Tuesday, August 27, 2019

স্মৃতিকথা- মুর্গীর হালুয়া।

ছেলেবেলার গল্প
মুর্গীর হালুয়া।
আমরা ছোটবেলায় সিন্দ্রির একটা কলোনিতে থাকতাম। সিন্দ্রি সার কারখানার কলোনিগুলো বেশ খানিকটা কসমোপলিটান চরিত্রের ছিল। পাশাপাশি আর মুখোমুখি প্রতিবেশিদের মধ্যে ছিলেন আমরা ছাড়াও দুটি বাঙালি, দুটি বিহারী, উত্তর প্রদেশীয়, পঞ্জাবী আর গুজরাটি পরিবার একটি করে। পাশের পাশের কোয়ার্টারে থাকতেন রায়বাবু, সাদাসিধে বিহারী ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক, পরিবার গ্রামের বাড়িতে রেখে একাই থাকতেন। ভোর না হতেই তাঁর 'রঘুপতি রাঘব রাজারাম/ পতিতপাবন সীতারাম' শুনে পাড়া-প্রতিবেশিদের ঘুম ভাঙত বলে আমার ছোট বোন ওঁর নামই রেখেছিল 'সীতারাম'।
আমার বোন তখন বছর তিনেকের হবে। দিনের সময়ের অন্ততঃ ঘন্টাতিনেক ওর কাটত সীতারামের বাসায়, গল্প করে আর টুকটাক এটা সেটা খেয়ে। আমরা মজা করে বলতাম মিনি-কাবলিওলার জোড়ি।
একদিন সকালে বোন রায়বাবুর বাসা থেকে আসছে মুখ মুছতে মুছতে। জিগ্যেস করলাম, কি রে কী খেলি?
- মুলগির হালুয়া, অম্লানবদনে বলল ও।
মুর্গি! বাবা অবাক। আমাদের বাসায় মুর্গি ঢোকেনা তখনও। দাদু-ঠাকুমা বা গ্রামের লোক জানতে পারলে হুলস্থুল বেধে যাবে। 'হ্যাঁরে, সত্যি বলত কী খেয়েছিস? বোনকে ঝাঁকিয়ে শুধোন বাবা।
- মুলগির হালুয়া, না না পায়েস, না হালুয়া। কনফ্যুজড উত্তর আসে।
শেষমেষ বিকেলে অফিস-ফেরতা সীতারামকে ধরা হল। বাবা বললেন, ক্যা রায়বাবু, মুরগি খিলা দিয়ে মেরি বিটিয়া কো?
- রাম রাম, বোলেন কী? হামি আউর মুরগি! হাম ভুমিহার ব্রাহ্মণ হ্যায়, রায় হামারা উপাধি আছে। আরে চটারজিবাবু, হাম তো পেঁয়াজ-লসন ভি নেহি খাতে!
- তাহলে সকালে কী খাইয়েছেন বলুন তো আমার মেয়েকে? ও তো বলছে মুরগির হালুয়া। শুনে রায়বাবু হো হো করে হেসে উঠলেন।
- ও হো, অব সমঝে। সুবহ হাম থোড়া মুংগদাল কা হালোয়া বনায়ে থে, ওহি থোড়া দিয়া খুঁকুমনি কো। দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠেন এবার।
আমার বোন ভয়ে ভয়ে কোন একটা শাস্তির অপেক্ষা করছিল, ও অবাক হয়ে থাকিয়ে রইল দুজনের দিকে।

No comments:

Post a Comment