জেমস হনিম্যান
(WH Auden )
ছোট্ট ছেলে জিম হনিম্যান
জানত না সে হাসি-কান্না
কৌতূহলে দেখত মা-কে
শিখতে চাইত রান্না-বান্না ।
হনিম্যানের খোঁজে মা তার
দ্যাখেন এসে পাঠশালাতে...
ছেলে সেথা নিবিষ্ট মন
দেশলাই এর বাক্স হাতে ।
উৎসবেতে আর সকলে
খাচ্ছে যবে কেক চকোলেট
ছোট্ট জিমি চা-এর কাপে
ঘোলায় বসে চিনির প্যাকেট ।
এইত সেবার জন্মদিনে
(জিমি যেবার পড়ল আটে)
রইলো সে তার ঘরের ভিতর
কেমিস্ট্রি-সেট শোবার খাটে ।
শিক্ষক কন লেখাপড়ায়
জিমের কোন তুলনা নেই,
দুঃখ মোদের খেলাধুলা
করে না সে একেবারেই ।
মাতে সবাই ফুটবলেতে,
হনিম্যানের ল্যাবরেটরি
ফার্স্ট ক্লাস আর বৃত্তি পেয়ে
কলেজে সে দিল পাড়ি ।
কড়া কফির সহকারে
পড়ত সারা রাত্রি ধরে
চশমা চোখে লিখত থিসিস
ঝাঁঝালো সব গ্যাসের ‘পরে ।
চলত যবে গ্রামের পথে
কিংবা যদি চড়ত বাস
দেখত পাহাড়, দেখত নদী,
মাথায় ঘুরত ফসফরাস ।
বলত, আহা লুইসাইট, তা
বিস্ফোরক সে মন্দ কি,
তবুও তাহা এ যুগেতে
চলবে না তায় সন্দ কি !
চমৎকৃত অধ্যাপক
বলেন, এত পরিষ্কার,
জেমস ছাড়া আর কে পাবে
এ বছরের পুরস্কার !
নামল গবেষণার কাজে
‘ইম্পিরিয়াল অ্যালকালি’তে
ভাবল মনে মরার আগে
নাম কামিয়ে হবেই নিতে ।
বলেন ডেকে বাড়িওয়ালি
জন্ম যখন নিলেই মশাই,
সরস করে তুলতে তারে
এবার একটা বৌ আনো ভাই ।
ইম্পিরিয়াল অ্যালকালিতেই
পাত্রী ছিল, নামটি ডোরীন
একদিন তার কাটলে আঙুল
চাইতে গেল আইওডিন ।
এই বুঝি সে হারাল জ্ঞান,
ছুটল জিমি, আনল চেয়ার ।
ঠাণ্ডা পানি গেলাস ভরে
ছিটিয়ে দিল চুলেতে তার ।
যা হবার তা হয়েই গেল,
ভাড়া হল রঙ্গিন বাড়ি
বাঁ- পাশে তার ডেয়ারি-ফার্ম
সিনেমা-হল ডাইনে তারি ।
তৈরি হল ল্যাবরেটরি
বাগানের এক প্রান্ত জুড়ে
পাড়াপড়শি ভাবলে মনে
এবার বুঝি গেলেম উড়ে ।
ডোরীন ডাকে রাত-দুপুরে
লক্ষ্মীটি, জিম শোবে চল
‘এক্সপেরিমেন্ট শেষ না হলে
কেমন করে যাব বল ?’
বড়দিনেই পড়ল ফ্লু-এ
ডাক্তার কন, বিশ্রাম নাও ।
-করছি কঠিন পরীক্ষা যে
আরেকটু ক্ষণ চালাতে দাও ।
রবিবারদিন বাচ্চা নিয়ে
প্র্যাম ঠেলতে ঠেলতে বলে
খুঁজছি, প্রিয়ে এমন গ্যাস,
নিঃশ্বাসে লোক মরবে দলে ।
... এনেছি প্রায় হাতের মুঠোয়
সে জিনিষ কে এখন আমি
ডোরীন কাঁপে রুদ্ধগলায়
পারবে, প্রিয়, পারবে তুমি !
গ্রীষ্মে যখন তপ্ত রাতে
রক্ত-রাঙ্গা গোলাপ ফোটে
ব্যস্ত কাজে জিম হনিম্যান
হাজার চিন্তা মাথায় ছোটে ।
হঠাৎ এসে মধ্যরাতে
শিশুর ললাট চুমে কয়,
এই সে গ্যাস, টেস্ট টিউবে
বন্দী, প্রিয়ে লভেছি জয় ।
দাঁড়ায় দোঁহে জানালা ধারে
স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, চাঁদের হাসি
রয়্যাল সোসাইটি তে তবে
এটা নিয়ে ঘুরেই আসি ।
চললে রেলগাড়িতে চড়ে
সেদিন রাজভবন পানে
থিসিসখানা সঙ্গে নিয়ে
দেখাতে হবে আজ সেখানে ।
ছাপানো কার্ডে নামটি দেখে
ভুরূ-যুগল কুঁচকে কয়,
ব্যস্ত আছি, এ আবার কে ?
রাস্তা দেখ, নেই সময় ।
ডোরীন শোনায় পড়শিদিগে
এ দেশে কি রইল আর
আমার স্বামী এত যে নামী,
খবর রাখে কেউ কি তার !
মিসেস ফ্লাওয়ার পড়শি ছিলেন
দেখান তিনি সহানুভূতি
প্রতিবেশী শত্রু দেশের
তিনি ছিলেন গোপন দূতী ।
এক সন্ধ্যায় খাবার বেলা
অচেনা কারা অতিথি ঘরে
হনিম্যানের সঙ্গে কথা
চলল সারারাত্রি ধরে ।
সবাই মিলে বাগান ঘুরে
গেল ছোট্ট শেডের ঘরে,
তারপরেতে মিলিয়ে গেল
কোথায় যেন অন্ধকারে ।
ডোভার কূলে ছাড়ল তরী
জিমি তখন ফিরল ঘরে
বললে, দেখ, এন-পি-সি মোর
নোবেল পাবে বছর পরে ।
বসেছিল সে বাগান মাঝে
লিখছিল কি খাতার পরে
ছোট্ট শিশু করছে খেলা
ডোরীন বসে অল্প দূরে ।
হঠাৎ একি ! পূব- আকাশে
উড়ো-জাহাজ রাশি রাশি
যুদ্ধ শুরু? বোমারু নাকি ?
ভাগে মজুর, পলায় চাষী ।
ডেয়ারি গেল, দ্বিতীয় বোমা
সিনেমাহলে করে আঘাত
তৃতীয় খানা বাগানে পড়ে
ঘটছে যেন উল্কাপাত ।
‘কোলে নাও মা, চুমো আমায়
ঘরেতে মা নিয়ে চল-
বাবার আবিষ্কারে বুঝি
এবার আমার প্রাণই গেল’।
‘কোথায় জিমি, কোথায় তুমি,
বাঁধ আমায় বাহুর ডোরে ,
হনিম্যানের এন-পি-সিতে
গ্রাস করল এবার মোরে ।‘
‘হতেম যদি স্যামন মাছ,
সাগরতলে দিতেম পাড়ি
কিম্বা ছোট পাখিটি হয়ে
গগনময় বেড়াই উড়ি ।‘
হায়রে, তুমি নওকো স্যামন
নওকো পাখি, নেইত পাখা
তোমার সৃষ্টি আনল তোমার
জীবন পটের যবনিকা
‘লুকাও আমায় শৈল গুহায়
ডুবাও মোরে সাগরজলে
অন্ধকারায় বন্দী কর
বিভীষিকার পাতালতলে ।‘
হায়রে, কোথা শৈল গুহা,
কই বা অতল জলরাশি,
মরতে তোমায় হবেই, কারন
হনিম্যানের এন-পি-সি !!
------------------------------ -----------
(WH Auden )
ছোট্ট ছেলে জিম হনিম্যান
জানত না সে হাসি-কান্না
কৌতূহলে দেখত মা-কে
শিখতে চাইত রান্না-বান্না ।
হনিম্যানের খোঁজে মা তার
দ্যাখেন এসে পাঠশালাতে...
ছেলে সেথা নিবিষ্ট মন
দেশলাই এর বাক্স হাতে ।
উৎসবেতে আর সকলে
খাচ্ছে যবে কেক চকোলেট
ছোট্ট জিমি চা-এর কাপে
ঘোলায় বসে চিনির প্যাকেট ।
এইত সেবার জন্মদিনে
(জিমি যেবার পড়ল আটে)
রইলো সে তার ঘরের ভিতর
কেমিস্ট্রি-সেট শোবার খাটে ।
শিক্ষক কন লেখাপড়ায়
জিমের কোন তুলনা নেই,
দুঃখ মোদের খেলাধুলা
করে না সে একেবারেই ।
মাতে সবাই ফুটবলেতে,
হনিম্যানের ল্যাবরেটরি
ফার্স্ট ক্লাস আর বৃত্তি পেয়ে
কলেজে সে দিল পাড়ি ।
কড়া কফির সহকারে
পড়ত সারা রাত্রি ধরে
চশমা চোখে লিখত থিসিস
ঝাঁঝালো সব গ্যাসের ‘পরে ।
চলত যবে গ্রামের পথে
কিংবা যদি চড়ত বাস
দেখত পাহাড়, দেখত নদী,
মাথায় ঘুরত ফসফরাস ।
বলত, আহা লুইসাইট, তা
বিস্ফোরক সে মন্দ কি,
তবুও তাহা এ যুগেতে
চলবে না তায় সন্দ কি !
চমৎকৃত অধ্যাপক
বলেন, এত পরিষ্কার,
জেমস ছাড়া আর কে পাবে
এ বছরের পুরস্কার !
নামল গবেষণার কাজে
‘ইম্পিরিয়াল অ্যালকালি’তে
ভাবল মনে মরার আগে
নাম কামিয়ে হবেই নিতে ।
বলেন ডেকে বাড়িওয়ালি
জন্ম যখন নিলেই মশাই,
সরস করে তুলতে তারে
এবার একটা বৌ আনো ভাই ।
ইম্পিরিয়াল অ্যালকালিতেই
পাত্রী ছিল, নামটি ডোরীন
একদিন তার কাটলে আঙুল
চাইতে গেল আইওডিন ।
এই বুঝি সে হারাল জ্ঞান,
ছুটল জিমি, আনল চেয়ার ।
ঠাণ্ডা পানি গেলাস ভরে
ছিটিয়ে দিল চুলেতে তার ।
যা হবার তা হয়েই গেল,
ভাড়া হল রঙ্গিন বাড়ি
বাঁ- পাশে তার ডেয়ারি-ফার্ম
সিনেমা-হল ডাইনে তারি ।
তৈরি হল ল্যাবরেটরি
বাগানের এক প্রান্ত জুড়ে
পাড়াপড়শি ভাবলে মনে
এবার বুঝি গেলেম উড়ে ।
ডোরীন ডাকে রাত-দুপুরে
লক্ষ্মীটি, জিম শোবে চল
‘এক্সপেরিমেন্ট শেষ না হলে
কেমন করে যাব বল ?’
বড়দিনেই পড়ল ফ্লু-এ
ডাক্তার কন, বিশ্রাম নাও ।
-করছি কঠিন পরীক্ষা যে
আরেকটু ক্ষণ চালাতে দাও ।
রবিবারদিন বাচ্চা নিয়ে
প্র্যাম ঠেলতে ঠেলতে বলে
খুঁজছি, প্রিয়ে এমন গ্যাস,
নিঃশ্বাসে লোক মরবে দলে ।
... এনেছি প্রায় হাতের মুঠোয়
সে জিনিষ কে এখন আমি
ডোরীন কাঁপে রুদ্ধগলায়
পারবে, প্রিয়, পারবে তুমি !
গ্রীষ্মে যখন তপ্ত রাতে
রক্ত-রাঙ্গা গোলাপ ফোটে
ব্যস্ত কাজে জিম হনিম্যান
হাজার চিন্তা মাথায় ছোটে ।
হঠাৎ এসে মধ্যরাতে
শিশুর ললাট চুমে কয়,
এই সে গ্যাস, টেস্ট টিউবে
বন্দী, প্রিয়ে লভেছি জয় ।
দাঁড়ায় দোঁহে জানালা ধারে
স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, চাঁদের হাসি
রয়্যাল সোসাইটি তে তবে
এটা নিয়ে ঘুরেই আসি ।
চললে রেলগাড়িতে চড়ে
সেদিন রাজভবন পানে
থিসিসখানা সঙ্গে নিয়ে
দেখাতে হবে আজ সেখানে ।
ছাপানো কার্ডে নামটি দেখে
ভুরূ-যুগল কুঁচকে কয়,
ব্যস্ত আছি, এ আবার কে ?
রাস্তা দেখ, নেই সময় ।
ডোরীন শোনায় পড়শিদিগে
এ দেশে কি রইল আর
আমার স্বামী এত যে নামী,
খবর রাখে কেউ কি তার !
মিসেস ফ্লাওয়ার পড়শি ছিলেন
দেখান তিনি সহানুভূতি
প্রতিবেশী শত্রু দেশের
তিনি ছিলেন গোপন দূতী ।
এক সন্ধ্যায় খাবার বেলা
অচেনা কারা অতিথি ঘরে
হনিম্যানের সঙ্গে কথা
চলল সারারাত্রি ধরে ।
সবাই মিলে বাগান ঘুরে
গেল ছোট্ট শেডের ঘরে,
তারপরেতে মিলিয়ে গেল
কোথায় যেন অন্ধকারে ।
ডোভার কূলে ছাড়ল তরী
জিমি তখন ফিরল ঘরে
বললে, দেখ, এন-পি-সি মোর
নোবেল পাবে বছর পরে ।
বসেছিল সে বাগান মাঝে
লিখছিল কি খাতার পরে
ছোট্ট শিশু করছে খেলা
ডোরীন বসে অল্প দূরে ।
হঠাৎ একি ! পূব- আকাশে
উড়ো-জাহাজ রাশি রাশি
যুদ্ধ শুরু? বোমারু নাকি ?
ভাগে মজুর, পলায় চাষী ।
ডেয়ারি গেল, দ্বিতীয় বোমা
সিনেমাহলে করে আঘাত
তৃতীয় খানা বাগানে পড়ে
ঘটছে যেন উল্কাপাত ।
‘কোলে নাও মা, চুমো আমায়
ঘরেতে মা নিয়ে চল-
বাবার আবিষ্কারে বুঝি
এবার আমার প্রাণই গেল’।
‘কোথায় জিমি, কোথায় তুমি,
বাঁধ আমায় বাহুর ডোরে ,
হনিম্যানের এন-পি-সিতে
গ্রাস করল এবার মোরে ।‘
‘হতেম যদি স্যামন মাছ,
সাগরতলে দিতেম পাড়ি
কিম্বা ছোট পাখিটি হয়ে
গগনময় বেড়াই উড়ি ।‘
হায়রে, তুমি নওকো স্যামন
নওকো পাখি, নেইত পাখা
তোমার সৃষ্টি আনল তোমার
জীবন পটের যবনিকা
‘লুকাও আমায় শৈল গুহায়
ডুবাও মোরে সাগরজলে
অন্ধকারায় বন্দী কর
বিভীষিকার পাতালতলে ।‘
হায়রে, কোথা শৈল গুহা,
কই বা অতল জলরাশি,
মরতে তোমায় হবেই, কারন
হনিম্যানের এন-পি-সি !!
------------------------------
No comments:
Post a Comment