Sunday, August 18, 2019

অন্য রচনা- দাশরথি রায়

দোষ কারো নয়।

দাশরথি বা দাশু রায় বিখ্যাত ছিলেন পাঁচালিকার হিসেবে। এটাই কিন্তু তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয় নয়। তিনি গানে গানে লিখেছেন রামায়ণ-মহাভারতের গল্প, কবি হিসেবে তীক্ষ্ণ কশাঘাত করেছেন তৎকালীন আচারসর্বস্ব সমাজের অচলায়তনকে। তাঁর কাব্যে তিনি যুক্তি দিয়ে বিচার করতে চেয়েছেন, সোচ্চার হয়েছেন নারীর সামাজিক ন্যায়ের দাবীতে। বিদ্যাসাগরকে তিনি ঈশ্বরের দূত বলে প্রচার করেছেন, বলেছেন ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে হিন্দুসমাজ বিধবাদের ন্যায্য মর্যাদা ও অধিকার দেয় নি, তাই তিনি পাইয়ে দিতে চেয়েছেন।
দাশরথির বৈশিষ্ট্য তাঁর সমদর্শিতায়, তিনি যতটা শৈব বা শাক্ত, ঠিক ততটাই বৈষ্ণব। তাই অনেকেই জানেন না তিনি একাধিক শ্যামাসঙ্গীতও রচনা করেছেন। তাঁর প্রতিটি রচনা বিদ্বজ্জনের কিরকম সমাদর পেত তা বোঝাতে একটা মজার গল্প বলি।
নবদ্বীপের এক পণ্ডিতসভায় তিনি ধরলেন তাঁর স্বরচিত একটি শ্যামাসঙ্গীত, আজ ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠে যে গান অমর-
"“দোষ কারো নয় গো মা,
আমি, স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা!
ষড়রিপু হলো কোদণ্ড স্বরূপ
পুণ্যক্ষেত্র মাঝে কাটিলাম কূপ...."
এটুকু গাইতেই এক যুবক ছাত্র প্রতিবাদ করে ওঠেন- আপনি ভুল গাইছেন। কোদণ্ড শব্দের অর্থ ধনুক। ধনুক কি কোদাল যে তা দিয়ে কূপ খোঁড়া যাবে?
ছাত্রের অধ্যাপক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- তুমি চুপ কর। স্বয়ং দাশরথি রায় যখন গাইছেন তখন আমাদের সাধ্য কি তাঁর ভুল ধরি!
অন্য পণ্ডিতেরা তৎক্ষণাৎ মত দিলেন, তাহলে আজ থেকে কোদণ্ড শব্দের উভয় অর্থই গ্রাহ্য হবে, ধনুক এবং কোদালও। এই ছিল দাশরথির জনপ্রিয়তা আর বৈদগ্ধ্যের স্বীকৃতির একটি নমুনা।

No comments:

Post a Comment