Thursday, October 17, 2013

Bengali Micro-fiction- 11- Dwitiyo Ripu.


।। দ্বিতীয় রিপু ।।

- সতেরো, আঠারো, উনিশ...একটানা আউড়ে চলেছেন বামাঠাকুর ওরফে শ্রী বামাচরণ আচার্য । আমাদের গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ।
- কি ঠাকুর, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছেন ? জানতে চাইলেন একজন ।
- একত্রিশ, বত্রিশ, তেত্রিশ... ক্রুদ্ধদৃষ্টি হানলেন বামাঠাকুর । পথিকটি কথা না বাড়িয়ে পা বাড়ালেন । ঠাকুরের মাথাটা আবার বিগড়েছে বোধহয় ।...
- কি হে আচায্যির পো, কি গুনছ, গুণা পণ্ডিত ধরলেন এবার ।
- আটানব্বই, নিরানব্বই, একশো । কই কোন শুয়োরের বাচ্ছা বলেছিল একশো গুনলে রাগ পড়ে যায়...? কোথায় সে ! হুংকার ছাড়লেন বামাচরণ ।

এতক্ষণে ব্যাপারটা পাঠকেরা হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছেন । উগ্র রাগের জন্যে আস-পাশের দশটা গ্রামে কিংবদন্তি-সমান হচ্ছেন আচায্যিঠাকুর । কেউ বলে দুব্বাসা, কেউ বা চাণক্কপন্ডিত । তবে সবই আড়ালে । সামনাসামনি কিছু বলার সাহস কারো আছে নাকি । তবে তাঁর বিখ্যাত রাগ নিয়ে বহু কথা শোনা যায় । একবার তাঁর গাড়ুতে একটি ফুটো হওয়ায় প্রাতঃকৃত্য শেষ হওয়ার আগেই সব জল বেরিয়ে যেত । রাগের চোটে তিনি নাকি পণ করেন আগে ধোয়া-ধোয়ি সব সেরে পরে তিনি পায়খানায় বসবেন! ভাবতে পারেন ?

সেদিন উনি গেছিলেন রঘুনাথপুর হাটে । ফেরার সময় একটি নধর গাই পছন্দ হওয়ায় দরদস্তুর করে দু-শ টাকায় রফা করে কিনে নিলেন ।
- ঠাকুর, গাইটা সুন্দর তো ! কত নিল? একজন জানতে চাইলেন ।
- দুশো- বামাচরণ উত্তর দিয়ে এগিয়ে চললেন ।
- ও বামাখুড়ো, গাইটা কোথা হতে কিনলে গ'? আরেকজনের প্রশ্ন ।
- রঘুনাথপুরের হাট থেকে । উনি জানালেন ।
ঠাকুর এগিয়ে চলেন । ক'পা যেতে না যেতেই কেউ না কেউ গরু নিয়ে প্রশ্ন তোলে । ক্রমে ধৈর্য হারান বামাচরন । কোনমতে বাড়ি ফিরেই এক কাণ্ড করেন । উঠোনে ছিল বাঁধা মরাই, সেই খড়ের গাদায় দিলেন আগুন লাগিয়ে । হই-হই করে গ্রামের লোক ছুটে এল আগুন নিভাতে ।

- এইযে, গ্রামের সকলে এসেছ ? কেউ বাকি নেই তো ? বামাচরন শুধোন সকলকে । শোন হে বাপু । এই গরুটি আমি আজ রঘুনাথপুর হাট থেকে দুশোটাকা দিয়ে কিনে এনেছি । ফের যদি কেউ জিগ্যাসা করেছ, তাহলে......।
কথা আর শেষ করেন না শ্রী বামাচরন ।

October 5, 2013, Mumbai

No comments:

Post a Comment