Thursday, August 22, 2019

অভিশপ্ত পাঁচের জুলাই। স্মৃতিচারণ

অভিশপ্ত পাঁচের জুলাই।

(১) 
অতিবৃষ্টি

২০০৫ সালের ২৬শে জুলাই, মুম্বাই।  আকাশের মাঝামাঝি মনে হয় মস্ত একটা ফুটো। সেই ফুটো দিয়ে  সুকুমারের ভাষায়-
"জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত।
অবিরাম নামতায় বাদলের ধারাপাত।"
২৬শে জুলাই, ২০০৫। শুধু এটুকু বললেই সেই সময়কার  মুম্বাই  শহরের বাসিন্দাদের শিরদাঁড়া বেয়ে এখনও একটা ঠাণ্ডা শিহরণের স্রোত নেমে যায়।  ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি!

পূর্বাভাস ছিল। তা সত্ত্বেও মুম্বাই প্রশাসন অফিস-বাজার-স্কুল-কাছারি কিছুই বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় নি। আর মুম্বাই সদাব্যস্ত শহর। এখানে আজ পর্যন্ত দু-চারটে দিনই জনজীবন স্তব্ধ থাকতে দেখেছি। তার একটা ৮৪ সালে ইন্দিরা হত্যার পরের দিন, ৯২এর দাঙ্গার একটা দিন আর ২০০২ তে বাল ঠাকরে গ্রেফতারের দিন। আজ কিন্তু পরিস্থিতি কতটা সাঙ্ঘাতিক হতে পারে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। সকালে সবাই অফিস গেছে, বাচ্চারা স্কুল-কলেজ গেছে, দোকানপাট খুলেছে, লোকাল ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি, মায় অটো পর্যন্ত চলছে, আর তার সঙ্গে জোরালো বর্ষণ।

ঠিক দুপুর দু'টোর সময় আরব সাগরে জোয়ার এল। সঙ্গে সঙ্গে শহরের জল নিষ্কাশন-ব্যবস্থার ইতি, সমুদ্র-উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে জল বাড়তে লাগল হু-হু করে। ঠিক আড়াইটায় ট্র্যাকে জল জমে প্রায় সমস্ত লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা সভয়ে জানল যে স্টর্ম-ওয়াটার ড্রেনেজ সিস্টেমের ১০৫টি খালের মধ্যে মাত্র তিনটির গেট কাজ করছে, বাকিগুলো বন্ধ হচ্ছে না বা গেট নেই। রিয়েল-এস্টেট মাফিয়া- রাজনৈতিক নেতা চক্রের চক্রান্তে শহরের অর্ধেক ম্যানগ্রোভ জঙ্গল উড়ে গেছে। অতএব উপচে পড়া স্টর্ম-ওয়াটার আর রিট্রীটেড হাই-টাইডের জল ধারণের উপযুক্ত কিছু আর নেই। বাকি যা ছিল শহরবাসিদের সঠিক চেতনার অবর্তমানে প্লাস্টিক তার নিজের কাজটুকু করেছে, অর্থাৎ যেটুকু নালার বহনক্ষমতা ছিল তার অধিকাংশই আটকে আছে প্লাস্টিকে।

এবার আমার কথায় আসি। আমার বাড়ি আন্ধেরি ইস্টে মহাকালী গুহা অঞ্চলে, সেখান দিয়ে ঢালু পাহাড়ি পথ পশ্চিমে সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। তাতে জল জমে না, দুরন্ত স্রোতে বয়ে যায়। কিন্তু প্লাস্টিকের আশীর্বাদে জলবাহী নালাগুলি বন্ধ, তাই সেগুলো উপচে পড়ে জল বইছে রাস্তার উপর দিয়ে। নালাতে যে একবার পড়েছে তার মৃতদেহ ভেসে উঠেছে ছ-সাত কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের কাছে- ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমি কিন্তু শহরে নেই, আছি শহর থেকে ১৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে আরব সাগরের মাঝে। পাগলের প্রলাপ নয়। সত্যিই আমার দায়িত্বে তখন ওএনজিসির রিগ সাগর-রত্ন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ISO 9001 সার্টিফিকেশন অডিটের প্রস্তুতির জন্যে আমি, রিগ ম্যানেজার সহায় আর মেকানিক্যাল বিভাগের নান্দেডকার সেখানে বসে আছি তিনদিন ধরে। মুম্বাইয়ের বৃষ্টি পরিস্থিতির কথা টিভির খবরে শুনছি আর মনে মনে আতঙ্কিত হচ্ছি, পরিবারের মানুষরা কিভাবে আছে ভেবে। নান্দেডকার মুম্বাইয়ে আমার প্রতিবেশি, হাঁটাপথে পাঁচ মিনিটের দূরত্ত্বে থাকি আমরা। আমার মেয়ে ক্লাস সেভেন্থ আর ওর ছেলে ফিফথে পড়ে জুহুর মানেকজি কুপার স্কুলে।  ইতিমধ্যে সন্ধের সময় নান্দেডকার ছুটে এসে জানাল, মানেকজি কুপার স্কুলের বাস বাচ্চাদের নিয়ে ফেরেনি, ওর আর আমার ছেলেমেয়েরা কোথায় কী অবস্থায় আটকা পড়ে আছে তা কেউ জানে না।

আমাদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। তখন অফশোর ইন্সটলেশনে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে দেওয়া হতনা, রিগের স্যাটেলাইট সার্ভিস দ্বারা কানেক্টেড ল্যান্ডলাইন টেলিফোনই ভরসা কিন্তু মুম্বাইয়ের সমস্ত টেলিফোন সিস্টেম অচল, কাউকে ধরা যাচ্ছে না। ভাবছি বাড়িতে কী অবস্থা চলছে, নিশ্চয় কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে। সব রাস্তা বন্ধ, কোথাও যাবারও তো উপায় নেই। শেষে রাত দশটায় খাসনবীসদাকে ধরা গেল, ওঁর মেয়েও আমার কন্যার সহপাঠী। জানতে পারলাম, জল বেড়ে স্কুল বাসের অর্ধেকটা ডুবে যায়, জুহু ভিলে-পার্লে স্কীম পাড়ায় বাস দাঁড়িয়ে যায়। বাচ্চাদের কান্নাকাটি করতে দেখে আশেপাশের সোসাইটির কিছু সহৃদয় মানুষ এগিয়ে এসে বাচ্চাদের নিজের বাসায় নিয়ে যান।  খাবার-দাবার জুটেছে কিনা জানিনা, তবে রাত্রির জন্য নিরাপদ আশ্রয় মিলেছে জেনে অনেকটা নিশ্চিন্ত হলাম। পরদিন সকালে খাসনবীসদা খোঁজ নিয়ে গিয়ে ওদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

২৭শে জুলাই, সকাল ন'টা। আমি আর নান্দেডকার দু'জনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম জেনে যে আমাদের ছেলেমেয়েরা নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে। মুম্বাইয়ের অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির যা খতিয়ান জানানো হচ্ছে টিভি নিউজে, অত্যন্ত ভয়াবহ। ২৬শে জুলাই সকাল থেকে ২৭শে জুলাই সকাল পর্যন্ত একটানা ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ২৪ ঘন্টায়, যেটা একরকম রেকর্ড। মুম্বাই এয়ারপোর্টের রানওয়ে টানা ৩০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল জল জমে থাকায়, এটাও একটা রেকর্ড। এছাড়া সেই রাত্রে অগুন্তি সাধারণ মানুষ ট্রেন, বাস, গাড়ি থেকে নেমে মাইলের পর মেইল হেঁটে বাড়ি ফিরেছে, অনেকে সেই রাতে ফিরতে পারেন, কারো বাসায় বা রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। আমার মেয়ের কথা তো বললাম, আমাদের কোম্পানির চিফ জিওলজিস্ট পিনাকীদার মেয়ে বাসা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ত, সে তো অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজের ক্লাসরুমেই থেকে গেছে। আবার অনেকের আর এ জন্মে বাড়ি ফেরা হয়নি, খোলা ম্যানহোল বা নালায় পড়ে কোথায় কয়েক মাইল দূরে পরদিন উদ্ধার হয়েছে হতভাগ্যদের মৃতদেহ। পোলে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন দুয়েকজন। আবার এমনও হয়েছে, অত্যাধুনিক অটোমেটিক গাড়ির সওয়ারি, পয়েন্টে জল ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ, ফলে মোটর-চালিত জানলা খোলেনি, জলের চাপে দরজা বন্ধ- বদ্ধ গাড়িতে করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে তাঁকে। সৌভাগ্য, না দুর্ভাগ্য বলব, বাড়ি থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে বসে এসব ভোগ করতে পারিনি, তেমনি কাউকে কোন সাহায্যও করতে পারিনি। কিন্তু সাক্ষী হয়ে থেকেছি বিশ্বের শিল্পোদ্যোগের ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে থাকা এক বিশাল দুর্ঘটনার।



 (২) 
বাড়বাগ্নি- ভস্মীভূত প্ল্যাটফর্ম।



ONGCর তৈলক্ষেত্র বোম্বে হাই (অধুনা মুম্বাই) মুম্বাই উপকূল থেকে ন্যুনাধিক ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে আরব সাগরে অবস্থিত, ১৯৭৪ থেকে আজ পর্যন্ত যার দানে সমৃদ্ধ হয়েছে ভারতের অর্থনীতি, ঔদ্যোগিক বিপ্লব এসেছে এদেশে। এখানে তিন রকমের প্ল্যাটফর্ম ছিল, ড্রিলিং-কাম-প্রডাকশন বা ওয়েল-হেড প্ল্যাটফর্ম, লিভিং কোয়ার্টার্স ও প্রসেস প্লাটফর্ম। বম্বে হাইয়ের নর্থ প্ল্যাটফর্ম কমপ্লেক্স পরস্পর সেতু-যুক্ত চারটে প্ল্যাটফর্ম নিয়ে তৈরি হয়েছিল- ওয়েল-হেড প্ল্যাটফর্ম NA, যার জ্যাকেটে অবস্থিত ছটি তৈলকূপ থেকে তেল-গ্যাস উৎপাদন হত, সেখানে ওয়ার্ক-ওভার রিপেয়ারের কাজ করছিল নোবেল চার্লি ইয়েস্টার (NCY) নামক জ্যাক-আপ রিগ। এছাড়া ছিল সাততলা উঁচু BHN মেন প্রসেস, MHW নামে এক অতিরিক্ত প্রসেস আর MHF নামে কর্মীদের থাকার জন্যে লিভিং প্ল্যাটফর্ম। এছাড়াও বম্বে হাই নর্থে কাছাকাছি আরো ১১টি প্রডাকশন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাইপলাইন-বাহিত হয়ে আসত তেল ও গ্যাস, প্রাথমিক পদ্ধতির পর সবকিছু পাইপে পাঠানো হত সমুদ্রতীরস্থ উরান প্ল্যান্টের প্রাথমিক শোধনাগারে সহ খনিজ তেল স্থিরীকরণ কেন্দ্রে (Primary Processing and Crude Stabilization Unit)। BHN Complexএর কাছেই কাজ করছিল সমুদ্র-সুরক্ষা নামের নানা-কাজের উপযোগী জাহাজ (Multipurpose Support Vessel বা MSV), পাঁচজন ডুবুরী ডাইভিং-এর কাজ সেরে বেসমেন্টের ডিকম্প্রেশন চেম্বারে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছিলেন। এমন সময় একজন রাঁধুনী তার আঙুল কেটে ফেলায় উপযুক্ত চিকিৎসার জন্যে তাকে ক্রেনের সাহায্যে বিএইচএনে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। জুলাই মাসের ভরা মনসুন, সমুদ্র উত্তাল, ৩৫ নট বেগে হাওয়া বইছে- অথচ সমুদ্র সুরক্ষার সমুদ্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উপযোগী Dynamic Positioning System (DPS) ঠিকঠাক কাজ করছিল না। তাই তাকে যেতে হয় প্ল্যাটফর্মের অনেকটা কাছে আর তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটা। জাহাজের আঘাতে একটা গ্যাসের পাইপ ফেটে আগুন লেগে যায়।

২৭শে জুলাই, ২০০৫। তখন চারটে বাজে ছয়-সাত মিনিট। সাগর-রত্ন রিগের ইনচার্জের অফিসে বসে আছি আমি, সহায়, রাজেন্দ্র সিং, নান্দেডকার, বার্জ ইঞ্জিনীয়ার জোজি জন আর রেডিও অফিসার প্রদীপ সামেল। সকালে ছেলেমেয়েদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে গেছি, তাই বেশ আনন্দের সঙ্গে আড্ডা ও কফিপান করছি সবাই মিলে। এমন সময় ইলেকট্রিক্যালের চিফ অজয় ছুটতে ছুটতে বাইরে থেকে এসে জনকে বলে- 'জোজি, দূরবীন দো, BHN মে কুছ জল রহা হ্যায়।' আমি স্যামেলকে রেডিও-রুমে খবর নিতে বলে ছুটলাম বাইরে, ফরোয়ার্ড জ্যাকহাউসের ওপর।

সত্যিই কিছু একটা জ্বলছে, তবে তা যে সমস্ত প্ল্যাটফর্মটাকে পুড়িয়ে ফেলবে এতটাও ভাবিনি। ৫-৬ কিলোমিটারের দূরত্ব, দূরবীনও লাগল না- ৪ঃ০৫ থেকে ৪ঃ৩০ এর মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গেল গোটা প্ল্যাটফর্ম। সম্পত্তির পরিমাণের কথা পরে, ২২৭ জন বিএইচএনে ৮৪ জন সমুদ্র সুরক্ষায়, ৭৩ জন NCY রিগে। চতুর্দিকে লাইফ-বোটে যাত্রীরা নেমে পড়ল, অনেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিল আতঙ্কে, 'সুরক্ষা'র ক্রু নেই, দিশাহারা হয়ে চলতে শুরু করে দিল জাহাজটি। নেভি, কোস্ট-গার্ড আর আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কার্যরত বিভিন্ন সামুদ্রিক জাহাজ ছুটে এল উদ্ধারকাজে। আমাদের সামেল রেডিও নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। 
হঠাৎ দেখি দিশাহীন সমুদ্র সুরক্ষা এগিয়ে আসছে আমাদের রিগের দিকে। সর্বনাশ, কন্ট্রোল করার যে কেউ নেই, ধাক্কা লাগলে আমাদের কাউকেই আর দেখতে হবে না- SOS কল পাঠানো হল চতুর্দিকে। সুখের কথা শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার একটি জাহাজ এগিয়ে এসে জলের জেট ছুঁড়ে সুরক্ষার মুখ ঘুরিয়ে দিল, আমরা বেঁচে গেলাম। সামেল ওদের জানাল যে পাঁচজন ডাইভারকে উদ্ধার করতে হবে ডিকম্প্রেশন চেম্বার থেকে। নাবিকদের তৎপরতায় আর চেষ্টায় সেটাও সম্ভব হল। 

একটা প্রশ্ন তবু থেকেই যায়। সেফটি বা সুরক্ষার তো এত ব্যবস্থা থাকে সমুদ্রস্থ তেলের রিগ বা ইন্‌স্টলেশনগুলোতে। তা সত্ত্বেও এরকম একটা দুর্ঘটনা হয় কী করে? বিশ্বের যে কোন শিল্পোদ্যোগে, বিশেষতঃ পেট্রোলিয়াম ফিল্ডে সেফ্‌টি সেকশন চিরকালই ছিল, তবে তা নিতান্তই দায়সারা গোছের আর ঘটনোত্তর কার্যবহুল (reactive)। তার প্ল্যানের মধ্যে থাকত দুর্ঘটনা হলে কী করবে তার উপায় আর সমুদ্রে নিজেকে বাঁচানোর ট্রেনিং (Survival of Life at Sea বা SOLAS)। তারপর ১৯৮৮ সালে ঘটে একটা যুগান্তকারী ঘটনা। স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিন থেকে ১১০ মাইল পূর্বোত্তরে নর্থ-সীর পাইপার অঞ্চলের বিশাল অফশোর প্ল্যাটফর্ম ‘পাইপার অ্যালফা’ (Piper Alpha) পুড়ে ছাই হয়ে যায় শুধুমাত্র যোগাযোগ সমস্যা (communication), সঠিক হস্তান্তরণ-পদ্ধতি (proper hand-over system) আর একটি নিশ্ছিদ্র দুর্যোগ-মোকাবিলা প্রক্রিয়ার (Disaster Management Plan) অভাবে। পাইপার আলফা দুর্ঘটনা একটা মাইলস্টোন, শুধু তেল-উদ্যোগ নয়, শুধু সমুদ্র নয়, গোটা বিশ্বের শিল্পোদ্যোগ জগতের সুরক্ষা-জগতে নিয়ে এল এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সব কিছু ঢেলে সাজানো হল, আনা হল ঘটনা-পূর্ব প্রস্তুতি কার্যপ্রণালী (pro-active approach)। এখন সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্যে তৈরি হয়েছে নানা সংস্থা, নতুন নতুন কার্যক্রম, প্রতিটি কোম্পানিতে স্বয়ং-সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য-সুরক্ষা-পরিবেশ (Health, Safety and Environment বা HSE) বিভাগ। অবশ্য এতে এ ধরণের দুর্ঘটনা কমানো গেলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি তার নিদর্শন হল ২০০৫ এর ২৭শে জুলাইয়ের এই দুর্ঘটনা, সামান্য একটি মানবিক-ভুল আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। 

পরে জানলাম, সবার চেষ্টায় সর্বমোট ৩৫৫ জনকে উদ্ধার করা গেছে, পরে আরো সাতজনকে। কিন্তু সব মিলিয়ে ২২ জন কর্মী ও অফিসার মৃত বা নিখোঁজ। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু আমাদের বন্ধু হেমন্ত কুলশ্রেষ্ঠর। হেমন্ত সমুদ্রে লাফিয়েও বেঁচে ছিল, উদ্ধার করার জন্যে বোট থেকে যে দড়ি ছোঁড়া হয়, তাতে গলায় ফাঁস লেগে প্রাণ হারায় বেচারা। অথচ যার জন্যে এত কাণ্ড, একটা ভুল সিদ্ধান্ত থেকে এত বড় দুর্ঘটনাটা ঘটল, সেই রাঁধুনী ছোকরাটি কিন্তু প্রথমেই ক্রেনের বাস্কেট থেকে লাফ দেয় সমুদ্রে, প্রায় অনায়াসেই বেঁচে যায়!                  
    

 

No comments: