Thursday, October 17, 2013

Bengali Micro-fiction/ Rambling -4- Path-nirdesh


পথনির্দেশ

বদলির চাকরিতে নানা রাজ্যে এত ঘুরতে হয়েছে যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের রীতিনীতি, বাচনভঙ্গি সম্বন্ধে আমাকে একজন বিশেষজ্ঞ বলতে পারেন । তবে মৌলিকত্ব দাবি করতে পারে কোনো কোনো শহরের পথনির্দেশ-শৈলী । মুম্বাইএ রাস্তার নাম লেখা থাকে প্রতি মোড়ে, তবে ভ্রমিত হবেন না । ক্র্যাফোরড মার্কেট খুঁজছেন ? সবাই যেটা দেখিয়ে দেবে সেখানে কিন্তু লেখা থাকবে- 'মহাত্মা ফুলে বাজার' । জানেন কি, মেরিন ড্রাইভ নামে মুম্বাইতে কোনও রাস্তা নেই, যা আছে, তার নাম নেতাজি সুভাষ রোড (যা কক্ষনও কেউ বলেনা)।

'গোলঘর কে বাটে নু ?' পাটনাতে গোলঘর খুঁজতে গিয়ে ভদ্রলোকটি যেভাবে আমায় শুধোলেন, মনে হল যেন আশীর্বাদ দিচ্ছেন । এর আগে যাকেই জিগ্যেস করেছি, আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে- 'উ কা সামনে', বলা বাহুল্য সামনে দু-চারটে গরুর খাটাল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি । এইবার একটু আশা নিয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম এবং কানে এল মোক্ষম নিদান- 'উও তো হম নহি...য়ে বতাইব'।
চণ্ডীগড় গেছেন ? সেক্টর ৩ থেকে ১০ যাবার রাস্তা জানতে চাইলে সর্দার বন্ধুটি এমন এক হাসি দেবেন যেন বিশাল এক ইয়ার্কি করছি তার সাথে । তার পর শুরু হয়ে যাবে লে কারবুসিএরের চণ্ডীগড় প্ল্যানিং-এর গল্প, সেক্টর ১৩ না রাখায় উনি কায়দা করে সেক্টরগুলিকে এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যেন পাশাপাশি দুটো সেক্টরের যোগফল হয় ১৩ বা তার গুণিতক ।

লখনউতে এসেছি, ইমামবাড়া যাব । একজন নবাব বললেন (মনে রাখবেন, লখনউএর খানদানিরা সবাই নবাব), 'জনাব, সিধে নাক বরাবর তশরিফ লে যাইয়ে (আমি তখন খুঁজছি, তশরিফ জিনিশটা কোথায়)। আগে এক বরকত কা পেড় মিলেগা, পর উধর মত যাইয়ে...।' এরপর তার সুদীর্ঘ পথনির্দেশে বিরক্ত হয়ে আমি বলতে বাধ্য হই, বুঝেছি মশাই, আপনি যা যা বললেন সেগুলো বাদ দিয়ে এগিয়ে গেলেই ঠিক পৌঁছে যাব ইমামবাড়া !

কলকাতা । বেহালা ১৪ নং বাস স্ট্যান্ডে নেমেছি, সেনহাটি যাব জ্যেঠুর বাড়ী । দাদা বলেছিল একটা রিকশা নিতে, কিন্তু বোশেখের দুপুর রোদে রিকশা আর কোথায় ? বেহাল হয়ে কোথায় খুঁজি ভাবছি, দেখি একটি আধবুড়ো মানুষ পাব্লিক কলতলায় স্নান করছেন । উনি শুনে বললেন, দু-মিনিট দাঁড়ান, দেখিয়ে দিচ্ছি । স্নান সেরে আমাকে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে কলোনির মাথায় ছেড়ে লোকটি বিদায় নিলেন, জানালেন উনি ১৪ নম্বরের পিছনের বস্তিতে থাকেন । আমি তাঁর সৌজন্য বোধে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ।

নিন্দুকেরা বলবে, কলকাতার লোকের তো সময়ের অভাব নেই । যা নেই, তা নেই । তবু যা এখনও আছে সেটুকুর জন্যেই বাঙালী হিসেবে আমরা গর্ব বোধ করতে পারি ।

May 3, 2013.

No comments:

Post a Comment