Thursday, October 17, 2013

Bengali Micro-fiction-9- Rakkhosi.


।। রাক্ষসী ।।

চাকরিটা পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিল সুবীর, আজ কাজে জয়েন করতে এসে ততটাই মন খারাপ হয়ে গেল । ঝাড়খন্ডের সিংভূম জেলার বড়াজামদা স্টেশনে নেমে গুয়া প্যাসেঞ্জার ধরেছে । ট্রেন ছাড়তেই শুরু হয়ে গেল লাল আর সবুজের সমারোহ, জনমানবহীন ল্যাটেরাইটের পাহাড় আর শাল-পলাশের বিস্তীর্ণ জঙ্গল দু'পাশে । গুয়াতে নেমে অফিসের জীপ পেল, মাইল তিনেক দূরে সাইট ।
- আপনি নিশ্চয়ই সুবীর রায়, নতুন জিওলজিস্ট? আমি তিমিরবরণ সাহা, পার্সোন্যাল ম্যানেজার । আপনার বাসার বন্দোবস্ত হয়ে গেছে, আগের জিওলজিস্টের কোয়ার্টারেই থাকবেন । কাল থেকে কাজে লেগে পড়ুন । হয়ে গেল সুবীরের induction.
- আগের জিওলজিস্ট নাকি মারা গেছেন, কি হয়েছিল তাঁর ? সুবীর জিজ্ঞাসা করল ।...
- ও কিছু না । থাকুন কদিন, মিঃ ওঝা সম্বন্ধে সবই জানতে পারবেন ।

পরদিন থেকে কাজ শুরু । সুবীর যেগুলোকে laterite ভাবছিল, দেখা গেল ওগুলো banded haematite quartzite যা লৌহ আকরিক হিসেবে মাইনিং করা হয় । টাটার মাইন্স শেষ হতেই তাদের শুরু, বেশ গভীর জঙ্গলের মধ্যে । বিভূতিভূষণ এলে হয়ত আনন্দ পেতেন, আমরা পেতাম আর একটা 'আরণ্যক'- এই মুহূর্তে কিন্তু সুবীরের মাথায় একাকীত্বের ভয় পেয়ে বসেছে । একটা সীম শেষ হতে অন্য সীম খুঁজে রাখা তার কাজ, তারপরে অঢেল সময় । বাসা থেকে অল্প দূরেই আগের পরিত্যক্ত মাইন, এক অতলস্পর্শী খাদে পরিণত হয়েছে । কেয়ারটেকার মুরমু তাকে সেদিকে যেতে মানা করেছে বার বার ।

সেদিন ছিল পূর্ণিমা । হঠাৎ‌ ঘুম ভেঙে গেছে সুবীরের । গভীর রাত্রে তরল চন্দ্রালোক গাছের মাথা থেকে গলিত রূপোর মত গড়িয়ে পড়ছে- এক অদ্ভুত দৃশ্য । slowly, silently, now the moon...আবৃত্তি করতে করতে মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে গেল সুবীর । একটু পরেই জঙ্গলের খানিক বিরতি, সবুজ ঘাসের কার্পেট পাতা মাঠ, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এস, তুমিই তো এ রাজ্যের অধীশ্বর! সত্যিই ত, কিসের ভয় ? পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সুবীর, সবুজ ঘাসের উপর পা রাখল । পায়ের তলায়......

পায়ের তলায় অতলস্পর্শী খাদ । তার নীচে পড়ে সুবীর রায়ের প্রাণহীন দেহ । মুখের উপর ঝুঁকে আর একজন, মিঃ ওঝা । রাক্ষসী মনে হয় কোনও জিওলজিস্টকেই ছাড়বে না , নিজের মনেই তিনি বললেন ।
August 18, 2013, Mumbai

No comments:

Post a Comment