় নিলেন, জানালেন উনি ১৪ নম্বরের পিছনের বস্তিতে থাকেন । আমি তাঁর সৌজন্য বোধে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ।

নিন্দুকেরা বলবে, কলকাতার লোকের তো সময়ের অভাব নেই । যা নেই, তা নেই । তবু যা এখনও আছে সেটুকুর জন্যেই বাঙালী হিসেবে আমরা গর্ব বোধ করতে পারি ।

May 3, 2013.

Bengali Micro-fiction-3- Bidushak


বিদূষক

কলেজের অ্যাথলেটিক মিট চলছে । আমি আছি আয়োজকদের দলে । এবার শুরু হচ্ছে ১১০ মিটার হার্ডলস রেস । আমি তখন ট্রিপ্ল- জাম্পের পিট মাপজোখ করছি । হঠাৎ একটা কোলাহল শুনলাম হার্ডলের দিক থেকে । দেখি একটা কৃষ্ণবর্ণের ছোটখাটো প্রাণীও ছুটছে আর হার্ডলগুলোর তলা দিয়ে পেরিয়ে সবার থেকে এগিয়ে যাচ্ছে । দর্শকরা বেশ মজা পেয়ে হই-চই করছে ।

একটু কাছে এগিয়ে যেতেই আমার তো চক্ষুস্থির ! এযে সুভাষ বাবু । থার্ড ইয়ারের ছোটখাটো কালো চেহারার তেলুগু ছেলেটি । একটু তদন্ত করতেই বুঝতে পারলাম কাদের কাজ এটা । তাকে বোঝান হয়েছে যে হার্ডলের তলা দিয়েও যাওয়া যায় আর তা করলে সুভাষের জিৎ অবধারিত । সহজ-সরল ছেলেটি তাদের অবিশ্বাস করতে পারেনি ।...

খুব খারাপ লাগছিল খেলোয়াড়দের এই অ-খেলোয়াড়সুলভ আচরনের জন্য । কাছে এগিয়ে গেলাম । দর্শকদের টিটকারিতে লজ্জায়- অপমানে সুভাষবাবুর চোখে জল এসে গেছিল । ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, 'ওদের মাফ করে দে, সুভাষ, লজ্জা ওরাও পাবে আয়নায় নিজেকে দেখতে' ।

'না, না, সে কি কথা', ও বলল, 'বুঝলে গারু, এ একদিকে ভালই হল । এতদিন ধারনা ছিল আমি কিছুই পারিনা, দুনিয়াতে আসাটাই আমার বৃথা । আজ জানলাম, এত লোককে একসাথে হাসাবার ক্ষমতা অন্ততঃ আমার আছে । এ আমার কাছে এক মস্ত পাওনা ।'

 April 27, 2013, Mumbai

Bengali Micro-fiction- 2- Durghatona.


দুর্ঘটনা

এবার সুরক্ষা সপ্তাহে অফিস ম্যাগে আমাকে সুরক্ষা-নিয়মাবলির পালন ও দুর্ঘটনা সম্বন্ধে কিছু লিখতে বলা হয়েছে । জীবনে দুর্ঘটনা অনেক দেখেছি, তার মাঝে আর কোনও নূতনত্ব পাই না । একঘেয়ে সেকেলে-মার্কা গল্প লিখতেও ভাল লাগে না, ভাবি নতুন কিছু লিখতে হবে ।

এরই মাঝে একদিন আমাদের পাশের বাড়িতে, যেটা বেশ কিছুদিন খালি পড়েছিল, একটি পরিবার এল ভাড়াটে হয়ে । মনে হল, স্বামী-স্ত্রীর ছোট পরিবার, সাড়াশব্দ বিশেষ পাইনা । পরদিন অফিস থেকে বাড়ী ফিরতেই গিন্নি খবরটা দিলেন । পাশের বাড়ির ভদ্রলোকের নাকি বাঁ হাতটা নেই, একটা অ্যাকসিডেন্টে কাটা গেছে ।...

শুনে একটু নড়েচড়ে বসলাম । গল্পের প্লট পাবার একটা ভাল চান্স আছে, একটু দেখাই যাক না । পরদিন ছিল রবিবার, পাশের বাড়ী গিয়ে হানা দিলাম ।

অতনুবাবু ছিলেন রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ফোরম্যান । সেদিন শপ-ফ্লোরের উপরতলায় ম্যানেজারের অফিসে গেছিলেন একটা ফাইল নিয়ে । ফেরার পথে মেশিন শপের আইল দিয়ে হাঁটছেন, এমন সময় চোখ পড়ল তার দিকে । না পড়ে উপায়ও ছিল না । এরকম সুন্দরী সচরাচর চোখে পড়ে না, তাও আবার রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ! মহিলাটি তাঁকে পার করে ম্যানেজারের অফিসের দিকেই যাচ্ছেন । অতনু তাঁর দিকে কতক্ষন তাকিয়েছিলেন মনে নেই, হঠাৎ ঘটাং-ঘট । একটি হুইল-বারো থেকে একটি কাঠের টুকরো গড়িয়ে পড়ল, এবং পরক্ষনেই যা ঘটল তা প্রায় অকল্পনীয় ।

অতনুবাবু অন্যমনস্ক ছিলেনই, তাঁর পা পড়ল ঐ কাঠে, একটি যন্ত্রের মেরামতির পর ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছিল, তিনি উলটে পড়ার সময় বাঁহাত পড়ল আন-গার্ডেড চলন্ত শ্যাফটের মাঝে ।

হাসপাতালে অতনুবাবুর আলাপ হল ভদ্রমহিলার সাথে । তিনি একটি সফটওয়্যার ফার্মের প্রোগ্রামার, রেল তাঁদের কোম্পানিকে মেনটেনান্স ডেটাবেস তৈরির কন্ট্রাক্ট দিয়েছে । কিন্তু ততক্ষণে বাঁ-হাত এম্পুটেড । অনেক কষ্টে রান্নার গ্যাসের এজেন্সিটা পেয়েছেন গতমাসে ।
ইতিমধ্যে চা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন মহিলা । আমার স্ত্রী রমিতা, আলাপ করিয়ে দিলেন অতনুবাবু । দেখলাম, এবং দেখতে থাকলাম । নাঃ, যে ঘটনায় রমিতার মত স্ত্রীরত্ন-লাভ হয়, তাকে কোনমতেই দুর্ঘটনা বলা চলে না ।

এযাত্রা আমার আর অফিসের জন্যে গল্প লেখা হল না ।

 April 23 , 2013, Mumbai

গল্প নয় - ২

একটি দুর্লভ মুহূর্ত

আবার এসে গেল বহুকাঙ্খিত সেই দিনটি- ২৫শে বৈশাখ । আমার স্মৃতির মণিকোঠায় সঞ্চিত আছে এই দিনটির বিভিন্ন বছরের ভিন্ন ভিন্ন মুহূর্ত । হঠাৎ মনে পড়ল কলকাতা ২০০০ বা বোধহয় ২০০১- গলফ গ্রীন মাঠের অনুষ্ঠান ।

সুন্দর একটি রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় । ঊর্মিমালা একটি আবৃত্তি করলেন । কিছুক্ষণ পরে মাঠে নাবলেন শ্রীকান্ত আচার্য । অনুষ্ঠান চমৎকার পরিচালনা করছিলেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় । উনি শ্রীকান্তকে অনুরোধ জানালেন একটি বর্ষার গান ধরতে । চলল 'বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল', 'বর্ষণ মন্দ্রিত অন্ধকারে' । কিন্তু কবিগুরুর বর্ষার গানের একটা বৈশিষ্ট্য যে শৃঙ্খলের বলয়ের মত একের পর এক আসতেই থাকে, বিশেষতঃ পরিবেশ অনুকুল থাকলে । কথাটা মাথায় আসতেই চোখ পড়ল মাথার উপরে খোলা আকাশের দিকে । শুরু হয়ে গেছে ছোটো-বড় ফোঁটার অনবরত অবতরন, তখন ওপ্রান্তে চলছে-'আমার পরানে আজি, যে বানী উঠিছে বাজি- অবিরাম বর্ষণ-ধারে ।'

রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উঠল মাথায় । মাঠের দক্ষিণ-কোণের জল ট্যাঙ্ক সংলগ্ন সোসাইটি অফিসে আশ্রয় নিতে নিতে ব্রততী শ্রীকান্তর নতুন নামকরন করলেন- মিয়াঁ তানসেন ।

April 22, ২০১৩ Mumbai

গল্প নয়-১

রহস্য

আজ মহাকালী সমিতির দৌলতে 'নান্দীকার' গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান ছিল মুম্বাইয়ের রবীন্দ্র নাট্য-মন্দিরে । উদ্যোক্তাদের অন্যতম হিসেবে গতকাল আলাপ হল শ্রী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা, সোহিনী ও গ্রুপের অন্য সদস্যদের সাথে, একটু ঘরোয়াভাবে । রুদ্রপ্রসাদ কথায় কথায় জানালেন তাঁর বয়স এখন সাতাত্তর । আমি একটু কৌতুকের ছলে বললাম, দাদা, আপনার অভিনীত 'হাটেবাজারে' ছবি দেখেছি চল্লিশ বছরের উপর হয়ে গেল । সেখানে অশোক কুমারের সঙ্গী হিসেবে আপনার চরিত্রটি 'বুড়া বাবা' নামে খ্যাতি পায় । আজ এই বয়সে আপনাকে কিন্তু সে সময়ের তুলনায় যুবক মনে হচ্ছে । এর রহস্য কি? প্লীজ এখানে Dove বা Lakme baby oil-এর বিজ্ঞাপন দেবেন না ।

স্বভাব-রসিক রুদ্রপ্রসাদ উত্তরে শুধু মৃদু হাসলেন । তারপর বললেন, 'অনেকক্ষণ স্বাতিলেখা কি করছে দেখিনি । যাই একবার দেখে আসি ।'...

উনি যেতে যেতে ফিরে দাঁড়িয়ে আর একবার হাসলেন । 'আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি', আমি চিৎকার করে জানালাম ।
(এটা গল্প নয়)

 April 22, 2013, Mumbai
 


Bengali Micro-fiction -1- Thikana.


'ঠিকানা'

-শীগগির পা চালিয়ে চল, যে কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে, দাদু বললেন ।
-দাদু, এই গলিটাই তো, তবে বাড়ীটা চেনা যায় কিভাবে? বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাস্তায় লোকজন নেই , আমি মন্তব্য করলাম ।
ঘটনাটা আমার ছোটবেলার, এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধোপলক্ষ্যে গেছিলাম পুরুলিয়ার মানবাজারে গ্রামসম্পর্কের এক দাদুর সাথে । সেখানেই আলাপ মানিকদার সাথে। শিক্ষিত বেকার যুবক, কট্টর বামপন্থায় দীক্ষিত। দাদুটি আবার পাকা কংগ্রেসি! ফলে তর্ক জমতে দেরি হল না। ইতিমধ্যে আমরা রাজবাড়ি, থানা, মহকুমা অফিস ঘুরে দেখে নিয়েছি। বেলা হচ্ছিল, 'তর্কটা ঠিক জমল না, বুঝলেন দাদু', মানিকদা বললেন। 'বিকেলে আসুন না আমাদের বাসায়, চা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যাবে। পঞ্চানন ব্যানার্জির গলি, কাউকে জিগ্যেস করলেই বাড়ী দেখিয়ে দেবে।'
বলা বাহুল্য, আমাদেরও সময় কাটছিল না, ফলে বিকেল হওয়ার আগেই আমরা হাঁটা দিলাম পঞ্চানন ব্যানার্জির গলির উদ্দেশে। তারপর কি হল তা আগেই জানিয়েছি।
কি করা যায়, ভাবছি, এমন সময় দাদুর চোখ পড়ল একটি বাড়ির ছাদে। 'দ্যাখ, মনে হচ্ছে ঐ বাড়ীটা, ছাতে কম্যুনিস্টের লাল ঝাণ্ডা টাঙ্গানো।' আমরা বিনা বাক্যব্যয়ে দরজার কড়া নাড়লাম। আমাদের অনুমান সঠিক, মানিকদা এসে দরজা খুললেন।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছি, এমন সময় মানিকদা আমায় শুধোলেন, 'ভাই তোমাদের বাসা চিনতে অসুবিধে হয় নি তো?'
'তাই কি হয়', দাদু জানালেন, 'যা একটা লালঝাণ্ডা টাঙ্গিয়ে রেখেছ ছাতে।'
'লালঝাণ্ডা, সে কি' বলেই হঠাৎ দৌড়।  দু'মিনিট পরে মানিকদার ছাত থেকে অবতরণ, হাতে একটি ভিজে লাল ডোরাকাটা লুঙ্গি । 'ভাগ্যিস মনে করিয়ে দিলেন, ঝড়ে উড়ে অ্যান্টেনায় আটকে ছিল, তবে ভিজে গেছে একেবারে।'

বিধাতাপুরুষ রঙ্গপ্রিয় বলেই বোধহয় 'কাকতালীয়' কথাটার সৃষ্টি হয়েছিল ।

April 12, 2013 Mumbai

Translated English to Bengali-1

Forgive, O Lord.
(Robert Frost)

"Forgive O Lord, my little jokes on Thee
and I'll forgive the great big one on me."

 তোমায় নিয়ে রঙ তামাশা করেছি যত ক্ষমো হে প্রভু আজি ।
আমায় নিয়ে করেছো তুমি যাহা সেসব ভুলিতে আমি রাজি ।।

Sept 12, 2013.

Kobita-1

কয়েকটা পাগল ।।

লেখার প্রয়োজনেই লেখা
কেউ পড়বে বলে ত নয় ।
তবু আজ লিখতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছি বারবার ।
মনে হচ্ছে, রুগ্ন পৃথিবীটাকে কাঁধে তুলে
উন্মত্ত নৃত্যরত কোন মহাদেব ।
আর কে যেন অদৃশ্য সুদর্শনে
তাকে টুকরো টুকরো করে নির্দ্বিধায়-
ছুঁড়ে ফেলছে যেখানে সেখানে ।...
কেউ তা দেখেও দেখছে না !

শুধু কয়েকটা পাগল
টুকরো গুলোকে পরপর সাজিয়ে
একমনে জুড়তে ব্যস্ত
লোকে দেখছে আর হাসছে,
খেয়ালি শিশুর মত কাণ্ড-কারখানা।

তবু- ঘটনাটা মজার নিঃসন্দেহে,
তাই লিখে রাখলাম-
কেউ পড়বে বলে ত নয়।

Translated Poems-1

কোনারক/ ফণিভূষণ আচার্য

রোদ-থেকে-ধুয়ে-আনা আহ্নিকের প্রথম স্তবক
এখানেই রাখলাম ; আকাশের আবক্ষ বিশ্রাম
মর্মর স্মৃতির মতো বালিতে স্থাপন করে কে-এক যুবক
সময়ের অঙ্গুরীয়ে লিখে দিল দয়িতার নাম ।

কোনারক । কোনদিন এসেছে কি তৃষ্ণার্ত জাহাজে
যাকে সে আকাশ দিল, আদিগন্ত সমুদ্র এবং
নিরবধি কাল, তবু উন্মুখ দৃষ্টিতে তার ধরা দিল না যে...
আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি, নিরন্ত বিকীর্ণ এক রমণী-যৌবন ।

তবু সূর্য ভেসে আসে । নীলাকাশে রোদ্দুরের পাল
ছিন্ন ভিন্ন ঢেউ ভেঙে বেলোয়ারী মেঘের দাপট
কী করে ফেরাবে তাকে ? ধূসরিম নিরবধি কাল
লিখেছে নিষ্প্রাণ পাত্রে প্রাণের অক্ষয় চিত্রপট ।



KONARK/ Phani Bhushan Acharya

Here I submit my first verse of the day
Bathed on sun. Where the sky rests and
A lover embosses the name of his beloved
On the perennial ring of the coastal sand.

Konark! Did his ship ever come? Could those
Thirsty lips ever discover the lust for your
Virgin youth during the time and space
Till eternity and an infinite horizon of sea?

Yet the sun reaches to you everyday as his
Beam of rays moves past the floating clouds.
Can you refuse his love, O the barren mass where
The boundless time has engraved immortal scripts?

Translated on 12-10-2013


'